শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
চৌ রাজবংশ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
চৌ রাজবংশ (চীনা: 周朝; ফিনিন: Zhōu cháo [tʂóʊ tʂʰɑ̌ʊ]) ছিল শাং সাম্রাজ্য পরবর্তী ও ছিন সাম্রাজ্য পূর্ববর্তী চীনের একটি প্রাচীন সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্য চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় রাজত্ব করে। এই সাম্রাজ্যের সময়কালকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। প্রথমটি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১০৪৬ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৭৭১ অব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল এবং তা পশ্চিম চৌ নামে পরিচিত ছিল। এই সময়েই চীনের প্রকৃত রাজনৈতিক ও সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয়টি খ্রিস্টপূর্ব ৭৭০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২৫৬ অব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল এবং তা পূর্ব চৌ নামে পরিচিত ছিল।[২]
Remove ads
চৌ রাজবংশ সময়কালে, বিশেষ করে শেষ দিকে, চীনের সভ্যতার বিকাশ লাভ করে। পূর্ব চৌ রাজবংশ সময়ে কনফুসিয়াস, লাউযি, মেনসিয়াস, মোজি কর্তৃক কনফুসীয় ধর্ম, তাও ধর্মসহ বিভিন্ন মতবাদ প্রসার লাভ করে। এই সময়ে ব্রোঞ্জের তৈরি যুদ্ধ ও কৃষি সরঞ্জাম উৎপাদন শুরু হয়। এছাড়া যুদ্ধরত রাজ্য কালে লেখার আধুনিক রূপ উন্মোচিত হয়।[৩]
Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রতিষ্ঠা লাভ
চৌ রাজবংশ প্রতিষ্ঠার পূর্বে শাং সাম্রাজ্য সময়কালে এই সম্প্রদায় বর্তমান শানসি প্রদেশের গুয়ানঝং এলাকায় বসবাস করত। এই সম্প্রদায়ের নেতা ছিলেন জি। সিমা কিয়ান তার ইতিহাসের আলেখ্য বইতে বলেন, গুগং ডানফু বিন থেকে ওয়েই নদীর পাড়ে তার সম্প্রদায় নিয়ে চলে আসেন। তার বড় দুই পুত্র তাইবো ও ঝংইয়ং এই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং ইয়াংজি নদীর নিম্নভুমিতে য়ু রাজ্য গড়ে তুলে। তার ছোট পুত্র জিলি উত্তরাধিকারীসূত্রে এই সম্প্রদায়ের দায়িত্ব লাভ করে এবং শাং সাম্রাজ্যের আশেপাশে তার রাজত্ব বিস্তার করতে থাকে। তার ক্ষমতা বিস্তারে শাং সম্রাট ওয়েন ডিং ভীত হয় এবং সাইকো নামক স্থানে গুপ্ত হামলা চালায়। শাং সম্রাট চৌ জিলির পুত্র ওয়েনকে ইউলি নামক স্থানে বন্দী করে এবং ওয়েনের বড় পুত্র বোয়ি কাওয়ের পরিবর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ওয়েনের দ্বিতীয় পুত্র য়ু মুয়ের যুদ্ধে তার পিতামহ ও বড় ভাইয়ের অপমানের প্রতিশোধ নেয় এবং শাংদের পরাজিত করে চৌ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে।
প্রচলিত পৌরাণিক গল্প
