![cover image](https://wikiwandv2-19431.kxcdn.com/_next/image?url=https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/2/2d/SPDC_figure.png/640px-SPDC_figure.png&w=640&q=50)
কোয়ান্টাম বিজড়ন
তাৎপর্যপূর্ণ দূরত্বে পৃথকীকৃত কোয়ান্টাম কণাসমূহের মধ্যে পরিমাপের সহসম্পর্ক / From Wikipedia, the free encyclopedia
কোয়ান্টাম বিজড়ন (ইংরেজি: Quantum entanglement) হল এমন একটি ভৌত ঘটনা যেখানে একাধিক কণার একটি সমবায় এমনভাবে উৎপন্ন হয়, এবং যেখানে কণাগুলি এমনভাবে পরস্পরের সঙ্গে আন্তঃক্রিয়া সম্পাদন করে কিংবা স্থানিক নৈকট্য ভাগাভাগি করে, যাতে যেকোনও একটি কণার কোয়ান্টাম অবস্থা অন্য কণাগুলির সাপেক্ষে স্বাধীনভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না, এবং তার পরিবর্তে সম্পূর্ণ সমবায়টির কোয়ান্টাম অবস্থা একত্রে ব্যাখা করতে হয়। কণাগুলি পরস্পরের থেকে অতিবৃহৎ দূরত্বে অবস্থান করলেও এইরূপ বিজড়িত অবস্থা বজায় থাকে। কোয়ান্টাম বিজড়নের বিষয়টি চিরায়ত ও কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের মধ্যে অসমতার কেন্দ্রে অবস্থিত। অর্থাৎ বিজড়ন হল কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের একান্তই নিজস্ব একটি মৌলিক ধর্ম, যেটি চিরায়ত বলবিজ্ঞানে বিদ্যমান নয়।
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/2/2d/SPDC_figure.png/640px-SPDC_figure.png)
বিজড়িত কণাসমূহের অবস্থান, ভরবেগ, স্পিন, মেরুকরণ (পোলারাইজেশন) ইত্যাদি ভৌত ধর্মগুলি পরিমাপ করলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঐ পরিমাপকৃত মানগুলিকে একে অপরের সাথে সম্পূর্ণ সহ-সম্পর্কিত অবস্থায় পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ কোনও একটি প্রক্রিয়ায় যদি দুইটি বিজড়িত কণা এমনভাবে উৎপন্ন হয় যে তাদের মোট জ্ঞাত ঘূর্ণন বা স্পিন শূন্য হয়, তবে একটি কণার স্পিন যদি কোনও অক্ষের সাপেক্ষে ঘড়ির কাঁটার দিকে পাওয়া যায়, তবে অন্য কণাটির স্পিন অবশ্যই সেই অক্ষের সাপেক্ষে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে হবে। তবে এই আচরণটি আপাতদৃষ্টিতে এক ধরনের কূটাভাসমূলক (পরস্পরবিরোধী) ক্রিয়ার জন্ম দেয়: কোনও কণার ধর্মের যেকোনও ধরনের পরিমাপ ঐ কণার জন্য একটি অপ্রত্যাবর্তী তরঙ্গ অপেক্ষক ধস ঘটায় এবং আদি কোয়ান্টাম অবস্থাটি পরিবর্তন করে ফেলে। বিজড়িত কণাগুলির ক্ষেত্রে ঐ ধরনের পরিমাপ বিজড়িত ব্যবস্থাটিকে সামগ্রিকভাবে প্রভাবিত করে।
