জামে মসজিদ, দিল্লি
ভারতের বৃহত্তম মসজিদ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মসজিদে জাহান নুমা (ফার্সি: مسجد-ا جہاں نما, হিন্দি: मस्जिद जहान नुमा), দিল্লিতে অবস্থিত ভারতের অন্যতম বৃহত্তম একটি মসজিদ।[1] সাধারণভাবে এই মসজিদটি জামা মসজিদ[2] (হিন্দি: जामा मस्जिद, উর্দু: جامع مسجد) নামে পরিচিত।
জামা মসজিদ | |
---|---|
স্থানাঙ্ক: ২৮.৬৫০৭° উত্তর ৭৭.২৩৩৪° পূর্ব | |
অবস্থান | দিল্লি |
শাখা/ঐতিহ্য | হানাফি, দেওবন্দি |
স্থাপত্য তথ্য | |
ধরন | ইন্দো ইসলামি, মুঘল |
ধারণক্ষমতা | ২৫,০০০ |
দৈর্ঘ্য | ৪০ মিটার (১৩০ ফু) |
প্রস্থ | ২৭ মিটার (৮৯ ফু) |
গম্বুজ | ৩ |
মিনার | ২ |
মিনারের উচ্চতা | ৪১ মিটার (১৩৫ ফু) |
ভবনের উপকরণ | লাল বেলেপাথর এবং মার্বেল |
নির্মাণ খরচ | দশ লক্ষ রুপি |
| |
ওয়েবসাইট: জামা মসজিদ |
মুঘল সম্রাট শাহজাহান ১৬৪৪ থেকে ১৬৫৬ সালের মধ্যে মুঘল রাজধানী, শাহজাহানাবাদে এই মসজিদটি তৈরি করেন এবং মসজিদটির প্রথম ইমাম, সৈয়দ আব্দুল গফুর শাহ বুখারী মসজিদটির উদ্ভোধন করেন। ১৮৫৭ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন পর্যন্ত এটি ছিল সাম্রাজ্যের প্রধান মসজিদ। মসজিদটি ভারতে ইসলামিক শক্তি এবং ঔপনিবেশিক শাসনে প্রবেশের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত ছিল। ব্রিটিশ শাসনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এটি রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি এখনও চালু আছে এবং এটি দিল্লির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর একটি, যা যার পরিচিতি পুরান দিল্লির সাথে মিশে আছে।
নামসমুহ
মসজিদটির দুটি নাম রয়েছে। প্রথম নামটি শাহজাহান প্রদত্ত নামটি ছিল “মসজিদ-ই-জাহাননামা”, যা অনুবাদ করলে ফার্সি ও উর্দু ভাষায় “পৃথিবীর প্রতিবিম্ব মসজিদ”। এর আরেক নাম হলো জামে মসজিদ, যা সাধারণ মানুষের কাছে প্রচলিত। আরবিতে এর প্রকৃত অর্ত “জামে মসজিদ”। মসজিদটিতে জুম্মার নামায অনুষ্ঠিত হয়, তাই এটিকে জামে মসজিদ বলা হয়। “জামে মসজিদ” নামটি শুধুমাত্র এই মসজিদটির মসজিদ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় না। ৭ম শতাব্দী থেকে শব্দটি ইসলামিক বিশ্বে সাম্প্রদায়িক মসজিদ নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়, আর এ কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন মসজিদ এই নামে পরিচিত।
অবস্থান
মসজিদটি শাহজানাবাদে (বর্তমানে: পুরান দিল্লি) অবস্থিত। মসাজিদটির অপর প্রান্তে রয়েছে লালকেল্লা এবং সুনেরি মসজিদ।[3] দিল্লির কেন্দ্রে অবস্থান করায় এর মসজিদটির আশেপাশে ঐতিহাসিক চাঁদনি চক সহ অনেক ব্যবসা কেন্দ্র রয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা, আবুল কালাম আজাদ এর সমাধি এই মসজিদের সাথে সংলগ্ন রয়েছে।[4]
ইতিহাস
নির্মাণ এবং মুঘল আমল
মুঘল সম্রাট, শাহজাহান ১৬৪৪ হতে ১৬৫৬ সালের মধ্যে শাহাজানাবাদের সবচেয়ে উঁচু স্থানে মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির নকশা করেন স্থপতি, উস্তব খলিল এবং এর নির্মাণে প্রায় ৫০০০ জন শ্রমিক কাজ করেন।[5][6][7] এ নিমার্ণে তুর্কি, আরব, পারস্য এবং ইউরোপ সহ বিভিন্ন দেশের মানুষ কাজ করেন। এ নির্মানের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন শাহজাহান এর উজির (বা প্রধান মন্ত্রী), সাদুল্লাহ খান এবং শাহজাহান এর পরিবারের হিসাবাধ্যক্ষ, ফজিল খান। সে সময় অনুযায়ী, নির্মাণ করতে প্রায় ১০ লাখ (১ মিলিয়ন) রুপি খরচ হয়।[8] ১৬৫৬ সালের জুলাই মাসের ২৩ তারিখে উজবেকিস্তানের বুখারি থেকে আগত সৈয়দ আব্দুল গফুর শাহ বুখারি মসজিদটির উদ্ভোধন করেন।[9]