চীনা পুরাণ অনুসারে, চৌ রাজবংশের বংশবিস্তার শুরু হয় সম্রাট কু’র সহচর জিয়াং ইউয়ান শাংডির প্রার্থনা করে অলৌকিকভাবে কি নামক এক সন্তান লাভ করেন। কথিত আছে, কিকে তার মা তিনবার পরিত্যাগ করলেও সে অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়। সিয়া সাম্রাজ্য সময়কালে তাকে তাই এলাকার জমিদারিত্ব দেয়া হয় এবং তিনি সেখানে কৃষিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। সিয়া সম্রাট তাকে জি উপাধি প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে শাং সম্রাট তাং তাকে মরণোত্তর হৌজি উপাধি দেন।[৪] কি’র পুত্র বুঝু বৃদ্ধ বয়সে তার পিতার পেশা ত্যাগ করেন এবং তার পুত্র জি জু পুরোপুরি এই পেশা ত্যাগ করে জিরং ও বেইডির মত যাযাবর জীবনযাপন শুরু করেন। জি জুর পুত্র গং লিউ তার লোকজন নিয়ে আবার কৃষিকাজ শুরু করেন এবং বিন এলাকায় বসবাস শুরু করেন। পরে রাজা তাই তার সম্প্রদায়কে বিন থেকে ওয়েই নদীর তীরে চৌয়ে নিয়ে আসেন।[৫]
ডিউক তার দুই পুত্র তাইবো ও ঝংইয়ংকে শাং রাজা য়ু য়ি ও ওয়েন ডিংয়ের উপঢৌকন হিসেবে জিরং সম্প্রদায়কে দমনকারী রাজা জিলির নিকট প্রেরণ করেন। তাইবো ও ঝংইয়ং ইয়াংজি নদীর বদ্বীপে পালিয়ে যায় এবং সেখানে লোকজনকে নিয়ে য়ু রাজ্য গড়ে তুলে। জিলির পুত্র রাজা ওয়েন তার রাজধানী ফেংহাওয়ে স্থানান্তর করেন। খ্রিস্টপূর্ব ১০৪৬ অব্দে ওয়েনের পুত্র য়ু এবং তার সহচর জিয়াং জিয়া ৪৫,০০০ সেনা এবং ৩০০ রথ নিয়ে হুয়াংহো নদী দিকে অগ্রসর হন এবং মুয়ের যুদ্ধ-এ শাং সম্রাট চৌকে পরাজিত করে চৌ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।[গ] চৌরা শাং রাজ পরিবারের একজনকে সং রাজ্যের ডিউক হিসেবে জায়গীর দান করে। এই নিয়মকে বলা হয় 二王三恪।
পশ্চিম চৌ

রাজা য়ু পুরনো রাজধানীতে আনুষ্ঠানিকতা পালন করলেও তার রাজপ্রাসাদ ও শাসনকার্য পরিচালনার জন্য হাওজিং-এর কাছে রাজধানী স্থাপন করেন। য়ু'র অল্পবয়সে মৃত্যু ও কোন যোগ্য উত্তরসূরী না থাকায় ডিউক তার উত্তরসূরী রাজা চেংকে রাজকীয় ক্ষমতাবলে তার কাজে সহায়তা করত। ডিউকদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকলে পূর্বে অবস্থিত অন্যান্য চৌ রাজপুত্ররা সঙ্কিত হয়ে পড়ে ও তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তারা স্বাধীনচেতা অভিজাত ও কিছু ডংয়ি সম্প্রদায়কে একত্রিত করে। ডিউক বিদ্রোহ দমন করে পূর্বে সাম্রাজ্য বিস্তার করে। বিস্তৃত চৌ রাজবংশ তদারকি ও আর কোনো বিদ্রোহ দমনের জন্য ডিউক ফেংজিয়ান পদ্ধতি চালু করেন। এছাড়া তিনি শাং সাম্রাজ্য সময়কালের স্বর্গীয় আদেশ মতবাদ অনুসারে আইনের বৈধতা ব্যাখা করেন।
