Loading AI tools
ধর্মীয় উপাসনালয় উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
গুরুদুয়ারা নানকশাহী (গুরুমুখী: গুরমুখী: ਗੁਰਦੁਆਰਾ ਨਾਨਕ ਸ਼ਾਹੀ) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে অবস্থিত শিখ ধর্মের একটি উপাসনালয়। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কলা ভবনের পাশে অবস্থিত। এই গুরুদুয়ারাটি বাংলাদেশে অবস্থিত ৯-১০ টি গুরুদুয়ারার মধ্যে বৃহত্তম।[1]
কথিত আছে যে, ঢাকার এই গুরুদুয়ারাটি যেখানে অবস্থিত, সেই স্থানে ষোড়শ শতকে শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক অল্প সময়ের জন্য অবস্থান করেছিলেন। এই স্থানে থাকাকালীন তিনি শিখ ধর্মের একেশ্বরবাদ এবং ভ্রাতৃত্ববোধের কথা প্রচার করেন, এবং ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান পালনের শিক্ষা প্রদান করেন।
শিখ ধর্মের ৬ষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ সিংয়ের সময়কালে (১৫৯৫-১৬৪৪ খ্রি.) ভাইনাথ (মতান্তরে আলমাস্ত) নামের জনৈক শিখ ধর্ম প্রচারক এই স্থানে আগমন করে গুরুদুয়ারাটির নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কারও কারও[কে?] মতে, গুরুদুয়ারাটি নির্মাণের কাজ শুরু হয় ৯ম শিখ গুরু তেগ বাহাদুর সিংয়ের সময়কালে (১৬২১-১৬৭৫ খ্রি.)।[1] ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে এর নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয়। পরবর্তীতে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি ভগ্নদশাপ্রাপ্ত হয়।[2]
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ১৯৭২ সালে গুরুদুয়ারা ভবনের কিছু সংস্কার করা হয়। ১৯৮৮-৮৯ সালে এটির ব্যাপক সংস্কার সাধন করা হয় এবং বাইরের বারান্দা ও সংলগ্ন স্থাপনা যোগ করা হয়। সংস্কার কার্যের অর্থায়ন করা হয় বাংলাদেশে ও বিদেশে অবস্থানরত শিখ ধর্মাবলম্বীদের দানের মাধ্যমে। ঢাকার আন্তর্জাতিক পাট সংস্থার তদানীন্তন প্রধান সর্দার হরবংশ সিং এর নির্মাণকার্য তদারক করেন।[2]
একসময় গুরুদুয়ারা নানকশাহীর বিপুল পরিমাণ ভূসম্পত্তি ছিল। আজকের মতো বিরাট ও জমকালো উপাসনালয় না থাকলেও তখন গুরুদুয়ারা নানকশাহীর আয়তন ছিল বিপুল। এর উত্তর দিকে ছিল একটি প্রবেশদ্বার, দক্ষিণদিকে ছিল কূপ ও সমাধিস্থল এবং পশ্চিমে ছিল একটি শানবাঁধানো পুকুর। মূল উপাসনালয় ছাড়াও ভক্তকুলের থাকার জন্য ছিল কয়েকটি কক্ষ। তবে সেসবের কিছু এখন আর অবশিষ্ট নেই। বর্তমান উপাসনালয়টি সীমিত জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে এবং বারবার সংস্কারের ফলে বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করেছে।[3]
উঁচু প্রাচীরবেষ্টিত গুরুদুয়ারা নানকশাহীর বর্তমান প্রবেশপথটি রয়েছে দক্ষিণদিকে। উপাসনালয়টির সামনে রয়েছে চমৎকার সবুজ লন। এর বাম দিকে আছে শিখ গবেষণা কেন্দ্র, ডানদিকে দ্বিতল দরবার হল। সামনে পতাকা টাঙানোর খুঁটি বৈশিষ্ট্যময় এই উপাসনালয়টি শিখদের নিজস্ব স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত। উপাসনালয়টির ওপর পৃথিবী আকৃতির একটি কাঠামো নির্মিত। তার চারদিকে শিখ ধর্মীয় চিহ্ন খাণ্ডা শোভিত। উপাসনালয়ের শীর্ষে রয়েছে ছাত্রার। এটি শিখদের উপাসনালয়ের চিহ্ন। গুরুদুয়ারা নানকশাহীর ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটি বড় কক্ষ। এই কক্ষের চারদিকে চারটি দরজা আছে। মাঝখানে কাঠের তৈরি বেদির ওপর রয়েছে শিখ ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিব। এটাকে বলা হয় শ্রী দরবার সাহিব। বেদির সামনে নবম শিখগুরু তেগ বাহাদুর সিংয়ের ব্যবহৃত একজোড়া খড়ম একটি কাচের বাক্সের মধ্যে যত্নসহকারে রাখা আছে। এ কক্ষের মেঝেতে লাল রঙের কার্পেট পাতা আছে। তাতে ভক্তরা বসে গ্রন্থসাহেব পাঠ শোনেন। কক্ষের চারদিকে বারান্দা আছে। [1]
এই অংশটিতে কোনো উৎস বা তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। |
গুরুদুয়ারা নানকশাহীতে একেক সময় একেকজন গ্রন্থির (পুরোহিত) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১৫ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত শ্রীচন্দ্র জ্যোতি নামে এক শিখসাধু এই উপাসনালয়ের পুরোহিত ছিলেন। ১৯৪৭ সালের পর থেকে ষাটের দশক পর্যন্ত উপাসনালয়টি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংস্কার করে এর বর্তমান রূপ দেওয়া হয়। বর্তমানে ভাই আজাদবিন্দার সিং প্রধান গ্রন্থির দায়িত্ব পালন করছেন।
গুরু নানকশাহীতে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা দুইবার গ্রন্থ সাহেব পাঠ ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। তা ছাড়া প্রতি শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত সাপ্তাহিক জমায়েত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। পুরোহিত গ্রন্থসাহেব পাঠ ও কীর্তন করেন। সংগীতশিল্পী কিরণ চন্দ্র রায় এই গুরুদ্বারের অতিথিশালায় থেকে দীর্ঘদিন এখানে কীর্তন পরিবেশন করেন। কীর্তন ও প্রার্থনা শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এখানে শুক্রবারে আগত অতিথিদের জন্য মধ্যাহ্নভোজেরও ব্যবস্থা আছে। গুরুদ্বারে আয়োজিত বার্ষিক অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গুরু নানকের জন্মবার্ষিকী, দশম গুরু গোবিন্দ সিং এর জন্মবার্ষিকী, খালসা সাজনা দিবস, নগর কীর্তন, লোহরী এবং পহেলা বৈশাখ। এ অনুষ্ঠানগুলো এখানে অত্যন্ত ধুমধামের সঙ্গে পালন করা হয়।
গুরুদুয়ারাটিতে কারও প্রবেশে বাঁধা নেই, জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সব বয়সী নারী ও পুরুষ এখানে প্রবেশ, প্রার্থনায় অংশগ্রহণ এবং প্রসাদ পেতে পারেন। ঢাকায় বসবাসরত শিখ সম্প্রদায়ের লোকজন নিয়মিত এই গুরুদুয়ারাতে আসেন। তা ছাড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনকেও শুক্রবার এই উপাসনালয়ে আসতে দেখা যায়। স্থানীয় ভক্ত ও বিদেশি দাতাদের সাহায্যে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় নির্বাহ হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.