জাপান
পূর্ব এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র ও সাংবিধানিক রাজতন্ত্র / From Wikipedia, the free encyclopedia
জাপান (জাপানি: 日本, ঞ়িপ্পোঙ়্ বা ঞ়িহোঙ়্; পুরো নাম 日本国 ঞ়িপ্পোঙ়্-কোকুⓘ বা ঞ়িহোঙ়্-কোকু, "জাপান রাষ্ট্র") হল পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এই দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জাপান সাগর, পূর্ব চীন সাগর, চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়ার পূর্ব দিকে উত্তরে ওখোৎস্ক সাগর থেকে দক্ষিণ পূর্ব চীন সাগর ও তাইওয়ান পর্যন্ত প্রসারিত। যে কাঞ্জি অনুসারে জাপান নামটি এসেছে, সেটির অর্থ "সূর্য উৎস"। একারণে জাপানকে প্রায়শই "উদীয়মান সূর্যের দেশ" বলে অভিহিত করা হয়।
জাপান 日本国 নিহোন-কোকু বা নিহোন-কোকু | |
---|---|
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | টোকিও |
সরকারি ভাষা | নেই[1] |
স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা |
|
জাতীয় ভাষা | জাপানি |
নৃগোষ্ঠী (২০১১0.4em) |
|
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | জাপানি |
সরকার | এককেন্দ্রিক সংসদীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র |
• সম্রাট | নারুহিতো |
ফুমিও কিশিদা | |
আইন-সভা | কোক্কাই |
• উচ্চকক্ষ | লোকসভা পারিষদদ |
• নিম্নকক্ষ | প্রতিনিধি পরিষদ |
প্রতিষ্ঠা | |
• জাতীয় প্রতিষ্ঠা দিবস | ১১ ফেব্রুয়ারি, খ্রিস্টপূর্ব ৬৬০ অব্দ[2] |
• মেইজি সংবিধান | ২৯ নভেম্বর, ১৮৯০ |
• বর্তমান সংবিধান | ৩ মে, ১৯৪৭ |
• সান ফ্রান্সিস্কো শান্তি চুক্তি | ২৮ এপ্রিল, ১৯৫২ |
আয়তন | |
• মোট | ৩,৭৭,৯৪৪ কিমি২ (১,৪৫,৯২৫ মা২)[3] (৬২তম) |
• পানি (%) | ০.৮ |
জনসংখ্যা | |
• ২০১৫ আনুমানিক | ১২৬,৯১৯,৬৫৯[4] (১০ম) |
• ২০১০ আদমশুমারি | ১২৮,০৫৬,০২৬[5] |
• ঘনত্ব | ৩৩৭.১/কিমি২ (৮৭৩.১/বর্গমাইল) (৩৬তম) |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০১৫ আনুমানিক |
• মোট | ৪.৮৪৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪র্থ) |
• মাথাপিছু | ৩৮,২১৬ মার্কিন ডলার (২৯তম) |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০১৫ আনুমানিক |
• মোট | ৪.২১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩য়) |
• মাথাপিছু | ৩৩,২২৩ মার্কিন ডলার (২৫তম) |
জিনি (২০০৮) | 37.6[6] মাধ্যম · ৭৬তম |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৪) | 0.890[7] অতি উচ্চ · ১৭তম |
মুদ্রা | ইয়েন (¥) / এন্ 円 (JPY) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+৯ (জাপান মান সময়) |
ইউটিসি+৯ (পালিত হয় না) | |
তারিখ বিন্যাস |
|
গাড়ী চালনার দিক | বাম |
কলিং কোড | +৮১ |
ইন্টারনেট টিএলডি | .jp |
জাপান একটি যৌগিক আগ্নেয়গিরীয় দ্বীপমালা। এই দ্বীপমালাটি প্রায় ৬,৮৫২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। জাপানে চারটি বৃহত্তম দ্বীপ রয়েছে। দ্বীপগুলো হলো- হোনশু, হোক্কাইদো, ক্যুশু ও শিকোকু। এই চারটি দ্বীপ জাপানের মোট ভূখণ্ডের ৯৭% এলাকা নিয়ে গঠিত। জাপানের জনসংখ্যা ১২৬ মিলিয়ন। জনসংখ্যার হিসেবে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯.১ মিলিয়ন।[8] এই শহরটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার ২য় বৃহত্তম মূল শহর। টোকিও ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্য নিয়ে গঠিত বৃহত্তর টোকিও অঞ্চলের জনসংখ্যা ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মহানগরীয় অর্থনীতি।
