Loading AI tools
আইরিশ নাট্যকার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জর্জ বার্নার্ড শ (ইংরেজি: George Bernard Shaw;[1] ২৬ জুলাই ১৮৫৬ – ২ নভেম্বর ১৯৫০) একজন আইরিশ নাট্যকার, সমালোচক, বিসংবাদী এবং রাজনৈতিক কর্মী। ১৮৮০-এর দশক থেকে শুরু করে তার মৃত্যুর পরও পশ্চিমা মঞ্চনাটক, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে তার প্রভাব বিস্তৃত। তিনি ম্যান অ্যান্ড সুপারম্যান (১৯০২), পিগম্যালিয়ন (১৯১২) ও সেন্ট জোন (১৯২৩)-সহ ষাটের অধিক নাটক রচনা করেছেন। সমসাময়িক ব্যঙ্গরচনা থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক রূপক কাহিনি দিয়ে তিনি তার প্রজন্মের অন্যতম নাট্যকার হিসেবে প্রসিদ্ধি অর্জন করেন এবং ১৯২৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
জর্জ বার্নার্ড শ | |
---|---|
স্থানীয় নাম | George Bernard Shaw |
জন্ম | ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড | ২৬ জুলাই ১৮৫৬
মৃত্যু | ২ নভেম্বর ১৯৫০ ৯৪) আয়ট সেন্ট লরেন্স, হার্টফোর্ডশায়ার, ইংল্যান্ড | (বয়স
সমাধিস্থল | শ'স কর্নার, আয়ট সেন্ট লরেন্স |
পেশা | নাট্যকার, সমালোচক, বিসংবাদী, রাজনৈতিক কর্মী |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ (১৮৫৬-১৯৫০) আইরিশ (দ্বৈত জাতীয়তা ১৯৩৪-১৯৫০) |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | ওয়েসলি কলেজ, ডাবলিন |
ধরন | ব্যঙ্গরচনা, ব্লাক কমেডি |
সাহিত্য আন্দোলন | ইবসেনবাদ, প্রকৃতিবাদ |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ১৯২৫ শ্রেষ্ঠ উপযোগকৃত চিত্রনাট্য বিভাগে একাডেমি পুরস্কার ১৯৩৮ পিগম্যালিয়ন |
স্বাক্ষর |
তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। যদিও তার লাভজনক লেখালেখির শুরু সঙ্গীত সাংবাদিকতা ও সাহিত্য সমালোচনার মাধ্যমে। কিন্তু তার প্রতিভার সম্পূর্ণ বিকাশ ঘটে নাটকে, এছাড়াও বার্নাড শ ছিলেন একাধারে প্রাবন্ধিক, উপন্যাসিক এবং ছোট গল্পকার। জর্জ বার্নার্ড শয়ের একটি মহৎ গুণ ছিল, আর তা হলো সামাজিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো হাস্যরসের ছদ্মাবরণে তিনি অত্যন্ত দক্ষ শিল্পীর হাতে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। শিক্ষা, বিয়ে, ধর্ম, সরকার, স্বাস্থ্যসেবা এবং শ্রেণী-সুবিধাই ছিল জর্জ বার্নার্ড শয়ের লেখার বিষয়বস্তু। অধিকাংশ লেখাতেই শ্রমজীবী মানুষের শোষণের বিপক্ষে তার অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট। একজন কট্টর সমাজতান্ত্রিক হিসেবে ফ্যাবিয়ান সোসাইটির পক্ষে জর্জ বার্নার্ড শ অনেক বক্তৃতা দেন ও পুস্তিকা রচনা করেন। ১৯৫০ সালের ২ নভেম্বর ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ডশায়ারে মৃত্যুবরণ করেন।
শয়ের মৃত্যুর পর থেকে তার সৃষ্টিকর্ম নিয়ে পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও সমালোচনামূলক মতামতে ভিন্নতা দেখা যায়, কিন্তু নিয়মিতই তিনি সেরা ব্রিটিশ নাট্যকার রেটিংয়ে উইলিয়াম শেকসপিয়রের পরপরই দ্বিতীয় সেরা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। গবেষকেরা ইংরেজি ভাষার নাট্যকারদের প্রজন্মে তার ব্যাপক প্রভাব স্বীকার করে থাকেন। শয়ের মতাদর্শ ও সেগুলো প্রকাশ ভঙ্গিমাকে বর্ণনা করতে শভিয়ান (Shavian) শব্দটি ইংরেজি ভাষায় যুক্ত হয়।
বার্নার্ড শ ডাবলিনের নিম্ন মধ্যবিত্ত অংশ পর্টোবেলোর ৩ আপার সাইন স্ট্রিটে[lower-alpha 1] জন্মগ্রহণ করেন।[3] তিনি জর্জ কার শ (১৮১৪-১৮৮৫) এবং লুসিন্ডা এলিজাবেথ (বেসি) শ'র (বিবাহপূর্ব গার্লি; ১৮৩০-১৯১৩) সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ও একমাত্র পুত্র। তার বড় বোনেরা হলেন লুসিন্ডা (লুসি) ফ্রান্সেস (১৮৫৩-১৯২০) ও এলিনর অ্যাগনেস (১৮৫৫-১৮৭৬)। শ পরিবার ইংরেজ বংশোদ্ভূত এবং তারা আয়ারল্যান্ডের বিত্তশালী প্রটেস্ট্যান্ট অ্যাসেন্ড্যান্সি ছিলেন।[lower-alpha 2] জর্জ কার শ ব্যর্থ ও মদ্যপ এবং এই পরিবারের সবচেয়ে কম সফল সদস্য ছিলেন।[4] তার আত্মীয়স্বজনেরা তার জন্য সরকারি দপ্তরে কাজ বা দায়িত্বহীন সম্মানীপূর্ণ একটি কাজের ব্যবস্থা করে দেন। এই কাজ থেকে ১৮৫০-এর গোড়ার দিক থেকে তিনি পেনশন পেতেন। তাছাড়া তিনি শস্য বণিক হিসেবে অনিয়মিতভাবে কাজ করতেন।[3] ১৮৫২ সালে তিনি বেসি গার্লিকে বিয়ে করেন। শয়ের জীবনীকার মাইকেল হলরয়েডের মতে বেসি তার দাদীর অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে বিয়ে করেন।[5] জর্জের বণিক হওয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে হলরয়েড ও অন্যরা যেমনটা অনুমান করেন, সেরকম হলে যেহেতু বেসি তার পরিবারের পক্ষ থেকে খুব বেশি অর্থ-সম্পদ নিয়ে আসতে পারেনি তাই জর্জ হতাশ ছিলেন।[6] তিনি তার ব্যর্থ ও মদ্যপ স্বামীকে অপছন্দ করতেন, যেই জীবনকে পরবর্তীকালে তাদের পুত্র "জীর্ণ-কেতাদুরস্ত দারিদ্র" বলে বর্ণনা করেন।[5]
শয়ের জন্মের সময় ডাবলিনের সঙ্গীতনাট্য দলের পরিচিত জমকালো ব্যক্তিত্ব জর্জ জন লির সাথে তার মাতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়। শ আজীবন ধারণা করে আসেন তিনি লির ঔরসজাত সন্তান, তবে শয়ের সাহিত্য সমালোচক ও পণ্ডিতদের মধ্যে এই নিয়ে কোন ঐকমত্য পাওয়া যায়নি।[7][8][9][10] কৈশোরে তার মাতা তার প্রতি রূঢ় ছিলেন না, তবুও শ পরবর্তীকালে বলেন তার প্রতি তার মায়ের উদাসীনতা ও স্নেহের ঘাটতি তাকে খুবই পীড়া দিত।[11] তিনি তার বাড়িতে লব্ধ সঙ্গীত থেকে সান্ত্বনা নিতেন। লি বাদকদল পরিচালক ও গানের শিক্ষক ছিলেন; বেসির মেৎসো-সোপরানো গাওয়ার গলা সুমধুর ছিল এবং তাতে লিয়ের গান গাওয়ার অগতানুগতিক পদ্ধতির প্রভাব ছিল। শ পরিবারের বাড়ি প্রায়ই সঙ্গীতে পরিপূর্ণ থাকত, এবং প্রায়ই গায়ক ও বাদকদলের জনসমাবেশ থাকত।[3]
১৮৬২ সালে লি ও শ পরিবার ডাবলিনের ধনাঢ্য অংশ ১ নং হ্যাচ স্ট্রিটে এবং পরে কিলিনি উপসাগরের পার্শ্ববর্তী ডকি পাহাড়ে একটি কুঠিরে একত্রে একটি বাড়িতে থাকতে সম্মত হয়।[12] শয়ের কাছে ডাবলিনের কম স্বাস্থ্যকর অংশটি বেদনা ও যন্ত্রণাদায়ক এবং কুঠিরটি সুখকর মনে হয়। লিয়ের শিক্ষার্থীরা তাকে প্রায়ই বিভিন্ন বই দিত, কিশোর শ তা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তেন;[13] এবং তাদের কাছ থেকে দলীয় সঙ্গীত ও গীতিনাটকের পূর্ণ সাঙ্গীতিক জ্ঞান অর্জন করেন। এতে করে তিনি সাহিত্যের বিস্তৃত পরিসরের সাথে পরিচিত হন।[14]
১৮৬৫ থেকে ১৮৭১ সালের মধ্যে শ চারটি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং তিনি প্রতিটি বিদ্যালয়ের পাঠদান অপছন্দ করেন।[15] এই চারটি বিদ্যালয় ছিল আয়ারল্যান্ডের মেথোডিস্ট চার্চ পরিচালিত ওয়েসলিয়ান কনেক্সিওনাল স্কুল; ডকির নিকটবর্তী একটি বেসরকারি বিদ্যালয়; ডাবলিন সেন্ট্রাল মডেল বয়েজ স্কুল; ও ডাবলিন ইংলিশ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল ডে স্কুল।[15] বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তার অভিজ্ঞতা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে তার মোহমুক্তি ঘটায়। তিনি পরবর্তীকালে লিখেন, "বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ হল কারাগার এবং কারাপরিদর্শক, যা বাচ্চাদেরকে তাদের পিতামাতাকে বিরক্ত করা এবং পিতামাতাকে তাদের দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত রাখে।"[16] ১৮৭১ সালের অক্টোবর মাসে তিনি বিদ্যালয়ের পাঠগ্রহণ বাদ দিয়ে ডাবলিনের একটি ভূমি প্রতিনিধির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অধস্তন কেরানি হিসেবে যোগদান করে। সেখানে তিনি কঠোর পরিশ্রম করে অচিরেই প্রধান কোষাধ্যক্ষ পদে উন্নীত হন।[17] এই সময়ে শ "জর্জ শ" নামে পরিচিত ছিলেন, ১৮৭৬ সালের পর তিনি তার নাম থেকে "জর্জ" অংশটি বাদ দেন এবং নিজেকে "বার্নার্ড শ" হিসেবে পরিচয় দিতেন।[lower-alpha 3]
১৮৭৩ সালের জুন মাসে লি লন্ডনের উদ্দেশ্যে ডাবলিন ছেড়ে যান এবং আর ফিরে আসেননি। এক পক্ষকাল পর বেসি তার দুই কন্যাকে নিয়ে লির নিকট চলে যান।[17][lower-alpha 4] তার মাতা কেন লির নিকট চলে যান এই নিয়ে শয়ের ব্যাখ্যা হল লির আর্থিক অবদান ছাড়া এই যৌথ পরিবার ভেঙ্গে পড়ত।[21] ডাবলিনে পিতার সাথে থেকে যাওয়া শ সঙ্গীতের অনুপস্থিতি কাটাতে নিজে নিজেই পিয়ানো বাজানো শিখতে শুরু করেন।[17]
১৮৭৬ সালের প্রারম্ভে শ তার মায়ের কাছ থেকে জানতে পারেন অ্যাগনেস যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুশয্যায়। তিনি ভূমি প্রতিনিধির চাকরি থেকে অব্যহতি দেন এবং মার্চ মাসে অ্যাগনেসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশ নিয়ে ইংল্যান্ডে তার মাতা ও লুসির কাছে যান। এরপর তিনি আর কখনো আয়ারল্যান্ডে থাকেননি এবং পরবর্তী ২৯ বছর সেখানে যাননি।[3]
