দিয়েগো মারাদোনা
আর্জেন্টিনীয় ফুটবল খেলোয়াড় ও ম্যানেজার / From Wikipedia, the free encyclopedia
দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা (স্পেনীয়: Diego Maradona, স্পেনীয় উচ্চারণ: [ˈdjeɣo maɾaˈðona]; ৩০ অক্টোবর ১৯৬০ – ২৫ নভেম্বর ২০২০; দিয়েগো মারাদোনা নামে সুপরিচিত) একজন আর্জেন্টিনীয় পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় এবং ম্যানেজার ছিলেন। ভক্তদের কাছে এল পিবে দে অরো (সোনালী বালক)[7] ডাকনামে পরিচিত মারাদোনা তার খেলোয়াড়ি জীবনের অধিকাংশ সময় আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্স এবং নাপোলির হয়ে একজন মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন। তিনি মূলত একজন আক্রমণাত্মক মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে খেললেও মাঝেমধ্যে দ্বিতীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন। বহু ফুটবল খেলোয়াড় এবং বিশেষজ্ঞ তাকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে গণ্য করেন।[8][9] মারাদোনাকে ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে বিতর্কিত এবং গণমাধ্যমে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৯১ সালে ইতালিতে মাদক পরীক্ষায় কোকেইনের জন্য ধরা পড়ায় তাকে ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপে ইফিড্রিন পরীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফলের জন্য তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে তিনি তার কোকেইন নেশা ত্যাগ করেন। তার কড়া রীতির জন্য সাংবাদিক-ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ এবং তার মধ্যে বেশ কিছু সময় মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা[1] | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | (১৯৬০-১০-৩০)৩০ অক্টোবর ১৯৬০ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম স্থান | লানুস, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২৫ নভেম্বর ২০২০(2020-11-25) (বয়স ৬০) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যুর স্থান | তিগ্রে, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উচ্চতা | ১.৬৫ মিটার (৫ ফুট ৫ ইঞ্চি)[2][3] | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মাঠে অবস্থান |
মধ্যমাঠের খেলোয়াড় আক্রমণভাগের খেলোয়াড়[4][5][6] | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
যুব পর্যায় | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৬৭–১৯৭১ | এস্ত্রেয়া রোহা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৭০–১৯৭৪ | লস সেবোয়িতাস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৭৫–১৯৭৬ | আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্স | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়* | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | ম্যাচ | (গোল) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৭৬–১৯৮১ | আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্স | ১৬৭ | (১১৬) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৮১–১৯৮২ | বোকা জুনিয়র্স | ৪০ | (২৮) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৮২–১৯৮৪ | বার্সেলোনা | ৩৬ | (২২) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৮৪–১৯৯১ | নাপোলি | ১৮৮ | (৮১) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯২–১৯৯৩ | সেভিয়া | ২৬ | (৫) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৩–১৯৯৪ | নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ | ৫ | (০) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৫–১৯৯৭ | বোকা জুনিয়র্স | ৩০ | (৭) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
মোট | ৪৯১ | (২৫৯) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৭৭–১৯৭৯ | আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ | ১৫ | (৮) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৭৭–১৯৯৪ | আর্জেন্টিনা | ৯১ | (৩৪) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
পরিচালিত দল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৪ | তেক্সতিল মান্দিয়ু | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৫ | রেসিং ক্লাব | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০৮–২০১০ | আর্জেন্টিনা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১১–২০১২ | আল-ওয়াসল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৩–২০১৭ | দেপোর্তিবো রিয়েস্ত্রা (সহকারী) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৭–২০১৮ | ফুজাইরাহ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৮–২০১৯ | দোরাদোস সিনালোয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৯–২০২০ | লা প্লাতা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||
অর্জন ও সম্মাননা
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে |
১৯৬৭–৬৮ মৌসুমে, আর্জেন্টিনীয় ফুটবল ক্লাব এস্ত্রেয়া রোহার যুব পর্যায়ের হয়ে খেলার মাধ্যমে মারাদোনা ফুটবল জগতে প্রবেশ করেন এবং পরবর্তীতে লস সেবোয়িতাস এবং আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের যুব দলের হয়ে খেলার মাধ্যমেই তিনি ফুটবল খেলায় বিকশিত হয়েছেন। ১৯৭৬–৭৭ মৌসুমে, আর্জেন্টিনীয় ফুটবল ক্লাব আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের মূল দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেন; আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের ৫ মৌসুমে ১৬৭ ম্যাচে অংশগ্রহণ করার পর তিনি প্রায় ১.৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আরেক আর্জেন্টিনীয় ক্লাব বোকা জুনিয়র্সে যোগদান করেন। বোকা জুনিয়র্সে মাত্র ১ মৌসুমে একটি লিগ শিরোপা জয়লাভ করার পর, প্রায় ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে (যা উক্ত সময়ের বিশ্ব রেকর্ড ছিল) স্পেনীয় ক্লাব বার্সেলোনায় যোগদান করেন; যেখানে সেসার লুইস মেনোতির অধীনে তিনি তিনটি শিরোপা জয়লাভ করেছেন। বার্সেলোনার হয়ে ২ মৌসুমে সকল প্রতিযোগিতায় ৪৫ ম্যাচে ৩০টি গোল করার পর, প্রায় ৭ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ইতালীয় ক্লাব নাপোলিতে যোগদান করেন; এই স্থানান্তরের মাধ্যমে মারাদোনা পুনরায় বিশ্ব রেকর্ড করেন। মারাদোনা ফুটবল ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দুইবার স্থানান্তরের বিশ্বরেকর্ড ভঙ্গ করেছেন।[10] পরবর্তীতে, তিনি সেভিয়া এবং নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেছেন। সর্বশেষ ১৯৯৫–৯৬ মৌসুমে, তিনি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে পুনরায় বোকা জুনিয়র্সে যোগদান করেছিলেন, যেখানে তিনি ২ মৌসুম অতিবাহিত করে অবসর গ্রহণ করেছেন।
১৯৭৭ সালে, মারাদোনা আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে আর্জেন্টিনার বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন, যেখানে তিনি ১৫ ম্যাচে ৮টি গোল করেছিলেন। একই বছর, মারাদোনা আর্জেন্টিনার হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন, যেখানে তিনি সর্বমোট ৯১ ম্যাচে ৩৪টি গোল করেছেন। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ৪টি ফিফা বিশ্বকাপ (১৯৮২, ১৯৮৬ ১৯৯০ এবং ১৯৯৪) এবং ৩টি কোপা আমেরিকায় (১৯৭৯, ১৯৮৭ এবং ১৯৮৯) অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ২–১ গোলে জয়লাভ করার ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে মারাদোনার করা উভয় গোলই ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। প্রথম গোলটি ছিল হ্যান্ডবল, যা “হ্যান্ড অফ গড” নামে খ্যাত এবং দ্বিতীয় গোলটি মারাদোনা প্রায় ৬০ মিটার দূর থেকে ড্রিবলিং করে পাঁচজন ইংরেজ রক্ষণভাগের খেলোয়াড়কে পাশ কাটিয়ে করেন। ২০০২ সালে ফিফার ভক্তগণ ভোটের মাধ্যমে সেটি শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত করেছে।[11]
১৯৯৪ সালে, মারাদোনা আর্জেন্টিনীয় ফুটবল ক্লাব তেক্সতিল মান্দিয়ুর ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে ম্যানেজার হিসেবে ফুটবল জগতে অভিষেক করেন। তেক্সতিল মান্দিয়ু-এ মাত্র ১ বছরের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করার পর তিনি রেসিং ক্লাবে ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। অতঃপর প্রায় ১৩ বছর ফুটবল হতে দূরে থাকার পর ২০০৮ সালে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার অধীনে আর্জেন্টিনা ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে প্রায় ২ বছর হিসেবে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি আল-ওয়াসল, দেপোর্তিবো রিয়েস্ত্রা, ফুজাইরাহ এবং দোরাদোস সিনালোয়ার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন।[12][13] ২০১৮ সালের মে মাসে, মারাদোনা বেলারুশীয় ক্লাব দিনামো ব্রেস্তের নতুন সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন,[14] তবে তিনি জুলাই মাসে উক্ত পদের সকল কার্যভার গ্রহণ করেন।[15] সর্বশেষ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, তিনি লা প্লাতায় ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেছিলেন, যেখানে তিনি তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত ছিলেন।[16]
ব্যক্তিগতভাবে, মারাদোনা বেশ কিছু পুরস্কার জয়লাভ করেছেন, যার মধ্যে ১৯৮৬ সালে গোল্ডেন বল এবং ১৯৯০ সালে ব্রোঞ্জ বল জয় অন্যতম। এছাড়াও তিনি ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত ফিফা শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়ের (পেলের সাথে যৌথভাবে)[17][18] খেতাব অর্জন করেছেন। দলগতভাবে, ঘরোয়া ফুটবলে, মারাদোনা সর্বমোট ৯টি শিরোপা জয়লাভ করেছেন, যার মধ্যে ১টি বোকা জুনিয়র্সের হয়ে, ৩টি বার্সেলোনার হয়ে এবং ৬টি নাপোলির হয়ে জয়লাভ করেছেন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়, সর্বমোট ৩টি শিরোপা জয়লাভ করেছেন; ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপ শিরোপা জয় অন্যতম।