Loading AI tools
সম্প্রসারিত,বর্ধিষ্ণু সামনের দাঁত উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
গজদন্ত (ইংরেজি: Tusk) বলতে হাতির দাঁত বোঝানো হয়। ওপরের পাটির দুটি দীর্ঘ ছেদন দন্তই হাতির দাঁত নামে পরিচিত। দাঁত দুটি সাদাটে। হাতির মুখের নিচের দিক থেকে তরবারির মতো বেরিয়ে থাকে। আফ্রিকার কোন কোন হাতির দাঁতের দৈর্ঘ্য তিন-সাড়ে তিন মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।[১]
সারা পৃথিবীতেই হাতির দাতেঁর শিল্পকর্ম বিখ্যাত। প্রাচীন কাল থেকেই হাতির দাঁত বা গজদন্ত ব্যবহার করে মূর্তি, অলংকার ইত্যাদি তৈরির চল রয়েছে। প্রাচীন গ্রিক, ল্যাটিন, চীন ও ভারতীয় সাহিত্যে হাতির দাঁতের শিল্পকর্মের কথা বিবৃত আছে। ভারতবর্ষে কুষানযুগে হাতির দাঁতের তৈরি শিল্পকর্ম বেশ জনপ্রিয় ছিল। যারা এ ধরনের শিল্প তৈরি করে তাদের বলা হয় গজদন্ত শিল্পী। পশ্চিমবঙ্গের ইদিলপুর আর পূর্ববঙ্গের সিলেটে বহু গজদন্ত শিল্পীর বসবাস ছিল। এসব গজদন্ত শিল্পী তাদের শিল্পকর্মে এদেশের জনজীবনের চিত্র ফুটিয়ে তুলত। তারা হাতির দাঁত দিয়ে সিংহাসন, পালকি, মূর্তি, অশ্বারোহী সৈন্য, জীবজন্তু, রাজদরবার, দাবার ঘুঁটি, খড়ম, ছুরি, কলমদানি, পিঠ চুলকানি ইত্যাদি শৌখিন সামগ্রী তৈরি করত। কেউ বিশেষ কোনো বস্তুর জন্য ফরমায়েশ দিলে গজদন্ত শিল্পীরা তাও তৈরি করে দিত।
মধ্যযুগের প্রথমদিকে উড়িষ্যা এ শিল্পকর্মের প্রধান ব্যবসায় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। মোগল শাসকদের কাছে হাতির দাঁতের তৈরি বিলাস সামগ্রীর বেশ কদর ছিল। নানা প্রকার হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম ভারতবর্ষ থেকে বিদেশে বিশেষ করে ইউরোপে রপ্তানী হতো। ব্রিটিশ-ভারতে হাতির দাঁতের শিল্পকর্মের প্রধান বাজার ছিল ইউরোপ। ইংরেজ বণিকরা আফ্রিকা থেকে হাতির দাঁত এনে তা ভারতীয় গজদন্ত শিল্পীদের দিয়ে শৌখিন জিনিস তৈরি করে ইউরোপ পাঠিয়ে চড়া দামে বিক্রি করত।
আগের জামানায় রাজা-মহারাজা, নবাব, জমিদার তথা শাসক ও ধনীক শ্রেণীর মধ্যে হাতির দাঁতের তৈরি শিল্পকর্মের ব্যাপক ব্যবহার ছিল। তা ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। এখনো অনেক পরিবার তাদের গৃহসজ্জার জন্য হাতির দাঁতের জিনিসপত্র ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশ সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় হাতির বসবাস ছিল। সে সময় হাতির দাঁত ছিল সহজলভ্য। সে কারণে হাতির দাঁত ব্যবহার করে শিল্পসামগ্রী তৈরীর ব্যাপকচল শুরু হয়েছিল। বাংলার গজদন্ত শিল্পীদের খ্যাতি ছিল তখন জগৎজোড়া।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে হাতির দাঁতের তৈরি শিল্পকর্মের সংগ্রহ বেশ সমৃদ্ধ। এসব সামগ্রীর মধ্যে মনোমুগ্ধকর একটি শিল্পকর্মের নাম এলোকেশী। এটি হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি পূর্ণাবয়ব এক নারী মূর্তির। গোলাকার পদভূমির ওপর দণ্ডায়মান এক অর্ধনগ্ন নারীর অপূর্ব ভঙ্গিমাও এ শিল্পকর্মে প্রকাশ পেয়েছে। দীর্ঘ কেশ, আকর্ষণীয় মুখমণ্ডল, উন্নত নাক, চমৎকার ঠোঁট ও চিবুক, সুডৌল স্তন, চিকন কোমর, ভারী নিতম্ব দ্বারা বাঙালি সুন্দরী নারীর বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে এ শিল্পকর্মে অসাধারণ দক্ষতায়। তাছাড়া ডান হাতের কনুই বাম হাতের ওপর স্থাপিত এবং ডান হাতের মধ্যমা ডান গালে যুক্ত রয়েছে। এর দ্বারা সুন্দরী নারীদের অহঙ্কার এ শিল্পকর্মে তুলে ধরা হয়েছে। নারী মূর্তিটির ডান পা স্বাভাবিক থাকলেও বাম পায়ের গোড়ালি ভূমি থেকে সামান্য উঁচু। বাম পায়ের গোলাকার উন্মুক্ত উরু মূর্তিটিকে আরও আবেদনময়ী করে তুলেছে। উনিশ শতকের তৈরি এ শিল্প কর্মটির উচ্চতা ৫-৭ ইঞ্চি। এ অমূল্য নিদর্শনটির সংগ্রাহক ছিলেন বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী।[২]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.