শুরুতে শ লন্ডনে কেরানির চাকরি নিতে অস্বীকৃতি জানান। তার মাতা তার দক্ষিণ কেনসিংটনের বাড়িতে তাকে বিনা খরচে থাকতে অনুমতি দেন, তথাপি তার আয়ের প্রয়োজন ছিল। তিনি কৈশোর থেকে তার চিত্রশিল্পী হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেন এবং জীবিকার জন্য তখনো লেখনীর কথা ভাবেননি, কিন্তু লি তার জন্য একটি ছোট কাজ পান। তাকে ব্যঙ্গাত্মক সাপ্তাহিকী দ্য হর্নেট-এ লি'র নামে লেখক-কর্মচারী হিসেবে সঙ্গীতের কলাম লিখতে হবে।[3] লন্ডনে আসার পর বেসির সাথে লিয়ের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।[lower-alpha 5] শ লিয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যান। লি তার জন্য মহড়ার পিয়ানোবাদক ও অনিয়মিত গায়ক হিসেবে কাজের সন্ধান করে দিতেন।[22][lower-alpha 6]
ইতোমধ্যে শ দাপ্তরিক কাজের জন্য আবেদন করতে শুরু করেন। অন্তর্বর্তী সময়ে তিনি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের (ব্রিটিশ লাইব্রেরির অগ্রদূত) পাঠকক্ষের পাঠক পাস জোগাড় করেন এবং সপ্তাহান্তে সেখানে পড়ালেখা করে সময় ব্যয় করতেন।[26] নাটক রচনায় তার প্রথম প্রচেষ্টা শুরু হয় ১৮৭৮ সালে, তিনি ধর্মীয় বিষয়বস্তুর উপর অমিত্রাক্ষর ছন্দে একটি ব্যঙ্গধর্মী রচনা লিখেন। তিনি অসমাপ্ত অবস্থায় লেখাটি বাদ দেন এবং একটি উপন্যাস লেখার প্রয়াস চালান। তার প্রথম সম্পূর্ণ উপন্যাস হল ইম্যাচুরিটি (১৮৭৯), যা এত ভয়াবহ ছিল যে তা প্রকাশকদের মনোযোগ কাড়তে সমর্থ হয়নি এবং ১৯৩০-এর দশকের পূর্বে তা প্রকাশিত হয়নি।[17] তিনি ১৮৭৯-৮০ সালে নব্য প্রতিষ্ঠিত এডিসন টেলিফোন কোম্পানিতে যোগদান করেন, এবং ডাবলিনের মত দ্রুত পদোন্নতি লাভ করেন। তবে এডিসন কোম্পানি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বেল টেলিফোন কোম্পানির সাথে একীভূত হলে শ নতুন কোম্পানিতে যোগ দেননি।[27] এরপর তিনি লেখক হিসেবে পূর্ণ কর্মজীবন শুরু করেন।[28]
পরবর্তী চার বছরে শ লেখনী থেকে নামমাত্র উপার্জন করেন এবং তার মায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জীবিকা নির্বাহ করেন।[29] ১৮৮১ সালে আর্থিক কারণে এবং নীতিগত কারণে তিনি নিরামিষাশী হয়ে যান।[17] গুটিবসন্তের কারণে মুখে থেকে যাওয়া দাগ লুকানোর জন্য তিনি দাঁড়ি রাখা শুরু করেন।[30][lower-alpha 7] দ্রুত সফলতার জন্য তিনি দি ইরেশনাল নট এবং লাভ অ্যামং দি আর্টিস্টস নামে দুটি উপন্যাস লেখেন। কিন্তু কোনটির জন্যই প্রকাশক পাননি। কয়েক বছর পর উপন্যাস দুটি সমাজতান্ত্রিক সাময়িকী আওয়ার কর্নার-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।[33][lower-alpha 8]
১৮৮০ সালে শ জেটেটিক্যাল সোসাইটির সভায় অংশগ্রহণ শুরু করেন। এই সোসাইটির উদ্দেশ্য ছিল "মানবজাতিকে প্রভাব বিস্তার করে এমন সকল বিষয়ে সত্যের সন্ধান করা।"[36] সেখানে তিনি সিডনি ওয়েব নামে একজন বয়ঃকনিষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তার সাথে পরিচিত হন, যিনি শয়ের মত শিক্ষাগ্রহণে ব্যস্ত ছিলেন। তাদের ধরন ও প্রকৃতির ভিন্নতা সত্ত্বেও তারা অচিরেই একে অপরের গুণাবলি সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন এবং তাদের মধ্যে দীর্ঘকালের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। শ পরবর্তীকালে বলেন, "আমি যা জানতাম না আপনি তার সবকিছু জানতেন এবং আপনি যা জানতেন না আমি তার সবকিছু জানতাম ... আমাদের একে অপরের কাছ থেকে জানার মত অনেক কিছু ছিল এবং তা করার মত যথেষ্ট বুদ্ধি ছিল।"[37]
নাটকে শয়ের পরবর্তী প্রচেষ্টা ছিল অঁ পেতি দ্রাম নামে ফরাসি ভাষায় একটি একাঙ্কিকা। এটি ১৮৮৪ সালে রচিত, তবে তা তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি।[38] একই বছর সমালোচক উইলিয়াম আর্চার তার দৃশ্যপটে ও শয়ের সংলাপে যুগলবন্দি হয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন।[39] এই প্রকল্পটি ভেস্তে যায়, কিন্তু শ ১৮৯২ সালে উইডোয়ার্স হাউজেস নাটকের মূল হিসেবে এই খসড়াটি ব্যবহার করেন।[40] আর্চারের সাথে শয়ের যোগাযোগ তার কর্মজীবনে বিপুল উপযোগিতা এনে দেয়।[41]
১৮৮২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর শ ফ্যারিংডনের মেমোরিয়াল হলে রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ হেনরি জর্জের একটি সভায় অংশ নেন।[42] শ এরপর জর্জের প্রগ্রেস অ্যান্ড পভার্টি বইটি পড়েন, যা অর্থনীতির প্রতি তার আগ্রহ জাগিয়ে তুলে।[43] তিনি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক ফেডারেশন (এসডিএফ)-এর সভাগুলোতে অংশগ্রহণ করা শুরু করেন, সেখানে তিনি কার্ল মার্ক্সের লেখনীগুলো খুজে পান, এবং এরপর ১৮৮৩ সালের বেশিরভাগ সময় ডাস কাপিটাল পড়ে কাটান। তিনি এসডিএফের প্রতিষ্ঠাতা এইচ. এম. হিন্ডম্যানকে পছন্দ করতেন না, তাকে তিনি অভিজাত, বদমেজাজি ও নেতৃত্বের গুণহীন বলে মনে করতেন। শ শ্রমজীবী শ্রেণিকে ফলপ্রসূ সংস্কারপন্থী আন্দোলনে দাবিত করার লক্ষ্যে এসডিএফের সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন এবং এই সোসাইটিতে যোগ দেননি। তিনি বলেন যে তিনি তার বুদ্ধিজীবী সমকক্ষদের সাথে কাজ করতে পছন্দ করতেন।[44]
সে সময়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ফ্যাবিয়ান সমাজের হোয়াই আর দ্য মেনি পুওর? পুস্তিকা পড়ার পর শ ১৮৮৪ সালের ১৬ই মে এই সমাজের পরবর্তী বিজ্ঞাপিত সভায় অংশগ্রহণ করেন।[45] সেপ্টেম্বর মাসে তিনি এই সমাজের সদস্য হন,[45] এবং বছর শেষের আগে এই সমাজের প্রথম ইশতেহার রচনা করেন, যা ফ্যাবিয়ান ট্র্যাক্ট নং ২ নামে প্রকাশিত হয়।[46] তিনি ১৮৮৫ সালের জানুয়ারি মাসে এই সমাজের নির্বাহী কমিটিতে যোগ দেন এবং এই বছরের পরবর্তী সময়ে ওয়েব এবং সুবক্তা অ্যানি বেসান্টকেও এখানে নিয়ে আসেন।[45]
"বেসরকারি ব্যক্তিদের নিকট আমাদের জাতীয় জমি এবং মূলধন ব্যবহারের বর্তমান ব্যবস্থার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফল হল সমাজকে প্রতিকূল শ্রেণিতে বিভক্ত করা, যার মধ্যে একটিতে থাকে প্রচুর ক্ষুধা এবং এক পর্যায়ে খাবারে অভাব, এবং অন্যটিতে থাকবে বিপুল খাবার এবং ক্ষুধাহীনতা।"
শ, ফ্যাবিয়ান ট্র্যাক্ট নং ২: আ ম্যানিফেস্টো (১৮৮৪)।[47]
১৮৮৫ থেকে ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত শ ব্রিটিশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের পাক্ষিক সভায় অংশগ্রহণ করতেন। হলরয়েড পর্যবেক্ষণ করেন যে "এটিই শয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সবচেয়ে নিকটবর্তী আসা।" এই অভিজ্ঞতা তার রাজনৈতিক আদর্শে পরিবর্তন নিয়ে আসে; তিনি মার্ক্সবাদ থেকে সরে যান এবং ক্রমবাদের নতুন সংস্কারক হয়ে ওঠেন।[48] ১৮৮৬-৮৭ সালে শার্লট উইলসন, বেসান্ট ও অন্যান্য ফ্যাবিয়ানরা নৈরাজ্যবাদ গ্রহণ করবে কিনা এই তর্কে জড়ালে শ অধিকাংশের মতই এই মতবাদ বর্জনের পক্ষে যোগ দেন।[48] ১৮৮৭ সালের ১৩ই নভেম্বর ("ব্লাডি সানডে") বেসান্টের উদ্যোগে ট্রাফালগার স্কয়ারে আয়োজিত সমাবেশে কর্তৃপক্ষ তাতে বাধা প্রদান করে, শ পুলিশের ক্ষমতার বিরুদ্ধে অবস্থানের প্রচেষ্টার বাতুলতায় দৃঢ় প্রত্যয়ী হন।[49] এর ফলে তিনি ওয়েবের প্রবাহমান অবস্থার নীতি গ্রহণে সম্মত হন, এই কারণে যে সমাজতন্ত্র বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের মধ্যে জনগণ ও মতাদর্শের অনুপ্রবেশের মধ্য দিয়ে সবচেয়ে ভালোভাবে অর্জন করা যাবে।[50]
১৮৮০-এর দশক জুড়ে ফ্যাবিয়ান সমাজ ছোটই রয়ে যায় এবং তীক্ষ্ণ কণ্ঠ থেকে এর মিতাচারের সংবাদ প্রায়ই শোনা যেত না।[51] ১৮৮৯ সালে ফ্যাবিয়ান এসেজ ইন সোশ্যালিজম প্রকাশের পর এর রূপরেখা উন্নতি লাভ করে। শ এই প্রবন্ধগুলো সম্পাদনা করেন এবং দুটি প্রবন্ধও রচনা করেন, তন্মধ্যে "ট্রানজিশন" নামক দ্বিতীয় প্রবন্ধটি ক্রমবাদ ও প্রবাহমান অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা, যাতে বলা হয় "সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা ও ক্রমশ পরিবর্তন সকলের জন্যই স্পষ্টত প্রতীয়মান।"[52] ১৮৯০ সালে শ ট্র্যাক্ট নং ১৩, হোয়াট সোশ্যালিজম ইজ প্রস্তুত করেন,[46] এটি নৈরাজ্যবাদী পরিভাষায় সমাজতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করা শার্লট উইলসনের পূর্ববর্তী ট্র্যাক্টের পরিমার্জিত রূপ।[53] শয়ের নতুন সংস্করণে পাঠকেরা নিশ্চিত হন যে "গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে দিয়ে সম্পূর্ণ সাংবিধানিক উপায়ে সমাজতন্ত্র আনা যাবে।"[54]
১৮৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়টা শয়ের ব্যক্তিগত ও পেশাগত উভয় জীবনের বাঁক বদলের সময় হিসেবে চিহ্নিত। এই সময়ে তিনি কুমারত্ব হারান, তার দুটি উপন্যাস প্রকাশিত হয় এবং সমালোচক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।[55] তিনি ২৯তম জন্মদিন পর্যন্ত কুমার ছিলেন এবং এই সময়ে তার চেয়ে কয়েক বছরের বড় জেন (জেনি) প্যাটারসন নামক একজন বিধবা নারী তার লজ্জা ভেঙ্গে দেন।[56] আট বছর তাদের সম্পর্ক চলে, তবে সব সময় তা নির্ঝঞ্জাট ছিল না। শয়ের যৌন জীবন নিয়ে তার জীবনীকারদের মধ্যে অনেক ধারণা ও বিতর্ক রয়েছে, কিন্তু ঐকমত্য রয়েছে যে প্যাটারসনের সাথে তার সম্পর্ক তার নিষ্কাম প্রেম বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্কের মধ্যে অন্যতম।[lower-alpha 9]
