ঘূর্ণিঝড় মোখা
২০২৩-এ উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় মোখা হচ্ছে বঙ্গোপসাগর তথা উত্তর ভারত মহাসাগর একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, যা বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিতওয়ে বন্দরের উপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। এটি ২০২৩ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের দ্বিতীয় নিম্নচাপ, প্রথম গভীর নিম্নচাপ, প্রথম ঘূর্ণিঝড়, প্রথম মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় এবং প্রথম অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় ছিলো। একটি নিম্নচাপ এলাকা থেকে উদ্ভূত এই ঘূর্ণিঝড়টিকে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) ৮ মে তারিখে প্রথম উল্লেখ করে। নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে অগ্রসর হয় এবং অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সমান তীব্রতায় পৌঁছায়। ১৪ই মে বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে বারোটায় ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানে।
অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় (আইএমডি স্কেল) | |
---|---|
শ্রেণী ৫ (স্যাফির-সিম্পসন মাপনী) | |
![]() ১৪ই মে মিয়ানমারের দিকে সর্বোচ্চ তীব্রতায় ঘূর্ণিঝড় মোখা | |
গঠন | ০৯ মে, ২০২৩ |
বিলুপ্তি | ১৫ মে, ২০২৩ |
সর্বোচ্চ গতি | ৩-মিনিট স্থিতি: ২১৫ কিমি/ঘণ্টা (১৩০ mph) ১-মিনিট স্থিতি: ২৮০ কিমি/ঘণ্টা (১৭৫ mph) |
সর্বনিম্ন চাপ | ৯১৩ hPa (mbar); ২৬.৯৬ inHg |
হতাহত | অন্তত ৪৬৩ জন নিহত এবং ৭১৯ জন আহত [১] |
ক্ষয়ক্ষতি | $1.07 মিলিয়ন (2023 $) |
প্রভাবিত অঞ্চল | বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও মিয়ানমার |
২০২৩ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমেরের অংশ |
নামকরণ
উত্তর ভারত মহাসাগর তথা বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে এই অঞ্চলের ১৩টি দেশ। ঘূর্ণিঝড় মোখার নামকরণ করেছে ইয়েমেন। ইয়েমেনের লোহিত সাগর উপকূলে একটি বন্দর শহর মোখা যা কফি বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। এটা ছিল ইয়েমেনের ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রধান বন্দর শহর।[২]
আবহাওয়াগত ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ

মানচিত্রের ব্যাখ্যা
ক্রান্তীয় নিম্নচাপ (≤৩৮ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ≤৬২ কিমি/ঘণ্টা)
ক্রান্তীয় ঝড় (৩৯–৭৩ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ৬৩–১১৮ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ১ (৭৪–৯৫ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১১৯–১৫৩ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ২ (৯৬–১১০ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১৫৪–১৭৭ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ৩ (১১১–১২৯ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১৭৮–২০৮ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ৪ (১৩০–১৫৬ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ২০৯–২৫১ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ৫ (≥১৫৭ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ≥২৫২ কিমি/ঘণ্টা)
অজানা
ক্রান্তীয় ঝড় (৩৯–৭৩ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ৬৩–১১৮ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ১ (৭৪–৯৫ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১১৯–১৫৩ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ২ (৯৬–১১০ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১৫৪–১৭৭ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ৩ (১১১–১২৯ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১৭৮–২০৮ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ৪ (১৩০–১৫৬ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ২০৯–২৫১ কিমি/ঘণ্টা)
শ্রেণী ৫ (≥১৫৭ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ≥২৫২ কিমি/ঘণ্টা)
অজানা
ঝড়ের ধরন


২ মে তারিখে সমুদ্রে ম্যাডেন-জুলিয়ান দোলনের (এমজেও) প্রশস্ততার কারণে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) পূর্বাভাস দিয়েছিল বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সঞ্চালন তৈরি হবে। এমজেও পর্যায়টি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় উৎপত্তির(সাইক্লোজেনেসিস) জন্য অত্যন্ত অনুকূল ছিল। কারণ.৬ মে তারিখে একটি সঞ্চালন গঠিত হয়েছিল।[৩]
৭ মে, এটি ঘনীভূত হওয়ার সাথে সাথে বিরাজমান বাতাসের সংমিশ্রণের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়। জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার (জেটিডব্লিউসি) সেই দিন সঞ্চালনটি পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেছিল। পরবর্তীতে ৮ মে আইএমডি দ্বারা সঞ্চালনটিকে নিম্নচাপ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ৯ মে, সঞ্চালনটি উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার কারণে সংগঠিত এবং খুব তীব্র সংবহনের কারণে একটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছিল। জেটিডব্লিউসি পরে সঞ্চালনটিতে একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় গঠনের সতর্কতা জারি করে। এটিকে (ইনভেস্ট ৯১বি) নামকরণ করে। সঞ্চালনটি অত্যন্ত উষ্ণ সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রায় অবস্থিত ছিল। সঞ্চালনটির আশেপাশের মেঘগুলি সম্পূর্ণরূপে অস্পষ্ট ছিল। অথচ এগুলো একীভূত নিম্ন-স্তরের সঞ্চালন কেন্দ্র (এলএলসিসি)-কে আবৃত করেছিল। ১১ মে এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে উন্নীত হওয়ার আগে ১০ মে, আইএমডি থেকে এটির নাম মোখা নামকরণ করা হয়। এটি সেদিন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। জেটিডব্লিউসি এটিকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ০১বি হিসেবে উল্লেখ করে এবং তার অবস্থানকে চিহ্নিত করে।
১৪ মে ২০২৩ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা রবিবার সন্ধ্যায় টেকনাফ-রাখাইন উপকূল দিয়ে মিয়ানমারের সিতওয়ে এলাকায় প্রবেশ করে দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে সমুদ্র বন্দরগুলোয় তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেয়। ঝড়টি উত্তর দিকে আরও সরে বৃষ্টির সাথে সাথে দুর্বল হয়ে পড়ে।[৪]
প্রস্তুতি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
ঘূর্ণিঝড় সীমান্তের কাছে আসার সাথে সাথে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক মায়ানমার ও বাংলাদেশের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। কক্সবাজারে প্রায় ৮,৬০০ জন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রায় ৩,৪০০ স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হয়।
মায়ানমার
রাখাইনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সিত্তওয়ে, পাউকতাও, মাইবোন, মংডু এবং বুথিডাং-এর নিচু এলাকা এবং উপকূলীয় এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য বাসিন্দাদের পরামর্শ দিয়েছে এবং অনেকেই ঝড়ের আগেই চলে যেতে শুরু করেছে। মায়ানমারের সম্প্রদায় এবং সাহায্য সংস্থাগুলো ঘূর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য আগমনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। মায়ানমার রেড ক্রস সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (আইএফআরসি) সহায়তায় বৃহৎ জরুরি প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়।[৫]

মায়ানমার আবহাওয়া পূর্বাভাসে মোখাকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসাবে বাদামী বা 'ব্রাউন' সতর্কতা জারি করে।[৬]
বাংলাদেশ
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় থাকা গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় মোখায় পরিণত হলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে দুই নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলে।[৭] উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করে।[৮]
১২ মে ঘূর্ণিঝড় মোখা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলে।[৯] প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন ঝড়ের গতিপথে পড়ায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কক্সবাজার এবং সেন্ট মার্টিনের অনেক হোটেলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়। কক্সবাজারের মোট ১১২ টি হোটেল, মোটেল ও রিসর্টে আশ্রয় শিবির খোলা হয়। উপকূলীয় ভোলা জেলার সাতটি উপজেলায় ৭৪৬ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। মোখা উপকূলের কাছে আসার আগেই ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়।[১০]
মানবিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় " রোহিঙ্গা শিবিরে এবং ভাসানচরে জরুরি প্রস্তুতি চলছে"।[১১] কর্তৃপক্ষের মতে ঘূর্ণিঝড় থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের পাশাপাশি তিনটি পাহাড়ি জেলা: রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়িতে ভূমিধস হতে পারে। [১২] সম্ভাব্য প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের আগে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের পাঁচ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। [১৩] বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা কক্সবাজারে ৪০টি অ্যাম্বুলেন্স এবং ৩৩টি মোবাইল মেডিকেল টিম মোতায়েন রয়েছে। [১৪] এছাড়াও, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রধান সমন্বয়কারী অর্জুন জৈন বলেছেন যে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্য অসংখ্য অ্যাম্বুলেন্স এবং মোবাইল হেলথ টিম রয়েছে। এই দলগুলো বয়স্ক, শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করার জন্য অত্যন্ত প্রশিক্ষিত। [১৫]
কর্তৃপক্ষ ১৩ মে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং ১৪ মে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা স্থগিত করে। [১৬] বাংলাদেশ সরকার দেশের দক্ষিণ উপকূলরেখা বরাবর প্রায় ৫০০,০০০ বাসিন্দাকে স্থানান্তরিত করার জন্য একটি বড় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। [১৭] বাংলাদেশের কর্মকর্তারা কক্সবাজার থেকে ১৯০,০০০ জন এবং চট্টগ্রাম থেকে ১০০,০০০ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেন।[১৭]
ভারত
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) বলেছে যে ত্রিপুরা, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, দক্ষিণ আসাম এবং মণিপুরের কিছু অংশের দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় মোকার ফলে "ভারী" থেকে "অতি ভারী" বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। [১৮] ত্রিপুরা, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর এবং আসামের রাজ্য সরকারগুলোও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য সমস্ত প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষকে হতাহতের ঘটনা এবং সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।[১৯]
প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি
বাংলাদেশ
বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ। এতে প্রাণহানি ঘটেনি। বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ১২০০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। গাছপালা উপড়ে পুরো দ্বীপ লন্ডভন্ড হয়ে যায়। কক্সবাজার জেলায় সাড়ে ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কয়েকশ ঘরবাড়ি ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়। [২০]
মায়ানমার
মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অনেক অঞ্চল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সিতওয়ে শহরের টেলিফোন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এই অঞ্চলের বহু ঘরবাড়ি পানিতে প্লাবিত হয় এবং অনেক কাঠের বাড়ি ভেঙে পড়ে। ঘূর্ণিঝড় মোখার ফলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে,মিয়ানমারের রাখাইনে মোখার প্রভাবে অন্তত ৪৬৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। [১]
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.