Loading AI tools
ঢাকার প্রথম নবাব এবং ঢাকার নবাব পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
নবাব খাজা আলীমুল্লাহ ছিলেন ঢাকার প্রথম নবাব এবং ঢাকা নবাব পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি খাজা আহসানউল্লাহর ছেলে, মহা ধনবান বণিক খাজা হাফিজুল্লাহ কাশ্মীরীর ভ্রাতুষ্পুত্র ও উত্তরাধিকারী এবং ব্রিটিশ রাজ দ্বারা স্বীকৃত ঢাকার প্রথম নবাব খাজা আবদুল গনি এর পিতা ছিলেন।
নবাব খাজা আলীমুল্লাহ | |
---|---|
ঢাকার প্রথম নবাব | |
রাজত্ব | ১৮৪৩-১৮৪৬ |
পূর্বসূরি | খাজা হাফিজুল্লাহ (খাজা জমিদার হিসেবে) |
উত্তরসূরি | নবাব খাজা আবদুল গনি (ঢাকার নবাব হিসেবে) |
জন্ম | ? বেগম বাজার, ঢাকা, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ) |
মৃত্যু | ২৪ আগস্ট ১৮৫৪ ঢাকা, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ) |
সমাধি | বেগম বাজার, ঢাকা |
দাম্পত্য সঙ্গী | জিনাত বেগম |
প্রাসাদ | ঢাকার নবাব পরিবার |
পিতা | খাজা আহসানুল্লাহ সিনিয়র |
খাজাদের পূর্বপুরুষরা কাশ্মীরে স্বর্ণরেণু এবং চামড়ার ব্যবসায়ী ছিলেন বলে জানা যায়। ঢাকা নবাবী জমিদারীর প্রথম প্রতিষ্ঠাতা হলেন মৌলভী খাজা হাফিজুল্লাহ কাশ্মীরি, তিনি পারিবারিক ঐতিহ্যকে বহন করেছেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে নিজের ভাগ্য অর্জন করেছেন। চামড়া এবং লবণ তার ব্যবসায়ের প্রধান পণ্য ছিল। ঢাকার ইউরোপীয় বণিকদের সহযোগিতায় তিনি মুদ্রণশিল্প, চামড়া, লবণ এবং মশলার এক সচ্ছল ব্যবসা গড়ে তুলেছিলেন।
১৭৯৫ সালে আহসানুল্লাহ(হাফিজুল্লাহর ভাই এবং আলীমুল্লাহ'র পিতা)-এর মৃত্যুর পরে হাফিজুল্লাহ আলীমুল্লাহকে লালন পালন করেন এবং তাকে জমিদারী পরিচালক হিসেবে তৈরী করেন।
আলীমুল্লাহ হাফিজুল্লাহর ব্যবসায় বড় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আলীমুল্লাহ ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশের অঞ্চলের পাশাপাশি বরিশাল জেলা, খুলনা জেলা, ময়মনসিংহ এবং ত্রিপুরায় বিস্তৃত জমি অধিগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একটি মহাজনী ব্যবসা পরিচালনা করেছিলেন এবং ঢাকা ব্যাংকের অন্যতম প্রধান ভাগীদার এবং পরিচালক ছিলেন।
এই সময়ে, বাংলার সর্বত্র স্থায়ী বন্দোবস্ত আইনের অধীনে জমিদারী সম্পত্তির মালিকদের সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় চলছিল। হাফিজুল্লাহ বরিশালে জমিদারী এবং নীল কারখানা কিনেছিলেন। সেই ক্রয়ের মধ্যে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার (বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা) আতিয়া পরগনা এবং বাকেরগঞ্জ সুন্দরবনের আইলা ফুলঝুরিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
হাফিজুল্লাহর মৃত্যুর পরে তাঁর একমাত্র উত্তরাধিকারী আলীমুল্লাহর উপর তাঁর সম্পত্তির ভার ন্যস্ত হয়। তাঁর অধিগ্রহণকৃত জমিজমা এবং সম্পত্তি তার চাচার জমিদারীর সাথে যুক্ত হয়ে ঐক্যবদ্ধ জমিদারীকে এই প্রদেশের বৃহত্তম জমিদারীতে পরিণত করেছিল।
