চীনা লিখন পদ্ধতি
চীনা ভাষাসমূহের লিখিত রূপের আলোচনা / From Wikipedia, the free encyclopedia
চীনা লিখন পদ্ধতি (চীনা: 中文; ফিনিন: zhōngwén) বলতে যেসমস্ত চীনা অক্ষর (汉字/漢字; ফিনিন: Hànzì, আক্ষরিক অর্থে "হান অক্ষরসমূহ ") চীনা ভাষা লিখতে বা ছাপাতে ব্যবহার করা হয়, তাদের সমষ্টিকে বোঝায়। চীনা অক্ষরগুলি কোনও বর্ণমালা বা কোনও সংক্ষিপ্ত অক্ষরমালা গঠন করে না, বরং এগুলিকে মোটামুটিভাবে শব্দলিপি জাতীয় কিছু বলা যায়। অর্থাৎ একটি লিখিত চীনা অক্ষর সাধারণত কথ্য চীনা ভাষার একটি ধ্বনিদলের প্রতিনিধিত্ব করে, এবং এই ধ্বনিদলটি নিজেই একটি শব্দ হতে পারে বা বহুধ্বনিদলীয় একটি শব্দের অংশ হতে পারে। চীনা অক্ষরগুলি নিজেরাও আবার প্রায়শই একাধিক অংশ নিয়ে গঠিত, যে অংশগুলি কোন ভৌত বস্তু বা বিমূর্ত ধারণাকে নির্দেশ করতে পারে, [1] বা কোন উচ্চারণ নির্দেশ করতে পারে।[2] চীনা লিখন পদ্ধতিতে সাক্ষরতা অর্জন করতে তাই বিশাল সংখ্যক অক্ষর মুখস্থ ও আত্মস্থ করতে হয়; একজন শিক্ষিত চীনাভাষী ব্যক্তি সাধারণত ৪০০০ অক্ষরের জ্ঞান রাখেন।[3][4] চীনা অক্ষরের সংখ্যার বিশালত্বের কারণে পাশ্চাত্যের বর্ণমালার মাধ্যমে চীনা ভাষাকে লেখার উপায় বের করা হয়েছে।[5] বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন চীনা অক্ষরগুলি প্রাচীন চীনের শাং রাজবংশের রাজত্বের শেষ পর্যায়ে, আনুমানিক ১২০০ থেকে ১০৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম প্রচলিত হয়।[6][7][8] কিন্তু এই অক্ষরগুলির সৃষ্টির প্রক্রিয়া তারও প্রায় কয়েক শতাব্দী আগেই শুরু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।[9] এরপর বেশ কিছু শতক ধরে বিবর্তন ও বৈচিত্র্যায়নের পরে শেষ পর্যন্ত প্রাচীন চীনের ছিন রাজবংশের রাজত্বের সময় (২২১ থেকে ২০৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) চীনা অক্ষরগুলিকে প্রমিত রূপ দান করা হয়।[10] এর পরে হাজার হাজার বছর ধরে এই অক্ষরগুলির আরও বিবর্তন ঘটেছে এবং এগুলি চীনা চারুলিপির সুবিকশিত বিভিন্ন শৈলীর অংশে পরিণত হয়েছে।[11] চীনা ভাষার উপভাষা বা ভিন্ন ভিন্ন কথ্য রূপগুলি একে অপরের থেকে দূরে সরে যেতে থাকলে এক ধরনের দ্বিবিধ ভাষারীতির উদ্ভব হয়, যেখানে পরস্পর অবোধগম্য ভিন্ন ভিন্ন কথ্য চীনা উপভাষার বক্তারা একে অপরের সাথে ধ্রুপদী চীনা ভাষার লিখিত রূপ ব্যবহার করে যোগাযোগ স্থাপন করতেন।[12] ২০শ শতকের শুরুর দিকে ধ্রুপদী চীনা ভাষার পরিবর্তে লিখিত চলিত চীনা ভাষা ব্যবহার করা শুরু হয়। এই লিখিত ভাষাটি প্রমিত বা আদর্শ চীনা ভাষার (তথা ম্যান্ডারিন চীনা ভাষার) প্রতিনিধিত্ব করত। যদিও চীনা ভাষার অন্যান্য রূপ বা উপভাষাগুলি এখন আর লেখা হয় না, তার পরেও ক্যান্টনীয় চীনা ভাষা, সাংহাই চীনা ভাষা এবং হোক্কিয়েন চীনা ভাষার ঐতিহ্যবাহী লেখ্য রূপ বিদ্যমান। কিছু চীনা অক্ষর অন্যান্য প্রতিবেশী পূর্ব এশীয় ভাষার লিখন পদ্ধতিতে গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে কেবল জাপানি ভাষা ও কোরীয় ভাষাতেই এগুলি ব্যবহৃত হয়। ভিয়েতনামী ভাষাতে চীনা অক্ষরগুলি ত্যাগ করে রোমান বর্ণমালা ব্যবহার করে হচ্ছে।[13][14]