১৯৩৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন, বরিস পোদলস্কি ও নেথান রোজেন একটি গবেষণাপত্রে এই ঘটনাগুলি নিয়ে লেখেন।[1] এর স্বল্পকাল পরেই এরউইন শ্র্যোডিঙার বিষয়টির উপর একাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন[2][3] এমন একটি ঘটনাটির বর্ণনা দেন, যা বর্তমানে আইনস্টাইন-পোদলস্কি-রোজেন কূটাভাস হিসেবে পরিচিত। আইনস্টাইন ও তাঁর সহযোগীরা এই ধরনের আচরণ অসম্ভব হিসেবে গণ্য করতেন, কেননা এটি কার্যকারণ সম্পর্কের স্থানিক বাস্তবতাবাদ লঙ্ঘন করেছিল। আইনস্টাইন ঘটনাটিকে "ভৌতিক দূরবর্তী কাজ" নামে অভিহিত করেন। ("spooky action at a distance")[4] এবং এই যুক্তি দেন যে এর পরিণামস্বরূপ কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের স্বীকৃত সূত্রায়নটি অবশ্যই অসম্পূর্ণ।
কিন্তু পরবর্তীকালে কিছু পরীক্ষায় কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের এই আপাত স্বজ্ঞাবিরোধী ভবিষ্যৎবাণীগুলি যাচাই করা হয়।[5][6][7] এই পরীক্ষাগুলিতে বিজড়িত কণাসমূহের মেরুকরণ বা স্পিন পৃথক পৃথক অবস্থানে পরিমাপ করা হয়, যা কিনা পরিসংখ্যানিকভাবে বেলের অসমতা লঙ্ঘন করে। প্রথম দিকের পরীক্ষাগুলিতে একটি বিন্দুতে প্রাপ্ত ফলাফল যে অগোচরে দূরবর্তী দ্বিতীয় বিন্দুটিতে সম্প্রচারিত হয়ে যায়নি ও সেটির ফলাফল প্রভাবিত করেনি, সে ব্যাপারটি নাকচ করা সম্ভব হয়নি।[7] তবে তথাকথিত "ফাঁকফোঁকরবিহীন" বেলের পরীক্ষাগুলি সম্পাদন করা সম্ভব হয়েছে যেখানে অবস্থানগুলি এমন যথেষ্ট পরিমাণ দূরত্বে পৃথক যে পরিমাপগুলির মধ্যে সময়ের ব্যবধানের তুলনায় আলোর দ্রুতিতে যোগাযোগ স্থাপন করতে অনেক দীর্ঘতর সময় - একটি ক্ষেত্রে ১০ হাজার গুণ বেশি সময় - লাগত।[6][5]
কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের ব্যাখ্যাসমূহের কয়েকটি অনুযায়ী কোনও পরিমাপের প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে। অন্যান্য কিছু ব্যাখ্যাতে তরঙ্গ অপেক্ষকের ধসের ঘটনাটিকে স্বীকার করা হয় না, বরং আদৌ কোনও "প্রভাব" আছে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়। তবে সবগুলি ব্যাখ্যাই সহমত যে বিজড়ন পরিমাপগুলির মধ্যে সহসম্পর্ক সৃষ্টি করে এবং এভাবে বিজড়িত কণাগুলির মধ্যে পারস্পরিক তথ্যকে কাজে লাগানো সম্ভব, কিন্তু আলোর চেয়ে বেশি দ্রুতিতে তথ্যের সম্প্রচার অসম্ভব।[8][9]
কোয়ান্টাম বিজড়ন পরীক্ষার মাধ্যমে ফোটন[10], নিউট্রিনো[11][12] ইলেকট্রন,[13][14] এমনকি বাকিগোলকের মতো বড় অণু[15][16] ও ক্ষুদ্র হীরার[17][18] মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়েছে। কোয়ান্টাম যোগাযোগ, কোয়ান্টাম পরিগণন ও কোয়ান্টাম রাডার প্রযুক্তিগুলিতে বিজড়নের প্রয়োগ গবেষণা ও বিকাশের একটি অত্যন্ত সক্রিয় ক্ষেত্র।
"বিজড়িত ফোটনসমূহ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে বেল অসমতাগুলির লঙ্ঘন প্রতিষ্ঠান করা ও কোয়ান্টাম তথ্যবিজ্ঞানের অগ্রপথিকসুলভ গবেষণাকর্মের জন্য" ২০২২ সালে যৌথভাবে ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী আলাঁ আস্পে, মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী জন ক্লাউজার ও অস্ট্রীয় বিজ্ঞানী আন্টন সাইলিঙারকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।[19]