Loading AI tools
পাখি সম্পর্কিত অধ্যয়ন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পক্ষিবিজ্ঞান জীববিজ্ঞানের একটি শাখা যেটি শুধুমাত্র পাখি এবং পাখি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে গবেষণা ও অধ্যয়নের কাজে ব্যবহৃত হয়। পক্ষীবিজ্ঞান নিয়ে যিনি গবেষণা করেন, তাঁকে বলে পক্ষিবিদ। পক্ষীবিজ্ঞানের ইংরেজি অর্নিথোলজি। শব্দটি প্রাচীন গ্রীক ὄρνις (অর্নিস, অর্থাৎ পাখি) এবং λόγος (লোগোস, অর্থাৎ যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা বা বিস্তারিত জ্ঞান) শব্দ দু'টি থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এর সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা থেকে কয়েকটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য পক্ষীবিজ্ঞান আলাদা। পাখিদের নান্দনিক সৌন্দর্য্য, বৈচিত্র্য আর গবেষকের ইন্দ্রীয় নির্ভরশীলতা বিজ্ঞানের এ শাখাটিকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে।[1] এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ বিষয়ে ন্যূনতম বৈজ্ঞানিক জ্ঞান দিয়ে একজন শিক্ষানবীশ, এমনকি একজন শখের পাখি পর্যবেক্ষকের পক্ষেও সহজেই জ্ঞানের এ ধারাটিতে অবদান রাখা সম্ভব।
পক্ষীবিজ্ঞানের ইতিহাস খুব দীর্ঘ। বহু বছর ধরে পাখি বিষয়ক ব্যাপক হারে গবেষণা বিবর্তন, বাস্তুসংস্থান, প্রাণীর আচরণ, এক প্রজাতির সাথে আরেক প্রজাতির সম্পর্ক ইত্যাদি বহু অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে সহায়তা করেছে। নতুন নতুন তত্ত্ব ও শাখার উদ্ভব হয়েছে পক্ষীবিজ্ঞান গবেষণার মাধ্যমে। প্রজাতি, প্রজাত্যায়ন, প্রাণীদের সহজাত প্রবৃত্তি, খাদ্যজালক, প্রাকৃতিক জ্ঞান, সংরক্ষণ ইত্যাদি সঙ্গায়নে পক্ষীবিজ্ঞান বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। পক্ষীবিজ্ঞানের প্রাথমিক দিকে মূল উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বর্ণনা, তাদের আবাসস্থল ও দৃশ্যমান আচরণ লিপিবদ্ধ ও অধ্যয়ন করা। আধুনিককালে পক্ষীবিদরা পাখি বিষয়ক আরও সূক্ষ্ম ও নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে এ বিষয়ে নানান নতুন প্রকল্প ও তত্ত্বের উদ্ভব হচ্ছে, অজানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত অধিকাংশ আধুনিক তত্ত্ব অন্যসব প্রাণীদের (স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, পতঙ্গ ইত্যাদির) ক্ষেত্র প্রযোজ্য হয় বলে আজকাল কেবল পক্ষীবিদ বলে নিজেকে পরিচয় দেন এমন বিজ্ঞানী খুঁজে পাওয়া ভার।[2] অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে পরীক্ষাগারের ভেতরে ও মাঠপর্যায়ে যেমন অসংখ্য প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে, তেমনি বহু নতুন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির উদ্ভব হচ্ছে।[3]
শব্দ অণুবীক্ষণের উৎপত্তি গ্রিক পংক্তিবিদ্যা থেকে আসে এবং ১৭ শতকের শেষের দিকে লাতিন ভাষাবিজ্ঞান অর্থ পাখি বিজ্ঞান।[4]
জীববিজ্ঞানের ইতিহাসেই পক্ষীবিজ্ঞানের ইতিহাস সম্পর্কিত রূপরেখা পাওয়া যায়। প্রাথমিক দিকে পক্ষীবিজ্ঞানের চর্চা ছিল বর্ণনামূলক। পরবর্তীতে বর্ণনামূলক থেকে নমুনা বা ঘটনা সনাক্তকরণের দিকে পক্ষীবিজ্ঞানীরা ঝুঁকে পড়েন। আধুনিক যুগে সেসব নমুনার পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ও ঘটনা ঘটার কারণ খুঁজে বের করার ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষের সাথে পাখপাখালির নিবিড় সম্পর্ক। সেসময়ে পাখি সম্পর্কে মানুষের মনে নিশ্চিতভাবেই কৌতূহল জাগে এবং সেসব কৌতূহলের ফলে সৃষ্ট অজানা প্রশ্নের উত্তরে সৃষ্টি হয় প্রচুর উপকথা, পুরাণ ও লোককাহিনী। তবে প্রাথমিক যুগে মানুষের সাথে পাখির সম্পর্ক ছিল কেবলই খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক। প্রাচীন প্রস্তর যুগে মানব বসতিতে ৮০ প্রজাতিরও বেশি পাখির হাড়ের সন্ধান পাওয়া গেছে।[5][6][7]
পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে পাখি বিষয়ক শব্দভাণ্ডার বেশ সম্বৃদ্ধ।[8] পাখিদের স্থানীয় নাম দেওয়া হয়েছে তাদের আচরণ অথবা নির্দিষ্ট কোন বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে (যেমন-পানিকাটা)। কয়েক প্রজাতির পাখির নাম দেওয়া হয়েছে তাদের ডাক অনুসরণ করে (যেমন-কাক)। এসব নামের কিছুকিছু এখনও বেশ প্রচলিত রয়েছে।[9] প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী রোগ নিরাময়ের জন্য পাখি বা পাখি থেকে উৎপন্ন দ্রব্যাদি ব্যবহার করে আসছে।[10] এসব নিরাময় পদ্ধতির কোন কোনটা সত্যিই কার্যকর। রোগ নিরাময়ের এসব পন্থা যুগ যুগ ধরে বংশধর থেকে বংশধরে (প্রধানত মৌখিকভাবে) হস্তান্তর করা হয় (দেখুন- এথনোঅর্নিথোলজি)।[11][12] বুনো পাখি শিকার করা বা তাদেরকে পোষ মানানোর জন্য তাদের সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞানের প্রয়োজন। হাঁস-মুরগি পালন আর ফ্যালকনরি বা বাজবিদ্যা সম্পর্কে বহু আগে থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় চর্চা হয়ে আসছে। খ্রিস্টপূর্ব ২৪৬ সালে চীনে ও খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ সালের দিকে প্রাচীন মিশরে কৃত্রিমভাবে হাঁস-মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর প্রক্রিয়া জানা ছিল।[13] মিশরীয়দের হায়ারোগ্লিফিকে পাখিদের বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। হায়ারোগ্লিফিকে এসব পাখিদের একটু অন্যভাবে উপস্থাপন করা হলেও এরা কী প্রজাতির পাখি তা স্পষ্ট বোঝা যায়।
প্রাচীনকালে লিখিত নথিপত্র থেকে বিভিন্ন প্রজাতির অস্তিত্ব ও বিস্তৃতি সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য জানা যায়। যেমন গ্রিক ঐতিহাসিক জেনোফন প্রাচীন অসিরিয়ায় উটপাখি দেখার কথা লিপিবদ্ধ করেছেন। তাঁর লেখা থেকে বর্তমানে জানা গেছে যে উটপাখির একটি উপপ্রজাতির আবাস ছিল এশিয়া মাইনরে। বর্তমানে এ উপপ্রজাতিটি বিলুপ্ত। অন্যসব প্রাচীন নথিপত্রের মধ্যে বেদে (খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৮০০) পাখিদের বিষয়ে জটিল বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কোকিলের অন্যের বাসায় ডিম পাড়ার যে স্বভাব (দেখুন-বাসা পরজীবীতা) তা সর্বপ্রথম এ গ্রন্থেই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।[14] প্রাচীন যুগে ভারত, পারস্য, চীন ও জাপানে পাখি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য লিপিবদ্ধ করা ছাড়াও অসংখ্য মূল্যবান ও বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক পাখির চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।[15]
খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ সালে অ্যারিস্টটল তাঁর "ইস্তোরিয়া আনিমালিয়াম" (Historia Animalium)[16] গ্রন্থে পাখিদের পরিযায়ন, ডিম পাড়া, পালক পরিবর্তন এবং জীবনচক্র বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করেন। তবে তিনি পাখিদের বিষয়ে অনেক ভুল ও অনুমাননির্ভর তথ্যও প্রদান করেন। তাঁর মতে আবাবিলেরা নাকি শীতকালে শীতনিদ্রায় যায়। তাঁর এ তথ্য এত চরমভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে, ১৮৭৮ সালে এলিয়ট কুয়েজ আবাবিলদের শীতনিদ্রার সপক্ষে মোট ১৪২টি বই খুঁজে পান। খুব অল্প কিছুসংখ্যক বই পাওয়া গিয়েছিল যেগুলো এ তথ্যের বিরোধিতা করেছে।[17][18] আরেকটি ভুল ধারনার উদ্ভব বার্নাকল রাজহাঁসের প্রজননকে ঘিরে। এ প্রজাতির বাসা খুঁজে পাওয়া বেশ দুরূহ কাজ। সেসময়ে মানুষের ধারণা ছিল বার্নাকল রাজহাঁসের জন্ম একধরনের ক্রাস্টেশিয়ান থেকে। এগার শতক পর্যন্ত এ ধারণা প্রচলিত ছিল।[19]
ফ্যালকনরি বা বাজবিদ্যার চর্চা প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় ছিল। দ্বিতীয় সার্গনের (খ্রিস্টপূর্ব ৭২২-৭০৭) সময়ে এ বিষয়ের পক্ষে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়। ইউরোপে হান ও অ্যালান জাতির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দে পূর্ব ইউরোপে ফ্যালকনরির চর্চা শুরু হয়। দ্বিতীয় ফ্রেডরিক (১১৯৪-১২৫০) আরবে যুদ্ধ করার সময় আরবি বাজবিদ্যার সাথে পরিচিত হন। তিনি লাতিন ভাষায় এ বিষয়ক বই অনুবাদ করান এবং নিজস্ব মিনাজেরিতে পাখিদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। শকুনের চোখ বেঁধে সামনে খাবার রেখে তিনি প্রমাণ করেন যে শকুনেরা গন্ধ শুঁকে খাবারের সন্ধান পায় না, চোখে দেখে খাবার খুঁজে বের করে। ৩০ বছর ধরে তিনি যে গবেষণা করেন তার ফলাফল ১২৪০ সালে De Arte Venandi cum Avibus (দ্যা আর্ট অব হান্টিং উইথ বার্ডস) নামে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। এ রচনাটি পাখিদের স্বভাব-চরিত্রের ওপর প্রথম কয়েকটি রচনার একটি।[20]
পাখি পর্যবেক্ষণের জন্য ক্ষেত্রের চশমা বা টেলিস্কোপগুলির ব্যবহার ১৮২০ ও ১৮৩০-এর দশকে জে. ডোভাস্টনের মত অগ্রগামীদের সাথে শুরু হয় (যারা পাখিদের খাবারের জন্যও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে) কিন্তু ১৮৮০ পর্যন্ত যে নির্দেশনা ম্যানুয়াল অপটিকাল ব্যবহারের উপর জোর দেয়নি যেমন প্রথম শ্রেণীর টেলিস্কোপ বা ক্ষেত্রের কাচ হিসাবে সাহায্য।[21][22]
প্রাণীবিদ্যা এর সরঞ্জাম এবং কৌশল বিভিন্ন এবং নতুন উদ্ভাবন এবং পন্থা দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই কৌশলগুলি বিস্তৃতভাবে যেগুলি নমুনা এবং ক্ষেত্রগুলিতে ব্যবহৃত হয় সেগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শ্রেণিগুলির অধীনে পরিচালিত হতে পারে তবে শ্রেণিবিন্যাস ঘনী এবং অনেক বিশ্লেষণের পদ্ধতি ল্যাবরেটরি এবং ক্ষেত্র উভয়ই ব্যবহারযোগ্য এবং ক্ষেত্র এবং পরীক্ষাগারের সমন্বয় প্রয়োজন হতে পারে কৌশল।
আধুনিক পাখি গবেষণার নিকটতম দৃষ্টিভঙ্গিগুলি ডিম সংগ্রহের একটি অটিজম হিসাবে পরিচিত একটি অভ্যাস জড়িত। সংগ্রহের সময় অনেক শয়তানদের জন্য এটি একটি প্রয়াস হয়ে ওঠে যে এই প্রাথমিক ডিম সংগ্রহের সাথে যুক্ত লেবেলগুলি তাদের পাখির প্রজননের গুরুতর অধ্যয়নের জন্য অবিশ্বস্ত হয়। ডিম সংরক্ষণের জন্য একটি ছোট্ট গর্তটি ফুলে গিয়েছিল এবং বিষয়বস্তুটি বের করা হয়েছিল। এই কৌশল 1830 এর কাছাকাছি ঘোরা ড্রিলের আবিষ্কারের সাথে মানানসই হয়ে ওঠে।[23] এগার সংগ্রহটি এখন আর জনপ্রিয় নয় তবে ঐতিহাসিক জাদুঘর সংগ্রহগুলি কীটনাশক যেমন ফিজিওলজিতে ডি.ডি.টি.[24][25] মিউজিয়াম পাখি সংগ্রহগুলি করণীয় অধ্যয়নের জন্য একটি সম্পদ হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে থাকে।[26]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.