Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চৌর্যতন্ত্র (ইংরেজি: Kleptocracy) এমন একটি সরকার ব্যবস্থা যার লক্ষ্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে দেশ ও দেশের নাগরিকদের সম্পদ হাতিয়ে নেয়া এবং ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করা। রাজনীতিবিদরা এই ব্যবস্থা কায়েম করে এবং এর মধ্য দিয়ে দেশ ও দেশের নাগরিকদের সম্পদ লুটপাট করে। মোবুতু সেসে সেকো তার দীর্ঘ ৩২ বৎসর বছরের শাসনামলে কঙ্গো তথা জায়ার এ চৌর্যতন্ত্র কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিলেন। চৌর্যতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসনক্ষমতা অপবিন্যস্ত করা হয়। জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলি দুর্নীতি ও লুটপাটের যন্ত্রে পরিণত হয়। রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে ক্ষমতাধর কিছু ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বার্থ প্রাগ্রাধিকার অর্জ্জন করে যার ফলে তারা জনগণের সম্পদ লুট করে নিতে সক্ষম হয়।[1]
চৌর্যতন্ত্র ও ধনিকতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ধনিকতন্ত্রে সমাজের কিছু ধনী বা সম্পদশালী ব্যক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা কার্যকরভাবে দখল করে থাকে। অ্যারিস্টোটল বলেছেন অভিজাততন্ত্র ও ধনিকতন্ত্র অভিন্ন নয়। চৌর্যতন্ত্রে রাজনীতিকরাই ধনিকতন্ত্রের হোতা। কাজাখস্তানের রাষ্ট্রপতির কন্যা দারিগা নাযারবায়েভা দেশটির সিনেটের প্রধান পদ দখল করে ছিলেন এবং রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০১৩ সালের প্রাক্কলন অনুযায়ী তার কুক্ষিগত সম্পদের পরিমাণ ৫৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।[2] চৌর্যতন্ত্র এবং রাষ্ট্রদখল এর মধ্যে পার্থক্য হলো রাষ্ট্রদখলের ক্ষেত্রে অসরকারী লোকেরা ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে ক্ষমতা খাটিয়ে থাকে যার পেছনে থাকে রাষ্টীয় সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ, অঢেল ঘুষ প্রদানের মতো স্বচ্ছলতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ক্ষমতা এবং এহেন কোনো না কোনো ভাবে সরকারী সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করার যোগ্যতা।[3]
বলা হয় ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ায় চৌর্যতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে নিজের ক্ষমতার ডালপালা ব্যাপ্ত করেছেন। চৌর্য্যতন্ত্র সফলভাবে ব্যবহার করে মন্টিনিগ্রো এর রাষ্ট্রপতি মিলো দুকানোভিচ ২০১০ সালে পৃথিবীর ১০ জন শীর্ষ সম্পদশালী ব্যক্তির তালিকায় নিজের নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন। চৌর্যতন্ত্র সফলভাবে পরিচালনার করার শর্ত হলো আইন পরিষদ, বিচার ব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র ও সেনাবাহিনীকে দক্ষতার সঙ্গে কব্জা করা। টাকা-পয়সা ও নানাবিধ সুযোগসুবিধা দিয়ে সমাজের নানা স্তরের মানুষের আনুগত্য নিশ্চিত করা হয়, যাদের মধ্যে রয়েছে অসামরিক ও সামরিক আমলা, বিচারপতি, সাংবাদিক, শিক্ষকসমাজ ইত্যাদি। চৌর্যতন্ত্রকে সহজ ভাষায় চোরের রাজত্ব তথা লুটপাটতন্ত্র বলা হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের প্রধান নিজেই চোরের সর্দ্দার হিসাবে কাজ করেন।[4] [5]
অবাধ দুর্নীতি জনগণের অর্থ ও সম্পদ লুটপাটের প্রধান কৌশল।[6] বিবিধ উপায়ে চোরেরা জাতীয় সম্পদ এবং জনগণের অর্থ -সম্পদ লোপাট করে থাকে। জোরপূর্বক চাঁদা আদায় একটি পুরাতন উপায়, কিন্তু একুশ শতকে আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকেই জাতীয় সম্পদ এবং জনগণের অর্থ -সম্পদ লোপাটের উদ্দেশ্যে নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করা হয়ে থাকে। এতদ্দুশ্যে অনেক সময় আইন ও বিধি পরিবর্তন করা হয়ে থাকে।[7]
বাংলাদেশে কয়েকজন ধনী ব্যক্তি ধীরে ধীরে ব্যাংকখাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাকের ডগায় ঋণের নামে ব্যাংক থেকে জনগণের টাকা হাতিয়ে নেয়ার হয়।[8]
চাঁদা আদায় একধরণের গোপন শুল্ক-কর। চৌর্যতন্ত্রে সাধারণ ব্যবসায়ী সহ জনগণকে উচ্চহারে চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয়। আইনের শাসন না থাকার কারণে চাঁদাবাজীর বিচার আশা করা যায় না।
চৌর্যতন্ত্র কায়েমের অন্যতম শর্ত হচ্ছে সরকার ও ব্যবসায় সম্প্রদায়ের মধ্যে আঁতাত।[9]
২০০৪ সালের জার্মানভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী এনজিও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল আগের দুই দশকে চৌর্যতন্ত্রের মধ্যদিয়ে সম্পদশালী হওয়া দশজন রাষ্ট্রশাসকের একটি তালিকা প্রকাশ করে। তাদেরকে "নিশ্চিতভাবে বিশ্বের ১০ জন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা" হিসাবে বর্ণনা করা হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল তাদের প্রতিবেদনের অবশ্য স্বীকার করে যে এই দুঃশাসকরা "প্রকৃতপক্ষে ঠিত কত টাকা আত্মসাৎ করেছে সে সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে।" এদের চুরিকরা অর্থসম্পদের প্রাক্কলিত পরিমাণ নিম্নরূপ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডলারে রূপান্তরিত):<ref[Hodess, Robin; Inowlocki, Tania; Rodriguez, Diana; Wolfe, Toby, eds. (2004). Global Corruption Report 2004 (PDF). Sterling, VA: Pluto Press in association with Transparency International. p. 13. ISBN 074532231X.</ref>
রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে চৌর্যতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে তা উৎখাতের দায়িত্ব নাগরিকদের।[10] অনেক দেশে গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে চৌর্যতন্ত্রের অবসান ঘটানো হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে লুটেরাদের বিচার করা সম্ভব হয়েছে। ২০২০ সালে ফ্রান্স সরকার ইকোয়েটোরিয়াল গিনির রাষ্ট্রপতি প্রেসিডেন্ট তেওদোরো ওবিয়াংয়ের এক পুত্র ও দেশের ভাইস প্রেসিডেণ্ট তেওদোরো ওবিয়াং ম্যাঙ্গু’র বিচার সম্পন্ন করেছে। তিনি বর্তমানে পলাতক। তাকে ৩০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করা হয়েছে ও তিন বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।[11]
চৌর্যতন্ত্র উৎখাতের অন্যতম কৌশল হলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের কাহিনীর ঘটনা একের পর এক উদঘাটন করা ও তা প্রকাশ করা।[12]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.