খাপলু প্রাসাদ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
খাপলু প্রাসাদ (স্থানীয়ভাবে যাবগো খার নামে পরিচিত।[1] যার অর্থ: ছাদের উপর দুর্গ। এটি একটি পুরাতন দুর্গ এবং প্রাসাদ যা পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের গিলগিত-বালতিস্তানের খাপলুতে অবস্থিত। প্রাসাদটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য এবং পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত।[2] উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কাছাকাছি স্থানের কোনো একটি দুর্গের পরিবর্তে এই প্রাসাদটি স্থাপিত হয়। এটি খাপলুর রাজার বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
খাপলু প্রাসাদ | |
---|---|
خپلو محل | |
বিকল্প নাম | যাবগো খার |
সাধারণ তথ্য | |
ধরন | প্রাসাদ, জাদুঘর, হোটেল |
স্থাপত্য রীতি | বালতি, তিব্বতি, লাদাখি |
অবস্থান | খাপলু-১৬৮০০, ঘাঞ্চি জেলা, গিলগিত-বালতিস্তান |
দেশ | পাকিস্তান |
স্থানাঙ্ক | ৩৫°৯′৬″ উত্তর ৭৬°২০′৭″ পূর্ব |
উচ্চতা | ২,৬০০ মিটার (৮,৫০০ ফু) |
নির্মাণকাজের সমাপ্তি | ১৮৪০ |
পুনঃসংস্কার | ২০১১ |
স্বত্বাধিকারী | সেরেনা হোটেল (২০০৫–বর্তমান) |
কারিগরী বিবরণ | |
তলার সংখ্যা | ৫ |
পদক এবং পুরস্কার | ভার্জিন হলিডেস রেসপন্সিবল ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড (২০১২) ইউনেস্কো এশিয়া প্যাসিফিক হেরিটেজ অ্যাওয়ার্ডস (২০১৩) |
সংস্কারণ দল | |
পুনঃসংস্কার সংস্থা | আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার |
২০০৫ থেকে ২০১১ সালে প্রাসাদটির অসুরক্ষিত এবং অনিরাপদ অবস্থার কারণে এটি আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার নামক একটি পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় চলে যায় এবং পরবর্তীতে প্রকল্পটি প্রাসাদটির পুনঃনির্মাণ সম্পন্ন করে। উক্ত প্রকল্পটি আগা খান হিস্ট্রিক সিটিজ প্রোগ্রামের আওতাধীন। বর্তমানে প্রাসাদটি একটি হোটেল ঘর হিসেবে ব্যবহার হয়। সেরেনা হোটেল এবং বালতিস্তানের ইতিহাস, ঐতিহ্য বর্ণনাকারী একটি হোটেল এটি পরিচালনা করে।[3]
খাপলু শহরটি বালতিস্তানের পূর্বাংশে অবস্থিত এবং এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৬০০ মিটার (৮,৫০০ ফু) উপরে অবস্থিত। খাপলু হলো ঘাঞ্চি জেলার প্রশাসনিক রাজধানী। সিন্ধু নদের একটি উপনদী শ্যোক নদী, খাপলু শহরের মধ্য দিয়ে এবং লাদাখ এর প্রাচীন বাণিজ্যপথ দিয়ে বয়ে গেছে।[4] খাপলু প্রাসাদটি খাপলু শহরের উত্তরে এবং শ্যোক নদীর[5][6] দক্ষীণে কারাকোরাম অঞ্চলের উচ্চ পর্বতের সামনে অবস্থিত।[7] প্রাসাদের পিছনে অবস্থিত একটি গিরিখাতের মধ্য দিয়ে স্কার্দু জেলার পারি গ্রামে স্থানান্তরিত হওয়া যায়।[8]