বিকেন্দ্রীকরণের ফলে সময়ের সাথে সাথে চৌ রাজাদের সাথে অন্যান্য স্থানীয় রাজাদের পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপিত হতে থাকে। আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা চৌদের সাথে পারিবারিক সম্পর্কের ফলে স্থানীয় ক্ষমতা ও সম্মান লাভ করতে থাকে। যখন রাজা ইউ সুন্দরী বাও সির জন্য তার রানী জিয়াংকে নির্বাসিত করে, রানীর পিতা মারকুইস জেং ও যাযাবর কুয়ানরংদের সাথে নিয়ে খ্রিস্টপূর্ব ৭৭১ অব্দে হাওজিংদের ক্ষমতাচ্যুত করে। রাজা ইউয়ের মৃত্যুর পর অভিজাতরা শেন প্রদেশে একত্রিত হয় এবং মারকুইসের পৌত্র ও জিয়াংয়ের পুত্র পিংকে রাজা হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং রাজধানী পূর্বদিকে চেংচৌয়ে স্থানান্তর করা হয়। যার ফলে পশ্চিম চৌ সাম্রাজ্য সময়কাল শেষ হয়।[৬]
পূর্ব চৌ
পূর্ব চৌ রাজ কর্তৃপক্ষের রাজকাজে অবহেলা সত্ত্বেও রাজার নিয়মকানুন মেনে চলার কারণে আরও পাঁচ শতাব্দী রাজত্ব করে। এই সময়ে শরৎ বসন্ত যুগ শুরু হয়। এছাড়া খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীর মাঝামাঝিতে চিন রাজ্য বিভক্তির ফলে যুদ্ধরত রাজ্য কাল শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৪০৩ অব্দে চৌ রাজদরবার বুঝতে পারে যে হান রাজ্য, চৌ রাজ্য ও ওয়েই রাজ্য পুরোপুরি স্বাধীন হয়ে গেছে, খ্রিস্টপূর্ব ৩৪৪ অব্দে ওয়েই রাজ্যের রাজা হুই নিজেকে রাজা হিসেবে দাবী করে। এছাড়া আরও কিছু রাজ্য প্রসিদ্ধি লাভ করে। খ্রিস্টপূর্ব ২৫৬ অব্দে ছিন রাজ্য যখন চৌ রাজধানী চেংচৌ দখল করে তখন শেষ চৌ রাজা নানকে হত্যা করা হয়। ওয়েনকে পূর্ব চৌয়ের ডিউক ঘোষণা করা হয় এবং খ্রিস্টপূর্ব ২৪৯ অব্দের মধ্যে ছোট ছোট রাজ্যগুলোকে বাদ দেওয়া হয়। খ্রিস্টপূর্ব ২২১ অব্দে ছিন শি হুয়াং চীনকে কি রাজ্যে একত্রিত করেন।[৭]
পূর্ব চৌ সময়কে চীনের দর্শনের স্বর্ণযুগ বলা হয়। এই সময়ে বিদ্রোহী সামন্তপতিরা পর্যটক ও পন্ডিতদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন, যেমন কি রাজ্যের জিসিয়া একাডেমি। ফলে চিন্তার শত শাখা বিস্তার লাভ করে। চিন্তার নয় শাখা, মেনসিয়াসের কনফুসীয় মতবাদ, আইনের শাসন, মহিবাদ, তাও ধর্ম, কৃষি কলা, কূটনীতি, সুন সুর সামরিক নীতি ও প্রকৃতিবাদ অন্যান্য শাখার উপর প্রভাব বিস্তার করে।[৮]
Remove ads
সামাজিক ব্যবস্থা
সারাংশ
প্রসঙ্গ


স্বর্গীয় আদেশ



চৌরা শাংদের পরাজিত করে এবং শাংডি ও তিয়ান বা স্বর্গের উপাসনা ছাড়াও শাংদের পূর্বপুরুষের উপাসনা পদ্ধতি সার্বজনীন উপাসনা হিসেবে গ্রহণ করে। তারা চীনের শাসকদের স্বর্গীয় পুত্র বলে দাবী করে এবং তাদের শাসনব্যবস্থাকে স্বর্গীয় আদেশের সাথে তুলনা করে। কারো সিংহাসনচ্যুতি বা কারো বিরুদ্ধে সফল বিদ্রোহ প্রমাণ করে যে সে স্বর্গীয় আদেশ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এতে বর্ণিত আছে যে, চৌরা নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করায় তারা শাং এলাকায় কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে এবং নৈতিকতা বিবর্জিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ায় শাংদের সরিয়ে তার ক্ষমতা দখল করেছে। এই মতবাদে আরও বর্ণিত আছে যে, একই কারণে সিয়া সাম্রাজ্য ও শাং সাম্রাজ্য বিলুপ্ত হয়েছে এবং চৌরা তাদের অয়াইনের প্রতি শ্রদ্ধার কারণে সেই সময় ও পরবর্তী সময়ের শাসক হয়েছে।[৯]