তার প্রকাশিত উপন্যাস দুটি ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় এবং এগুলো ছিল সাহিত্যের এই ধারায় তার শেষ দুটি প্রচেষ্টা। ক্যাশেল বায়রন্স প্রফেশন ১৮৮২-৮৩ সালে রচিত এবং অ্যান আনসোশ্যাল সোশ্যালিস্ট ১৮৮৩ সালে শুরু ও শেষ করেন। দ্বিতীয় উপন্যাসটি ১৮৮৪ সালে টুডে সাময়িকীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়, যদিও এটি ১৮৮৭ সালের পূর্বে বই আকারে প্রকাশিত হয়নি। ক্যাশেল বায়রন ১৮৮৬ সালে একটি সাময়িকীতে এবং বই আকারে প্রকাশিত হয়।[17]
১৮৮৪ ও ১৮৮৫ সালে আর্চারের অনুপ্রেরণায় শ লন্ডন পেপার্সের জন্য বই ও সঙ্গীত সমালোচনা লেখায় জড়িত হন। ১৮৮৬ সালে আর্চার দ্য ওয়ার্ল্ড সাময়িকীর শিল্প সমালোচক পদ থেকে অব্যহতি নেওয়ার পর তিনি শয়ের জন্য এই পদটি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।[61] সমকালীন শিল্প সমাজে শ দুজন ব্যক্তির মতাদর্শের প্রশংসা করতেন, তারা হলেন উইলিয়াম মরিস ও জন রাস্কিন। তিনি তার সমালোচনায় তাদের মতাদর্শ অনুসরণের চেষ্টা করতেন।[61] নৈতিকতার ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বারোপ শ'কে আকৃষ্ট করে এবং শ শিল্পের জন্য শিল্প এই ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে সকল মহৎ শিল্প অবশ্যই শিক্ষামূলক হবে।[62]
১৮৮০-এর দশকে ও ১৯৯০-এর দশকে পর্যালোচক হিসেবে শয়ের বিভিন্ন কাজের মধ্যে তিনি সঙ্গীত সমালোচক হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন।[63] ১৮৮৮ সালে উপ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করার পর তিনি ১৮৮৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দ্য স্টারের সঙ্গীত সমালোচক হন এবং তিনি কর্নো দি বাসসেত্তো ছদ্মনামে লিখতেন।[64][lower-alpha 10] ১৮৯০ সালের মে মাসে তিনি দ্য ওয়ার্ল্ডে ফিরে যান এবং সেখানে তিনি "জি.বি.এস." নামে চার বছরের অধিক সময় সাপ্তাহিক কলাম লিখতেন। গ্রোভ ডিকশনারি অব মিউজিক অ্যান্ড মিউজিশিয়ান্স-এর ২০১৬ সালের সংস্করণে রবার্ট অ্যান্ডারসন লিখেন, "সঙ্গীত নিয়ে শয়ের সংকলিত রচনাবলি ইংরেজি ও বাধ্যতামূলক সুখপাঠ্যতার জ্ঞান নিয়ে দৃঢ়নিশ্চল ছিল।"[66] শ ১৮৯৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত সঙ্গীত সমালোচক হিসেবে অবিরাম কাজ করেন, তবে তার কর্মজীবন জুড়ে তিনি প্রায়ই এই বিষয় নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করতেন, তন্মধ্যে সর্বশেষ লেখাটি ছিল ১৯৫০ সালে।[67]
১৮৯৫ থেকে ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত শ তার বন্ধু ফ্র্যাঙ্ক হ্যারিস সম্পাদিত দ্য স্যাটারডে রিভিউয়ের মঞ্চ সমালোচক ছিলেন। দ্য ওয়ার্ল্ড-এর মত তিনি "জি.বি.এস." ব্যবহার করতেন। তিনি ভিক্টোরীয় মঞ্চের কৃত্রিম রীতিনীতি ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান চালান এবং বাস্তব ধারণা ও সত্যিকার চরিত্রের নাটকের জন্য আহ্বান জানান। এই সময়ে তিনি নাট্যকার হিসেবে কর্মজীবন শুরুর জন্য উৎসুক হন: "আমি এই বিষয়টি নিয়ে তাড়াহুড়া করি এবং তা ভেস্তে দেওয়ার পরিবর্তে আমি সাক্ষ্যপ্রমাণ প্রস্তুত করি।"[17]
আর্চারের সাথে ১৮৮৪ সালের বাতিলকৃত যুগলবন্দির দৃশ্যপট ব্যবহার করে উইডোয়ার্স হাউজেস সম্পন্ন করার পর নাটকটি ১৮৯২ সালের ডিসেম্বরে লন্ডনে দুইবার মঞ্চস্থ হয়। উইডোয়ার্স হাউজ রচনার পর শ নাটক রচনা চালিয়ে যান। শুরুতে তিনি ধীরগতিতে অগ্রসর হন। দ্য ফিলান্ডারার ১৮৯৩ সালের রচিত কিন্তু ১৮৯৮ সালের পূর্বে তা প্রকাশিত হয়নি এবং মঞ্চায়নের জন্য ১৯০৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। একইভাবে মিসেস ওয়ারেন্স প্রফেশন (১৮৯৩) প্রকাশের পাঁচ বছর পূর্বে রচিত এবং নয় বছর পর মঞ্চস্থ হয়েছিল।[lower-alpha 11]
শয়ের প্রথম ব্যবসায়িক সফলতা এনে দেওয়া নাটক ছিল আর্মস অ্যান্ড দ্য ম্যান (১৮৯৪)। এটি একটি ব্যঙ্গ-রুরিটানিয়ান হাস্যরসাত্মক নাটক যা প্রেমের রীতিনীতি, সামরিক সম্মান ও শ্রেণি নিয়ে বিদ্রূপ উপস্থাপন করে।[17] গণমাধ্যম নাটকটিকে অতিরিক্ত দীর্ঘ ও শয়ের মধ্যে সাধরণত্ব খুঁজে পায়,[69] বীরত্ব ও দেশপ্রেম,[70] হৃদয়হীন চতুরতার দিকে নাক সিটকায়,[71] এবং ডাব্লিউ. এস. গিলবার্টের রচনাশৈলীর অনুলিপি করার অভিযোগ করে।[69][lower-alpha 12] দর্শক ভিন্নমত পোষণ করে এবং দর্শক চাহিদা মেটাতে মঞ্চের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ অতিরিক্ত বৈকালিক প্রদর্শনীর আয়োজন করে।[72] নাটকটি এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত চলে, বিভিন্ন প্রদেশে সফরে যায় এবং নিউ ইয়র্কে মঞ্চস্থ হয়।[37] প্রথম বছরে এই নাটক থেকে তিনি £৩৪১ রয়্যালটি পান, যা সঙ্গীত সমালোচক হিসেবে তার পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত পদ থেকে অব্যহতি নেওয়ার জন্য যথেষ্ট অর্থ।[73] লন্ডনে মঞ্চায়নে অভিনয়শিল্পীদলের মধ্যে ছিলেন ফ্লোরেন্স ফার, যার সাথে ১৮৯০ থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত শয়ের প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। যার ফলে জেনি প্যাটারসন খুবই ক্ষুব্ধ হন।[74]
আর্মস অ্যান্ড দ্য ম্যান নাটকের পরপরই আর কোন সফলতা আসেনি। ক্যানডিডা নাটকে একজন তরুণী অগতানুগতিক কারণে প্রথাগত প্রেম নির্বাচন উপস্থাপন করা হয়, ১৮৯৫ সালে সাউথ শিল্ডসে এর একটি প্রদর্শনী হয়।[75] ১৮৯৭ সালে ক্রয়ডনে নেপোলিয়ন সম্পর্কিত নাটিকা দ্য ম্যান অব ডেসটিনির একটি মঞ্চায়ন হয়।[76] ১৮৯০-এর দশকে শয়ের নাটকগুলো মুদ্রিত আকারের চেয়ে ওয়েস্ট এন্ডে মঞ্চায়নের জন্য অধিক পরিচিতি অর্জন করে। এই দশকে তার সবচেয়ে বড় সফলতা ছিল ১৮৯৭ সালে নিউ ইয়র্কে যখন রিচার্ড ম্যান্সফিল্ডের প্রযোজনায় ঐতিহাসিক অতিনাটকীয় দ্য ডেভল্স ডিসাইপল নাটকটির জন্য তিনি £২,০০০ এর অধিক রয়্যালটি পান।[3]
১৮৯৩ সালের জানুয়ারি মাসে ফ্যাবিয়ান প্রতিনিধি হিসেবে শ ব্র্যাডফোর্ড সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন, যা এই ফাউন্ডেশনকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টি গঠনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।[77] তিনি নতুন দল নিয়ে সংশয়বাদী ছিলেন,[78] এবং শ্রমজীবী শ্রেণির অনুগত্য খেলাধুলা থেকে রাজনীতির দিকে ঘোরে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে তা অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।[79] তিনি সম্মেলনে অপ্রত্যক্ষ কর বিলোপ ও অনুপার্জিত আয়ের উপর করারোপ লোপ করার প্রস্তাব গ্রহণ করতে রাজি করান।[80] লন্ডনে ফিরে এসে শ উদার প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি রচনা প্রকাশ করেন, যা মার্গারেট কোল তার ফ্যাবিয়ান ইতিহাসে "গ্র্যান্ড ফিলিপিক" নামে অভিহিত করেন। এটি ১৮৯২ সালে থেকে কার্যকর হয়। টু ইয়োর টেন্টস, ও ইসরায়েল সামাজিক সমস্যাবলি উপেক্ষা করার জন্য সরকারকে উদ্বিগ্ন করে এবং আইরিশ স্বরাষ্ট্র আইনের দিকে মনোযোগী হয়, যে বিষয়টিকে শ সমাজতন্ত্রের সাথে কোন প্রাসঙ্গিকতা নেই বলে ঘোষণা দেয়।[79][81][lower-alpha 13] ১৮৯৪ সালে ফ্যাবিয়ান সমাজ হেনরি হান্ট হাচিনসন নামক একজন সমর্থকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি উইল মারফত লাভ করে, হলরয়েড তা £১০,০০০ বলে উল্লেখ করেন। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ওয়েবকে এই উত্তরাধিকার তদারকির জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এই সম্পত্তির বড় একটি অংশ দিয়ে অর্থনীতি ও রাজনীতি সম্পর্কিত একটি বিদ্যালয় নির্মাণের প্রস্তাব করেন। শ আপত্তি করেন; তিনি ভেবেছিলেন এইরকম কিছুতে বিনিয়োগ এই উত্তরাধিকারের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যর বিপরীত হবে। তিনি অবশেষে এই প্রস্তাবে রাজি হন, এবং ১৮৯৫ সালের গ্রীষ্মে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স (এলএসই) চালু হয়।[83]
১৮৯০-এর দশকের শেষভাগে নাট্যকার হিসেবে তার নামের দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে শয়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হ্রাস পায়।[84] ১৮৯৭ সালে তাকে লন্ডনের সেন্ট প্যানক্র্যাস জেলার করদাতা পরিষদের সদস্য পদে প্রতিযোগিতাহীন শুন্যপদ পূরণের জন্য রাজি করানো হয়। একদম শুরুর দিকে শ তার পৌর কার্যাবলি একনিষ্ঠভাবে গ্রহণ করেন;[lower-alpha 14] ১৮৯৯ সালে লন্ডন সরকার সংস্কার করা হলে এবং সেন্ট প্যানক্র্যাস করদাতা পরিষদ সেন্ট প্যানক্র্যাসের মেট্রোপলিটন বরা হলে তিনি নব্য গঠিত বরা কাউন্সিলের জন্য নির্বাচিত হন।[86]
