অলঙ্কার বা গহনা একপ্রকার পরিধেয় সামগ্রী যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে সুসজ্জিত ও আকর্ষণীয় করার উদ্দেশ্যে পরিধান করা হয়। অলংকার ধাতু বা অন্য কোন উপকরণ দ্বারা তৈরী করা হয়। অনেক অলঙ্কার তৈরীতে সাধারণত মূল্যবান ধাতু ব্যবহৃত হয়।
গহনা হল প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির মধ্যে একটি - যার মধ্যে ১০০,০০০ বছরের পুরানো পুঁতিগুলি নাসারিয়াস জাতীয় শামুকের খোলস থেকে তৈরি করা হয়েছে যাকে প্রাচীনতম পরিচিত গহনা বলে মনে করা হয়। [1] গহনার মৌলিক রূপগুলি বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে পরিবর্তিত হয় তবে প্রায়শই অত্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয়; ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে গহনার সবচেয়ে সাধারণ রূপগুলি প্রাচীন কাল থেকে টিকে আছে, যখন অন্যান্য রূপ যেমন নাক বা গোড়ালির অলঙ্করণ, অন্যান্য সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এখানে অনেক কম সাধারণ।
অলঙ্কার কেনো আবশ্যিক পরিধেয় নয়। অলংকার মানুষের সাজসজ্জার মাধ্যম যা মানুষের দৈহিক সৌকর্য বৃদ্ধি করে। পৃথিবীর প্রায় সকল জাতি অলংকার ব্যবহার করে। জাতি ও সংস্কৃতি ভেদে অলংকারের গড়ন ও প্রকৃতি বিভিন্ন হয়ে থাকে। আধুনিক সভ্যতায় সোনা ও রূপার অলংকার সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় লোহার তৈরী গহনার বিশেষ কদর ছিল। বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে প্লাটিনামের গহনা তৈরীও শুরু হয়।
হীরা সহ নানা ধরনের মণি-মুক্তা যুক্ত করে গহনার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। এছাড়া প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে কৃত্রিম গহনা বা ইমিটেশান জুয়েলরীর প্রচলন হয়েছে। অলংকার মানুষের শরীরের সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে অলংকার এর প্রতি মানুষের চাহিদা সৃষ্টির আদিকাল থেকেই বিশেষ করে নারীরা অলংকার খুবই পছন্দ করে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের জন্য পৃথক পৃথক ধরনের গহনা ব্যবহার করা হয়। গহনা প্রধানত নারীর আভরণ হলেও পুরুষরাও কিছু কিছু গহনা ব্যবহার করে থাকে। যেমন আংটি নারী-বিশেষ নির্বিশেষে সমান জনপ্রিয়।ব্যাক্তির সম্পত্তি,যশ, প্রাচুর্য, ঐশ্বর্য, সামাজিক অবস্থান ও সৌন্দর্য বর্ধনে অলংকার ব্যবহার করে। অলংকার পুরুষ-নারী উভয় ব্যবহার করে। আঙুল,হাত,বাহু,নাক, ঠোঁট,কন্ঠ,কপাল,মাথা,কান,কোমর, নাভী, উরু,কাপড়ে প্রভৃতিতে অলংকারে অলংকৃত হয়।
অলংকার তৈরীতে ব্যবহৃত উপকরণ
অলংকার সোনা,রূপা, হীরা,লোহা,কাঁচ,পাথর,কাঠ,হাড়,ঝিনুক-শামুক,পাথর ও কাপড় দিয়ে তৈরী করা হয়।
ইতিহাস
প্রাচীনতম গহনাটি আসলে মানুষ (হোমো সেপিয়েন্স) দ্বারা নয় বরং ইউরোপে বসবাসকারী নিয়ান্ডারথাল দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। বিশেষত, স্পেনের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল বরাবর একটি গুহা কুয়েভা দে লস অ্যাভিওনেসে ১১৫,০০০ বছর আগে ছোট সামুদ্রিক খোসা থেকে তৈরি ছিদ্রযুক্ত পুঁতিগুলি পাওয়া গেছে। ইউরোপীয়রা হাড়, কাঠ সামুদ্রিক ঝিনুক, শামুক, পাথর ব্যবহার করে অলংকার তৈরী করেন। পরে কেনিয়াতে পাওয়া গেছে এনকাপুনে ইয়া মুটোতে, ছিদ্রযুক্ত উটপাখির ডিমের খোসা থেকে তৈরি পুঁতিগুলি ৪০,০০০ বছরেরও বেশি আগের। রাশিয়ায়, একটি পাথরের ব্রেসলেট এবং মার্বেল রিং একই বয়সের জন্য দায়ী করা হয়। [2]
