গায়ত্রী দেবী
কোচবিহারের মহারাণী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কোচবিহারের মহারাণী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মহারানি গায়ত্রী দেবী, জয়পুরের রাজমাতা (২৩ মে, ১৯১৯ – ২৯ জুলাই, ২০০৯) কোচবিহার রাজকুমারী গায়ত্রী দেবী রূপে জন্মগ্রহণ করেন। মহামহিম মহারাজা দ্বিতীয় সওয়াই মান সিংহকে বিবাহ করে তিনি জয়পুরের তৃতীয় মহারানি হন এবং ১৯৩৯ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। ১৯৭১ সালে সংবিধান সংশোধন করে তার রাজকীয় উপাধি ও রাজন্য ভাতা বিলুপ্ত করা হয়।
গায়ত্রী দেবী | |
---|---|
জয়পুরের রাজমাতা | |
কার্যকাল | ১৯৩৯ - ১৯৭০ |
জন্ম | ২৩ মে ১৯১৯ |
মৃত্যু | ২৯ জুলাই ২০০৯ |
বংশধর | যুবরাজ জগৎ সিংহ |
প্রাসাদ | কাচওয়াহা |
পিতা | জিতেন্দ্র নারায়ণ বাবা |
মাতা | মহারানী চিমনাবাই মা |
স্বাধীনতার পর দেশীয় রাজ্যগুলির বিলোপের সময় গায়ত্রী দেবী রাজনীতিবিদ হিসেবে চরম সাফল্য অর্জন করেন। ধ্রুপদী সৌন্দর্যের জন্য খ্যাত গায়ত্রী দেবী পরিণত জীবনে ছিলেন একজন ফ্যাশান আইকনের মতো।
গায়ত্রী দেবীর পিতা কোচবিহারের রাজকুমার জিতেন্দ্র নারায়ণ ছিলেন যুবরাজের কণিষ্ঠ ভ্রাতা। তার মা বরোদার রাজকুমারী ইন্দিরা রাজে ছিলেন মহারাজা তৃতীয় সয়াজিরাও গায়েকওয়াড়ের একমাত্র কন্যা তথা পরমাসুন্দরী রাজকুমারী ও কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব। তার প্রথম জীবনে জ্যাঠামশায়ের মৃত্যুতে তার পিতা সিংহাসনে বসেন। গায়ত্রী দেবী প্রথমে কিছুকাল শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেন।[1] শান্তিনিকেতনে গায়ত্রী দেবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশেষ স্নেহধন্যা হয়ে ওঠেন। এখানে পড়াশোনার সময় তার সহপাঠিনী ছিলেন ইন্দিরা নেহেরু (গান্ধী) যিনি পরবর্তীকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হন। পরে মা ও ভাইবোনদের সঙ্গে চলে যান সুইজারল্যান্ডের লসান-এ। পরে লন্ডন স্কুল অফ সেক্রেটারিজ; ব্রিলিয়ান্টমন্ট অ্যান্ড মাঙ্কি ক্লাব লন্ডন থেকে শেখেন সচিবালয়ের কাজকর্ম।[2]
১৯৪০ সালের ৯ মে[3] মহামহিম সারামাদ-ই-রাজাহাই হিন্দুস্তান রাজ রাজেন্দ্র শ্রী মহারাজাধিরাজ স্যার দ্বিতীয় সওয়াই মান সিংহ বাহাদুরের[4] সহিত তার বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের পর তিনি মহারানি গায়ত্রী দেবী নামে পরিচিতা হন।
গায়ত্রী দেবী অশ্বারোহণে বিশেষ পারদর্শিনী ছিলেন। তার একমাত্র সন্তান ইসারদার প্রাক্তন রাজা তথা জয়পুরের যুবরাজ জগৎ সিংহের জন্ম হয় ১৫ অক্টোবর, ১৯৪৯।[3] তিনি তার পিতামহের জায়গিরের অধিকার প্রাপ্ত হন এবং গায়ত্রী দেবী রাজমাতা উপাধি প্রাপ্ত হন। কারণ জয়পুরের ভবানী সিংহের সৎ-ভাই।
গায়ত্রী দেবী একবার ভোগ পত্রিকার বিশ্বের সেরা দশ সুন্দরীর তালিকার অন্তর্ভুক্ত হন।[5]