১৮৯৮ সালে অতিরিক্ত কাজের ফলে শয়ের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। ওয়েবের মাধ্যমে পরিচিত শার্লট পেইন-টাউনশেন্ড নামে এক ধনাঢ্য অ্যাংলো-আইরিশ নারী তার সেবা-শুশ্রূষা করেন। আগের বছর শার্লট শ'কে বিয়ের প্রস্তাব দেন।[87] শ সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন, কিন্তু যখন শার্লট তাকে সেবা করার জন্য পীড়াপীড়ি করেন, তা থেকে কেলেঙ্কারি রটতে পারে এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে শ তাকে বিয়ে করতে রাজি হন।[3] ১৮৯৮ সালের ১লা জুন কভেন্ট গার্ডেনের রেজিস্টার অফিসে তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়।[88] বর-কনে দুজনেরই বয়স ছিল ৪১। জীবনীকার ও সমালোচক সেন্ট জন আরভিনের দৃষ্টিতে "তাদের জীবন সুখপূর্ণ ছিল।"[3] এই বিবাহের ফলে তাদের কোন সন্তান ছিল, সাধারণভাবে ধারণা করা হয় এই বিবাহ কখনোই নিখুঁত ছিল না; তা সম্পূর্ণ শার্লটের ইচ্ছাই হোক বা না হোক।[89][90][91][92][93] বিবাহের প্রথম সপ্তাহে শ রিশার্ড ভাগনারের ডের রিং ডেস নিবেলুঙ্গেন-এর মার্ক্সবাদী বিশ্লেষণ লেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, যা ১৮৯৮ সালের শেষভাগে দ্য পারফেক্ট ভাগনারিট নামে প্রকাশিত হয়।[94] ১৯০৬ সালে শ পরিবার হার্টফোর্ডশায়ারের আয়ট সেন্ট লরেন্সে একটি বাড়িতে ওঠেন, তারা এই বাড়ির নাম পরিবর্তন করে রাখেন "শ'স কর্নার"। তারা সেখানে তাদের বাকি জীবন অতিবাহিত করেন। তারা আডেলফিতে এবং পরে হোয়াইটহল কোর্টে একটি ফ্ল্যাট রাখেন।[95]
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে শ নাট্যকার হিসেবে বিপুল সুখ্যাতি অর্জন করেন। ১৯০৪ সালে জে. ই. ভেডরেন ও হার্লি গ্র্যানভিল-বার্কার আধুনিক নাটক মঞ্চায়নের জন্য চেলসির স্লোয়ান স্কয়ারের রয়্যাল কোর্ট থিয়েটারে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী পাঁচ বছরে তারা শয়ের ১৪টি নাটক মঞ্চস্থ করে।[96][lower-alpha 15] প্রথম নাটকটি হল আয়ারল্যান্ডে একজন ইংরেজ সম্পর্কিত হাস্যরসাত্মক নাটক জন বুল্স আদার আইল্যান্ড, যা শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদদের আকৃষ্ট করে এবং রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড এটি দেখে এত হেসেছিলেন যে তিনি তার চেয়ার ভেঙ্গে ফেলেছিলেন।[97][17] তবুও এটি ১৯০৭ সালে শহরের রয়্যাল থিয়েটারে প্রদর্শিত হয়।[98] শ পরবর্তীকালে লিখেন উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস এই নাটকটির অনুরোধ করেন, "এটি নব্য-গ্যালিক আন্দোলনের সম্পূর্ণ ধ্যান-ধারণার সাথে প্রকৃতিবিরুদ্ধ, যা এর নিজস্ব আদর্শ অনুসারে একটি নতুন আয়ারল্যান্ড সৃষ্টি করেছে, যেখানে আমার নাটক প্রকৃত পুরনো আয়ারল্যান্ডের খুবই আপোসহীন উপস্থাপনা।"[99][lower-alpha 16] তা সত্ত্বেও, শ এবং ইয়েটস ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ১৯০৯ সালে জে. এম. সিংয়ের মৃত্যুর পর ইয়েটস ও লেডি গ্রেগরি তাকে অ্যাবি থিয়েটারের সহ-পরিচালকের খালি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য রাজি করাতে ব্যর্থ হন।[102] শ আইরিশ সাহিত্যের পুনর্জাগরণের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ তথা জর্জ রাসেল[103] ও জেমস জয়েসের প্রশংসা করতেন।[104] তিনি শন ওকেসির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, যিনি শয়ের জন বুল্স আদার আইল্যান্ড পড়ার পর নাট্যকার হওয়ার অনুপ্রেরণা লাভ করেন।[105]
১৯০২ সালে সম্পন্ন করা ম্যান অ্যান্ড সুপারম্যান ১৯০৫ সালে রয়্যাল কোর্টে এবং একই বছর রবার্ট লরেইনের নির্দেশনায় নিউ ইয়র্কে সফলতা অর্জন করে। ভেডরেন ও গ্র্যানভিল-বার্কারের উপস্থাপিত শয়ের অন্যান্য কাজগুলোর মধ্যে অস্ত্র প্রস্তুতকারী ও আধা সামরিক মিশনারি সংগঠনের মধ্যকার বিপরীত নৈতিকতার চিত্রায়ন মেজর বারবারা (১৯০৫);[106] পেশাদার নৈতিকতা নিয়ে রচিত গুরুগম্ভীর নাটক দ্য ডক্টর্স ডিলেমা (১৯০৬);[107] এবং শেকসপিয়ারের অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা'র তীব্র প্রতিবাদ সিজার অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা ১৯০৬ সালে নিউ ইয়র্কে ও পরের বছর লন্ডনে প্রদর্শিত হয়।[108]
কর্মজীবনে উন্নতি লাভ এবং প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর শ অপ্রচলিত নাট্যরূপ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। তার জীবনীকার স্ট্যানলি ওয়েনট্রব এগুলোকে "আলোচনামূলক নাটক" এবং "গুরুতর প্রহসন" হিসেবে বর্ণনা করেন।[17] এই নাটকের মধ্যে গেটিং ম্যারেড (প্রথম মঞ্চস্থ ১৯০৮), দ্য শেইং-আপ অব ব্ল্যাঙ্কো পোসনেট (১৯০৯), মিসালাইয়ান্স (১৯১০) এবং ফ্যানি'স ফার্স্ট প্লে (১৯১১) অন্তর্ভুক্ত ছিল। লর্ড চেম্বারলাইন (ইংল্যান্ডের সরকারি থিয়েটার সেন্সর) ব্লাঙ্কো পোসনেটকে ধর্মীয় কারণ দর্শিয়ে নিষিদ্ধ করেন এবং ফলে এটি ইংল্যান্ডের পরিবর্তে ডাবলিনে মঞ্চস্থ হয়েছিল। এর প্রদর্শনীতে অ্যাবি থিয়েটার দর্শকে পরিপূর্ণ হয়।[109] ভোগান্তি সম্পর্কিত হাস্যরসাত্মক নাটক ফ্যানি'স ফার্স্ট প্লে শয়ের নাটকের মধ্যে সর্বাধিক ৬২২ বার মঞ্চস্থ হয়।[110]
ব্ল্যাঙ্কো পোসনেট-এর চেয়ে সত্য ও মিথ্যা ধর্মীয় মনোভাবের অল্প বিস্তৃত অধ্যয়ন অ্যান্ড্রোক্লিস অ্যান্ড দ্য লায়ন (১৯১২)। এটি ১৯১৩ সালের সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে আট সপ্তাহ ধরে চলেছিল।[111] এর পরে শয়ের অন্যতম সফল নাটক পিগম্যালিয়ন ১৯১২ সালে রচিত এবং পরের বছর ভিয়েনায় এবং তার কিছুদিন পরেই বার্লিনে মঞ্চস্থ হয়।[112] শ মন্তব্য করেছিলেন, "আমার একটি নাটক তৈরি হওয়ার সময় ইংরেজি সংবাদমাধ্যমের রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে যে তারা বিশ্বকে জানিয়ে দেয় যে এটি কোনও নাটক নয় — এটি নিস্তেজ, নিন্দামূলক, অপ্রিয় এবং আর্থিকভাবে ব্যর্থ... সুতরাং এখানে ভিয়েনা এবং বার্লিনের পরিচালকদের পক্ষ থেকে জরুরি দাবি ওঠেছিল যে আমার নাটকগুলো প্রথমে তাদেরই মঞ্চস্থ করা উচিত।"[113] ১৯১৪ সালের এপ্রিলে ব্রিটিশ মঞ্চে নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হওয়া শুরু হয়। এতে স্যার হার্বার্ট ট্রি এবং মিসেস প্যাট্রিক ক্যাম্পবেল যথাক্রমে ধ্বনিবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং লন্ডনবাসী ফুল বিক্রেতা চরিত্রে অভিনয় করেন। শ ও ক্যাম্পবেলের মধ্যে এর আগেও প্রণয়মূলক যোগাযোগ ছিল, যা শার্লট শয়ের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ ছিল। তবে লন্ডনের প্রিমিয়ারের সময় সেই সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়।[114] নাটকটি জুলাই অবধি প্রচুর দর্শক টানে, ট্রি ছুটিতে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করলে নাটকটির মঞ্চায়ন বন্ধ হয়। তার সহ-তারকা তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই নাটক নিয়ে সফরে যান।[115][116][lower-alpha 17]
১৮৯৯ সালে বোয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে শ ইচ্ছা পোষণ করে যেন ফ্যাবিয়ানরা একে "অ-সমাজতান্ত্রিক" ইস্যু হিসাবে বিবেচনা করে গৃহ আইনের মত নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে। ভবিষ্যৎ শ্রম প্রধানমন্ত্রী র্যামসি ম্যাকডোনাল্ডসহ অন্যরা দ্ব্যর্থহীনভাবে এর বিরোধিতা করেন এবং তারা শয়ের অনুসরণ করার জন্য ফ্যাবিয়ান সমাজ থেকে পদত্যাগ করেন।[118] ফ্যাবিয়ানদের যুদ্ধের ইশতেহার, ফ্যাবিয়ানিজম অ্যান্ড দ্য এম্পায়ার (১৯৯০)-এ শ ঘোষণা দেন যে "বিশ্ব ফেডারেশন পূর্ণাঙ্গ বিষয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবশ্যই তার বিকল্প হিসেবে উপলব্ধ সর্বাধিক দায়িত্বশীল রাজকীয় ফেডারেশনগুলোকে গ্রহণ করতে হবে।"[119]
নতুন শতাব্দী শুরু হওয়ার সাথে সাথে জাতীয় রাজনীতিতে ফ্যাবিয়ানদের প্রভাব কমে যাওয়ায় শ ক্রমশই মোহমুক্ত হয়ে পড়েন।[120] ফলস্বরূপ, একজন মনোনীত ফ্যাবিয়ান প্রতিনিধি হলেও তিনি ১৯০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফারিংডন স্ট্রিটের মেমোরিয়াল হলে আধুনিক লেবার পার্টির পূর্বসূরী লেবার রিপ্রেজেন্টেশন কমিটি কর্তৃক আয়োজিত লন্ডন সম্মেলনে অংশ নেননি।[121] ১৯০৩ সালে বরা কাউন্সিলর হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তিনি তার আগেকার উত্সাহ হারিয়ে ফেলেন: "ছয় বছর বরা কাউন্সিলিং করার পরে আমি নিশ্চিত যে বরা কাউন্সিলগুলি বিলুপ্ত করা উচিত।"[122] তা সত্ত্বেও, ১৯০৪ সালে তিনি লন্ডন কাউন্টি কাউন্সিল নির্বাচনে অংশ নেন। তার খামখেয়ালিসুলভ প্রচারাভিযানের পর, যাকে হলরয়েড "জয়ী না হতে পারা একেবারে নিশ্চিত" বলে আখ্যায়িত করেন, তার পরাজিত নির্ধারিত হয়ে পড়ে। নির্বাচনী রাজনীতিতে এটি শয়ের সর্বশেষ প্রচেষ্টা।[122] জাতীয়ভাবে, ১৯০৬ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলে লিবারেলরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং ২৯ জন শ্রম সদস্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। শ এই ফলাফলকে সন্দেহের চোখে দেখেন; নতুন প্রধানমন্ত্রী স্যার হেনরি ক্যাম্পবেল-ব্যানারম্যান সম্পর্কে তার নিচু মনোভাব ছিল এবং শ্রম সদস্যদেরকে অপ্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করেন: "আমি এই জাতীয় সংগঠনের সাথে আমার সম্পর্কের জন্য বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি"।[123]