আলীমুল্লাহ তার মৃত্যুর (১৮৫৪) পূর্বে জমিদারীর সমন্বিত অবস্থার জন্য একটি ওয়াকফ (অন্বিতকরণ) তৈরি করেছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি তার সমস্ত সম্পত্তিকে এক ও অবিচ্ছেদ্য পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত করেছিলেন। সম্পত্তিটি যৌথভাবে একটি মুতাওয়াল্লি (পরিচালক) দ্বারা পরিচালিত হবে, তার দ্বিতীয় পুত্র খাজা আবদুল গনি মিয়ার উপর এ দায়িত্ব দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। এই পদক্ষেপটি উপ-বিভাজন এবং বিভাজন থেকে খাজা জমিদারীকে রক্ষা করেছে যেমনটা অন্যান্য জমিদারীসমূহের ক্ষেত্রে ঘটেছে।
এটি জমিদারী এবং পরিবারের অন্যান্য সম্পত্তি ও সদস্যদের প্রতিনিধি এবং একক মুখপাত্র হিসাবে পরিচালনার জন্য মুতাওয়াল্লিকে ক্ষমতা দিয়েছে। তিনি ওয়াকফনামা (ওয়াকফের দলিল) অনুসারে পৃথক ভাতা আকারে পারিবারিক উপার্জন বিতরণ করেছিলেন।
শহরের সম্মিলিত কার্যক্রমে অংশ নেওয়া যেমন লালবাগ দুর্গ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ইত্যাদির মাধ্যমে নবাব আলীমুল্লাহ ঢাকা পৌর পরিষদে অংশ নেন। তিনি নিঃস্ব মানুষের কল্যাণে টাঙ্গাইলের আতিয়া পরগনায় তার সম্পত্তির একটি ওয়াকফ তৈরি করেছিলেন।
১৮৪৩ সালে ঢাকার শেষ নায়েব নাজিম গাজীউদ্দীন হায়দারের মৃত্যুর পর, আলীমুল্লাহ শিয়াদের কেন্দ্রীয় উৎসব মুহররমের সমস্ত ব্যয় বহন করেন এবং সরকার কর্তৃক ঢাকায় শিয়াদের তীর্থস্থান হোসেনি দালানের মুতোয়াল্লি হিসেবে নিযুক্ত হন।
ইউরেশীয়া এবং ইউরোপীয় ব্যবসায়িক অংশীদারদের সাথে দীর্ঘ সহযোগিতার মাধ্যমে আলীমুল্লাহ তাদের জীবনধারা এবং অভ্যাস দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য তাগড়া ঘোড়া কিনেছিলেন এবং একটি আস্তাবল নির্মাণ করেন। তিনি রমনা রেসকোর্স এবং জিমখানা ক্লাব স্থাপন করে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেন।
খেলাধুলার পাশাপাশি, জহরতের প্রতিও আলীমুল্লাহর আগ্রহ ছিল। তিনি এক সরকার নিলামে বিখ্যাত হীরা দরিয়া-ই-নূর কিনেছিলেন। তিনি নায়েব নাজিম গাজীউদ্দিন হায়দারের বাড়ির অনেক অনুপম জহরত কিনেছিলেন, যখন গাজীউদ্দিনের অনৈতিক ক্রিয়াকলাপের অভিযোগে ইংরেজ সরকার তার ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে ব্যাপকভাবে ঋণী হয়েছিলেন। আলীমুল্লাহ খাজা পরিবারকে নাচ, সঙ্গীত এবং মুশাইরহ (সাহিত্য সম্মেলন) পরিচয় করিয়ে দেন।
ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশের জমি অধিগ্রহণের অংশ হিসেবে ১৮৩০ সালে, আলীমুল্লাহ বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে কুমারটুলীতে অবস্থিত ফরাসী বাণিজ্যকুঠি কিনেছিলেন। ফরাসীরা এটি কিনেছিলো মতিউল্লাহর নিকট হতে যার বাবা শেখ এনায়েতুল্লাহ মুঘল আমলে বরিশালের জামালপুর পরগণার জমিদার ছিলেন। মতিউল্লাহ এই ভবনটিকে তার রঙ মহল (প্রমোদ ভবন) হিসেবে নির্মাণ করেন। আলীমুল্লাহ এই বাণিজ্যকুঠিকে পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের পর তার বাসভবনে রূপান্তরিত করেন। এই ছোট প্রাসাদ পরবর্তীতে ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ এবং কাছারী (প্রশাসনিক কার্যালয়)- আহসান মঞ্জিলের কেন্দ্র হয়ে উঠে। বর্তমানে এটি একটি জাতীয় ঐতিহ্য জাদুঘর।