মসজিদটি ছিল শাহজাহানের শাসনামলে নির্মিত শেষ স্থাপত্য। মুঘল যুগের শেষ পর্যন্ত এটি সম্রাটদের রাজকীয় মসজিদ ছিল। এই মসজিদেই শাহজাহান জুম্মার নামাযে খুতবা দিয়ে তার শাসনামল আনুষ্ঠানিক করেন। মসজিদটি ভারতে মুঘলদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক হওয়ায় সেটি রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মসজিদটি শাহজাহানাবাদে বসবাসকারী মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, যেখানে শ্রেণিভাগ অতিক্রম করে মানুষ একে অপরের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে পারত। শাহজানাবাদের মানুষ এখানে শ্রেণিভাগ ভূলে একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারত, তাই মসজিদটি তাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[10]
ব্রিটিশ শাসনামল
১৮০৩ সালে, ইংরেজরা শাহজাহানাবাদ দখল করে। সম্রাট মসজিদটির আনুষ্ঠানিক নেতা হিসেবেই থাকেন, তবে মুঘলদের ক্ষমতা এবং ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।। শহরটিতে ব্রিটিশদের প্রাথমিক নীতি নাগরিকদের পক্ষেই ছিল। ইংরেজরা মসজিদটির মেরামত এবং সংস্কারের কাজ নেয়। অন্যান্য মসজিদের মতো এই মসজিদেও সামাজিক এবং রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান করা হয়, যেমন: খ্রিষ্টান এবং মুসলিমদের মধ্যে ধর্মতাত্ত্বিক এবং দর্শনগত বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় মসজিদটিতে।[11]
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ফলে একটি বড় পরিবর্তন আসে। এই বিদ্রোহে শহরেটিতে অনেক ইংরেজ নাগরিক মৃত্যুবরণ করেন, যার ফলে ঔপনিবেশিক প্রতিনিধিরা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ইংরেজদের প্রতি শক্ত বিরোধিতা করা হয়। এই বিদ্রোহের কারণে মুঘল সাম্রাজ্যেরও সমাপ্তি ঘটে। ইংরেজরা ধারণা করে যে, বিদ্রোহটি মুসলিমদের প্ররোচিত এবং দিল্লির মমজিদগুলোর মধ্যে পরিকল্পিত। ইংরেজরা শহরটি পুনরায় দখলে নিলে, তারা অনেক মসজিদ ধ্বংস করে দেয় এবং সকল মসজিদে মুসলিমদের ধর্মসভা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। ইংরেজরা এই মসজিদটি বাজেয়াপ্ত করে এবং সেটির সকল ধর্মীয় ব্যবহার বাধাগ্রস্ত করে। মসজিদটি কয়েকবার ধ্বংসের জন্য বিবেচনা করা হয়, কিন্তু ইংরেজরা এটিকে শিখ এবং ইউরোপিয়ান সৈন্যদের জন্য ব্যারাক হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে, যা মসজিদটির জন্য ছিল অপবিত্রতা। আজিজ এর মতে, শহরের মুসলিম বাুসিন্দাদের আবেগে আঘাত করার জন্য এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।[12]