১৯০৬ সালের নির্বাচনের পরের বছরগুলোতে শ ফ্যাবিয়ানদের নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং এ বিষয়টি তিনি ১৯০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সমাজে যোগ দেওয়া তার সমকালীন-লেখক এইচ. জি. ওয়েলসের মধ্যে দিয়ে দেখেছিলেন।[124] সংস্কারের জন্য ওয়েলসের পরামর্শগুলো - বিশেষত ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টির সাথে নিবিড় সহযোগিতার জন্য তার প্রস্তাবনাগুলোর জন্য শয়ের নেতৃত্বে ফ্যাবিয়ান সমাজের "পুরনো দল"-এর সাথে তার মতানৈক্যের সৃষ্টি করে।[125] কোলের মতে, ওয়েলসের "শয়ের প্রশিক্ষিত ও অনুশীলনকৃত গুণাবলির বিরুদ্ধে জনসাধারণের মধ্যে [তার ধারণাগুলো] বিস্তারের ন্যূনতম ক্ষমতা ছিল"।[126] শয়ের দৃষ্টিতে, "পুরনো দল জনাব ওয়েলসকে নিভিয়ে দেয়নি, তিনি নিজেকে নিশ্চিহ্ন করেছিলেন"।[126] ১৯০৮ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়েলস সমাজ থেকে পদত্যাগ করেন;[127] শ সদস্য হিসেবে রয়ে যান, তবে ১৯১১ সালের এপ্রিলে তিনি কার্যনির্বাহী পদ ত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন যে পুরনো দলের কয়েক বছর আগে ওয়েলসের পথ চলা উচিত ছিল কিনা: "ঈশ্বর কেবল জানেন যে সমাজের এর চেয়ে ভাল কিছু করার ছিল কিনা।"[128][129] শ একজন ফ্যাবিয়ান রয়ে গেলেও কম সক্রিয় ছিলেন, এজন্য তিনি পরবর্তী বছরগুলোকে দায়ী করেন।[130]
১৯১২ সালে শ ওয়েবের নতুন প্রকাশনার এক পঞ্চমাংশ অংশীদারিত্বের জন্য £১,০০০ বিনিয়োগ করেন। ১৯১৩ সালের এপ্রিলে দ্য নিউ স্টেটসম্যান নামে সমাজতান্ত্রিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। তিনি প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, প্রচারক এবং একজন যথাযথ অবদানকারী ছিলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিনি বেনামে লিখতেন।[131] শীঘ্রই ম্যাগাজিনের সম্পাদক ক্লিফোর্ড শার্পের সাথে তার মতবিরোধ শুরু হয়। শার্প ১৯১৬ সাল থেকে তার রচনাগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে চলেছিলেন। শ বলেন, এটি "বিশ্বের একমাত্র পত্রিকা যা আমার লেখা ছাপতে অস্বীকৃতি জানায়।"[132]
"আমি মনে করি ইংল্যান্ড এবং জার্মানির জঙ্গী এবং সামরিকজান্তারা একে অপরকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়ার এবং বিশ্বের প্রভাবশালী সামরিক শক্তি হিসেবে তাদের নিজস্ব আভিজাত্য প্রতিষ্ঠার জন্য বহু বছর ধরে যে প্রত্যাশা করছিল তার সুযোগ পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিন্তু তা ভেস্তে যায়।"
শ: কমন সেন্স অ্যাবাউট দ্য ওয়ার (১৯১৪).[133]
১৯১৪ সালের আগস্টে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পরে শ তার কমন সেন্স অ্যাবাউট দ্য ওয়ার ট্র্যাক্ট প্রস্তুত করেন। তিনি এতে যুক্তি দেখান যে যুদ্ধরত দেশগুলো সমান দোষী ছিল।[17] এই জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি ছিল তপ্ত দেশপ্রেমের পারিপার্শ্বিকতায় ঘৃণিত ছিল, এবং শয়ের অনেক বন্ধু এতে ক্ষুব্ধ হয়। আরভিন রেকর্ড করেন যে "কোন গণঅনুষ্ঠানে তার উপস্থিতির ফলে উপস্থিতদের অনেকের তাত্ক্ষণিক প্রস্থান করতেন।"[134]
শয়ের ভ্রান্ত খ্যাতি সত্ত্বেও তার প্রচারমূলক দক্ষতা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের নজর কাড়ে এবং ১৯১৭ সালের গোড়ার দিকে ফিল্ড মার্শাল হাইগ তাকে পশ্চিম রণাঙ্গনের বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্র পরিদর্শন করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। সৈনিকের জীবনের মানবিক দিকগুলোর দিকে জোর দিয়ে শয়ের লেখা ১০,০০০-শব্দের প্রতিবেদন বিপুল সমাদৃত হয়। ১৯১৭ সালের এপ্রিলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে প্রবেশের প্রতি স্বাগত জানাতে জাতীয় ঐকমত্যে যোগ দেন: "জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সমবেত উদ্দেশ্যের জন্য প্রথম শ্রেণির নৈতিক সম্পদ"।[135]
যুদ্ধের সময় শয়ের তিনটি ছোট নাটক মঞ্চস্থ হয়। ১৯১৫ সালে রচিত ইনকা অব পেরুসালেম কেবলমাত্র শত্রু নয় ব্রিটিশ সামরিক প্রধানদের নিয়ে কৌতুকজনক অনুকরণের জন্য সেন্সরজনিত সমস্যার মুখোমুখি হয়। এটি ১৯১৬ সালে বার্মিংহাম রেপার্টারি থিয়েটারে মঞ্চস্থ।[136] আইরিশ নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়ে সরকারের মনোভাবের ব্যঙ্গ করে রচিত ও'ফ্ল্যাহার্টি ভি.সি. যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ হয় এবং ১৯১৭ সালে বেলজিয়ামের রয়্যাল ফ্লাইং কর্প বেসে মঞ্চস্থ হয়। অগাস্টাস ডাজ হিজ বিট নামে সহানুভূতিপ্রবণ প্রহসনটি লাইসেন্স পায়; এটি ১৯১৭ সালের জানুয়ারিতে রয়্যাল কোর্টে প্রথম মঞ্চস্থ হয়।[137]
শ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যে আইরিশ হোম রুলের নীতিটিকে দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন করেছিলেন (যা তিনি ভাবেন যে ব্রিটিশ কমনওয়েলথ হওয়া উচিত)। ১৯১৬ সালের এপ্রিলে তিনি জঙ্গিবাদী আইরিশ জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে কঠোরতার সাথে লিখেন: "কিছু না শিখতে এবং কিছু না ভুলে যাওয়া আমার এই সমসাময়িক দেশপ্রেমিকরা বোর্বানকে কোথাও ছেড়ে যায় না।" তিনি দৃঢ়ভাবে দাবি করেছিলেন যে সামগ্রিক স্বাধীনতা অবৈধ ছিল; একটি বৃহত্তর কোন শক্তির সাথে জোট গঠন করা (মূলত ইংল্যান্ড) অপরিহার্য ছিল। সেই মাসের শেষে ডাবলিন ইস্টার রাইজিং তাকে অবাক করে। ব্রিটিশ বাহিনী তাদের দমন করার পরেও তিনি বিদ্রোহী নেতাদের মৃত্যুদন্ডের সময় ভয় পেয়েছিলেন, তবে অ্যাংলো-আইরিশ ইউনিয়নের উপর বিশ্বাস রাখতে থাকেন। হাউ টু সেটল আইরিশ কোয়েশন (১৯১৭), তিনি জাতীয় এবং রাজকীয় সংসদ নিয়ে একটি ফেডারেল বিন্যাসের পরিকল্পনা করেন। হলরয়েড রেকর্ড করেছে যে এই সময়ের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী দল সিন ফিন উত্থান ঘটে ছিল এবং শ এবং অন্যান্য মধ্যপন্থী পরিকল্পনাকারীরা বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল।
যুদ্ধোত্তর কালে শ আয়ারল্যান্ডের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের জবরদস্তি নীতির কারণে হতাশ হন, এবং তার সমকালীন লেখক হিলায়ার বেলোক এবং জি. কে. চেস্টারটনের সাথে যোগ দিয়ে এই কার্যাবলির প্রকাশ্যে নিন্দা করেন। ১৯২১ সালের ডিসেম্বরে অ্যাংলো-আইরিশ চুক্তি উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে আয়ারল্যান্ডের বিভাজনের দিকে পরিচালিত করে, এই বিধানটি শকে ভীত করেছিল। ১৯২২ সালে তার চুক্তিপন্থী ও চুক্তিবিরোধী দলগুলোর মধ্যে দক্ষিণে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, যার মধ্যে প্রথমোক্ত দল আইরিশ ফ্রি স্টেট প্রতিষ্ঠা করে। শ আগস্টে ডাবলিন সফরে যান এবং ফ্রি স্টেটের অস্থায়ী সরকারের প্রধান মাইকেল কলিন্সের সাথে দেখা করেন। শ কলিন্সের প্রতি খুব মুগ্ধ হন, এবং তিন দিন পরে এই আইরিশ নেতা সন্ধি বিরোধী বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে শিকার এবং নিহত হলে তিনি দুঃখ পেয়েছিলেন। কলিন্সের বোনকে লেখা একটি চিঠিতে শ লিখেন: "আমি গত শনিবার প্রথম এবং শেষবারের মতো মাইকেলের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম এবং এর জন্য আমি খুব খুশী হয়েছি। আমি তার স্মৃতিতে আনন্দিত, এবং তার সাহসী মৃত্যুকে অবজ্ঞা করতে পারব না।" শ সারাজীবন একজন ব্রিটিশ প্রজা ছিলেন, তবে ১৯৩৪ সালে তিনি দ্বৈত ব্রিটিশ-আইরিশ জাতীয়তা গ্রহণ করেন।
যুদ্ধের পরে শের প্রথম বড় কাজ হল হার্টব্রেক হাউজ, যা ১৯১৬-১৭ সালে রচিত এবং ১৯২০ সালে মঞ্চস্থ হয়। এটি নভেম্বরে ব্রডওয়েতে মঞ্চস্থ হয় এবং শীতলভাবে গৃহীত হয়েছিল; দ্য টাইমসের মতে: "এই উপলক্ষে জনাব শয়ের স্বাভাবিকের চেয়ে আরও বেশি কিছু বলার আছে এবং তা বলার জন্য যথারীতি দ্বিগুণ সময় নেয়"। ১৯২১ সালের অক্টোবরে লন্ডনে প্রথম মঞ্চস্থ হওয়ার পরে দ্য টাইমস মার্কিন সমালোচকদের সাথে একমত হয়: "জনাব শয়ের অন্যান্য নাটকের মত নাটকটি যথারীতি প্রায় এক ঘন্টা দীর্ঘ", যদিও এতে "অনেক বিনোদন এবং কিছুটা লাভজনক প্রতিচ্ছবি" রয়েছে। দ্য অবজারভারের আরভিন মনে করেন নাটকটি বুদ্ধিদীপ্ত, তবে লেডি আটারওয়ার্ড চরিত্রে ইডিথ এভান্সকে ব্যতীত বাকিরা গদাইলস্করি চালে অভিনয় করেন।