সমাজতন্ত্র

পশ্চিমা লেখকেরা চৌ রাজবংশকে সমাজতান্ত্রিক বলে অভিহিত করে কারণ চৌদের ফেংজিয়ান পদ্ধতি (封建) ইউরোপের মধ্যযুগের শাসনব্যবস্থার সাথে তুলনীয়। এই বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতির কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যখন চৌ সাম্রাহ্য প্রতিষ্ঠিত হয়, বিজিত এলাকাসমূহ উপরাজ্যে বিভক্ত করা হয়। শুধুমাত্র পিতার দিক থেকেই ও জ্যেষ্ঠত্বের ভিত্তিতে উত্তরাধিকারী নির্বাচিত হত।[১০] এই পদ্ধতি অনুসারে পিতার মৃত্যুর পর তার বড় পুত্র তার ক্ষমতার উত্তরাধিকারী হত। ছোট পুত্রদের অন্য এলাকায় স্বল্প ক্ষমতা দিয়ে পাঠানো হত এবং তাদের পঞ্চম প্রজন্ম পর্যন্ত এই বংশের ধারক হত।[১১] এই পদ্ধতি পরবর্তী সময়ে কোরিয়ান পরিবারে নব্য কনফুসীয় মতবাদের প্রভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ঝু সি একে চীনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা বলে অভিহিত করেন।[১২]
ফেংজিয়ান পদ্ধতি ও আমলাতন্ত্র
রাজকীয় পদের পরেই আরেকটি পদ ডিউক নামে একটি পদ ছিল। এক সময় ডিউকরা ক্ষমতাধর হতে থাকে এবং রাজ্যগুলোকে কেন্দ্রীভূত করতে থাকে। বিকেন্দ্রীকরনের ফলে রাজ্যগুলোর মধ্যে ছোট ছোট যুদ্ধ দেখা দেওয়ায় কেন্দ্রীকরন জরুরি হয়ে পরে। ডিউক ক্ষমতা লাভ করলে রাজ্যগুলো নিয়োগকৃত আমলাদের দ্বারা আমলাতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়। এই ধরনের কিছু মিল থাকা সত্ত্বেও মধ্য ইউরোপীয় যুগের সাথে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। একটি লক্ষণীয় পার্থক্য ছিল, চৌরা দুর্গের পরিবর্তে প্রাচীর বিশিষ্ট নগরীতে থেকে শাসন করত। অন্য আরেকটি পার্থক্য ছিল, তাদের কোন যাজক ছিল না বরং ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করত শাং সম্প্রদায়ের মোড়ল শ্রেণীর একজন, যাকে শি নামে ডাকা হত। যখন ডিউকদের কেন্দ্রীভূত করা হয় তখন তাদের বিভিন্ন রাজকাজে আমলা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদেরকে পশ্চিমা নাইট উপাধিধারীদের সমতুল্য মনে করা হয়। তারা বিভিন্ন পদে যোগদান করে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাতাযাত করতে পারত। যারা কোনো চাকরি পেত না তারা যুবকদলকে শিক্ষাদানে লিপ্ত হত। তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ছিলেন কনফুসিয়াস। তিনি তাদের নৈতিকতার শিক্ষা দিতেন। অপরদিকে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ফলে কনফুসীয় সদগুণাবলীর পরিবর্তে কঠোর আইন ও শাস্তির বিধান কার্যকর হয়। ছিন সাম্রাজ্য পতনের পর এবং হান সাম্রাজ্য উত্থান হলে, চীনারা আবার কনফুসীয় মতবাদ মানবিক গুণাবলীর দিকে ফিরে যায়।
