নীল শুমচা (বৈজ্ঞানিক নাম: Pitta cyanea) (ইংরেজি: Blue Pitta) বা আসমানি সুমচা Pittidae (পিট্টিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Hydrornis (হাইড্রর্নিস) গণের এক প্রজাতির ছোট রঙচঙে বনচর পাখি।[1][2] নীল শুমচার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ নীল শুমচা (তেলুগু: pitta = আদুরে; ল্যাটিন: cyanea = নীল)।[2] সারা পৃথিবীতে প্রায় ১০ লাখ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এদের আবাস।[3] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমে গেলেও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[4] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[2] পৃথিবীতে এদের সংখ্যা সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা যায় নি।[3]

বিস্তৃতি

নীল শুমচার মূল আবাস দক্ষিণদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়াভিয়েতনাম জুড়ে এদের বিস্তৃতি।[4]

উপপ্রজাতি

নীল শুমচার মোট তিনটি উপপ্রজাতি শনাক্ত করা গেছে।[5] উপপ্রজাতিগুলো হল:

  • P. c. cyanea (Blyth, 1843) - বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পূর্ব ভারত, মায়ানমার, চীন (দক্ষিণ ইউনান প্রদেশ), দক্ষিণ থাইল্যান্ড, উত্তর-পূর্ব লাওস ও ভিয়েতনাম জুড়ে এদের বিস্তৃতি।
  • P. c. aurantiaca (Delacour & Jabouille, 1928) - এদের মূল আবাস দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ-পশ্চিম কম্বোডিয়ায়।
  • P. c. willoughbyi (Delacour, 1926) - মধ্য লাওস ও উত্তর ভিয়েতনাম এদের মূল আবাস।

বর্ণনা

নীল শুমচা ডোরাকাটা পেট ও ঘন নীল পিঠওয়ালা ছোট বনচর পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৩ সেন্টিমিটার, ডানা ১১ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.৩ সেন্টিমিটার, পা ৪.৪ সেন্টিমিটার ও লেজ ৬ সেন্টিমিটার। ওজন মাত্র ১১০ গ্রাম।[2] স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারায় একটু পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির পিঠের দিকটা ঘন নীল। মাথার চাঁদির পিছনের অংশ ও ঘাড়ের পিছন দিক লাল। কপালে একটি কালো সরু মধ্যডোরা রয়েছে। কপাল ও মাথার চাঁদির সামনের অংশ সবজে-ধূসর। ঠোঁট থেকে চোখ হয়ে ঘাড়ের পিছন পর্যন্ত একটি প্রশস্ত কালো ডোরা চলে গেছে। গলায় একটি অস্পষ্ট কালো দাগ দেখা যায়, এটি গুম্ফডোরা। ভ্রুরেখা, গাল ও গলার অংশবিশেষ হালকা হলুদ বর্ণের। ডানার প্রান্ত পালক কালচে। কাঁধ-ঢাকনি, দেহের পিছনের অংশ, ডানা ও লেজউপরি-ঢাকনি নীল। সাদা দেহতলের পুরোটায় অসংখ্য ঘন নীল তিলা ও ডোরা রয়েছে, যা অনেকটা মাছের আঁশের মত দেখায়। স্ত্রী পাখির ক্ষেত্রে ঘাড়ের পেছনের পট্টিটি কমলা রঙের ও ছোট। কাঁধ-ঢাকনি কালচে জলপাই রঙের। কোমর নীল এবং লেজউপরি-ঢাকনি ও ডানা নীলাভ-জলপাই। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ের চোখ কালচে বা লালচে-বাদামি। ঠোঁট সোজা ও কালো। পা শক্তিশালী। পা ও পায়ের পাতা পাটকিলে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের দিক কালচে বাদামি। দেহের নিচে ঘন ফিকে ডোরা দেখা যায়। লেজ নীল।[2]

স্বভাব

নীল শুমচা চিরসবুজ বনতলে ঘন গুল্ম, বাঁশঝাড় ও বনের খাদে বিচরণ করে। সচরাচর একা বা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। এরা লাফিয়ে অন্ধকার বনতলে ঝরা পাতা উল্টে ও নরম মাটিতে ঠোঁট দিয়ে খাবার খুঁজে বেড়ায়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে গুবরে পোকা, কীট, স্থলজ শামুক, পিঁপড়া ও অন্যান্য পোকামাকড়। ভোরে আর গোধূলিতে এরা বেশি কর্মচঞ্চল থাকে। এরা খুব ছটফটে পাখি। ভয় পেলে এরা গাছের ডালে উড়ে চলে যায়। মাটিতে লাফানোর সময় তীক্ষ্ন কণ্ঠে শিস দিয়ে ডাকে: পিউ-হুয়িট.....

প্রজনন

সাধারণত মে থেকে জুলাই নীল শুমচার প্রধান প্রজনন ঋতু। স্থানভেদে প্রজনন মৌসুমে বিভিন্নতা দেখা যায়। এসময় এরা ঘন চিরসবুজ বনে এরা বাসা বানায়। মাটিতে অথবা ফার্নে ঢাকা গাছের কান্ডে এরা ঢিলেঢালা বলের মত বাসা বানায়। বাসার মূল উপাদান বাঁশপাতা, ঘাস বা মূল। বাসা বানানো হয়ে গেলে ৪-৬টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। ডিমের মাপ ২.৮ × ২.১ সেন্টিমিটার।[2]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.