শয়ের সবচেয়ে বড় মাপের মঞ্চ নাটক হল ব্যাক টু মেথুসেলাহ, যা ১৯১৯-২০ সালে রচিত এবং ১৯২২ সালে মঞ্চস্থ হয়। ওয়েনট্রব এটিকে "শয়ের একেবারে নিরুৎসাহিত হতাশার তলাবিহীন গর্ত রোধ করার প্রচেষ্টা" হিসেবে বর্ণনা করেন। পাঁচটি আন্তঃসম্পর্কিত নাটকের এই চক্রে বিবর্তন ইডেন বাগান থেকে ৩১,৯২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘায়ুবাদের প্রভাব চিত্রিত হয়। সমালোচকরা পাঁচটি নাটককে গুণমান এবং নতুনত্বের দিক থেকে অসম্ভবভাবে অসম বলে মনে করেন। মূল মঞ্চায়নের পরিক্রমা সংক্ষিপ্ত ছিল এবং কাজটি খুব কম সময়েই পুনঃমঞ্চস্থ করা হয়েছে। শ অনুভব করেন যে তিনি এই "মেটাবায়োলজিকাল পেন্টাটিচ"-এর দীর্ঘ পরিসর সৃষ্টি করতে গিয়ে তার অবশিষ্ট সৃজনশীল ক্ষমতা নিঃশেষ করে দিয়েছেন। তিনি তখন ৬৭ বছর বয়সী, এবং আর কোনও নাটক লিখবেন না বলে প্রত্যাশা করেছিলেন।
তার এই মেজাজ স্বল্পস্থায়ী ছিল। ১৯২০ সালে পোপ পঞ্চদশ বেনেডিক্ট জোয়ান অব আর্ককে সাধু হিসেবে ঘোষণা করেন; শ দীর্ঘদিন ধরে জোয়ানকে একটি আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক চরিত্র হিসেবে বিবেচনা করে আসছিলেন এবং তার সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল তিনি "অর্ধ-বুদ্ধিমান প্রতিভা" নতুবা "ব্যতিক্রমী বিবেকহীন"। তিনি ১৯১৩ সালে তাকে নিয়ে একটি নাটক লেখার বিষয়ে চিন্তা করেন এবং ক্যানোনাইজেশন তাকে এই বিষয়ে ফিরে আসতে প্ররোচিত করেছিল। তিনি ১৯৩৩ সালের মাঝামাঝিতে সেন্ট জোয়ান লিখেন এবং ডিসেম্বর মাসে ব্রডওয়েতে নাটকটির প্রথম মঞ্চস্থ হয়। সেখানে দর্শক উত্সাহের সাথে এটি গ্রহণ করে, এবং এর পরের মার্চ মাসে লন্ডনের লন্ডনে প্রথম মঞ্চস্থ হয়। ওয়েনট্রবের বাক্যে, "এমনকি নোবেল পুরস্কার কমিটিও সেন্ট জোয়ানের পরে আর শ'কে উপেক্ষা করতে পারেনি।" ১৯২৫ সালের প্রদত্ত সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের তার কাজের প্রশংসা হিসেবে উল্লেখ করা হয় "... আদর্শবাদ এবং মানবতা উভয় দ্বারা চিহ্নিত, এর উদ্দীপক ব্যঙ্গ প্রায়ই একক কাব্যিক সৌন্দর্যে মিশে থাকে।"
শ ১৯৩৪ সালে তার নাটকের একটি সংকলিত সংস্করণ প্রকাশ করেন, যাতে ৪২টি নাটক ছিল।[138] তিনি তার জীবনের বাকি ১৬ বছরে আরও ১২টি নাটক লিখেন, যার অধিকাংশই একাঙ্কিকা। তার প্রকাশিত কাজ থেকে বাদ দেওয়া পূর্বের আটটি নাটকসহ তার প্রকাশিত নাটকের সংখ্যা মোট ৬২টি;[lower-alpha 18] যা তাকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিভাবান নাট্যকারের খ্যাতি এনে দেয়। তার নাটকগুলো বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
১৮৯০-এর দশক
পূর্ণদৈর্ঘ্য নাটকসমূহ
- উইডোয়ার্স হাউজেস
- দ্য ফিলান্ডারার
- মিসেস ওয়ারেন্স প্রফেশন
- আর্মস অ্যান্ড দ্য ম্যান
- ক্যানডিডা
- ইউ নেভার ক্যান টেল
- দ্য ডেভল্স ডিসাইপল
- সিজার অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা
- ক্যাপ্টেন ব্রাসবাউন্ড্স কনভার্শন
উপযোগকরণ
- দ্য গ্যাডফ্লাই
স্বল্পদৈর্ঘ্য নাটক
- দ্য ম্যান অব ডেসটিনি
শয়ের প্রথম তিনটি পূর্ণদৈর্ঘ্য নাটক সামাজিক বিষয় নিয়ে রচিত। তিনি পরবর্তীকালে সেগুলোকে "প্লেস আনপ্লেজেন্ট" নামে একত্র করেন।[139] উইডোয়ার্স হাউজেস (১৮৯২) বস্তির সম্পত্তির মালিককে নিয়ে আবর্তিত, এবং এতে তিনি প্রথমবার নব্য নারী বিষয়বস্তুর অবতারণা করেন, যা তার পরবর্তী নাটকগুলোতে পুনঃপুন ব্যবহৃত হয়েছে।[140] দ্য ফিলান্ডারার (১৮৯৩) নাটকে নব্য নারী বিষয়বস্তুর বিকাশ ঘটেছে, ইবসেনের ধারায় আকৃষ্ট হয়েছে এবং শয়ের ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপাদান বিদ্যমান ছিল, জুলিয়া চরিত্রটি জেনি প্যাটারসনের থেকে অনুপ্রাণিত।[141] ২০০৩ সালে জুডি ইভান্স একটি গবেষণায় মিসেস ওয়ারেন্স প্রফেশন (১৮৯৩) নাটকটিকে প্লেস আনপ্লিজেন্ট ত্রয়ীর "নিঃসন্দেহে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং" বলে বর্ণনা করেন। মিসেস ওয়ারেনের পেশা - গণিকাবৃত্তি এবং পরে গণিকাগৃহের মালিক - গণিকাবৃত্তিক সমাজের রূপক।[142]
শ প্রথম ত্রয়ীর পর "প্লেস প্লেজেন্ট" নামে দ্বিতীয় ত্রয়ী প্রকাশ করেন।[143] আর্মস অ্যান্ড দ্য ম্যান (১৮৯৪) মক-রুরিটানীয় হাস্যরসাত্মক প্রণয়ের আড়ালে একটি ফ্যাবিয়ান দৃষ্টান্তকে বাস্তববাদবাদী সমাজতন্ত্রের সাথে অযৌক্তিক আদর্শবাদের বিপরীত বলে প্রতীয়মান হয়।[144] ক্যানডিডার (১৮৯৪) মূল বিষয়বস্তু একজন মহিলার দুজন পুরুষের মধ্যে একজনকে বাছাই করা; নাটকটি খ্রিস্টান সমাজতান্ত্রিক ও কাব্যিক আদর্শবাদীর দৃষ্টিভঙ্গি এবং আকাঙ্ক্ষার বিপরীত বলে প্রতীয়মান হয়।[145] প্লেজেন্ট ত্রয়ীর তৃতীয় নাটক, ইউ নেভার ক্যান টেল (১৮৯৬), সামাজিক গতিশীলতা এবং বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে ব্যবধানের চিত্র তুলে ধরেছে, বিশেষত তারা কীভাবে সামগ্রিকভাবে সামাজিক সম্পর্কের দিকে এবং বিশেষত সঙ্গমের দিকে এগিয়ে যায়।[146]
"থ্রি প্লেস ফর পিউরিটান্স"-এর অন্তর্গত নাটকগুলো হল দ্য ডেভলস ডিসাইপল (১৮৯৬), সিজার অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা (১৮৯৮) এবং ক্যাপ্টেন ব্রাসবাউন্ড্স কনভার্শন (১৮৯৯)। সবকয়টি নাটকের সাম্রাজ্য এবং সাম্রাজ্যবাদের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে রচিত, যা ১৮৯০-এর দশকে রাজনৈতিক চেতনার একটি প্রধান বিষয়।[147] তিনটি নাটক যথাক্রমে ১৭৭০-এর দশকের আমেরিকা, প্রাচীন মিশর এবং ১৮৯০-এর দশকে মরক্কোর পটভূমিতে রচিত। দ্য গ্যাডফ্লাই ইথেল ভয়েনিচের জনপ্রিয় উপন্যাসের নাট্য উপযোগকরণ, যা অসম্পূর্ণ এবং মঞ্চস্থ হয়নি।[148] দ্য ম্যান অব ডেসটিনি (১৮৯৫) নেপোলিয়ন সম্পর্কিত একটি ছোট পর্দা উত্থোলনকারী নাটক।[149]
১৯০০–১৯০৯
পূর্ণদৈর্ঘ্য নাটকসমূহ
- ম্যান অ্যান্ড সুপারম্যান
- জন বুল্স আদার আইল্যান্ড
- মেজর বারবারা
- দ্য ডক্টরস ডিলেমা
- গেটিং ম্যারিড
- মিসালাইয়ান্স
স্বল্পদৈর্ঘ্য নাটকসমূহ
- দি অ্যাডমায়ারেবল ব্যাশভিল
- হাউ হি লাইড টু হার হাজব্যান্ড
- প্যাশন, পয়জন, অ্যান্ড পেট্রিফ্যাকশন
- দ্য শিউইং-আপ অব ব্ল্যাঙ্কো পজনেট
- প্রেস কাটিংস
- দ্য ফ্যাসিনেটিং ফাউন্ডলিং
- দ্য গ্লিম্পস অব রিয়ালিটি
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের শয়ের প্রধান নাটকগুলো পৃথক সামাজিক, রাজনৈতিক বা নৈতিক বিষয় নিয়ে রচিত। ম্যান অ্যান্ড সুপারম্যান (১৯০২) নাটকীয়তা এবং সম্পর্কিত মুদ্রিত পাঠ্যের সংমিশ্রণে শয়ের সৃজনশীল বিবর্তনের ব্যাখ্যা প্রদানের মধ্য দিয়ে এর বিষয় এবং ঘটনাপ্রবাহ উভয় ক্ষেত্রেই অন্য নাটকগুলো থেকে পৃথক হয়ে দাঁড়িয়েছে।[150] অ্যাডমায়ারেবল ব্যাশভিল (১৯০১) শয়ের ক্যাশেল বায়রন্স প্রফেশন উপন্যাসের অমিত্রাক্ষর ছন্দযুক্ত নাটকীয়তা, যা ব্রিটেন এবং আফ্রিকার মধ্যকার সাম্রাজ্যপূর্ণ সম্পর্কের উপর আলোকপাত করেছে।[151] জন বুল্স আদার আইল্যান্ড (১৯০৪) ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার বিরাজমান সম্পর্ককে হাস্যরসের সাথে চিত্রিত করে। এটি সেসময়ে জনপ্রিয় ছিল তবে পরবর্তী বছরগুলোতে সাধারণ সংগ্রহশালা থেকে বাদ পড়ে।[152] মেজর বারবারা (১৯০৫) অপ্রচলিত উপায়ে নৈতিক প্রশ্ন উপস্থাপন করে, একদিকে প্রত্যাশা বিস্মিত করে যে একদিকে যেমন সশস্ত্র প্রস্তুতকারকের চিত্র এবং অন্যদিকে স্যালভেশন আর্মি নৈতিক উচ্চভূমিকে অবশ্যই পরবর্তীকালে ধরে রাখতে হবে।[153] দ্য ডক্টরস ডিলেমা (১৯০৬) চিকিৎসার নৈতিকতা এবং দুষ্প্রাপ্যের চিকিৎসা বরাদ্দ নৈতিক পছন্দ সম্পর্কে একটি নাটক, শ একে বিয়োগান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।[154] সত্যিকারের রক্ত-মাংসের মতো নয় এমন চরিত্র উপস্থাপনের জন্য খ্যাতি লাভ করার পর[155] আর্চার তাকে মঞ্চে মৃত্যু উপস্থাপনের জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। এই নাটকে তিনি খলনায়কের জন্য একটি মৃত্যুশয্যার দৃশ্য উপস্থাপন করেন।[156][157]
গেটিং ম্যারিড (১৯০৮) ও মিসালাইয়ান্স (১৯০৯) এই নাটক দুটিকে শ তার "দীর্ঘ বক্তৃতাসুলভ" শিরা বলে অভিহিত করেন এবং এগুলোতে নাট্যধর্মী ঘটনাবলি বা প্রাণবন্ত চরিত্রায়নের পরিবর্তে ধারণার আলোচনায় জোর দিয়েছেন। জুডিথ ইভান পরবর্তীকালে মিসালাইয়ান্স-কে গেটিং ম্যারিড-এর অনুপূরক সৃষ্টিকর্ম হিসেবে উল্লেখ করেন।[158] শ এই দশকে সাতটি স্বল্পদৈর্ঘ্য নাটক রচনা করেন, তন্মধ্যে ইচ্ছাকৃত উদ্ভট নাটক প্যাশন, পয়জন, অ্যান্ড পেট্রিফ্যাকশন থেকে শুরু করে ব্যঙ্গাত্মক প্রেস কাটিংস (১৯০৯) পর্যন্ত সবকয়টিই হাস্যরসাত্মক নাটক।[159]
১৯১০-১৯১৯
পূর্ণদৈর্ঘ্য নাটক
- ফ্যানিস ফার্স্ট প্লে
- অ্যান্ড্রোক্লিস অ্যান্ড দ্য লায়ন
- পিগম্যালিয়ন
- হার্টব্রেক হাউজ
স্বল্পদৈর্ঘ্য নাটক
- দ্য ডার্ক লেডি অব দ্য সনেটস
- ওভাররুলড
- দ্য মিউজিক কিউর
- গ্রেট ক্যাথরিন
- দি ইনকা অব পেরুসালেম
- ওফ্ল্যাহার্টি ভি.সি.