কাশমিরের দর্গা আক্রমণ করার পর ১৮৪০ সালে খাপলুর যাবগো রাজা দৌলত আলি খান সরকারের দুর্গ স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন[4][9] এবং এই কারণেই তিনি খাপলু প্রাসাদ প্রতিষ্ঠা করেন। সমুদ্রের পাশ্ববর্তী অঞ্চলে বড় পাথর ডলনের মাধ্যমে প্রাসাদ তৈরির স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল। পাথর ডলন ডকসাই গ্রামে সমাপ্ত হয়েছিল এবং সেখানেই প্রাসাদটি তৈরি করা হয়।[6] প্রাথমিক দুর্গ বর্তমানে অবস্থিত প্রাসাদের পাশেই ছিল। পুরাতন দুর্গের পরিবর্তে খাপলু প্রাসাদ তৈরি করা হয়েছিল এবং তৈরির কাজ শেষ হবার পর এটি রাজকীয় বাসভবনে পরিণত হয়েছিল।[4][9] জেইন ই ডানকানের বক্তব্য অনুসারে, খাপলুর জনগণ প্রাসাদটির পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাস করতো। খাপলু প্রাসাদের সীমানার বাইরে তাদের ঘর নির্মাণের কোনো অনুমতি ছিলনা। কাশ্মীরের মহারাজা যখন খাপলু ও অন্যান্য প্রতিবেশী অঞ্চল দখল করেন এবং প্রতিবেশী অঞ্চলের শাকদের মধ্যে সংঘাতের বিরতি দেন তখন উক্ত নিয়ম (খাপলুর পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাস) বদলে গেল।[10]
১৫৯০-এর দশকে খাপলু অঞ্চলের পূর্ববর্তী দুর্গে পানি পরিচালনা বন্ধ করার মাধ্যমে খাপলু বিজয়ের পর মাকপন বংশের মুরাদ খান তথা বালতিস্তান শাসক উক্ত দুর্গটি দখল করে নেন।[11] খাপলুর যাবগো বংশের ৬২তম শাসক রহিম খানের আত্মসমর্পণের পরে মুরাদ খান ৩ মাস ধরে দুর্গটি অবরোধ করে রাখে। ১৬৬০ এবং ১৬৭৪ সালে পুনরায় প্রাসাদটি আক্রমণকারীদের পদানত হয়।[7]
যাবগো উত্তরপুরুষরা ১৯৭২ সালে পূর্বের রাজার শাসন পতনের পর আবার তাদের রাজ্যে বসবাস শুরু করেন। শেষ খাপলু রাজা ছিলেন ফতেহ আলী খান যিনি ১৯৮৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।[12]
প্রাসাদটি বালতিস্তান এবং কাশ্মীরের কর্মীদের সাহায্যে তৈরি হয়েছিল।[6] একাধিক অঞ্চলের সীমান্তে অবস্থানের কারণে প্রাসাদটি তিব্বত, কাশ্মীর, লাদাখ, বালতিস্তান, মধ্য এশিয়াকে প্রভাবিত করছে।[13][14]
প্রাসাদ ভবনটি কাঠ, কাদার ইট, কাদামাটি এবং হামানদিস্তা দিয়ে গঠিত চারতলা বিশিষ্ট ভবন।[6] যাবগো বংশের রাজা হাতিম খান বালতিস্তান অধিকাংশ অঞ্চল জয়ের পর স্কার্দুর প্রাসাদ প্রবেশের দুর্গে একটি কাঠের প্রবেশদ্বার তৈরি করেছিলেন।[15] মুল প্রবেশদ্বারের প্যাসেজ যা পূর্বে স্থিতীশীল ছিল, প্রাসাদটির উঠানে নিয়ে যায়। উঠানটি যাবগো রাজার সময়ে গানের অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা হতো। রাজবাড়ির কাঠের ছাদ বাটালি এবং নকশা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছল। কোনো খিল ব্যবহার করা হয়নি।[12] সবচেয়ে উপরের তলার একটি হল লেইজার কক্ষ হিসেবে ব্যবহার হতো এবং সেখান থেকে কারোরাম পর্বত অঞ্চল এবং আশেপাশের বন্যভূমি দেখা যেত।[16] এছাড়াও প্রাসাদটিতে রাজকীয় মিটিং রুম (ছোগরাফটাল), রাজকীয় ঝুল-বারান্দা (ছোগজারোখ), রাজকন্যার সাজঘর (লাইনাখাং) এবং রাণির কক্ষ সহ অনেক লক্ষ্য করার মতো কক্ষ রয়েছে।[6]
