জাবাল শামার আমিরাত (আল রশিদ আমিরাত ও হাইল আমিরাত বলেও পরিচিত) ছিল আরবেরনজদ অঞ্চলের একটি রাষ্ট্র। এটি ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত অস্তিত্বশীল ছিল।[1] জাবাল শামার অর্থ “শামারের পর্বত”। এর রাজধানী ছিল হাইল।[1]আল রশিদ পরিবার ছিল এই রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শাসনকর্তা। এটি বর্তমান সৌদি আরব, ইরাক ও জর্ডানের অংশ নিয়ে গঠিত ছিল।
দ্রুত তথ্য আল রশিদ আমিরাত دولة آل رشيد, রাজধানী ...
১৮৩৬ সালে জাবাল শামার আমিরাত প্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রের জীবনকালের অধিকাংশ সময় আল সৌদের সাথে নজদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লড়াইয়ে কাটে। জাবাল শামারের শাসক রশিদিরা মুলায়দার যুদ্ধের পর ১৮৯১ সালে রিয়াদ থেকে সৌদিদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়। এর ফলে দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্র নজদ আমিরাতের বিলুপ্তি ঘটে এবং তা জাবাল শামার আমিরাতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
সৌদিরা এরপর ঘটনার আড়ালে সরে যায় এবং কুয়েতে নির্বাসিত হয়। রশিদিরা উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে মিত্রতা স্থাপন করে। উনিশ শতকে উসমানীয়দের প্রভাব হ্রাস পাওয়ার পর থেকে এই মিত্রতা হ্রাস পেতে থাকে।
১৯০২ সালে আবদুল আজিজ ইবনে সৌদরিয়াদ দখল করতে সক্ষম হন এবং এই অঞ্চল জয়ের জন্য অভিযান শুরু করেন। এই অভিযানে সৌদিরা সফল হয়। বেশ কিছু সংঘর্ষের পর সৌদি ও রশিদিরা পূর্ণ মাত্রায় লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। এ যুদ্ধে রশিদিরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। রশিদি আমির আবদুল আজিজ ইবনে মিতাব আল রশিদ এতে নিহত হন।
১৯২১ সালে সৌদি অভিযানে হাইল বিজয় হওয়ার পর জাবাল শামার আমিরাতের পতন হয়। ১৯২১ সালের ২ নভেম্বর আমিরাত সৌদিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং তা নজদ সালতানাতের সাথে একীভূত হয়। সৌদি ও ব্রিটিশদের দ্বারা বহিষ্কৃত হওয়ার কারণে বর্তমানে শামারের অধিকাংশ জেবালি সিরিয়া ও ইরাকে বসবাস করে।
‘’’প্রথম আবদুল্লাহ বিন রশিদ (আরবি: عبدالله بن رشيد), (১৮৩৬–৪৮): তার ভাই উবাইদ আল রশিদের সাথে হাইলের শাসক মুহাম্মদ বিন আলির বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়ার পর আবদুল্লাহ ক্ষমতায় আসেন। মুহাম্মদ বিন আলি ছিলেন জাফর আল শামারির সাথে সম্পর্কিত। হাইল ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনয়নের জন্য নেতা হিসেবে আবদুল্লাহর সুনাম ছিল। আবদুল্লাহ তার ভাই উবাইদের কাছে একটি চুক্তি দাবি করেন যার মাধ্যমে তার উত্তরাধিকার তার বংশধরদের মধ্যে থাকবে।
তালাল বিন আবদুল্লাহ (আরবি: طلال بن عبدالله), (১৮৪৮–৬৮): তালাল ছিলেন আবদুল্লাহর পুত্র। উদারনৈতিকতা ও নির্মাণ কার্যে আগ্রহের জন্য তাকে স্মরণ করা হয়। তার শাসনামলে হাইলেরবারজান প্রাসাদ নির্মাণ সমাপ্ত হয়। ইরাকের সাথে তিনি নিয়মিত বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং রশিদিদের প্রভাব বৃদ্ধি করেন:
"The inhabitants of Kaseem, weary of Wahhabee tyranny, turned their eyes towards Telal, who had already given a generous and inviolable asylum to the numerous political exiles of that district. Secret negotiations took place, and at a favourable moment the entire uplands of that province—after a fashion not indeed peculiar to Arabia—annexed themselves to the kingdom of Shommer by universal and unanimous suffrage." (William Gifford Palgrave, 1865: 129.)