- অগাস্টাস ডাজ হিজ বিট
- আন্নাইয়ান্স্কা, দ্য বলশেভিক এমপ্রিস
১৯১০ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরের দশকে শ চারটি পূর্ণদৈর্ঘ্য নাটক রচনা করেন, তন্মধ্যে তৃতীয় এবং চতুর্থ নাটক দুটি তার প্রায়ই মঞ্চস্থ সৃষ্টিকর্মের মধ্যে অন্যতম।[160] ফ্যানিস ফার্স্ট প্লে (১৯১১) নাটকে তিনি ফ্যাবিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে তার মধ্যবিত্ত ব্রিটিশ সমাজের পূর্বের পরীক্ষণ অব্যাহত রাখেন, আবেগপ্রধান মিলনাত্মক বিষয়ের অতিরিক্ত ছোঁয়া এবং দর্শকদের উদ্দেশ্যে অভিনয়শিল্পীদের সংলাপের জন্য নাট্য সমালোচকেরা এই নাটকটি নিয়ে আলোচনা করেন।[76] অ্যান্ড্রোক্লিস অ্যান্ড লায়ন (১৯১২) নাটকটি শ শিশুতোষ নাটক হিসেবে লেখা শুরু করেছিলেন। এটি ধর্মের প্রকৃতি এবং কীভাবে খ্রিস্টান বিধানগুলো ব্যবহারিকভাবে প্রয়োগ করা যায় সে সম্পর্কিত অধ্যয়নে পরিণত হয়।[161] পিগম্যালিয়ন (১৯১২) ভাষা ও বক্তৃতা এবং সমাজে এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে একটি শভিয়ান অধ্যয়ন। নাটকটির দুটি প্রধান চরিত্রের মধ্যে প্রণয়ধর্মী সম্পর্কের চিত্র তুলে ধরার সময় মূল অভিনয়শিল্পীদের থেকে বাদ পড়ে যাওয়া অন্তর্মুদ্রা সংশোধন করার জন্য নায়িকা আরেকটি ছোট চরিত্রকে বিয়ে করবেন এই বিষয়টি পরিষ্কার করতে শ' এই নাটকের সমাপ্তিটি পুনর্লিখন করেন।[162][lower-alpha 19] যুদ্ধের বছরগুলোতে শয়ের একমাত্র পূর্ণদৈর্ঘ্য নাটক হল হার্টব্রেক হাউজ (১৯১৭)। তার ভাষ্যমতে এতে বিপর্যয়ের দিকে তাড়িত "যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সংস্কৃতিবান ও প্রচুর অবকাশপূর্ণ ইউরোপ"-এর চিত্রায়ন করা হয়েছে।[164] শ শেকসপিয়ার (কিং লিয়ার) ও চেখভ (দ্য চেরি অরচার্ড)-কে এই কাজের গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা বলে উল্লেখ করেন এবং সমালোচকগণ কনগ্রেভ (দ্য ওয়ে অব দ্য ওয়ার্ল্ড) ও ইবসেন (দ্য মাস্টার বিল্ডার)-এর থেকে বিভিন্ন উপাদান নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।[164][165]
স্বল্পদৈর্ঘ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে সহানুভূতিশীল ঐতিহাসিক নাটকীয়তাপূর্ণ দ্য ডার্ক লেডি অব দ্য সনেটস (১৯১০) ও গ্রেট ক্যাথরিন (১৯১৩); বহুবিবাহ নিয়ে রচিত ওভাররুলড (১৯১২); যুদ্ধ সম্পর্কিত তিনটি ব্যঙ্গধর্মী সৃষ্টিকর্ম (দি ইনকা অব পেরসালেম, ওফ্ল্যাহার্টি ভি.সি. ও অগাস্টাস ডাজ হিজ বিট, ১৯১৫-১৬); শয়ের ভাষায় "নিতান্তই অর্থহীন" দ্য মিউজিক কিউর (১৯১৪), এবং বলশেভিক সম্রাজ্ঞীকে নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত স্কেচ আন্নাইয়ান্স্কা (১৯১৭)।[166]
১৯২০-১৯৫০
পূর্ণদৈর্ঘ্য নাটকসমূহ
- ব্যাক টু মেথুসেলাহ
- সেন্ট জোয়ান
- দি অ্যাপল কার্ট
- টু ট্রু টু বি গুড
- অন দ্য রকস
- দ্য সিম্পলটন অব দি আনএক্সপেক্টেড আইলস
- দ্য মিলিয়নিয়ারেস
- জেনেভা
- ইন গুড কিং চার্লস্স গোল্ডেন ডেজ
- বয়ান্ট বিলিয়ন্স
স্বল্পদৈর্ঘ্য নাটকসমূহ
- আ ভিলেজ উইং
- দ্য সিক্স অব কালাইস
- সিমবেলিন রেফিনিশড
- ফারফেচড ফ্যাবলস
- শেকস ভার্সাস শাভ
- হোয়াই শি উড নট
সেন্ট জোয়ান (১৯২৩) নাটকের জন্য শ এবং সাইবিল থর্নডিক বিপুল প্রশংসা অর্জন করেন। শ থর্নডিকের জন্য এই নাটকের নাম ভূমিকাটি রচনা করেন। থর্নডিক ব্রিটেনে এই চরিত্রটিতে প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন।[167] নিকোলাস গ্রিনের দৃষ্টিতে শয়ের জোয়ান চরিত্রটি "তার সময়ের পূর্ববর্তী অর্থহীন-নয় এমন গূঢ়, প্রটেস্ট্যান্ট ও জাতীয়তাবাদী", যা বিংশ শতাব্দীর ধ্রুপদী কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রের মধ্যে অন্যতম।[168] দি অ্যাপল কার্ট (১৯২৯) শয়ের সর্বশেষ জনপ্রিয় সফলতা।[169] তিনি এই নাটক এবং এর পরবর্তী নাটক টু ট্রু টু বি গুড (১৯৩১)-এর উপশিরোনামে "আ পলিটিকাল এক্সট্রাভেগাঞ্জা" শব্দগুচ্ছ যুক্ত করেন। যদিও দুটি কাজ তাদের বিষয়বস্তুর দিক থেকে ভিন্ন ছিল, প্রথম কাজটিতে একটি দেশের রাজনীতির উপস্থাপনা দেখা যায় এবং দ্বিতীয়টি, জুডিথ ইভান্সের ভাষ্যমতে, "একজন ব্যক্তির সামাজিক নৈতিকতা নিয়ে আলোকপাত করে এবং অস্পষ্ট।"[170] ১৯৩০-এর দশকে শয়ের নাটকগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলির ছায়া অবলম্বনে রচিত। অন দ্য রকস (১৯৩৩) এবং দ্য সিম্পলটন অব দি আনএক্সপেক্টেড আইলস (১৯৩৪) পরিচ্ছন্ন কাহিনীচিত্র সংবলিত রাজনৈতিক হাস্যরসাত্মক নাটক। প্রথম নাটকটি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া হয়েছে, কিন্তু চূড়ান্ত রচনাতে তা বাদ দেয়া হয়; দ্বিতীয় নাটকটি বহুবিবাহ ও সুপ্রজননবিদ্যা নিয়ে আলোকপাত করে এবং জাজমেন্ট ডের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি টানা হয়।[171]
দ্য মিলিয়নিয়ারেস (১৯৩৪) একজন সফল ব্যবসায়ী নারীর ব্যবসায়িক ও সামাজিক বিষয়াবলির প্রহসনমূলক চিত্রায়ন। জেনেভা (১৯৩৬) ইউরোপের একনায়কতন্ত্রের তুলনায় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ক্ষীণতাকে ব্যঙ্গ করে রচিত। ইন গুড কিং চার্লস্স গোল্ডেন ডেজ (১৯৩৯)-কে ওয়েনট্রব সহানুভূতিশীল ও অসংলগ্ন হাস্যরসাত্মক নাটক বলে বর্ণনা করেন, যাতে কর্তৃত্ববাদের চিত্রায়ন রয়েছে, কিন্তু তা জেনেভা-র থেকে কম বিদ্রুপাত্মকভাবে।[17] পূর্ববর্তী দশকগুলর মত তার রচিত স্বল্পদৈর্ঘ্য নাটকগুলো মূলত হাস্যরসাত্মক, কয়েকটি ঐতিহাসিক এবং বাকিগুলো লেখকের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনা নিয়ে আলোকপাত করে। আরভিন শয়ের পরবর্তী সৃষ্টিকর্মগুলো নিয়ে লিখেন যদিও এগুলো তখনো "বিস্ময়করভাবে বলিষ্ঠ ও প্রাণবন্ত" ছিল, সেগুলোতে তার বয়সের নির্ভুল ছাপ দেখা যায়। "এই যুগে তার সৃষ্টিকর্মের সেরা বিষয় ছিল জ্ঞানের পরিপূর্ণতা এবং মনের সৌন্দর্য, যা প্রায়ই বৃদ্ধ লোকের মধ্য দিয়ে চিত্রিত হত যারা তাদের বুদ্ধির প্রকাশ ঘটাত।"[3]
তিন খণ্ডে প্রকাশিত শয়ের সংকলিত সঙ্গীত সমালোচনার পরিমাণ ২,০০ পৃষ্ঠারও বেশি।[172] এটি ১৮৭৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সঙ্গীতের দৃশ্যপট বিবৃত করে, তবে এই সংকলনের মূল লেখনী ১৮৮০-এর দশকের শেষের এবং ১৮৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে তার দ্য স্টার এবং দ্য ওয়ার্ল্ড-এর সঙ্গীত সমালোচক হিসেবে থাকাকালীন রচিত। তার দৃষ্টিতে সঙ্গীত সমালোচনা কেবল সাঙ্গীতিক অভিজাতদের জন্য নয় বরং সকলের কাছে আকর্ষণীয় হওয়া উচিত, এবং তিনি কলাকৌশলগত পরিভাষা - 'ডি মেজরের আধিপত্য'-এর মত মেসোপটেমীয় শব্দাবলি পরিহার করে অ-বিশেষজ্ঞদের জন্য লিখতেন।[lower-alpha 20] তার কলামগুলো তীব্র পক্ষপাততুষ্ট ছিল, তিনি রিশার্ড ভাগনারের সঙ্গীত প্রচার করতেন, এবং ইয়োহানেস ব্রামসের এবং স্ট্যানফোর্ড ও প্যারির মত ব্রিটিশ সুরকার যাদের তিনি ব্রামসীয় বলে মনে করতেন, তাদের সঙ্গীতের নিন্দা করতেন।[66][174] তিনি বিপুল অপেশাদার সঙ্গীতদল এবং দর্পোদ্ধত বাদকদল্ল নিয়ে হ্যান্ডেল ওরাটোরিওয়ের অভিনয়ের জন্য প্রচলিত ফ্যাশনের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান চালিয়েছিলেন, যেখানে তিনি "বিশ জন দক্ষ শিল্পীগোষ্ঠী"কে আহ্বান জানিয়েছিলেন।[175] তিনি দর্শক-শ্রোতারা যে ভাষায় কথা বলে না সেই ভাষায় অবাস্তবভাবে মঞ্চস্থ বা গাওয়া গীতিনাট্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন।[176]
