টর্পেডো হচ্ছে এক ধরনের স্ব-চালিত অস্ত্র, যা জলের নিচে বিস্ফোরক ওয়ারহেড বহন করে এবং লক্ষবস্তুর সংস্পর্শে বা কাছাকাছি আসার পর বিস্ফোরিত হতে পারে। এটি জলের নিচে চালিত হয় এবং জলের নিচে বা উপরে উভয় স্থান হতে নিক্ষেপ করা যায়।
এই নিবন্ধটির একটা বড়সড় অংশ কিংবা সম্পূর্ণ অংশই একটিমাত্র সূত্রের উপর নির্ভরশীল। (30 January 2021) |
অতীতে একে অটোমোটিভ, অটোমোবাইল বা ফিস টর্পেডো বলা হতো। এটি "ফিস" বা মাছ নামেও কথিত ছিল। "টর্পেডো" নামটি মুলত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রের জন্য প্রযোজ্য ছিল। যার অধিকাংশই বর্তমানে "মাইন" নামে পরিচিত। ১৯০০ সালের কাছাকাছি থেকে টর্পেডো নামটি শুধুমাত্র জলের নিচের স্ব-চালিত অস্ত্রের জন্য ব্যবহার করা হয়।
যেখানে যুদ্ধজাহাজগুলো অন্যান্য অস্ত্রসজ্জিত জাহাজের সাথে যুদ্ধ করতে বড় আকারের বন্দুকের উপর নির্ভর করত, সেখানে ছোট 'টর্পেডো বোট', হালকা মাপের জাহাজ, ডুবোজাহাজ বা সাধারণ জেলে নৌকার দ্বারাও টর্পেডোর সাহায্যে বৃহদাকৃতির যুদ্ধজাহাজ ধংস করে ফেলা সম্ভবপর হয়ে উঠে। যদিও মাঝেমধ্যে একাজে দূর পাল্লার শেল দ্বারা আক্রান্ত হবার আশঙ্কা থেকে যায়।
আধুনিক টর্পেডো গুলোকে 'হালকা' ও 'ভারী'; এবং 'সোজা চলা', 'লক্ষবস্তু নির্ধারিত' এবং 'দূর থেকে নির্দেশিত' এসব শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। তাছাড়া এগুলোকে বিভিন্ন প্রকারের উৎক্ষেপকের দ্বারা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নিক্ষেপ করা সম্ভব।
নামের ব্যুৎপত্তি
"বৈদ্যুতিক রে" মাছের একটি বর্গের নাম হতে টর্পেডো শব্দটি এসেছে, যা আবার ল্যাটিন শব্দ "টর্পিয়ার" থেকে উদ্ভূত যার অর্থ "নিশ্চল বা অসাড়"। নৌবাহিনীতে, রবার্ট ফাল্টন তার ডুবোজাহাজ নটিলাসের ব্যবহৃত একটি টেনে নিয়ে যাওয়া বারুদের তৈরি বোমাকে বুঝাতে টর্পেডো নামটি সর্বোপ্রথম ব্যবহার করেন।
শক্তির উৎস
উচ্চচাপের বায়ু
সর্বপ্রথম সফল স্ব-চালিত টর্পেডো, ১৮৬৬ সালের হোয়াইটহেড টর্পেডো এর চালিকাশক্তি হিসেবে উচ্চচাপে সংরক্ষিত বায়ু ব্যবহার করে। এতে ২.৫৫ মেগা প্যাসকেল পর্যন্ত চাপে থাকা সংকোচিত বায়ুকে কাজে লাগিয়ে পিষ্টন ইঞ্জিন চালিত একটিমাত্র পাখাকে ১০০ আরপিএম গতিতে ঘুরানো হতো।
বিস্ফোরক(ওয়ারহেড) ও ফিউজ
টর্পেডোর সম্মুখে বিস্ফোরক হিসেবে এক ধরনের অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ পদার্থ ব্যবহার করা হয়। কারণ অ্যালুমিনিয়ামের গুড়ো দ্বারা সৃষ্ট বিস্ফোরণের শক্তিশালী ও টেকশই কম্পন জলের নিচে থাকা লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করতে বিশেষভাবে উপযোগী। এতে, ১৯৫০ সাল পর্যন্ত "টর্পেক্স" ও পরবর্তীতে "পিবিএক্সের" বিভিন্ন মিশ্রণকে সর্বাধিকভাবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। তাছাড়া টর্পেডোতে "মার্ক ৪৫ টর্পেডোর" মতো অনেকক্ষেত্রে পারমাণবিক ওয়ারহেডও সংযুক্ত করা হয়। এগুলো বিশাল আকারের ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে সক্ষম, যা টর্পেডোর কার্যকারীতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। স্বল্প ওজনের সাবমেরিন বিধ্বংসী টর্পেডোতে সাবমেরিনের বহিরাবরণ ভেঙে ফেলতে চোখা চার্জ ব্যবহার করা হতে পারে। এর বিস্ফোরণ, লক্ষ্যবস্তুর সাথে সরাসরি সংঘর্ষে বা সংবেদনশীল অংশের সাহায্যে কাছাকাছি আসার পরও ঘটানো সম্ভব। সরাসরি সংঘর্ষ ব্যতিরেকে বিস্ফোরণ ঘটার ক্ষেত্রে, সাধারণত শব্দ বা চৌম্বকীয় তরঙ্গ সংবেদী যন্ত্রকে টর্পেডোর সাথে ব্যবহার করতে হয়।
সংস্পর্শে বিস্ফোরণ
কাছাকাছিতে বিস্ফোরণ
বিধ্বংসী ক্ষমতা
উৎক্ষেপণের মাধ্যম ও উৎক্ষেপকসমুহ
টর্পেডোকে জাহাজ, ডুবোজাহাজ, হেলিকপ্টার, বিমান, ভাসমান মাইন, নৌঘাঁটি ইত্যাদি থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।[1] তাছাড়া একে অন্যান্য অস্ত্রের সাথে সংযুক্ত করার মাধ্যমেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেমন: যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহৃত মার্ক ৪৬ টর্পেডোকে এন্টি-সাবমেরিন রকেট বা ASROC এর ওয়ারহেড অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং ক্যাপটর মাইন হলো এমন এক ধরনের সংবেদনশীল ডুবন্ত মঞ্চ, যা শত্রুপক্ষের কোনো নড়াচড়া অনুধাবন করলে সেদিকে টর্পেডো নিক্ষেপ করে থাকে।
জাহাজ
ডুবোজাহাজ
উড়ন্ত উৎক্ষেপণ
টর্পেডোকে বিমান, হেলিকপ্টার বা মিসাইলের মাধ্যমেও বহন করা যায়। বিমান বা হেলিকপ্টারের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট গতি ও উচ্চতায় পৌঁছানোর পর টর্পেডোকে ছেড়ে দেয়া হয়, যাতে তা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে আঘাত করতে পারে। এসবক্ষেত্রে টর্পেডো সাধারণত পাখার নিচে বা বোমার আধারে বহন করা হয়ে থাকে।
পরিচালনায় ব্যবহৃত যন্ত্রাদি
সাবমেরিনের ভেতরের ছোট জায়গায় কম ওজনের টর্পেডো নড়াচড়া করা সহজ হলেও বেশি ওজনের টর্পেডোগুলোকে সঠিক স্থানে নেয়া বা বসানো বেশ কষ্টসাধ্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন কর্তৃক জার্মানির টাইপ XXI এর কিছু সাবমেরিন অধিকৃত হয়। সাবমেরিনগুলোতে বিদ্যমান কিছু অভিনব উন্নতির অন্যতম প্রধান দিক ছিল টর্পেডোগুলোর যান্ত্রিক পরিচালনা। এই আবিস্কারের ফলে পরবর্তীতে সাবমেরিনসমুহে পদ্ধতিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে।
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.