তালালকে বিদেশীদের প্রতি তুলনামূলকভাবে সহনশীল হিসেবে গণ্য করা হয়:
"Many of these traders belonged to the Shia sect, hated by some Sunni, doubly hated by the Wahabees. But Telal [sic] affected not to perceive their religious discrepansies, and silenced all murmurs by marks of special favour towards these very dissenters, and also by the advantages which their presence was not long in procuring for the town". (William Gifford Palgrave 1865: 130.)
১৮৬০ সালে সৌদ পরিবারে একটি অভ্যন্তরীণ বিবাদ রশিদ-উসমানীয় মিত্রতার মাধ্যমে তাদের প্রতিহত করতে সুযোগ করে দেয়। রশিদিরা ১৮৬৫ সালে সৌদিদের রাজধানী রিয়াদ দখল করে নেয় এবং সৌদি প্রধানদের নির্বাসনে যেতে বাধ্য করে। তালাল পরবর্তীকালে রহস্যজনকভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। চার্লস ডটি তার লেখা ট্রাভেলস ইন আরাবিয়া ডেজার্টা বইয়ে লিখেছেন যে তালাল আত্মহত্যা করেছেন। তালালের সাত পুত্র ছিল। তবে তার জ্যেষ্ট বন্দর এসময় মাত্র ১৮ বা ২০ বছরের ছিলেন।
প্রথম মুতিব বিন আবদুল্লাহ (আরবি: متعب بن عبدالله), (১৮৬৮–৬৯): তিনি তালালের ছোট ভাই ছিলেন। রশিদ পরিবারের শীর্ষ সদস্য ও শামার শেখরা তাকে সমর্থন দেন। এক বছর পর বারজান প্রাসাদে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার ভাইপো বন্দর তাকে গুলি করেছিলেন।
বন্দর বিন তালাল (আরবি: بندر بن طلال), (১৮৬৯): বন্দর খুব অল্পকাল শাসন করেন। তার চাচা মুহাম্মদ তাকে হত্যা করেছিলেন। বলা হয় যে বন্দর তার চাচার বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের এক পুত্র ছিল।
প্রথম মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ (আরবি: محمد بن عبدالله), (১৮৬৯–৯৭): হাইলের বাইরে বন্দরকে হত্যার মাধ্যমে তার সাথে তার চাচা মুহাম্মদের বিরোধিতা সমাপ্ত হয়। মুহাম্মদ এরপর হাইলে গমন করেন ও নিজেকে নতুন আমির ঘোষণা করেন। প্রতিশোধের সম্ভাবনা বেশি থাকায় বন্দরের সকল ভাইকে (তালালের পুত্র) মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। বন্দরের ফুফাতো বোনের সন্তান, তাদের দাস ও অধীনস্তদেরও হত্যা করা হয়। তালালের এক পুত্র নাইফ বেঁচে যান। সূচনা রক্তাপাতের মাধ্যমে হলেও তার শাসন রশিদ বংশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ছিল। তার শাসনকে স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্য হিসেবে ধরা হয়। তার শাসনের সীমা উত্তরে আল জাউফ ও পালমিরা এবং পশ্চিমা খায়বার পর্যন্ত পৌছায়। ১৮৯১ সালে একটি বিদ্রোহের পর আবদুর রহমান বিন ফয়সাল বিন তুরকি আল সৌদ রিয়াদ ত্যাগ করেন। দশ বছরের আবদুল আজিজ ইবনে সৌদসহ সৌদি পরিবার কুয়েতে নির্বাসিত হয়।
আবদুল আজিজ বিন মুতিব (আরবি: عبدالعزيز بن متعب), (১৮৯৭–১৯০৬): তিনি ছিলেন মুতিবের পুত্র। মুহাম্মদ তাকে দত্তক নিয়েছিলেন। তাকে মুহাম্মদের উত্তরসুরি হিসেবে গড়ে তোলা হয়। মুহাম্মদ স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। আবদুল আজিজ এরপর কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই তার উত্তরসুরি হন। এসময় উসমানীয়রা দুর্বল হয়ে পড়ায় রশিদিদের শাসন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে। আবদুল আজিজ বিন মুতিব ১৯০৬ সালে ইবনে সৌদের সাথে রাউদাদ মুহান্নার যুদ্ধে নিহত হন।
