![cover image](https://wikiwandv2-19431.kxcdn.com/_next/image?url=https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/2/2b/Various_dinosaurs2.png/640px-Various_dinosaurs2.png&w=640&q=50)
ডাইনোসর
অধুনা অবলুপ্ত বৃহদাকার মেরুদণ্ডী প্রাণী ও পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী / From Wikipedia, the free encyclopedia
ডাইনোসর বলতে জনপ্রিয় ধারণায় একটি অধুনা অবলুপ্ত, সাধারণত বৃহদাকার মেরুদণ্ডী প্রাণীগোষ্ঠীকে বোঝায়। এরা পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী এবং বৈজ্ঞানিকদের অনুমান এই প্রভাবশালী প্রাণীরা প্রায় ১৬ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে। প্রথম ডাইনোসরের বিবর্তন হয়েছিল আনুমানিক ২৩ কোটি বছর পূর্বে। ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর পূর্বে একটি বিধ্বংসী প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডাইনোসরদের প্রভাবকে পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে দেয়। তাদের একটি শ্রেণীই কেবল বর্তমান যুগ পর্যন্ত টিকে থাকতে পেরেছে বলে ধারণা করা হয়: শ্রেণিবিন্যাসবিদরা ধারণা করেন আধুনিক পাখিরা থেরোপড ডাইনোসরদের সরাসরি বংশধর[1]; জীবাশ্ম দ্বারা প্রাপ্ত নিদর্শন থেকে জুরাসিক যুগে সংঘটিত এই বিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া যায়[2]।
ডাইনোসর সময়গত পরিসীমা: অন্ত্য ট্রায়াসিক–হলোসিন, ২৩.১৪–৬.৬ কোটি | |
---|---|
![]() | |
কয়েকটি ডাইনোসর কঙ্কালের জীবাশ্ম। ঘড়ির কাঁটার গতিমুখ বরাবর একদম উপরে বাঁ দিক থেকে- মাইকোর্যাপ্টর গুই (একটি ডানাওয়ালা থেরোপড), | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
উপপর্ব: | মেরুদণ্ডী |
শ্রেণী: | সরোপসিডা |
উপশ্রেণী: | ডায়াপসিড |
অধঃশ্রেণী: | আর্কোসরোমর্ফা |
মহাবর্গ: | ডাইনোসরিয়া * ওয়েন, ১৮৪২ |
বর্গ এবং উপবর্গ | |
শ্রেণিবিন্যাসগত, অঙ্গসংস্থানগত ও পরিবেশগত দিক থেকে ডাইনোসর কথাটিকে বিভিন্ন প্রকারের কতকগুলি প্রাণীর একটি সাধারণ নাম হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। জীবাশ্ম প্রমাণ থেকে পুরাজীববিদরা উড়তে অক্ষম ডাইনোসরদের ৫০০ এরও বেশি গণ[3] ও ১০০০ এরও বেশি প্রজাতিকে শনাক্ত করেছেন[4]। সব কয়টি মহাদেশেই ডাইনোসরদের জীবন্ত ও প্রস্তরীভূত নানা প্রজাতির দেখা পাওয়া যায়[5], যাদের মধ্যে শাকাহারী ও মাংসাশী- উভয় প্রকার উদাহরণই রয়েছে। যদিও উৎপত্তিগতভাবে ডাইনোসরেরা দ্বিপদ, কিন্তু অবলুপ্ত অনেক চতুষ্পদ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে, এবং কোনো কোনো প্রজাতি গমনের সময় প্রয়োজনমত দুই পা অথবা চার পা ব্যবহার করতে পারত। সমস্ত বিভাগের ডাইনোসরদের মধ্যেই শিং, হাড় ও চামড়ার পাত প্রভৃতি প্রদর্শনমূলক অঙ্গসংস্থানের নিদর্শন রয়েছে, এবং কোনো কোনো অবলুপ্ত প্রজাতির কঙ্কালে হাড়ের বর্ম ও কাঁটার মত গঠন লক্ষ্য করা যায়। বিভাগ নির্বিশেষে ডাইনোসরদের অন্যতম সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল ডিম পাড়া ও বাসা বানানোর অভ্যাস। ওড়ার খাতিরে কিছু শারীরবৃত্তীয় বাধ্যবাধকতার জন্য আধুনিক পাখিরা আকারে ছোট হলেও প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরদের অনেকেই ছিল বিশালদেহী। বৃহত্তম সরোপড ডাইনোসরেরা ৫৮ মিটার (১৯০ ফুট) পর্যন্ত দীর্ঘ এবং ৯.২৫ মিটার (৩০ ফুট ৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত উঁচু হত[6]। তবুও উড়তে অক্ষম ডাইনোসর মাত্রই বিশালাকার হবে- এই ধারণাটা ভুল। আবিষ্কৃত জীবাশ্মের বেশির ভাগই বড় মাপের ডাইনোসর- এ'কথা ঠিক। কিন্তু এর কারণ হল জীবাশ্মের আকার বড় হলে তা প্রকৃতির প্রতিকূলতা সহ্য করে প্রস্তরীভবন পর্যন্ত সহজে টিকে থাকতে পারে। আসলে অনেক ডাইনোসরই ছিল খুদে; যেমন, জিজিয়ানিকাস (Xixianykus) নামক ডাইনোসরটির দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৫০ সেন্টিমিটার (প্রায় ২০ ইঞ্চি)।
যদিও 'ডাইনোসর' কথাটার আক্ষরিক অর্থ ভয়াবহ গিরগিটি, কিন্তু ডাইনোসরেরা প্রকৃতপক্ষে গিরগিটি নয়। বরং তারা সরীসৃপ শ্রেণীর অন্তর্গত একটা আলাদা গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, যাদের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ অনেকাংশে বর্তমান সরীসৃপদের থেকে পৃথক; যেমন, তারা ছিল উষ্ণশোণিত এবং দ্বিপদ গমনে সক্ষম। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে অর্থাৎ পাখিদের ডাইনোসর বলে চিহ্নিত করার আগে পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকরা ডাইনোসরদের অলস এবং অনুষ্ণশোণিত বলে মনে করতেন। ১৯৭০ এর দশক এবং তৎপরবর্তী অধিকাংশ গবেষণা থেকে অবশ্য জানা গেছে যে সমস্ত ডাইনোসর ছিল উচ্চ বিপাক হার যুক্ত, অতিমাত্রায় সক্রিয় প্রাণী এবং তারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগের জন্য বিভিন্নভাবে অভিযোজিত হয়েছিল।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ডাইনোসরের প্রথম জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। এরপর থেকে পর্বতগাত্র বা শিলায় আটকা পড়ে থাকা ডাইনোসরের কঙ্কাল পৃথিবীর বিভিন্ন জাদুঘরে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ডাইনোসরেরা বর্তমান বিশ্ব সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে। প্রধানত কোনো কোনো অবলুপ্ত ডাইনোসর প্রজাতির বিশাল আয়তন এবং তাদের সম্ভাব্য হিংস্র স্বভাবের দরুন তারা শিশু ও বয়স্ক সবার কাছেই বিশেষ আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সর্বাধিক বিক্রিত বই এবং জুরাসিক পার্ক ইত্যাদি প্রচুর কাটতি পাওয়া চলচ্চিত্রে ডাইনোসর প্রসঙ্গ এসেছে এবং এ সংক্রান্ত নতুন যে কোনো আবিষ্কার গণমাধ্যমে বিশেষভাবে সম্প্রচার করা হচ্ছে।