গায়ত্রী দেবী জয়পুরে নারীশিক্ষা প্রসারে একাধিক বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখনীয় মহারানি গায়ত্রী দেবী গার্লস পাবলিক স্কুল। এছাড়াও তিনি জয়পুরের মৃতপ্রায় নীল মৃৎশিল্পের একজন পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ ও স্বাধীনতালাভের পর এবং পরে ১৯৭১ সালে রাজন্য ভাতা ও রাজমর্যাদা বিলোপের পর গায়ত্রী দেবী সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৬২ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবধানে জয়লাভ করেন। ২৪৬,৫১৬টি ভোটের মধ্যে ১৯২,৯০৯টি ভোট পান, যা সেযুগে গিনেস বুক অফ রেকর্ডস-এ স্থান পায়।[6] ১৯৬৭ ও ১৯৭১ সালেও স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় গভর্নর-জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীর স্বতন্ত্র পার্টির টিকিটে লোকসভা নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন।[1]
১৯৭১ সালে রাজন্য ভাতা, মর্যাদা ও রাজকীয় উপাধিসমূহের বিলোপের পর আয়কর আইন ভঙ্গের অভিযোগে গায়ত্রী দেবীকে পাঁচ মাস তিহার জেলে বন্দী করে রাখা হয়। তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেন এবং ১৯৭৬ সালে শান্তারাম রাউয়ের সঙ্গে রচিত তার আত্মজীবনী আ প্রিন্সেস রিমেমবারস প্রকাশ করেন। ফ্র্যাঙ্কোস লিভি পরিচালিত চলচ্চিত্র মেমোয়্যার্স অফ আ হিন্দু প্রিন্সেস তারই জীবন অবলম্বনে নির্মিত।
অনেক পরে ১৯৯৯ সালে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস তাকে কোচবিহার থেকে নির্বাচনে দাঁড়াতে অনুরোধ করলেও তিনি সেই প্রস্তাবে রাজি হননি।[7]
গায়ত্রী দেবীর পিতা জিতেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর ছিলেন কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর ও মহারানি সুনীতি দেবীর দ্বিতীয় পুত্র। তার অবিবাহিত জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মহারাজা রাজরাজেন্দ্র ভূপ বাহাদুরের অকালপ্রয়াণের পর বরোদার রাজকুমারী ইন্দিরা রাজে গায়েকওয়াড়ের সঙ্গে বিবাহের কয়েক মাস পরেই ১৯১৩ সালে নভেম্বর মাসে সিংহাসনে আরোহণ করেন। গায়ত্রী দেবীর ঠাকুরমা মহারানি সুনীতি দেবী ছিলেন বিশিষ্ট ব্রাহ্ম নেতা কেশবচন্দ্র সেনের কন্যা।
ভারতের একাধিক রাজপরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ ছিলেন মহারানি গায়ত্রী দেবী। তার মাতামহ ও মাতামহী ছিলেন বরোদার মহারাজা সয়াজিরাও ও মহারানি চিমনাবাই। বৈবাহিকসূত্রে তিনি জোধপুরের মহারাজা হনুবন্ত সিংহ, দেওয়াসের মহারাজা, ত্রিপুরার মহারাজা ও দক্ষিণ ভারতের পিঠাপুরমের মহারাজার সঙ্গে আত্মীয়তা স্থাপন করেন।
তার একমাত্র পুত্র জয়পুরের যুবরাজ জগৎ সিংহ ছিলেন ইসারদার প্রাক্তন রাজা। তার পৌত্র দেবরাজ সিংহ ও পৌত্রী লালিত্য কুমারী বর্তমান।
লন্ডনে গ্যাসট্রিক সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি সেখানকার কিং এডওয়ার্ডস হসপিটালে ভর্তি হন। কিন্তু লন্ডনে একাকিত্ব বোধ করার কারণে তিনি জয়পুরে প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিমান অ্যাম্বুলেন্সে তাকে জয়পুরে নিয়ে এসে সংকোটবা দুর্লভজি মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার প্যারালিটিক ইলিয়াস ধরা পড়ে। ২০০৯ সালের ২৯ জুলাই ৯০ বছর বয়সে মহারানি গায়ত্রী দেবী পরলোকগমন করেন। উল্লেখ্য তার মৃত্যুর একদিন আগেই মারা যান লীলা নাইডু যাঁর নাম গায়ত্রী দেবীর সঙ্গেই ভোগ পত্রিকার বিশ্বের সেরা দশ সুন্দরীর তালিকায় উঠেছিল।[8][9]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.