কৃষি
চৌ রাজবংশ সময়কালে কৃষি সরকার কর্তৃক পরিচালিত হত। অভিজাতরা সকল কৃষিজমির মালিকানা গ্রহণ করে কৃষকদের জায়গীর প্রদান করত। যেমন, এই পদ্ধতি অনুসারে এক খণ্ড জমিকে নয় ভাগে ভাগ করে মাঝের অংশের ফসল সরকার গ্রহণ করত এবং বাকি অংশের ফসল কৃষকরা পেত। এইভাবে সরকার অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ করত এবং খরার সময়ে বিতরন করত। দাস প্রথার প্রচলনের পর অভিজাতদের নির্দেশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন খাত বিস্তার লাভ করে, যেমন ব্রোঞ্জ গলানো, যা দিয়ে যুদ্ধের ও কৃষিকাজের হাতিয়ার তৈরি হত। এছাড়া বয়ন ও স্থাপত্যেও প্রসিদ্ধি লাভ করে। পশ্চিম চৌ সময়ের শেষের দিকে মানুষ ধাতুবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠতে শুরু করে।[১৩]
চীনের প্রথম হাইড্রোলিক প্রকৌশল প্রকল্প চৌ সাম্রাজ্য সময়কালে শুরু হয়, যা মূলত কৃষিকাজে জলসেচের সুবিধার জন্য। রাজা ঝুয়াংয়ের সময়ে ওয়েই রাজ্যের চ্যান্সেলর সুনশু আও বর্তমান উত্তর আনহুই প্রদেশে নদী খনন করে পানি মজুদ করে। এই কারণে সুনশুকে চীনের প্রথম হাইড্রোলিক প্রকৌশলী হিসেবে অভিহিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে সিমেন বাও বৃহদাকারে জলসেচের ব্যবস্থা করেন।
সামরিক বাহিনী
পশ্চিম চৌদের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ছিল। তারা দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত ছিল। একটি ছিল পশ্চিমের ছয় সেনাবাহিনী ও অপরটি চেংচৌয়ের আট সেনাবাহিনী। তারা উত্তরে লয়েস প্লুটো, বর্তমান নিংসিয়া, ও হুয়াংহো নদীর প্লাবনভূমিতে অবস্থান করত। প্রথমদিকের চৌ রাজারা দক্ষ সেনাপ্রধান ছিল। তারা প্রায়ই তাদের বিভিন্ন জায়গীর থেকে যাযাবরদের দমন করার জন্য যুদ্ধ করত। চৌরা সবচেয়ে বেশি সামরিক ক্ষমতাধর ছিল রাজা চৌয়ের শাসনামলের ১৯তম বছরে। রাজা চৌ ইয়াংজি নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রায়ই যুদ্ধ করে যাযাবরদের দমন করার জন্য সুপরিচিত ছিল। পরবর্তী রাজাদের সামরিকনীতি তুলনামূলকভাবে অকার্যকর ছিল। রাজা লি দক্ষিণে যাযাবরদের দমন করার জন্য ১৪ সেনাবাহিনী পাঠালে তা পরাজিত হয়। রাজা সুয়ানের কুয়ানরংদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ব্যর্থ হয়। কুয়ানরংরা রাজা ইউকে হত্যা করে। শাং সাম্রাজ্য সময়কালে মধ্য এশিয়ায় প্রথম রথ ব্যবহৃত হলেও চৌ সাম্রাজ্য সময়ের যুদ্ধে এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার দেখা যায়।[১৪]
সংস্কৃতি
চৌরা শাংদের মত একই ভাষা ব্যবহার করত। তাদের শব্দভান্ডার ও পদবিন্যাস একই ছিল।[ঘ][১৫] ডেভিড ম্যাকক্রর গবেষণাও একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।[১৬] চৌরা শাংদের সংস্কৃতি গ্রহণ করেছে,[১৭] যা তাদের শাংদের সংস্কৃতির উত্তরসূরীতে পরিণত করেছে।[১৮] একই সময়ে তারা শাং সাম্রাজ্যের পশ্চিমের জিরংদের সাথে যোগসূত্র বজায় রেখে চলছিল। শাংরা তাদের উপসম্প্রদায় হিসেবে ধরে নিয়েছিল।[১৯]