পুরাতাত্ত্বিক গবেষণার ফলে জানা গিয়েছে যে উচ্চ প্যালিওলিথিক যুগেও জাপানে জনবসতির অস্তিত্ব ছিল। জাপানের প্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দীতে রচিত চীনা ইতিহাস গ্রন্থগুলিতে। জাপানের ইতিহাসে অন্যান্য বিভিন্ন অঞ্চলের প্রভাব দেখা যায়। এই দেশের ইতিহাসে প্রথমে চীনা সাম্রাজ্যের প্রভাব পড়েছিল। তারপর একটি বিচ্ছিন্নতার যুগ কাটিয়ে এই দেশের ইতিহাসে পড়ে পশ্চিম ইউরোপের প্রভাব। ১২শ শতাব্দী থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত শোগুন নামের সামরিক সামন্ত-শাসকরা সম্রাট উপাধিতে জাপান শাসন করেছিলেন। ১৭শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জাপান এক দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার পর্যায়ে প্রবেশ করে। ১৮৫৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী পাশ্চাত্যের সামনে জাপানকে খুলে দেওয়ার জন্য চাপ দিলে সেই বিচ্ছিন্নতার যুগের অবসান ঘটে। প্রায় দুই দশক আভ্যন্তরিণ বিবাদ ও বিদ্রোহ চলার পর ১৮৬৮ সালে মেইজি সম্রাট রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হন এবং জাপান সাম্রাজ্য ঘোষিত হয়। এই সাম্রাজ্যে সম্রাট জাতির দিব্য প্রতীকের সম্মান পান। ১৯শ শতাব্দীর শেষভাগে এবং ২০শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জাপান প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ, রুশ-জাপান যুদ্ধ ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ করে। এই ক্রমবর্ধমান সামরিক যুগে জাপান নিজ সাম্রাজ্যের পরিধি বিস্তৃত করে। ১৯৩৭ সালের দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ ১৯৪১ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি বর্ধিত অংশে পরিণত হয়। ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। ১৯৪৭ সালে সংশোধিত সংবিধান গ্রহণের পর জাপান একটি এককেন্দ্রিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত হয়। এই ব্যবস্থায় সম্রাটের পাশাপাশি কোক্কাই নামে একটি নির্বাচিত আইনসভাও গঠিত হয়।
জাপান জাতিসংঘ, জি-৭, জি৮ ও জি২০ গোষ্ঠীগুলির সদস্য। এই রাষ্ট্রটি একটি মহাশক্তিধর রাষ্ট্র।[9][10][11] নামমাত্র মোট আভ্যন্তরিণ উৎপাদন অনুযায়ী জাপান বিশ্বের ৩য়-বৃহত্তম অর্থনীতি এবং ক্রয়ক্ষমতার সাম্য অনুযায়ী ৪র্থ-বৃহত্তম অর্থনীতি। এছাড়া জাপান বিশ্বের ৫ম-বৃহত্তম রফতানিকারক এবং ৫ম বৃহত্তম আমদানিকারক রাষ্ট্র। সরকারিভাবে জাপান যুদ্ধ ঘোষনার অধিকার বর্জন করলেও এই দেশটি একটি আধুনিক সামরিক বাহিনী রেখেছে। এদেশের সামরিক বাজেট বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম সামরিক বাজেট।[12] অবশ্য জাপানের সামরিক বাহিনীর কাজ হল আত্মরক্ষা ও শান্তিরক্ষা। জাপান একটি উন্নত দেশ। এখানে জীবনযাত্রার মান ও মানব উন্নয়ন সূচক উচ্চ। সারা বিশ্বের মধ্যে এই দেশে গড় আয়ু সর্বাধিক এবং শিশু মৃত্যুর হার তৃতীয় সর্বনিম্ন।[13][14][15] দেশীয় তরবার সূচকে জাপানের স্থান প্রথম।[16] বিশ্বশান্তি সূচকে এই রাষ্ট্রের স্থান সর্বোচ্চ।[17]