১৮৬২ সালে, ইংরেজদের কার্যক্রমের প্রতি মুসলিমদের বাড়ন্ত বিরক্তির কারণে মসজিদটি আবার মুসলিমদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিছু শর্ত দেওয়া হয়, যার মধ্যে ছিল- মসজিদটি শুধুমাত্র মসজিদ হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে এবং ইংরেজরা সেটির উপর নজর রাখবে। মসজিদটির প্রতিনিধিত্ব করতে এবং সেখানে সেই শর্তগুলো প্রয়োগ করতে মসজিদটির আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লির সম্মানিত মুসলিম ব্যাক্তিদের নিয়ে জামে মসজিদ পরিচালনা পরিষদ (জেএমএমসি) গঠন করা হয়।
এটি মুসলিমদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার পর, এটিকে আবার একটি মসজিদে রূপান্তর করা হয়। মুঘল শাসন শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও, মসজিদটি ইসলামিক শাসক এবং উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সমর্থন লাভ করে। ১৮৮৬ সালে, রামপুরের নবাব মসজিদটির মেরামতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১,৫৫,০০০ রুপি দান করেন। ১৯২৬ সালে, হায়দ্রাবাদের নিজাম প্রদত্ত ১,০০,০০০ রুপি মসজিদের এ ধরনের কাজেই ব্যবহৃত হয়।
ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা দিল্লির মসজিদগুলোতে প্রভাব ফেলে। মসজিদটিকে প্রায়ই ধর্মের সাথে অসম্পর্কিত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং প্রতিষ্ঠিত আইনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। ইংরেজরা যেকোনো প্রকাশ্য স্থানে এ ধরনের কার্যক্রম নজরে রাখতে এবং আটকাতে পারত, কিন্তু মসজিদটি একটি ধর্মীয় স্থান হওয়ায় সেটি দিল্লির মানুষের আবেগ এবং আইনের কারণে ব্রিটিশদের এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে রক্ষিত। ঔপনিবেশিক শাসনে হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও, হিন্দুরা প্রায়ই মুসলিমদের সাথে এই মসজিদে এসে তাদের ঔপনিবেশ বিরোধী একাগ্রতা প্রকাশ করে।
ঔপনিবেশ পরবর্তী সময়ে
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও মসজিদটি একটি রাজনৈতিক প্রতীক অব্যাহত থাকে। ১৯১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসের ২৩ তারিখে, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, আবুল কালাম আজাদ মসজিদটির মিম্বর থেকে একটি বক্তব্য দেন। ভারত বিভাজনের আসন্ন চিল, যে কারণে দিল্লিতে বিশাল গণ আন্দোলন সৃষ্টি হয়। আজাদ দিল্লির মুসলিমদের ভারতে থাকার জন্য অনুরোধ করেন এবং ভারত তখনও তাদের ভস্মভূমি বলে তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন।
১৯৪৮ সালে, হায়দ্রাবাদের শেষ নিজাম, সপ্তম আসাফ জাহ এর কাছে মসজিদের মেঝে এক-চতুর্থাংশ মেরামতোর জন্য ৭৫,০০০ হাজার রুপি দান চাওয়া হয়েছিল। নিজাম এর পরিবর্তে ৩,০০,০০০ রুপি দান করেন এবং বলেন যে, মসজিদের এক-তৃতীয়াংশ দেখে যেন পুরানো না মনে হয়।[13][14]
কুখ্যাতভাবে সাম্প্রদায়িক বাবরি মসজিদ বিবাদ এর ক্ষেত্রে একটি জামে মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ন স্থান ছিল। জামে মসজিদের শাহী ইমাম, সৈয়দ আব্দুল্লাহ বুখারী সেই বিবাদ নিয়ে জামে মসজিদে একটি বক্তব্য রাখেন, যেখানে তিনি হিন্দু পক্ষের রাজনৈতিক সমর্থনের প্রতি নিন্দা জানান এবং মুসলিমদের আবেগকে সমর্থন দেন। এতে পুরান দিল্লিতে একটি আন্দোলন এবং সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। ১৯৮৭ সালে, বাবড়ি মসজিদের বিবাদ নিয়ে জামে মসজিদে একটি বড় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সংঘটিত হয়। ১৯৮৭ সালের মে মাসের ২৮ তারিখে, সম্পূর্ণ ভারত জুড়ে চলমান অসস্তিকর পরিস্থিতি এবং বিক্ষোভের মধ্যে ইমাম মসজিদটি বন্ধ করে দেন এবং সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি মুসলিমদের বিরোধিতা প্রকাশ করতে মসজিদটি কালো কাপড়ে সজ্জিত করা হয়। ইসলামিক নেতাদের মাঝে এই সিদ্ধান্তটি তীব্র বিতর্কের সম্মখীন হয়।[15]