চৌদের পূর্বপুরুষেরা শানসি প্রদেশের উচ্চভূমিতে বসবাস করত এবং তারা গুয়াংশে সংস্কৃতি ধারণ করত। রাজা লিউ তার লোকজনকে নিয়ে ফেন উপত্যকার নিম্নভূমি ও হুয়াংহো নদীর পশ্চিম তীরে চলে আসে। সেখানে তারা পুনরায় কৃষিকাজ শুরু করে। তার পুত্র কিং জিয়ে তার লোকজনকে নিয়ে জিং নদীর উচ্চ উপত্যকায় চলে যায়। ডাং ফু যাযাবর রংডিদের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য তাদের ওয়েই উপত্যকায় নিয়ে আসার পূর্ব পর্যন্ত তারা সেখানে বসবাস করতে থাকে। এই সময়ে চৌরা কিয়াং সম্প্রদায়ের সাথে মিশ্রিত হয়ে যায়। ফলে তারা উত্তরাধিকার সূত্রে সিওয়া ও আনগুও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি গ্রহণ করে এবং কিয়াংদের সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এই পর্যায়ে শাংদের ব্রোঞ্জ সংস্কৃতি চৌদের প্রভাবিত করে। কি এলাকায় এই প্রভাব বেশি লক্ষণীয় হয়। চৌদের পূর্বপুরুষ, স্থানীয় শানসি লংশান, কিয়াং সম্প্রদায় ও উত্তরের কিছু সম্প্রদায়ের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে তাদের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসে।[২০]
দর্শন
চীনা দর্শন খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে উৎপত্তি হলেও চৌ সাম্রাজ্য সময়কালে বিস্তার লাভ শুরু করে। কনফুসীয় ধর্ম প্রবর্তক কনফুসিয়াস ও তাও ধর্ম প্রবর্তক লাউযি ছিলেন চীনের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক। তাদের দর্শন ও চিন্তাচেতনা পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত ও প্রভাবিত করে। অন্যান্য দার্শনিক ও গবেষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মোজি, মহি ধর্মের প্রবর্তক; মেনসিয়াস, কনফুসীয় গবেষক ও বিশ্লেষক; শাং ইয়াং ও হান ফেই, প্রাচীন চীনের আইনসর্বস্বতা প্রণয়নকারী; সুন জি, তার সময়ে প্রাচীন চীনের বুদ্ধিজীবীদের প্রধান।[২১]
লি
লি দর্শনের সূত্রপাত হয় পশ্চিম চৌ সাম্রাজ্য সময়কালে। কনফুসীয় ধর্মমতে সামাজিক কর্মকাণ্ড, যেমন সামাজিক ভেদাভেদ, নৈতিকতা, ও বস্তুনিষ্ঠ জীবনের সাথে সম্পর্কিত নিয়মাবলী এই দর্শনের আলোচ্য বিষয়। বুক অব রায়টস, চৌলি, ও য়িলি গ্রন্থে লি সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এই পদ্ধতি প্রথমদিকে পুরোপুরি মানা হলেও পরে পশ্চিম চৌ সাম্রাজ্য সময়কালে এতে নৈতিক মূল্যবোধ ও নিয়মনিষ্ঠার ভাগ দেখা যায়।
Remove ads
রাজা
সারাংশ
প্রসঙ্গ
চৌ রাজবংশের শাসকেরা শাং শাসকদের মত ওয়াং নামে পরিচিত ছিল। ওয়াং মানে হল রাজা। রাজা য়ু পূর্বসূরী শাং সামন্তপতী গুগং ডানফু, জিলি, ও ওয়েনকে ও চৌ রাজা বলে অভিহিত করা হয়।