শ ছিল একজন ভঙ্গিবিলাসী ও শুদ্ধবাদী; তিনি একইসাথে বুর্জোয়া এবং বুর্জোয়াবিরোধী লেখক ছিলেন, তিনি বর্তমান এবং উত্তর প্রজন্মের জন্য কাজ করে গেছেন; তার ধর্মতাত্ত্বিকতা বিনোদনদায়ক এবং তার সকৌতুক ছলনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত; তিনি সমাজতন্ত্রকে সমর্থন করতেন এবং ফ্যাসিবাদে প্রলুব্ধ হতেন।
—লিওনার্ড ফেইনবার্গ, দ্য স্যাটায়ারিস্ট (২০০৬)[177]
শ তার জীবনকালে অনেকগুলো বিশ্বাসের দাবী করেছিল, যা প্রায়ই পরস্পরবিরোধী। এই অসঙ্গতিটি আংশিকভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে উস্কানিমূলক ছিল। স্পেনীয় পণ্ডিত-কূটনীতিক সালভাদোর দে মাদারিয়াগা শকে "ইতিবাচক তড়িৎসম্পন্ন লোকদের মধ্যে নিবিষ্ট নেতিবাচক তড়িতের মেরু" হিসেবে বর্ণনা করেছেন।[178] কমপক্ষে একটি ক্ষেত্রে শ অপরিবর্তনীয় ছিলেন, সেটি হল তার আজীবন বানান এবং বিরামচিহ্নের সাধারণ ইংরেজি রীতি অনুসরণ করতে অস্বীকৃতি। তিনি "শো" ("show") বানানের ক্ষেত্রে "শো" ("shew") এর মতো প্রাচীন বানানের পক্ষে ছিলেন। তিনি "অনার" ("honour") এবং "ফেভার" ("favour") শব্দের থেকে "ইউ" ("u") অক্ষরটি বাদ দিয়েছিলেন। এছাড়া যেখানে সম্ভবপর ছিল, সেখানে তিনি ইলেক চিহ্ন যেমন "ওন্ট" ("won't") বা "দ্যাট্স" ("that's") বাদ দিতেন।[179] শ তার উইলে, কিছু নির্দিষ্ট উত্তরাধিকারের পর, তার অবশিষ্ট সম্পত্তি চল্লিশ বর্ণের একটি ধ্বনিগত সংস্করণে ইংরেজি বর্ণমালার মৌলিক সংস্কারের জন্য অর্থ প্রদানের জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করার আদেশ করেছিলেন।[17] যদিও শয়ের উদ্দেশ্য স্পষ্ট ছিল, তার খসড়াটি ত্রুটিযুক্ত ছিল এবং আদালত শুরুতেই এই উদ্দেশ্য সংবলিত ট্রাস্ট বাতিল বলে রায় দেয়। পরবর্তীকালে আদালত-বহির্ভূত চুক্তি অনুসারে বানান সংস্কারের জন্য £৮,৩০০ প্রদান করা হয়েছিল। তার সম্পত্তির বেশিরভাগ অংশ অবশেষের লেগিটে গিয়েছিল - ব্রিটিশ মিউজিয়াম, রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্ট এবং আয়ারল্যান্ডের জাতীয় চিত্রশালায়।[180][lower-alpha 21] £৮,৩০০ এর অধিকাংশই গিয়েছিল শভিয়ান বর্ণমালায় অ্যান্ড্রোক্লিস অ্যান্ড দ্য লায়ন-এর বিশেষ ধ্বনিতাত্ত্বিক সংস্করলে, যা ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।[183]
ধর্ম এবং খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে শয়ের মতামত কম সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। যৌবনে নিজেকে নাস্তিক ঘোষণার পরও মধ্য বয়সে তিনি একে প্রতিশোধপরায়ণ যিহোবার ওল্ড টেস্টামেন্টের চিত্রের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে তিনি নিজেকে "রহস্যবাদী" হিসেবে অভিহিত করেন, যদিও গ্যারি স্লোয়ান শয়ের বিশ্বাস সম্পর্কিত একটি প্রবন্ধে তার প্রমাণ-পত্রকে এই জাতীয় হিসেবে যুক্তি দেখান।[184] ১৯১৩ সালে শ ঘোষণা করেন যে তিনি "সাম্প্রদায়িক অর্থে" ধর্মীয় নন, নিজেকে যিশুর সাথে "কোন ধর্মের ব্যক্তি" হিসেবে বিবেচিত করেন।[185] অ্যান্ড্রোক্লিস অ্যান্ড দ্য লায়ন (১৯১৫) নাটকের মুখবন্ধে শ জিজ্ঞাসা করেন "খ্রিস্টধর্মকে কেন সুযোগ দেবে না?" এই যুক্তিতে যে খ্রিস্টের উপর বারব্বাসকে বাছাই করার কারণে ব্রিটেনের সামাজিক শৃঙ্খলা এসেছিল।[185] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে একটি সম্প্রচারে শ মাউন্টের হিতোপদেশে প্রার্থনা করেন, "এটি অত্যন্ত সনির্বন্ধ অনুরোধ, এবং প্রথম-স্তরের বার্তা, যারা আপনাকে ব্যবহার করে এবং আপনাকে নির্যাতন করে তাদের জন্যও ভালো কিছু করুন"।[184] শ তার উইলে বলেন যে তার "ধর্মীয় বিশ্বাস এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমানে সৃজনশীল বিপ্লবে বিশ্বাসীদের বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির তুলনায় আরও নির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাবে না।"[186] তিনি অনুরোধ করেছিলেন যে তিনি নির্দিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসকে মেনে নিয়েছেন কেউ যেন এমন ইঙ্গিত না করে এবং তার স্মৃতিসৌধে যেন "কোন প্রকারের ক্রুশ বা নির্যাতনের কোনও সরঞ্জাম বা রক্তের ত্যাগের চিহ্ন না দেওয়া হয়।"[186]
শ জাতিগত সমতা এবং বিভিন্ন বর্ণের মানুষের মধ্যে আন্তঃবিবাহের সমর্থন দিতেন।[187] হিটলারের প্রতি সৌজন্য দেখানোর ইচ্ছা প্রকাশ করা সত্ত্বেও,[188] তিনি ইহুদিবাদ বিরোধিতাকে "নিজেদের মস্তিষ্ককে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ছড়িয়ে পড়া অদম্য ইহুদিদের প্রতি অলস, অজ্ঞ বুদ্ধিহীন অ-ইহুদি জাতির ঘৃণা তাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন" বলে অভিহিত করেছেন।[189] দ্য জিউইশ ক্রনিকল-এ তিনি ১৯৩২ সালে লিখেন, "প্রতিটি দেশে আপনি ইহুদি, জেসুইটস, আর্মেনীয়, নিগ্রো, ফ্রিম্যাসন্স, আইরিশ বা কেবল বিদেশিদের নিয়ে ভীত লোকদের খুঁজে পাবেন। রাজনৈতিক দলগুলো এই ভয় এবং ঈর্ষাকে কাজে লাগানোর ঊর্ধ্বে নয়।"[190]
১৯০৩ সালে শ গুটিবসন্তের টিকা দেওয়ার বিষয়ে বিতর্কে যোগ জড়ান। তিনি টিকাদানকে "জাদুবিদ্যার এক অদ্ভুত নোংরা অংশ" বলে অভিহিত করেন;[191] তার দৃষ্টিতে টিকাদানের প্রচারাভিযান দরিদ্রদের আবাসনের সুন্দর কর্মসূচির সস্তা এবং অপর্যাপ্ত বিকল্প, যাকে তিনি গুটিবসন্ত এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগ নির্মূল করার উপায় হিসেবে ঘোষণা করেন।[192] কম বিতর্কিতভাবে শ পরিবহনে আগ্রহী ছিল; ১৯৯২ সালে লরেন্স পর্যবেক্ষণ করেন যে শয়ের "বাইসাইকেল, মোটরবাইক, অটোমোবাইলস এবং প্লেন চালানো, এবং নব্বইয়ের উপর বয়সেও ইন্টারপ্ল্যানেটারি সোসাইটিতে যোগদান" বিষয়ক আগ্রহ নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।[193] শ ভ্রমণ নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন, ভ্রমণের ছবি তুলেছিলেন এবং রয়্যাল অটোমোবাইল ক্লাবে নোটগুলো জমা দিয়েছিলেন।[193]
শ তার পূর্ণ বয়স্ক জীবনে "জর্জ বার্নার্ড শ" এর পরিবর্তে "বার্নার্ড শ" হিসাবে পরিচিত হওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলেন, তবে বিবিধ হিসাবে তার নামের সম্পূর্ণ আদ্যক্ষর — জি.বি.এস. ব্যবহার করা চালিয়ে যান এবং প্রায়ই "জি. বার্নার্ড শ" নামে স্বাক্ষর করতেন।[194] তিনি তার উইলে তার নির্বাহককে (পাবলিক ট্রাস্টি) তার সৃষ্টিকর্মের প্রকাশনা কেবল বার্নার্ড শ নামে লাইসেন্স করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।[17] আরভিন, জুডিথ ইভান্স, হলরয়েড, লরেন্স এবং ওয়েনট্রবসহ শ পণ্ডিতগণ এবং অনেক প্রকাশক শয়ের এই নির্দেশনাকে সম্মান দেখিয়েছেন; তবে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেসের ১৯৮৮ সালের কেমব্রিজ কম্প্যানিয়ন টু জর্জ বার্নার্ড শ ব্যতিক্রম ছিল।[195]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.