বাইগুনবাড়ির শিকারকানন সাভারের বিরলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর মৌজায় অবস্থিত ঢাকার নবাবদের একটি শিকার ও প্রমোদ কানন। নবাব আলীমুল্লাহর সময় এ শিকার কাননটির কাজ শুরু হলেও নবাব আবদুল গণির সময়েই তা পূর্ণতা পায়।নবাব আলীমুল্লাহ সাদুল্লাপুরের বিস্তৃত বনভূমিকে অভয়ারণ্য বলে ঘোষণা করেন এবং শিকার কাননের যাত্রা শুরু করেন (যা সম্পূর্ণ করে খাজা আবদুল গণি)।এ শিকার কাননে দেশ-বিদেশ থেকে উন্নত জাতের হরিণ, ময়ূর, বনমোরগ, তিতির, খরগোস প্রভৃতি পশুপাখি এনে ঢাকার নবাবগণ সংরক্ষিত বনে ছেড়ে দিয়ে তাদের বংশ বিস্তারের ব্যবস্থা করতেন। শিকারযোগ্য শুকর এবং বিভিন্ন প্রকারের পাখি বন হ্রদের তীরে বসবাস করতো। বিভিন্ন সময়ে নবাবগণ উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সেখানে নিয়ে শিকারের আনন্দ উপভোগ করাতেন। ১৮৯৫ সাল নাগাদ, নবাব ও তার অতিথিদের জন্য একচেটিয়া শিকার স্থল হওয়ার পাশাপাশি এলাকাটি শিকারীদের জন্য আকর্ষণ হয়ে ওঠে।
১৮৫২ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ সরকারের তরফ থেকে হ্যামিল্টন ও কলকাতা কোম্পানী কর্তৃক নিলাম প্রকাশিত হওয়ার সময় আলীমুল্লাহ ৭৫ হাজার রুপি দিয়ে দরিয়া-ই-নূর [আলোর সমুদ্র; ফার্সি: دريا (দরিয়া মানে সমুদ্র), ফার্সি: نور (নুর, মানে আলো)] কিনেছিলেন। ১৮৫০ সালে রাণী ভিক্টোরিয়ার সম্মানে আয়োজিত হাইড পার্কের জমকালো প্রদর্শনীতে এ হীরাটি, আরেকটি বিখ্যাত ভারতীয় হীরক কোহ-ই-নূর (আলোর পর্বত) এর সাথে প্রদর্শিত হয়েছিল। প্রদর্শনীতে এটি প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় দরিয়া-ই-নূরকে নিলামে বিক্রি করার জন্য ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
২৬ ক্যারেট (৫.২ গ্রাম) আয়তন টেবিল আকৃতির এই হীরাটি বাংলাদেশে বৃহত্তম এবং সবচেয়ে মূল্যবান রত্নপাথর। ধারণা করা হয় যে, কোহিনূর হীরার মত এ হীরাটিও একটি দক্ষিণ ভারতীয় খনি হতে উত্তোলন করা হয়েছে। ঢাকার নবাবগণ দ্বারা ব্যবহৃত এ হীরা একটি সোনার তাগার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, যার চারপাশে দশটি ৫-ক্যারেটের (১ গ্রাম) ডিম্বাকৃতির ছোট হীরা রয়েছে। নবাবরা এটি পাগড়ির উপর একটি অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহার করতেন। এটি এখন সোনালী ব্যাংকের কোষাগারে সংরক্ষিত আছে।
১৮৪০ সালে খাজা আলীমুল্লাহ সুজাতপুর এলাকায় আরাতুন নামক আর্মেনীয় ব্যবসায়ী ব্রিটিশ বিচারপতি গ্রিফিথ কুক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দুটি বাগানবাড়ি কিনেছিলেন। তিনি ক্রয়কৃত এলাকাটিকে "শাহবাগ" (শাহ-এর বাগান বা রাজার বাগান) নামকরণ করেন এবং মুঘল আমলে বাগ-এ-বাদশাহী (বাদশাহ'র বাগান) হিসেবে পরিচিত অঞ্চলটির জাঁকজমক ফিরিয়ে আনার একটি প্রকল্প শুরু করেন। এছাড়াও তিনি নূরখান বাজারের পার্শ্বস্থ বাগানবাড়ি এবং সুজাতপুর প্রাসাদের মধ্যে অবস্থিত রমনা নামে পরিচিত, বিশাল তৃণভূমির অধিকাংশই ক্রয় করেন যা বর্তমানে রমনা উদ্যান নামে পরিচিত।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.