গুরুকুল (সংস্কৃত: गुरुकुल) হলো প্রাচীন ভারতের এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে শিষ্য গুরুগৃহে গুরুর সন্নিধ্যে বা তার সঙ্গে বাস করে শিক্ষা গ্রহণ করে।[1] গুরু-শিষ্য ঐতিহ্য হিন্দুধর্মের পবিত্র ঐতিহ্য এবং সম্ভবত ভারতের অন্যান্য ধর্মে দেখা যায়, যেমন জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম। শিখ ঐতিহ্যে, গুরু শব্দের ব্যবহার খুবই সীমিত ও সাধারণত পৃথক শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, যখন গুরুদ্বার প্রতিষ্ঠানের সন্ন্যাসীর পরিবর্তে প্রধান সামাজিক ভূমিকা রয়েছে। গুরুকুল শব্দটি সংস্কৃত শব্দ গুরু (শিক্ষক বা গুরু) ও কুল (পরিবার বা বাড়ি) এর সংমিশ্রণ।[2][3] শব্দটি বর্তমানে আধুনিক গুরুদের দ্বারা পরিচালিত আবাসিক মঠ বা বিদ্যালয়ের জন্যও ব্যবহৃত হয়।[4] শব্দটির সঠিক বহুবচন হল গুরুকুলম, যদিও গুরুকুল ইংরেজি ও কিছু অন্যান্য পাশ্চাত্য ভাষাতেও ব্যবহৃত হয়।
শিষ্যগণ গুরুর নিকট অধ্যয়ন করে এবং গুরুকে তার দৈনন্দিন জীবনে সাহায্য করে, এর মধ্যে দৈনন্দিন গৃহস্থালির জাগতিক কাজগুলোও করা হয়। কিছু পণ্ডিত বলেন, এই কার্যগুলো জাগতিক নয় বরং শিষ্যদের মধ্যে স্ব-শৃঙ্খলা জাগ্রত করার জন্য শিক্ষার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অংশ।[5] সাধারণত, গুরু তার নিকট অধ্যয়নরত শিষ্যের কাছ থেকে কোনো অর্থ গ্রহণ করেন না। এর কারণ হচ্ছে, গুরু ও শিষ্যের মধ্যে যেই সম্পর্ক রয়েছে তা অত্যন্ত পবিত্র বলে বিবেচিত হয়।[6]
শিক্ষা শেষে শিষ্য গুরুকুল ত্যাগ করার পূর্বে গুরুদক্ষিণা প্রদান করেন।[3] গুরুদক্ষিণা হল গুরুর প্রতি স্বীকৃতি, শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদের ঐতিহ্যবাহী আচরণ, যা অর্থ প্রদান হিসেবেও হতে পারে, আবার শিষ্যকে গুরুর আদেশকৃত কোনো বিশেষ কাজ সম্পাদন করাও হতে পারে।[3] গুরুকুলে থাকার সময়, শিষ্যরা তাদের বাড়ি থেকে দূরে থাকবে। এই সময়টি হতে পারে কয়েকমাস থেকে কয়েক বছর।
বিবরণ
প্রাচীনকাল থেকে গুরুকুল ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু ছিল। উপনিষদে গুরগ্রামের গুরু দ্রোণ সহ একাধিক গুরুকুলের কথা উল্লেখ আছে।[7] ভৃগু বল্লি (উপনিষদের ব্রহ্ম উপদেশ সম্পর্কিত একটি অধ্যায়ে) গুরু বারুণীর গুরুকুলে সংঘটিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। বৈদিক রীতিতে ৮ হতে ১২ বছরের মাঝে সকল ব্যক্তিকে গুরুকুলে উপনয়নের (উত্তরণের পবিত্র আচার) মাধ্যমে দীক্ষা নিতে হয়। দীক্ষার সময় হতে ২৫ বছর পর্যন্ত ছাত্রদের অবিবাহিত অবস্থায় ব্রহ্মচারী থাকার উপদেশ দেওয়া হয়।
গুরুকুল জনগণের আর্থিক অনুদানের দ্বারা চালিত হতো। পরবর্তীতে অনেকগুলো নিম্নলিখিত বৈদিক চিন্তাভাবনা গুরুকুলকে পাবলিক স্কুল কেন্দ্রগুলোর প্রাচীনতম রূপগুলোর মধ্যে একটি করে তুলেছিল।
গুরুকুল ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্যাত্রা
ঔপনিবেশিক যুগে ভারতে গুরুকুল ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুতর পতন হয়েছিল। আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা দয়ানন্দ সরস্বতী এবং তার অনুসারী স্বামী শ্রদ্ধানন্দ ছিলেন আধুনিক গুরুকুল শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তক। ১৮৮৬ সালে শ্রদ্ধানন্দ বর্তমান-বিস্তৃত ু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[8][9][10]
এর অনুসরণ করে ১৯৪৮ সালে, শাস্ত্রীজী মহারাজ শ্রী ধরমজীবন দাস স্বামী ভারতের গুজরাত রাজ্যের রাজকোটে প্রথম স্বামীনারায়ণ গুরুকুলের সূচনা করেন। সম্প্রতি, বেশ কয়েকটি গুরুকুল তার ঐতিহ্য ধারণের জন্য ভারতের পাশাপাশি বিদেশেও খোলা হয়েছে।
এখনও বিভিন্ন গুরুকুল ভারতের বিভিন্ন যায়গায় বিদ্যমান রয়েছে। গবেষকরা সেই প্রতিষ্ঠানগুলির মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা অধ্যয়ন করছেন। [11] গণযোগাযোগের নতুন মাধ্যম আবির্ভাবের সাথে সাথে অনেক গুরু এবং বৈদান্তিক পণ্ডিত ই-গুরুকুল খুলছেন। এই গুরুকুলগুলো এখন অনলাইনে কাজ করছে এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করছে।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.