Loading AI tools
মুখের একটি দৃশ্যমান অংশ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ঠোঁট হ'ল মানুষ সহ অনেক প্রাণীরই মুখের একটি দৃশ্যমান অংশ।
ঠোঁট নরম, সচল এবং খাদ্য গ্রহণ, শব্দ ও বাক্য উচ্চারণে খোলা-বন্ধ ক'রে সহায়তা করে। মানুষের ঠোঁট একটি স্পর্শকাতর সংবেদনশীল অঙ্গ এবং চুম্বন ও ঘনিষ্ঠতার মতো ক্রিয়াকলাপের সময় এটি কামোত্তেজক কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে।
উপরের এবং নীচের ঠোঁটকে যথাক্রমে "মুখের উপরের ঠোঁট" এবং "মুখের নীচের ঠোঁট" হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[1][2] ঠোঁটের চারপাশের সাথে মুখের ত্বকের যে সন্ধিক্ষণ দেখা যায় তা হ'ল ভারমেলিয়ন সীমানা,[3] এবং সীমানার মধ্যবর্তী সাধারণত লালচে অংশকে বলা হয় ভারমেলিয়ন অঞ্চল। [4] উপরের ঠোঁটের ভারমেলিয়ন সীমানা কিউপিড ধনুক নামে পরিচিত।[5] উপরের ঠোঁটের কেন্দ্রে অবস্থিত মাংসল অংশ হ'ল একটি টিউবার্কেল।[6] অনুনাসিক সেপটাম পর্যন্ত বিস্তৃত উল্লম্ব খাঁজটিকে ফিল্ট্রাম বলা হয়।[7]
ঠোঁটের ত্বকে তিন থেকে পাঁচটি সেলুলার স্তর থাকে এবং তা সাধারণত মুখের ত্বকের তুলনায় খুব পাতলা হয়। মুখের ত্বকে ১৬টি স্তর থাকে। হালকা বর্ণের সাথে ঠোঁটের ত্বকে কম মেলানোসাইটস থাকে (এই কোষগুলি মেলানিন রঙ্গক উৎপাদন করে যা ত্বকের রঙের জন্য দায়ী)। এই কারণে রক্তবাহ ঠোঁটের ত্বকে উপস্থিত থাকে বলে সেটি উল্লেখযোগ্যভাবে লাল বর্ণের হয়ে থাকে। গাঢ় ত্বকের ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঠোঁটের ত্বকে আরও মেলানিন থাকে বলে এটি দৃশ্যত গাঢ় বর্ণের হয়। ঠোঁটের ত্বক মুখের বহির্মুখী ত্বক এবং মুখের অভ্যন্তরের অভ্যন্তরীণ শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি এর মধ্যে সীমানা গঠন করে।
ঠোঁটের ত্বক লোমশ নয় এবং সেখানে ঘর্ম গ্রন্থি নেই। তাই এতে ঘাম এবং শরীরের তেলের স্বাভাবিক সুরক্ষা স্তর থাকে না। এই সুরক্ষা ত্বককে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে, প্যাথোজেনগুলিকে বাধা দেয় এবং উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করে। এই সুরক্ষা ঠোঁটে অবর্তমান বলে ঠোঁট দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং সহজেই ফেটে যায়।
নীচের ঠোঁট প্রথম ফ্যারেনজিয়াল খিলান এর একটি শাখা ম্যান্ডিবুলার প্রমিন্যান্স থেকে গঠিত হয়। নীচের ঠোঁটটি দেহের ম্যান্ডিবল কে আবৃত করে রাখে। এটি ডিপ্রেসর ল্যাবি ইনফিরিয়র পেশী দ্বারা আবৃত এবং সীমানাটি অরবিকুলারিস ওরিস দিয়ে গঠিত।
উপরের ঠোঁটটি ম্যাক্সিলার পূর্ববর্তী পৃষ্ঠ কে আবৃত রাখে। এর উপরের অর্ধটি স্বাভাবিক ত্বকের বর্ণের হয় এবং এর কেন্দ্রস্থলে হাল্কা বর্ণ থাকে। সরাসরি নাকের নীচের অংশ ফিল্ট্রাম নামে পরিচিত। ভার্মিলিয়ন শব্দটি উপরের বা নীচের ঠোঁটের বর্ণযুক্ত অংশকে বোঝায়।
উপরের ঠোঁটের ভার্মিলিয়ন পাতলা এবং চ্যাপ্টা বৈশিষ্ট্যযুক্ত ফিল্ট্রাম হল গর্ভাবস্থায় মায়ের অ্যালকোহল গ্রহণের পরিচয় স্বরূপ এবং তার ফলে আজীবন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।
ঠোঁটের ত্বক হল স্তরীভূত স্কোয়ামাস এপিথেলিয়াম। মিউকাস মেমব্রেনটি সংবেদনশীল কর্টেক্স এর একটি অংশ এবং তাই অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়। ফ্রেনুলাম ল্যাবি ইনফেরিয়েরিস হ'ল নীচের ঠোঁটের ফ্রেমুলাম। ফ্রেমুলাম ল্যাবি সুপিরিওরিস হ'ল উপরের ঠোঁটের ফ্রেমুলাম।