আধুনিক সময়ে
বর্তমানে, মসজিদটিকে দিল্লির প্রধান মসজিদ হিসেবে ব্যবহার হয় এবং সেখানে অনেক ধর্মীয় কর্মসূচী মসজিদটিতে পালনা করা হয়ে থাকে। শহরে বসবাসকারী মুসলিমরা জুম্মা এবং দুই ঈদে মসজিদটিতে একত্রিত হন।[5] মসজিদটি পর্যটকদেরও মনযোগ আকর্ষণ করে এবং বিদেশীদের সেখানে ভ্রমণের ফলে একটি বড় পরিমাণ অর্থ আয় হয়।[16]
মসজিদটি আধূনিক সময়েও একটি স্বায়ত্তশাসিত রাজনৈতিক স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০০১ সালে (১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পরে) মসজিদটিতে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার প্রতিবাদ করা হয়।[17] ২০১৯ সালে, বিতর্কিত নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইনের বিরুদ্ধে মসজিদটিতে একটি বিশাল বিক্ষোভ হয়।[18]
সংস্কার
২০০৬ সালে, মসজিদটির জরুরি মেরামত করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়। সৌদি আরবের রাজা, আবদুল্লাহ সেই সংস্কারের জন্য অনুদান দিতে চান। মসজিদটির ইমাম জানান যে, সৌদি প্রতিনিধিদের নিকট থেকে এই প্রস্তাব তিনি সরাসরি পেয়েছেন, কিন্তিু তিনি তাদের ভারত সরকারের সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেন।[19] দিল্লির আদালত বলে যে, এই বিষয়টির কোনো “আইনত পবিত্রতা” নেই এবং ইমামকে কোনো “বিশেষ সুবিধা” দেয় না।
বিভিন্ন প্রসাশনিক এবং লজিস্টিক বাধার কারণে মসজিদটির সংস্কারের একটি প্রকল্প ২০০০ এর দশকের প্রথম দিক থেকে অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে।[20][21]
২০০৬ সালের জামে মসজিদে বিস্ফোরন
২০০৬ সালের এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখে, জুম্মার নামাযের পর দুটি বিস্ফোরন ঘটে। একটি বিস্ফোরনের খুবই অল্প সময়ের পরে আরেকটি বিস্ফোরন সংঘটিত হয়। বিস্ফোরনগুলো কীভাবে হয়েছে তা জানা যায়নি। এ ঘটনায় একজন গুরুতরভাবে আহন হন এবং আটজন হালকাভাবে আহত হন। ইমাম, আহমেদ বুখারী বলেন যে, “আমাদের মধ্যে রাগ রয়েছে কিন্তু আমি আপনাদের শান্তি বজায় রাখার আবেদন করছি।”[22]
২০১০ সালের জামে মসজিদে আক্রমণ
২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখে, এক মটরসাইকেল আরোহী মসজিদের ৩ নম্বর প্রবেশপথের কাছে থেমে থাকা একটি বাসে গুলি ছুড়ে। এ ঘটনায় দুইজন তাইওয়ানিজ পর্যটক আহত হন।[23] হামলার পর পুলিশ ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে এবং প্রচুর পরিমাণ মোতায়েন করায় স্থানটিতে একটি দুর্গের ,মতো পরিবেশ বিরাজ করে।[24]