দ্বিতীয় মুতিব বিন আবদুল আজিজ (আরবি: متعب بن عبدالعزيز), (১৯০৬–০৭): মুতিব তার পিতা আবদুল আজিজের স্থলাভিষিক্ত হন। তবে তিনি তার পুরো পরিবার থেকে সমর্থন পাননি। এক বছর পর সুলতান বিন হামুদের হাতে তিনি নিহত হন।
সুলতান বিন হামুদ (আরবি: سلطان بن حمود), (১৯০৭–০৮): তিনি প্রথম আমিরের ভাই উবাইদের নাতি ছিলেন। তার দাদার সাথে দাদার ভাইয়ের চুক্তির বরখেলাপ করায় তাকে সমালোচনায় পড়তে হয়। ইবনে সৌদের সাথে লড়াইয়ে তিনি ব্যর্থ হন এবং তার ভাইদের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হন।
প্রথম সৌদ বিন হামুদ আল রশিদ (আরবি: سعود بن حمود), (১৯০৮–১০): উবাইদের আরেক নাতি সৌদ দশম আমির সৌদ বিন আবদুল আজিজের মায়ের দিক থেকে আত্মীয়দের হাতে নিহত হন।
প্রথম সৌদ বিন আবদুল আজিজ (আরবি: سعود بن عبدالعزيز), (১৯১০–২০): তাকে আমির নিযুক্ত করার সময় তার বয়স ছিল ১০ বছর। তার মায়ের দিকের আত্মীয় আল শাবান পরিবার তার অভিভাবক হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ১৯২০ সালে ১২তম আমিরের ভাই আবদুল্লাহ বিন তালাল তাকে হত্যা করেন। তার দুজন বিধবা স্ত্রী পুনরায় করেন। নুরাহ বিনতে হামুদ আল শাবান ও ফাহদা বিনতে আসি আল শুরাইম যথাক্রমে ইবনে সৌদের অষ্টম ও নবম স্ত্রী ছিলেন। দ্বিতীয় জনের সন্তান আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ পরে সৌদি আরবের বাদশাহ হয়েছিলেন।
দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন মুতিব (আরবি: عبدالله بن متعب), (১৯২০–২১; মৃত্যু ১৯৪৭): তিনি সপ্তম আমিরের সন্তান ছিলেন। ১৯২১ সালে তিনি ইবনে সৌদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এর এক বছর পূর্বে তিনি ক্ষমতায় আসেন।
দ্বিতীয় মুহাম্মদ বিন তালাল (আরবি: محمد بن طلال), (১৯২১; মৃত্যু ১৯৫৪): তিনি ছিলেন দ্বিতীয় আমির তালালের বেঁচে যাওয়া একমাত্র পুত্র নাইফের নাতি। ইবনে সৌদ কর্তৃক মুহাম্মদ বিন তালাল বন্দী হওয়ার পর তার স্ত্রী নুরা বিনতা সিবান ইবনে সৌদকে বিয়ে করেন। মুহাম্মদ বিন তালালের এক কন্যা ওয়াতফা ইবনে সৌদের পনেরতম সন্তান মুসাইদ বিন আবদুল আজিজকে বিয়ে করেন। মুসাইদ ও ওয়াতফার সন্তান ফয়সাল বিন মুসাইদ বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজের হত্যাকারী ছিলেন।[2]
Georg Wallin (1854): Narrative of a Journey from Cairo to Medina and Mecca, by Suez, Arabia, Tawila, al-Jauf, Jublae, Hail and Negd in 1845, Journal of the Royal Geographical Society, vol 24: 115-201. (Reprinted in Travels in Arabia, New York: Oleander Press, 1979.)
Lady Anne Blunt (1881): A Pilgrimage to Nejd, The Cradle of the Arab Race: a Visit to the Court of the Arab Emir and `our Persian Campaign` (reprinted 1968)
Charles Montagu Doughty (1888): Travels in Arabia Deserta. (Reprinted many times)
Gertrude Bell (1907): The Desert and the Sown (republished 1987)
David George Hogarth (1905): The Penetration of Arabia: a Record of Western Knowledge Concerning the Arabian Peninsula.
Zahra Freeth and H. V. F. Winstone: Explorers of Arabia from the Renaissance to the End of the Victorian Era, Allen & Unwin, London, 1978
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.