Loading AI tools
উদ্ভিদ কোষের ঝিল্লিবদ্ধ অঙ্গানু উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কোষ গহ্বর হলো ঝিল্লিবদ্ধ একটি অঙ্গাণু যা উদ্ভিদ ও ফাংগাল কোষে পাওয়া যায়। এছাড়াও কিছু প্রোটিস্ট, প্রাণীকোষ[1] ও ব্যাকটেরিয়া কোষেও এ অঙ্গাণু পাওয়া যায়।[2] কোষ গহ্বর মূলত পানিপূর্ণ বদ্ধ একটি স্থান যা দ্রবীভূত এনজাইমসহ বিভিন্ন জৈব ও অজৈব অণুকে ধারণ করে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে এই গহ্বরে দ্রবীভূত কঠিন অংশও থাকতে পারে। কয়েকটি ঝিল্লিবদ্ধ অঙ্গাণু একীভূত হয়ে এই গহ্বর গঠন করে এবং কার্যতই এরা বড় আকারের হয়।[3] এই অঙ্গাণুটির কোনো নির্দিষ্ট আকার বা আকৃতি নেই। এর গঠন কোষের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
বিশেষত কোন ধরনের কোষে উপস্থিত তার ভিত্তিতে কোষ গহ্বরের গঠন ও কাজে বিভিন্নতা দেখা যায়। প্রাণি ও ব্যাকটেরিয়া এর তুলনায় উদ্ভিদ, ফানজাই ও কিছু প্রোটিস্টদের কোষে এই গহ্বেরের প্রাধান্য বেশি দেখা যায়। সাধারনত কোষ গহ্বরের কাজ হলো:
কোষ গহ্বর স্বভোজীদের ক্ষেত্রেও একটি বড় ভূমিকা পালন করে। যা জৈব জীবাণু (উৎপাদন) এবং বিভিন্ন জীবের কোষের গঠন ও বিভিন্ন পদার্থের অবক্ষয়ের মধ্যে সমতা রক্ষা করে। এছাড়াও এরা লাইসিসে সাহায্য করে এবং কোষের মধ্যে ভুলভাবে তৈরী হওয়া প্রোটিনকে পুনর্ব্যবহারে সাহায্য করে। থমাস বলার ও অন্যরা প্রস্তাব দেন যে, কোষ গহ্বর কোষে আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে।[6] রবার্ট বি.মেলারের মতে, অঙ্গ-নির্দিষ্ট গঠনসমূহ মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়াদেরকে স্থান দিতে ভূমিকা পালন করে। প্রোটিস্টদের ক্ষেত্রে, কোষ গহ্বর হলো খাদ্য সঞ্চয় করার অতিরিক্ত জায়গা, যা অঙ্গাণু দ্বারা শোষিত হয়েছে এবং এটি কোষের পরিপাক ও বর্জ্য নিষ্কাষণ ব্যবস্থায় সহায়তা করে।[7]
সম্ভবত কোষ গহ্বর নিজেই কয়েকবার বিবর্ধিত হয়, এমনকি ভিরিডিপ্ল্যান্টেও।[8]
সংকুচিত কোষ গহ্বর (তারা) সর্বপ্রথম প্রোটোজোয়াতে পর্যবেক্ষণ করেন বিজ্ঞানী স্প্যালানজানি (১৭৭৬), যদিও এটাকে তিনি ভুলবশত শ্বসন অঙ্গাণু মনে করেন। দুজার্ডিন (১৮৪১) এই "তারাগুলোকে" কোষ গহ্বর নামকরণ করেন। কোষের প্রোটোপ্লাজমের বাকি অংশ থেকে আলাদা করতে ১৮৪২ সালে শ্লেইডেন উদ্ভিদ কোষের ক্ষেত্রে এই শব্দটি ব্যবহার করেন।[9][10][11][12]
১৮৮৫ সালে, ডি ভ্রাইস কোষ গহ্বরের পর্দাকে টনোপ্লাস্ট নামকরণ করেন।[13]
বড় কোষ গহ্বর ফিলামেন্টাসের তিনটি গণ-সালফার ব্যাকটরিয়া,থিওপ্লোকা,বেগিগিয়াটোয়া ও থিওমারগারিটা তে পাওয়া যা্য়। এই গণের ক্ষেত্রে কোষের সাইটোসোল অত্যন্ত হ্রাস পায় ও কোষ গহ্বর কোষের প্রায় ৪০-৯৮% জায়গা দখল করে থাকে।[14] কোষ গহ্বরে নাইট্রেট আয়নের উচ্চ ঘনত্বের কারণে একে সঞ্চয়ী অঙ্গাণু মনে করা হয়।[2]
গ্যাসীয় ভেসিকলগুলো যা গ্যাসীয় কোষ গহ্বর নামেও পরিচিত, হলো ক্ষুদ্র গহ্বর যা গ্যাসের জন্য অবাধে প্রবেশযোগ্য।[15] সায়ানো ব্যাকটেরিয়ার কিছু প্রজাতিতেও এগুলো বিদ্যমান। এগুলো প্লবতা রক্ষায় সহায়তা করে।
অধিকাংশ পরিণত উদ্ভিদ কোষেই একটি বড় কোষ গহ্বর উপস্থিত যা কোষের প্রায় ৩০% এরও বেশি জায়গা দখল করে থাকে এবং বিভিন্ন কোষের গঠন অনুযায়ী শর্তসাপেক্ষে এটি কোষের ৮০% জায়গাও দখল করতে পারে। সাইটোপ্লাজমের কিছু শাখা প্রায়শই কোষ গহ্বরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।[16]
কোষ গহ্বরকে আবৃতকারী পর্দাটির নাম টনোপ্লাস্ট (শব্দোৎপত্তি- গ্রীক টনো (অস)+ও= প্রসারিত করা, টানা, টান+কোম্ব। গ্রীক প্লাস্টস=গঠন। এটি কোষীয় তরল দ্বারা পূর্ণ। এই পর্দাকে গহ্বরীয় পর্দাও বলা হয়। টনোপ্লাস্ট হলো সাইটোপ্লাজমিক পর্দা, যা কোষ গহ্বরকে বেষ্টন করে থাকে। এই পর্দাটি গহ্বরের অভ্যন্তরীণ বস্তুকে সাইটোপ্লাজম হতে পৃথক রাখে। পর্দা হিসেবে এটি কোষের চারদিকের আয়নের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্ষতিকর পদার্থসমূহকে আলাদা রাখে।[17]
কোষের সাইটোসোল হতে গহ্বরে প্রোটন স্থানান্তরের মাধ্যমে সাইটোপ্লাজমিক pH এর সমতা রক্ষার পাশাপাশি এটি কোষাভ্যন্তরকে আরও অম্লীয় করে তোলে, যা প্রোটন মোটিভ ফোর্স তৈরী করে। যার ফলে কোষ কোষীয় পুষ্টি উপাদানগুলো গহ্বরের ভেতরে বা বাইরে পরিবহন করতে পারে। কোষের pH এর মাত্রা কমানোর মাধ্যমে কোষ গহ্বর ডিগ্রেডেটিভ এনজাইমগুলোকে কাজ করতে সাহায্য করে। যদিও একক ও বড় আকারের কোষ গহ্বরই সচরাচর দেখা যায়, তবে এর সংখ্যা ও আকার কোষের বিভিন্ন টিস্যু ও বিকাশের বিভিন্ন স্তরের উপরে নির্ভর করে। উদাহরনস্বরূপ- মেরিস্টেম কোষের বিকাশকালে এতে ছোট ছোট উপ-কোষ গহ্বর বিদ্যমান থাকে। ভাস্কুলার ক্যাম্বিয়ামের কোষগুলোতে শীতকালে ছোট আকারের অনেকগুলো ও গ্রীষ্মকালে বড় আকারের একটি গহ্বর বিদ্যমান থাকে।
সঞ্চয় করা ছাড়াও কোষ গহ্বরের প্রধান কাজ হল কোষ প্রাচীরের বিপরীতো টারগার চাপ বজায় রাখা। টনোপ্লাস্টে প্রাপ্ত প্রোটিনসমূহ(অ্যাকাপরিন) সক্রিয় পরিবহনের মাধ্যমে কোষএর ভেতরে ও বাইরে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। যা গহ্বরের অভ্যন্তরের ভেতরে ও বাইরে পটাশিয়াম (k+) আয়নগুলি পাম্প করে। অসমোসিসের কারণে পানি ব্যাপন প্রক্রিযায় কোষে ছড়িয় যায়, ফলে কোষ প্রাচীরের উপরে চাপ পড়ে। যদি কোষ থেকে অধিক পানি বের হওয়ায় টাএগার চাপ হ্রাস পায়, তাহলে কোষটি প্লাজমোলাইজ হয়ে যাবে। কোষ গহ্বর দ্বারা প্রয়োগ করা টারগার চাপ কোষএর প্রসা্রনের জন্যও প্রয়োজন, কারণ বিস্তৃতির সময় কোষ প্রাচীর কিছুটা হ্রাস পায়। কোষ গহ্বর থেকে আসা চাপের ফলে কম দৃঢ় প্রাচীরগুলো প্রসারিত হয়। কোষ গহ্বর দ্বারা প্রয়োগকৃত টারগার চাপ কোষকে খাড়াভাবে দাঁড়াতেও প্রয়োজন। কেন্দ্রস্থ কোষ গহ্বরের আরেকটি কাজ হল এটি কোষএর সাইটোপ্লাজমের সব বস্তুকে ঠেলে কোষীয় পর্দার কাছে নিয়ে যায়, ফলে ক্লোরোপ্লাস্টগুলো আলোর কাছাকাছি থাতে পারে। অধিকাংশ উদ্ভিদই কোষ গহ্বরে রাসায়নিয়া পদার্থ সঞ্চয় করে যা সাইটোসোলের রাসায়নিকের সাথে বিক্রিয়া করে। যদি কোষ ভেঙে যায়, উদাহরণস্বরূপ তৃণভোজী দ্বারা, তখন এই রাসায়নিকদ্বয় মিলে বিষাক্ত রাসায়নিক তৈরি করে। রসুনে অ্যালিন ও অ্যালিনেজ এনজাইম সাধারনত আলাদাই থাকে কিন্তু কোষ গহ্বর ভেঙে গেলে অ্যালিসিন তৈরি করে। এই ধরনেরই বিক্রিয়াই পেঁয়াজ কাটলে সিন-প্রোপানথিয়াল-এস-অক্সাইড তৈরির জন্য দায়ী।