২০১১ সালের নভেম্বর মাসে, ভারতীয় পুলিশ ভারতীয় মুজাহিদীনের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে, যারা জামে মসজিদে বিস্ফোরণ এবং পুনে জার্মান বেকারীতে বিস্ফোরণের সাথে জড়িত ছিল। বিভিন্ন উৎস অনুসারে, “প্রধান পরিকল্পনাকারী, ইমাম” মসজিদটির বাহিরে থাকা একটি গাড়িতে বোমা স্থাপন করার জন্য অভিযুক্ত।[25] ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দলটির নেতা, ইয়াসিন ভাটকাল এবং আব্দুল্লাহ আখতারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এর এক মাস পর তারা পলাতক পাকিস্তানি নাগরিক, ওয়াকাস এর সাথে যৌথভাবে মসজিদটিতে হামলার কথা স্বীকার করেন। ইয়াসিন বলেন যে, মসজিদটির ইমাম “অর্ধ-নগ্ন” বিদেশীদের ভিতরে ঢুকতে দেন, আর এ কারণে করাচি ভিত্তিক সংগঠন, আইএম এর নেতা, রিয়াজ ভটকাল তাকে কাজটি করতে বলেন।[26]
স্থাপত্যশৈলী
শাহজাহান এর নতুন রাজধানী শাহজানাবাদের এর অংশ হিসেবে জামে মসজিদ তৈরি হয়। এটি মূঘল শাসনামলে নির্মিত মসজিদগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম হিসেবে বিবেচিত এবং মার্বেল ও চুনাপাথরের সর্বোত্তম মিশ্রণ।[27] নির্মাণের সময়ে ভারতীয় উপমহাসাগরে এটিই ছিল বৃহত্তম মসজিদ। শাহজাহান বলেন যে, মসজিদটি ফাতেহপুর সিকরির জামে মসজিদের নকশা অনুসরণে তৈরি করা হয়। এ বিষয়টি মসজিদটির বাহিরের সম্মুখভাগ এবং উঠান লক্ষ্য করা যায়। মসজিদটির ভেতরের অংশের সাথে আগ্রার জামে মসজিদের অধিক সাদৃশ্য রয়েছে।[28] মসজিদটিতে লাল বেলেপাথর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে এবং আগের মসজিদগুলোর তুলনায় এটিতে অধিক সাদা মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছে। এটি সাজাতে কালো মার্বেলও ব্যবহার করা হয়েছে।[29][30] এর বিভিন্ন দেয়ালে ধমীয় ও প্রসংশামূলক সহ বিভিন্ন বিষয়ক আরব এবং ফার্সি ভাষার লিপির অংশ সাজানো আছে।[29][28][5]
পাহাড়ের উপর নির্মিত হওয়ায় মসজিদটি শহরের তুলনায় ১০ মিটার উঁচু একটি স্তম্ভমূলের উপর অবস্থিত।[29][5] মসজিদটি এমনভাবে নির্মিত যে, এর পেছনের দেয়ালের মুখ পশ্চিম দিকে, মক্কার দিকে।[5] একটি কলেজ, ঔষধালয় এবং মাদ্রাসা মসজিদটির সাথে সংলগ্ন ছিল। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে সেগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।[31]
প্রবেশ পথ
মসজিদটির বেলেপাথরের তৈরি ৩টি প্রবেশ পথ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হলো ৩ তলা উচ্চতাবিশিষ্ট পূর্ব প্রবেশ পথ, যা ইতিহাসে রাজকীয় ব্যাক্তিদের প্রবেশ পথ হিসেবে ব্যবহার হতো এবং তা সম্রাট এবং তার সাথে জড়িত ব্যাক্তিদের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ছিল। দুই তলা উচ্চতাবিশিষ্ট দক্ষিণ প্রবেশ পথটি সাধারণ মানুষ ব্যবহার করত।[29][32] প্রতিটি প্রবেশ পথের ৩ পাশে বেলেপাথরের সিঁড়ি আছে। সেখানে সাদা কিছু চিহ্ন ছিল, যা প্রার্থনাকারীদের প্রার্থনার দিক নির্ধারণে সহায়তা করত।[29] উত্তর প্রবেশ পথের ক্যাবিনেটে মুহাম্মদ এর অবশেষের একটি সংগ্রহশালা আছে, যার মধ্যে রয়েছে: হরিণের চামড়ায় লিখিত কুরআন, মুহাম্মদ এর দাড়ির একটি চুল, তার জুতা এবং মার্বেলের আবরণের উপর তার পায়ের ছাঁপ।[1][ভাল উৎস প্রয়োজন]
উঠান
উঠানটি লাল বেলেপাথরের তৈরি এবং পূর্ব প্রবেশ পথ বরাবর। এর পাশ্বীয় দৈর্ঘ্য কমপক্ষে ৯৯ মিটার এবং প্রায় ২৫,০০০ প্রার্থনাকারী সেখানে প্রার্থনা করতে পারে। এর কেন্দ্রে রয়েছে অযু করার জন্য ১৭ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৫ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট একটি ট্যাঙ্ক। উঠানের ধারে একটি খোলা পথ রয়েছে। সেখান থেকে মসজিদের পরিবেশ দেখা যায়। পথগুলোতে উঠানের চারদিকে চারটি চাত্রী আছে।[29][5]
