গনবাদ-ই কাবুস (মিনার)
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
গনবাদ-ই কাবুস বা গনবাদ-ই কাবুস মিনার (ফার্সি: برج گنبد قابوس) হল ইরানের গনবাদ-ই কাবুস শহরের একটি স্মৃতিস্তম্ভ। ২০১২ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকাভুক্ত হয়। এটি জিয়ারিদ শাসক কাবুসের (শা. ৯৭৮–১০১২), সামধি চিহ্নিত করে। তার জীবদ্দশায় ১০০৬/৭ সালে এটি নির্মিত হয়েছিল।[১] এটি একটি ৬১ মিটার (২০০ ফুট) উঁচু নলাকার সমাধি মিনার যা প্রায় ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) দূর থেকে দেখা যায়।[২][ক] এই সৌধের নামানুসারে কাবুস শহরের নামকরণ করা হয়েছে।[৪]
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান | |
---|---|
অবস্থান | গনবাদ-ই কাবুস, গনবাদ-ই কাবুস কাউন্টি, গোলেস্তন প্রদেশ, ইরান |
মানদণ্ড | সাংস্কৃতিক: (i), (ii), (iii), (iv) |
সূত্র | 1398 |
তালিকাভুক্তকরণ | ২০১২ (৩৬তম সভা) |
আয়তন | ১.৪৭৫৪ হেক্টর (৩.৬৪৬ একর) |
নিরাপদ অঞ্চল | ১৭.৮৫৫১ হেক্টর (৪৪.১২১ একর) |
স্থানাঙ্ক | ৩৭°১৫′২৮.৯″ উত্তর ৫৫°১০′৮.৪″ পূর্ব |
এটি ইরানি স্থাপত্যের একটি মাস্টারপিস হিসেবে বিবেচিত। ফরাসি বংশোদ্ভূত শিল্প ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতত্ত্ববিদ ওলেগ গ্রাবারের মতে, এটি "একটি উদ্দেশ্য (মৃত্যুর বাইরে রাজকীয় গৌরব), একটি রূপ (নলাকার টাওয়ার একটি তারকাতে রূপান্তরিত), এবং একটি একক উপাদানের (ইট) মধ্যে প্রায় নিখুঁত ভারসাম্য অর্জন করেছে"।[৫][৬] গনবাদ-ই কাবুস মিনার হল উত্তর ইরানের সবচেয়ে সুপরিচিত সমাধি মিনার এবং এটি অনেক প্রকাশনায় প্রদর্শিত হয়েছিল।[৭]
মিনারের শিলালিপির ছন্দময় গদ্য থেকে জানা যায় যে, কাবুস তার জীবদ্দশায় ১০০৬/৭ সালে মিনারটির ভিত্তি স্থাপনের আদেশ দিয়েছিলেন।[৪] তিনি ছিলেন উত্তর ইরানের ঐতিহাসিক তাবারিস্তান অঞ্চলের জিয়ারিদ রাজবংশের একজন রাজপুত্র। ১১ শতকে, অঞ্চলটি জরাথুস্ট্রবাদ ধর্ম থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিল।[৮]
ইরানি সৌর এবং ইসলামিক চন্দ্র- দুটি পঞ্জিকা শৈলীতে স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তি তারিখ দেওয়া হয়েছে।[৪][৭] স্মৃতিস্তম্ভের গোড়ায় ৯.৬৭ মিটার (৩১.৭ ফুট) অভ্যন্তরীণ ব্যাস রয়েছে।[৪] শিলা এস. ব্লেয়ারের (২০০২) মতে, ভবনের প্রবেশদ্বারে ইরানে মোকারনাস কাঠামোর (অর্থাৎ স্ট্যালাকটাইট ভল্টিং) বিকাশের কিছু প্রাচীন প্রমাণ রয়েছে।[৪] নকশার দিক থেকে, গনবাদ-ই কাবুস মিনার ইরানের কাস্পিয়ান সাগরের উপকূলে অবস্থিত অন্যান্য নলাকার সমাধি মিনারে মতো।[৪] তবে, "অসাধারণ উচ্চতার" কারণে অন্যান্য উদাহরণ থেকে গনবাদ-ই কাবুস মিনার আলাদা। এর মোচাকৃতি ছাদকে বিবেচনায় রেখে, মিনারটি পরিমাপ মাটি থেকে প্রায় ৫০ মিটার (১৬০ ফুট) উপরে আবস্থিত যাটি তার বাহ্যিক ব্যাসের তিনগুণ। শিলা এস. ব্লেয়ারের টীকায় রয়েছে:[৪]
সমাধিটি সম্পূর্ণরূপে সূক্ষ্ম মানের সেঁকা ইট দিয়ে নির্মিত যার ফ্যাকাশে হলুদ রঙ রোদের কারণে সোনালি হয়ে গেছে। সময়, জলবায়ু এবং এমনকি রুশদের দ্বারা প্রতিবেদন করা গোলাগুলির বিপর্যয় সত্ত্বেও নির্মাণের প্রযুক্তিগত গুণমান তার প্রায় নিখুঁতভাবে বেঁচে থাকার থেকে স্পষ্ট। একমাত্র অলঙ্করণে হিসেবে দুটি শিলালিপি রয়েছে যার একটি দরজার উপরে এবং ছাদের নিচে চক্রাকারভাবে মিনারটিকে ঘিরে রয়েছে। প্রতিটি চক্র দশটি প্যানেলে বিভক্ত, প্রতিটি জোড়া বাট্রেসের মধ্যে একটি সেট। (...) সাবধানে পরিকল্পিত পাঠ্যটি মিনারের আনুষ্ঠানিক বিশুদ্ধতা এবং ঊর্ধ্বমুখী উল্লম্বতার সাথে একত্রিত করে এটিকে সমস্ত ইরানি স্থাপত্যের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং স্মরণীয় স্মৃতিস্তম্ভে পরিণত করেছে।
ওলেগ গ্রাবার (১৯৭৫) লিখেছেন যে, গনবাদ-ই কাবুস মিনার "স্পষ্টভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ স্থাপত্যের সাধারণ শ্রেণীর অন্তর্গত"।[৯] উত্তর ইরানের মিনার সমাধির রূপ নিয়ে আলোচনা করার সময় (গনবাদ-ই কাবুস মিনার অন্তর্ভূক্ত), গ্রাবার বলেছিলেন যে, তারা জরাথুস্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কাঠামোর সাথে যুক্ত হতে পারে।[১০] তার মতে, জরাথুস্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কাঠামোর সংযোগ এতে "দৃঢ়ভাবে প্রস্তাবিত"। উদাহরণ হিসেবে তিনি গনবাদ-ই কাবুসের শিলালিপিতে ফার্সি সৌর পঞ্জিকার ব্যবহার এবং সেইসাথে উত্তর ইরানের অন্যান্য সমাধি মিনারে মাঝে-মাঝে মধ্য ফার্সি (পাহলভি) ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন।[১০] মেলানি মিচাইলিডিসের (২০০৯) মতে, উত্তর ইরানের মিনার সমাধিতে জরাথুষ্ট্রীয় প্রভাব "প্রকটভাবে উপস্থিত" এবং যা তাদের উচ্চতা, উদ্দেশ্য এবং আকারে দেখা যায়।[১১] তিনি যুক্তি দেন যে মিনারগুলি "সাসানিয়দের হারিয়ে যাওয়া রাজকীয় সমাধি" অনুকরণ করার জন্য জিয়ারিদ এবং বাভানডিডদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।[১২]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.