বি.দ্র. চীনের ইতিহাসে খ্রিস্টপূর্ব ৮৪১ অব্দে গংহে রাজপ্রতিনিধি সময়কালের পূর্বের সময়ে তারতম্য দেখা যায়। সিয়া-শাং-চৌ কালানুক্রম প্রকল্প এবং এডওয়ার্ড এল. শাউঘনেসির পশ্চিম চৌ রাজবংশের চূড়ান্ত কালানুক্রম অনুসারে চৌ সাম্রাজ্যের ব্যাপ্তি নিচে দেওয়া হল
Remove ads
বংশধর
হান সম্রাটেরা উত্তরাধিকারসূত্রে চৌ রাজাদের উপাধি লাভ করে। এই নিয়মকে বলা হয় 二王三恪। নিউ বুক অব তাং অনুসারে সুই সম্রাটেরা পিতার দিক থেকে জিনের ডিউক য়ুর পুত্র চৌ রাজা জি বোকিয়াওের বংশধর। জি বোকিয়াওয়ের পরিবার শিপ তাং পরিবার হিসেবে পরিচিত ছিল।[২২] হংনংয়ের ইয়াং সুই সম্রাটদের পূর্বসূরী ছিলেন[২৩][২৪][২৫] এবং লংসি লি ছিলেন তাং সম্রাটদের পূর্বসূরী।[২৬] চৌজুনে লি এবং ফানইয়াংয়ের লু শাংডং থেকে উৎপত্তি লাভ করে এবং তাদের লিউ সম্প্রদায়ের সাথে যোগসূত্র ছিল। লিউ সম্প্রদায়ের হংনংয়ের ইয়াং ও গুয়ানলংয়ের অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাথে যোগসূত্র ছিল।[২৭] জিনের ডিউক য়ু হংনংয়ের ইয়াংয়ের পূর্বসূরী ছিল। তাং সাম্রাজ্যের হংনংয়ের ইয়াং, হেডংয়ের জিয়া, ও তাইইউয়ানের ওয়াং সং সাম্রাজ্যের সম্রাটদের পূর্বসূরী ছিল।[২৮]
Remove ads
আরও দেখুন
- চীনের ইতিহাস
- শাং সাম্রাজ্য
- চীনের প্রাচীন রাজধানী
পাদটীকা
- The exact location of Wangcheng and its relation to Chengzhou is disputed. According to Xu Zhaofeng, "Chengzhou" and "Wangcheng" were originally synonymous and used to name the same capital city from 771 to 510 BC. "The creation of a distinction between Wangcheng and Chengzhou probably occurred during the reign of King Jing", under whom a new capital "Chengzhou" was built to the east of the old city "Wangcheng". Nevertheless, the new Chengzhou was still sometimes called Wangcheng and vice versa, adding to the confusion.
- Sima Qian was only able to establish historical dates after the time of the Gonghe Regency. Earlier dates, like that of 1046 BC for the Battle of Muye, are given in this article according to the official PRC Xia–Shang–Zhou Chronology Project, but they remain contentious. Various historians have offered dates for the battle ranging between 1122 and 1027 BC.
- Bodman (1980), p. 41: "Moreover, Shang dynasty Chinese at least in its syntax and lexicon seems not to differ basically from that of the Zhou dynasty whose language is amply attested in inscriptions on bronze vessels and which was transmitted in the early classical literature."
Remove ads
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads