গ্যালিলীয় উপগ্রহ
বৃহস্পতির চারটি প্রাকৃতিক উপগ্রহ / From Wikipedia, the free encyclopedia
গ্যালিলীয় উপগ্রহ (ইংরেজি: Galilean moons বা Galilean satellites) হল বৃহস্পতির চারটি বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ—আইও, ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টো। ১৬০৯ সালের ডিসেম্বর অথবা ১৬১০ সালের জানুয়ারি মাসে গ্যালিলিও গ্যালিলেই এগুলিকে প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন এবং ১৬১০ সালের মার্চ মাসে তিনি এগুলিকে প্রাকৃতিক উপগ্রহ হিসাবে শনাক্ত করেন।[1] এই উপগ্রহগুলিই পৃথিবী ব্যতীত অন্য কোনও গ্রহকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রদক্ষিণকারী বস্তুগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয়।
এই উপগ্রহগুলি সূর্য ও আটটি গ্রহকে বাদ দিয়ে সৌরজগতের অন্যান্য বৃহত্তম বস্তুগুলির অন্যতম। এগুলির ব্যাসার্ধ যে কোনও বামন গ্রহের ব্যাসার্ধের চেয়েও বেশি। গ্যানিমিড হল সৌরজগতের বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ। এটি আকারে বুধ গ্রহের চেয়েও বড়ো। যদিও গ্যানিমিডের ভর বুধের ভরের প্রায় অর্ধেক। অভ্যন্তরীণ তিনটি উপগ্রহ—আইও, ইউরোপা ও গ্যানিমিড—পরস্পরের সঙ্গে ৪:২:১ কক্ষীয় অনুরণনে অবস্থান করছে। বৃহস্পতির অন্যান্য উপগ্রহগুলি আকারে অনেকটাই ছোটো বলে এগুলির স্ব-মহাকর্ষ দুর্বলতর। সেই কারণে সেগুলি গোলকাকার না হয়ে অনিয়তাকার উপগ্রহে পরিণত হয়েছে।
গ্যালিলিয়ান উপগ্রহগুলি প্রথম মানুষের দৃষ্টিগোচর হয় ১৬০৯ অথবা ১৬১০ সালে। সেই সময় গ্যালিলিও তাঁর দুরবিন যন্ত্রের উন্নতিসাধন করেছিলেন। ফলে মহাজাগতিক বিভিন্ন বস্তু তিনি আগের তুলনায় অনেক বেশি স্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হন।[2] গ্যালিলিওর পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের যন্ত্র হিসাবে দুরবিনের গুরুত্বটিকে দেখিয়ে দেয়। কারণ এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল যে, মহাকাশে এমন বস্তুও রয়েছে যা খালি চোখে দেখা যায় না। সেই যুগে প্রচলিত টলেমীয় বিশ্বতত্ত্ব অনুযায়ী মনে করা হত যে, সকল মহাজাগতিক বস্তুই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ রত। তাই পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনও বস্তুকে প্রদক্ষিণরত মহাজাগতিক বস্তুর আবিষ্কার সেই ভূকেন্দ্রিক তত্ত্বের উপর আঘাত হেনেছিল।
গ্যালিলিও প্রথমে তাঁর আবিষ্কারের নামকরণ করেন কসমিকা সিডেরা (লাতিন: Cosmica Sidera; অর্থাৎ "কসমিকোর তারা")। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে নামগুলির প্রচলন ঘটে, সেগুলি নির্বাচিত করেছিলেন সাইমন মারিয়াস। ১৬১০ সালের ৮ জানুয়ারি গ্যালিলিওর প্রায় একই সময়ে মারিয়াসও স্বতন্ত্রভাবে এই উপগ্রহগুলি আবিষ্কার করেছিলেন। ১৬১৪ সালে প্রকাশিত মানডাস জোভিয়ালিস গ্রন্থে জোহানেস কেপলার এই উপগ্রহগুলির নামকরণ জিউসের প্রেমিক-প্রেমিকাদের নামে করার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ীই মারিয়াস উপগ্রহগুলিকে অধুনা প্রচলিত নামে চিহ্নিত করেন।[3]
১৮৯২ সালে বৃহস্পতির পঞ্চম উপগ্রহটি আবিষ্কারের পূর্বাবধি এই গ্রহের এই চারটি মাত্র উপগ্রহের কথাই বিজ্ঞানীদের জানা ছিল।[4]