যেহেতু নিজস্ব বিশেষ পেশী এবং সীমান্তের পেশী রয়েছে তাই ঠোঁট সহজেই নাড়ানো যায়। ঠোঁট দিয়ে খাওয়ার কাজ সাধিত হয়। যেমন এটি খাবার ধরে রাখা বা মুখে পোরার কাজ করে। এছাড়াও ঠোঁট দিয়ে মুখের বায়ু রোধ করার কাজ, খাবার এবং পানীয় ভিতরে রাখার কাজ এবং অযাচিত জিনিসকে মুখে ঢুকতে বাধা দেওয়ার কাজ সারে। ঠোঁট দিয়ে একটি সরু চোঙ্গ তৈরি করার মাধ্যমে মুখের চোষণ বাড়ানো-কমানো যায়। শিশুদের স্তন্যপান এর জন্য ঠোঁটের এই কাজটি অতি প্রয়োজনীয়। ঠোঁটের অন্যান্য কাজের প্রসঙ্গে বলা যায় তরল পান করার জন্য স্ট্র দিয়ে চুষে খেতেও ঠোঁট ব্যবহার করা হয়।
ঠোঁট বিভিন্ন শব্দ উৎপাদন করে এবং তার জন্য ঠোঁটের প্রধানত লেবিয়াল, বাইলেবিয়াল, এবং ল্যাবিওডেন্টাল অংশ ব্যঞ্জন ধ্বনির পাশাপাশি বৃত্তাকার স্বরধ্বণি উচ্চারণে স্বরযন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশরূপে অবস্থান করছে। ঠোঁট হুইসলিং সক্ষম এবং আমাদের ট্রাম্পেট, ক্ল্যারিনেট, বাঁশি এবং স্যাক্সোফোনের মতো বায়ু নির্ভর বাদ্যযন্ত্রের বাদনও ঠোঁটের সাহায্য নিয়ে করা হয়। শ্রবণশক্তি বিহীন মানুষ অসচেতনভাবে বা সচেতনভাবে লিপ রিড দ্বারা প্রকৃত শব্দ না শুনেই ঠোঁট নড়া দেখে বাক্যটি বুঝতে পারে।
ঠোঁটে অনেকগুলি স্নায়ু প্রান্ত রয়েছে এবং তা স্পর্শকাতর (স্পর্শ) অনুভূতির অংশ হিসাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। ঠোঁট স্পর্শ, উষ্ণতা এবং ঠান্ডা সম্পর্কে খুব সংবেদনশীল। তাই এটি শিশুদের অজানা জিনিস অন্বেষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক অঙ্গ রূপে কাজ করে।
বহু সংখ্যক স্নায়ুপ্রান্ত থাকার কারণে ঠোঁট একটি কামোত্তেজক কেন্দ্রর ভূমিকা নেয়। সেই কারণে ঠোঁট চুম্বন এবং ঘনিষ্ঠতা প্রকাশের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কোনও মহিলার ঠোঁট হ'ল তাঁর প্রজনন সক্ষমতার দৃশ্যমান বহিঃ প্রকাশ। মানুষের আকর্ষণ বিজ্ঞানের উপর সম্পাদিত গবেষণায় মনোবিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে কোনও মহিলার মুখের এবং যৌন আকর্ষণে বয়ঃসন্ধিকাল ও বিকাশকালে তাঁর হরমোনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। কোনও পুরুষের মুখের কাঠামোর উপর টেস্টোস্টেরন এর প্রভাবের বিপরীতে মহিলার ইস্ট্রোজেন এর প্রভাব বয়ঃসন্ধিকালে এবং পূর্ণতাকালে তুলনামূলকভাবে "শিশুসুলভ" এবং তারুণ্যভরা মুখের কাঠামো বজায় রাখতে সহায়তা করে। দেখা গেছে যে কোনও মহিলার যত বেশি ইস্ট্রোজেন থাকে তাঁর চোখ এবং ঠোঁট তত বেশি বিস্তারিত হয় যা আরও মহিলাসুলভ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে।[8] যৌন মনোবিদদের দ্বারা করা সমীক্ষায়[কে?] দেখা গেছে যে সর্বজনীনভাবে পুরুষ কোনও মহিলার পূর্ণ ঠোঁট বেশি যৌন আকর্ষণীয় বলে মনে করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] কোনও মহিলার ঠোঁট পুরুষদের কাছে যৌন আকর্ষণীয় কারণ সেটি কোনও মহিলার স্বাস্থ্য এবং প্রজনন সক্ষমতার জৈবিক সূচক হিসাবে কাজ করে। কোনও মহিলার লিপস্টিক (বা কোলাজেন ঠোঁটের বর্ধন)) এমন একটি ধারণা সৃষ্টি করে যে সেই মহিলার আসলের চেয়ে বেশি ইস্ট্রোজেন রয়েছে এবং এইভাবে তিনি আরও প্রজননক্ষম এবং আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার এই সুযোগটি গ্রহণ করার চেষ্টা করেন। [9]
ঠোঁটের আকার পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই যৌন আকর্ষণের সাথে যুক্ত। মহিলারা পুরুষালী ঠোঁটযুক্ত পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হন। পুরুষালী এই ঠোঁটের এই আকার সাধারণত মাঝারি থেকে শুরু করে খুব বড় বা খুব ছোট হয় না এবং সেটি যেন দৃঢ় ও সংবেদনশীল হয়। সাধারণভাবে গবেষকরা দেখেছেন ছোট নাক, বড় চোখ এবং ইন্দ্রিয়সুখবর্ধক ঠোঁট পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই ক্ষেত্রেই যৌন আকর্ষণীয়।[10] রক্তের সাথে জড়িত থাকার কারণে যৌন উত্তেজনার সময় ঠোঁট অস্থায়ীভাবে স্ফীত হতে পারে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.