প্রার্থনা হল
প্রার্থনা হলটির দৈর্ঘ্য ৬১ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ মিটার। ছাদের উপর তিনটি মার্বেলের তৈরি গম্বুজ আছে, যার শীর্ষ সোনার তৈরি। সম্মুখভাগের কেন্দ্রে রয়েছে একটি পিস্তাক, যার দুই পাশে দুটি ছোট আচ্ছাদিত পথ আছে। প্রতিটি আচ্ছাদিত পথের উপরে কিছু লিপি সাজানো আছে। হলের ভিতরের পশ্চিম দেয়ালে ৭টি মিহরাব আছে, যা হলটি যে সাতটি ভাগে বিভক্ত সেগুলোকে নির্দেশ করে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি জটিলভাবে মার্বেল দিয়ে সজ্জিত এবং এর ডান পাশে রয়েছে মার্বেলের তৈরি একটি মিনার। হলটির মেঝে যাতে মুসলিমদের প্রার্থনার মাদুরের মতো দেখতে মনে হয়, তাই সেটি অলংকৃত মার্বেল দিয়ে তৈরি করা হয়।[29]
মিনার
মসজিদের গম্বুজগুলোর দুই পাশে দুটি মিনার রয়েছে, যার একটি উত্তর-পূর্ব এবং অন্যটি দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত।[29][5] সেগুলো ৪ মিটার উঁচু এবং অনুদৈর্ঘ্য বরাবর সাদা মার্বেল দিয়ে সজ্জিত। প্রতিটি মিনার ১৩০ পায়ের সমান দূরত্ব নিয়ে গঠিত এবং এর আশেপাশে ৩টি স্থানে দর্শন গ্যালারি আছে। প্রতিটি মিনারের উপরে একটি করে মার্বেলের তৈরি চাত্রী আছে।[29]
শাহী ইমাম
দিল্লির জামে মসজিদের ইমামরা ঐতিহ্যগতভাবে শাহজাহান এর নিযুক্ত করা মসজিদটির প্রথম ইমাম, সৈয়দ আব্দুল গফুর শাহ বুখারি এর সরাসরি বংশধর।[33] তাদের পদবীকে শাহী ইমাম বা রাজকীয় ইমাম বলে অভিহিত করা হয়। পরবর্তীতে যিনি ইমাম হতে চলেছেন তাকে নাইব ইমাম বা ডেপুটি ইমাম বলা হয়।[34] তারা তাদের নামের শেষ অংশ হিসেবে “বুখারী” যুক্ত রাখেন। এটি তাদের পূর্বপুরুষ যে বোখারা (আধূনিক উজবেকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত) থেকে আগত সেই ব্যাপারটিকে নির্দেশ করে। মসজিদটিতে যারা ইমাম হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন তাদের তালিকা-
ক্রম | নাম | পদবী | দায়িত্বের মেয়াদ |
---|---|---|---|
১. | আব্দুল গফুর শাহ বুখারি | ইমাম উস সুলতান | ২৩ জুলাই, ১৬৫৬ –? |
২. | আব্দুল সাকুর শাহ বুখারী | ||
৩. | আব্দুল রহিম শাহ বুখারী | ||
৪. | আব্দুল গফুর শাহ বুখারী থানি | ||
৫. | আব্দুল রহিম শাহ বুখারী | ||
৬. | আব্দুল করিম শাহ বুখারী | ||
৭. | মীর জীওয়ান শাহ বুখারী | ||
৮. | মীর আহমেদ আলী শাহ বুখারী | ||
৯. | মুহাম্মদ শাহ বুখারী | ১৬ অক্টোবর, ১৮৯২ –? | |
১০. | আহমেদ বুখারী | শামস-উল-ওলামা | |
১১. | হামিদ বুখারী | ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২ – ৮ জুলাই, ১৯৭৩ | |
১২. | সৈয়দ আব্দুল্লাহ বুখারী | ৮ জুলাই, ১৯৭৩– ১৪ অক্টোবর, ২০০০ | |
১৩. | সৈয়দ আহমেদ বুখারী | ১৪ অক্টোবর ২০০০-বর্তমান | |
উৎস:[35][33] |
চিত্র
- আভ্যন্তরীন খিলানের ছবি
- সম্মুখভাগ
- পুকুর
- একটি বারান্দার ছবি
- উঠান
- উঠান
- উঠান
- বাহিরের দেওয়াল
- জামে মসজিদের একটি সূর্যঘড়ি
- মেঝেতে অঙ্কিত জায়নামায
- জামে মসজিদের একটি বাতি
- জামে মসজিদের একটি আবৃত্ত রাস্তা
- সূর্যঘড়ি
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.