মোসোপটমিয়, গ্রিক, মিশর, চীন ও ভারতে পাওয়া অলংকার নিদর্শন গুলোও অনেক প্রাচীন। খ্রিস্টিয় অব্দিগুলোতে যিশুর ক্রস তৈরী বিভিন্ন ধাতু দিয়ে যিশুর ক্রস চিহ্ন তৈরীতে ব্যবহার করা হয় এবং সেটি গলায় পরার জন্য ধাতু তৈরী চেইন ব্যবহার শুরু হয়। এসময় এসব চেইন বিয়েতে উপহার দেয়ার প্রচলন হওয়ার কথা জানা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মে তাবিজ, দেবতা ও প্রভৃতি শয়তানের হাত থেকে রক্ষায় পবিত্র চিহ্ন ব্যবহার করা হতো।
প্রায় সাত-হাজার বছর আগে তামার গহনার প্রথম চিহ্ন দেখা যায়। [3]
প্রাচীন মিশরে গহনা তৈরির প্রথম লক্ষণগুলি প্রায় ৩,০০০-৫,০০০ বছর আগের। [4]
সমসাময়িকে বিভিন্ন রাজা বাদশাহদের হাত ধরে অলংকার সাজসজ্জা ও যশ ও সাহসিকতার চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। যা বর্তমানে চলছে…
ব্যবহার
অলংকার দুই ধরনের। এক প্রকার অলংকার দৈনিক ব্যবহার করা হয়। অন্য প্রকার অলংকার বিশেষ উৎসবে-উপলক্ষে ব্যবহার করা হয়। ভারতবর্ষে বিয়ে নারীর অলংকার ব্যবহারের প্রধান আঙ্গিক।
বিভিন্ন ধরনের গহনা
আংটি
হাত আঙ্গুলে পরিধেয় গোল, ধাতব অলংকারকে আংটি বলে। আংটির সাথে দামি পাথর খচিত থাকে, যা আঙ্গুলের উপরিভাগে দেখা যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে পায়ের আঙ্গুলেও আংটি পরার রেওয়াজ আছে॥ ধন্যবাদ
কণ্ঠহার
সারা পৃথিবীতে কণ্ঠহার বা নেইকলেস নারীর অন্যতম প্রধান অলংকার। জড়োয়া কণ্ঠহার ভারী হয়ে থাকে। অন্যদিকে শিকলি বা চেইন হালকা প্রজাতির কণ্ঠহার।
কানের অলংকার
কানের অলংকার নানা রকম যার মধ্যে প্রধান হলো কানের দুল। এছাড়া রয়েছে কান পাশা। কানের অলংকারের জন্য কানের লতিতে ফুটো করা হয়। মেয়েদের ন্যায় কোন কোন জাতির পুরুষেরাও কানে অলংকার পরে থাকে।
চুড়ি
চুড়ি একধরনের গোলাকৃতির গহনা যা সাধারণত মেয়েরা হাতের কব্জিতে পরেন। চুড়ি কাচ, সোনা, রূপা এমনকি মাটি দিয়েও তৈরি হয়ে থাকে। মোটা চুড়িকে বালা নামে অভিহিত করা হয়।
টিকলী
যে অলংকার মেয়েদের চুলের সিঁথি বরাবর চিকন সোনা বা রূপার শিকলের সাহায্যে মাথার মাঝখান থেকে টেনে এনে কপালের উপর ঝোলানো হয় তাকে টিকলী বলে। ভারতীয় উপমহাদেশে টিকলী বিয়ের বউ সাজানোর জন্য একটি আবশ্যকীয় গহনা হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।
নথ
নাকের যেকোনো একপাশে ছিদ্র করে তাকে ঘিরে বৃত্তাকার যে অলঙ্কার পরা হয় তাকে নথ বলে। নথ সাধারনত বাম দিকে পরা হয় তবে অনেকে ডান দিকেও নথ পরেন।
নোলক
নারীদের পরিধেয়, নাকের নিম্নভাগে ছোট-আকৃতির গোল ধাতব বৃত্তাকার গহনাকে নোলক বলে। নোলক পরতে হলে নাকের নিচে মাঝবরাবর ছিদ্র থাকা আবশ্যক।
বিছা
বিছা হল একটি নারীর অলংকার।এটি একটি শিকলি বা চেইন যা কোমরের চারদিকে জড়িয়ে পরতে হয়।
নাভ্যাংটি বা নেভেইল রিং
নাভির ওপরের চামড়া ফুটো করে তাতে ছোট গোলাকার রিং পরলে তাকে নেভেল রিং বা নাভ্যাংটি বলা হয়।
টানা
যে এক বা একাধিক সরু শিকলি বা চেইন এর এক প্রান্ত নাকের নথ-এর এক প্রান্তে বা নোলক-এর তলার এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে আর অপর প্রান্তটি একটি চুলের কাঁটা মাধ্যমে মাথার এক পাসের চুলের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে তাকে টানা বলে।
নূপুর
পায়ের গোড়ালি ঘিরে যে ধাতব গহনা পরা হয় তাকে নূপুর বলে।
তথ্যসূত্র
আরো পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.