প্রাসাদের নতুন সংস্কারের পর বাসযোগ্য অঞ্চলের একাংশ সেরেনা হোটেল এবং ৩৫ টি স্থানীয় পরিবারের আওতায় হোটেল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। হোটেলটির ২১ টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি প্রাসাদ ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থিত এবং এসব কক্ষের আয়ের ৭০ শতাংশ ব্যয় করা হয় খাপলু অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য।[5][17] অন্যান্য অঞ্চলগুলো জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।[3]
খাপলু প্রাসাদ হলো বালতিস্তান দ্বিতীয় প্রাসাদ যা আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার দ্বারা পুনঃসংস্কার করা হয়েছে।[18] প্রাসাদটির পুনঃনির্মাণ কাজ ২০০৫ সালে শুরু হয়েছিল এবং শেষ হয় ২০১১ সালে। প্রকল্পটি নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বারা ইসলামাবাদে অবস্থিত নরওয়ের দূতাবাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়।[5] দুর্গের অভ্যন্তরীণ বালতি সংস্কৃতি প্রদর্শনের জন্য ইউএসএইড সাহায্য করেছিল। প্রদর্শন কেন্দ্রটি প্রাসাদের ৩ ভাগের ২ ভাগ জুড়ে আছে। প্রাসাদ পুনঃসংস্কারের কাজ ৪০০ স্থানীয় পরিবার এবং কর্মচারীদের সাহায্যে এবং কর্মোদ্যোগে সম্পন্ন হয়। জরিপটি পুনঃসংস্কার স্থানের চারপাশের অঞ্চলে করা হয়ছিল। ২০০৫ সালে এই জরিপ শুরু হয়। জরিপ করার জন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছিল। জরিপটি প্রাসাদটির জরজীর্ণ একটি অংশের আদি অবস্থা খুঁজতে সাহায্য করেছিল।[19] ভেনিস চাটারের স্ট্যান্ডার্ডস ফর রিস্টোরেশনের মাধ্যমে পুনঃসংস্কার প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছিল।[19][20] প্রাসাদটি পুনঃনির্মাণের জন্য যেসব জিনিস ব্যবহার হয়েছিল সেসবের মূল্য ছিল ৩০ মিলিয়ন রূপি এবং সকল শ্রমিকের মোট মজুরির পরিমাণ ছিল ২৫ মিলিয়ন রূপি।[6]
খাপলু প্রাসাদের পুনঃসংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজটির কারণে অর্থনৈতিক এবং স্থানীয় অঞ্চলের উপর প্রভাব ভার্জিন হলিডেজ দ্বারা প্রশংসিত হয়।[21][22] প্রাসাদটি ২০১২ সালে 'দারিদ্র বিমোচন' বিভাগে ক্যাটাগরিতে ভার্জিন হলিডেজ রেসপনসিবল ট্যুরিজম পুরস্কার পায়।[5][14] ২০১৩ সালে প্রাসাদটি ভারতের লাল চিমনি কম্পাউন্ড এবং আফগানিস্তানের দা গ্রেট সেরাইয়ের[23] সাথে ইউনেস্কো এশিয়া প্যাসিফিক হেরিটেজ অ্যাওয়ার্ডস স্বীকৃতি লাভ করে।[24]
বিখ্যাত ধারাবাহিক নাটক দায়ার-এ-দিল খাপলু দুর্গতেই করা হয়েছিল।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.