পদার্থ তরঙ্গ বা ম্যাটার ওয়েভ হলো কোয়ান্টাম বলবিদ্যার একটি কেন্দ্রীয় অংশ। ইহা, তরঙ্গ-কণা দ্বৈততার একটি উদাহরণ। সকল পদার্থই তরঙ্গের মত ব্যবহার প্রদর্শন করে। যেমন, একটি ইলেক্ট্রনের মরীচিকে (বীম) আলোর মরীচি বা জলের তরঙ্গের মত অপবর্তিত করা সম্ভব। যদিও, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তরঙ্গ দৈর্ঘটি এত ছোট হয় যে প্রতিদিনের কাজকর্মে কোনো কার্যকর প্রভাব ফেলে না। তাই, সাধারণ আকৃতির বস্তু যেমন টেনিস বল বা মানুষের সহ আমাদের সাধারণ জীবনের সাথে পদার্থ তরঙ্গ সম্পর্কিত নয়।

১৯২৪ সালে লুই দ্য ব্রোয়ি, পদার্থ, তরঙ্গের মত ব্যবহার করে, এমন ধারণার প্রস্তাবনা করেন। একে দ্য ব্রোয়ি প্রকল্পও বলা হয়।[1] পদার্থ তরঙ্গকে দ্য ব্রোয়ি তরঙ্গ বলা হয়।

দ্য ব্রোয়ি তরঙ্গ দৈর্ঘ্য, λ, একটি বৃহৎ কণার (অর্থাৎ ভর সম্পন্ন কণা, ভরহীন কণার বিপরীত) সাথে জড়িত তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যা এর ভরবেগ, p, এর সাথে প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক, h, দ্বারা সম্পর্কীতঃ

জর্জ প্যাজেট টমসনের পাতলা ধাতব অপবর্তন পরীক্ষণের মাধ্যমে ও স্বাধীনভাবে ডেভিসন-জার্মার পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম পদার্থের তরঙ্গের মত বৈশিষ্ট্য পরীক্ষামূলকভাবে দেখানো হয় এবং উভয় ক্ষেত্রেই একাজে ইলেক্ট্রন ব্যবহৃত হয়। [2] অন্যান্য মৌলিক কণা, নিরপেক্ষ পরমাণু এমনকি অণুর ক্ষেত্রেও এটি প্রতিপন্ন হয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ

১৯ শতকের শেষের দিকে ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ অনুযায়ী ভাবা হতো, আলো তড়িচ্চৌম্বক ক্ষেত্রের তরঙ্গ যা প্রসারিত হয় যেখানে পদার্থ স্থানীয় কণা (localized particles) দ্বারা গঠিত। ১৯০০ সালে, এই ধারণা সন্ধেহযুক্ত হয় যখন কৃষ্ণবস্তু বিকিরণ তত্ত্বের অনুসন্ধানের সময় মাক্স প্লাংক উত্থাপিত করেন যে আলো স্বতন্ত্র কোয়ান্টা শক্তিতে নির্গত হয়। ১৯০৫ সালে একে সম্যকভাবে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়। প্ল্যাঙ্কের অনুসন্ধানকে বিভিন্নভাবে ব্যাপ্ত করে, আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার সাথে এর সম্পর্ক সহ, আলবার্ট আইন্সটাইন উত্থাপিত করেন যে আলো এছাড়াও প্রসারিত হয় এবং কোয়ান্টায় শোষিত হয়, যা এখন ফোটন হিসেবে পরিচিত। প্লাঙ্ক-আইনস্টাইন অন্বয় থেকে এই কোয়ান্টার শক্তি পাওয়া যেতে পারেঃ

এবং ভরবেগ

যেখানে ν (নিউ) ও λ (ল্যাম্বডা) হলো যথাক্রমে কম্পাঙ্কতরঙ্গ দৈর্ঘ্য, c হলো আলোর গতিবেগ এবং h হলো প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক[3] আধুনিক রীতিতে কম্পাংককে f দ্বারা প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী দুই দশকে রবার্ট মিলিকানআর্থার কম্পটন কর্তৃক আইনস্টাইনের স্বীকার্য প্রমাণিত হয়েছে।

দ্য ব্রোয়ি প্রকল্প

Thumb
দ্য ব্রোয়ি তরঙ্গের প্রসারণ। জটিল প্রসস্থতার সত্যিকারের অংশটি নীল ও কাল্পনিক অংশটি সবুজ। কোনো নির্দিষ্ট অবস্থান x কণাটি খুজে পাওয়ার সম্ভবনা (রঙের অস্বচ্ছতা দ্বারা দেখানো হয়েছে) তরঙ্গরূপে ছড়িয়ে পরে; কণাটির কোনো নির্দিষ্ট অবস্থান নেই। প্রসস্থতা শূন্যের উপরে বৃদ্ধি পেলে বক্রতা কমে যায় ফলে প্রসস্থতা আবার কমে যায় এবং উল্টোটাও সঠিক। এর ফলাফল হলো একটি বিবর্তিত প্রসস্থতাঃ একটি তরঙ্গ। উপরেঃ সমতল তরঙ্গ। নীচেঃ ওয়েভ প্যাকেট

১৯২৪ সালে পিএইচডি গবেষণামূলক প্রবন্ধে (থিসিস) দ্য ব্রোয়ি উত্থাপন করেন যে ঠিক যেমন আলোর তরঙ্গ ও কণা উভয়ের মতই বৈশিষ্ট্য রয়েছে, ইলেক্ট্রনেরও তেমনই তরঙ্গের মত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পূর্বের অংশে বর্ণিত ভরবেগের সমীকরণটিকে নতুনভাবে সাজিয়ে আমরা প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক h এর মাধ্যমে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য, λ ইলেক্ট্রনের সাথে জড়িত ও এর ভরবেগ p এর মাঝে সম্পর্ক খুজে পাইঃ [4]

বর্তমানে এটি জানা যে, অন্বয়টি সকল পদার্থের জন্য প্রযোজ্য অর্থাৎ সকল পদার্থই তরঙ্গ ও কণা উভয়ের বৈশিষ্ট্যই প্রদর্শন করে।

১৯২৩-১৯২৪ সালে যখন আমি তরঙ্গ বলবিজ্ঞানের প্রথম মৌলিক ধারণাগুলি নিয়ে চিন্তা করি, আমি, তরঙ্গের যুগপৎ অবস্থান ও কণাসম্পর্কিত দিক যা আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন তার আলোক কোয়ান্টার তত্ত্বে ফোটনের জন্য উপস্থাপিত করেণ তা নিয়ে একটি সকল কণার জন্য প্রযোজ্য সত্য ভৌত সমন্বয় সম্পন্ন করার লক্ষ্যে চালিত হই।

দ্য ব্রোয়ি[5]

১৯২৬ সালে এর্ভিন শ্রোডিঙার একটি সমীকরণ প্রকাশ করেন যা বর্ণনা করে, কীভাবে পদার্থ তরঙ্গ বিবর্ধিত হয় - ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণের সদৃশ পদার্থ তরঙ্গ - এবং হাইড্রোজেনের শক্তি বর্ণালী পেতে এটি ব্যবহার করেন।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

আরো পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.