ফানজাই কোষের কোষ গহ্বরসমূহ উদ্ভিদ কোষের মতোই ভূমিকা পালন করে থাকে এবং এক্ষেত্রে প্রতিটি কোষে একের অধিক কোষ গহ্বর থাকতে পারে। ঈস্ট কোষের কোষ গহ্বর এমন একটি গঠন যা খুব দ্রুত নিজের রূপ পরিবর্তন করতে পারে। এরা বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত যথাক্রমে কোষের pH এর হোমিওস্টেসিস ও আয়ন ঘনত্ব, অসমোরেগুলেশন, অ্যামাইনো এসিড সঞ্চয়, পলিফসফেট ও এর অবনমনের কাজ। বিষাক্ত আয়ন যেমন-স্ট্রংটিয়াম ( Sr2+), কোবাল্ট (II)(Co2+) এবং সীসা (II) (Pb2+) গুলোকে কোষের অন্যান্য অংশ থেকে আলাদা রাখতে কোষ গহ্বরে পরিবহন করা হয়।[18]
প্রাণীকাষে, কোষ গহ্বর সচরাচর অধীনস্থ কাজ সম্পাদন করে, এক্সোসাইটোসিস ও এন্ডোসাইটোসিসের মতো বড় প্রক্রিয়ায় এরা সাহায্য করে থাকে।
প্রাণীকোষের কোষ গহ্বর উদ্ভিদকোষের কোষ গহ্বরের চেয়ে ছোট হলেও সংখ্যায় তাদের আধিক্য দেখা যায়।[8] এমন অনেক প্রাণীকোষ আছে যাদের কোনো কোষ গহ্বর নেই।[19]
এক্সোসাইটোসিস হলো প্রোটিন ও লিপিড অণুকে কোষ থেকে বাইরে বের করার প্রক্রিয়া। এই বস্তুগুলো কোষ পর্দা দ্বারা পরিবাহিত হয়ে কোষের বহিরাংশে যাবার আগে, গলজি বস্তুর সিক্রেটরি গ্রানিউল দ্বারা শোষিত হয়। এই অর্থে, কোষ গহ্বর শুধুমাত্রই কিছু নির্দিষ্ট প্রোটিন ও লিপিড অণু কোষের বহিরাংশে যাবার আগে রাখা, পরিবহন ও নিষ্কাশনের জন্য সংরক্ষণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
এন্ডোসাইটোসিস হলো এক্সোসাইটোসিসের বিপরীত প্রক্রিয়া ও কিছু নির্দিষ্টভাবেই এটি সংগঠিত হতে পারে। ফ্যাগোসাইটোসিস (কোষ ভক্ষণ) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া, মৃত টিস্যু অথবা মাইক্রোস্কোপিক বস্তুকে কোষ দ্বারা ভক্ষণ করা। এই বস্তু কোষ পর্দার সংস্পর্শে আসার পর একে আক্রমণ করে। যখন এই ইনভেজিনেশন প্রক্রিয়া শেষ হয়, কোষ পর্দা অক্ষতাবস্থায় থাকে ও কোষ গহ্বর পর্দায় আবদ্ধ অবস্থায় ভক্ষিত বস্তুটি পড়ে থাকে। পিনোসাইটোসিস (কোষ পান) মূলত একই প্রক্রিয়া, এদের মধ্যে পার্থক্য হলো যে, এতে পরিপাককৃত বস্তু দ্রবনে থাকে ও মাইক্রোস্কোপ দ্বারা একে দেখা যায় না।[20] ফ্যাগোসাইটোসিস ও পিনোসাইটোসিস উভয়ই লাইসোজোমের সহায়তায় সম্পন্ন হওয়া প্রক্রিয়া, যা ভক্ষিত বস্তুর ভাঙন সম্পূর্ণ করে।[21]
স্যালমোনেল্লা কয়েকটি স্তন্যপায়ী প্রজাতি দ্বারা ভক্ষিত হবার পরেও বাঁচতে ও বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।[22]
হিস্টোপ্যাথলজিতে, ভ্যাকুওলাইজেশন হলো কোষের মধ্যে বা কোষ সংলগ্ন অংশে, কোষ গহ্বর বা এর ন্যায় গঠন তৈরী করা। এটি রোগের একটি অস্পষ্ট লক্ষণ।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.