Loading AI tools
গমের সুজি দিয়ে প্রস্তুতকৃত উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী বার্বার রান্নার একটি পদ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কুসকুস (আরবি: الكسكس, প্রতিবর্ণীকৃত: কুস্কুস্; আমাজিগ: ⵙⵉⴽⵙⵓ, সেকসু) হচ্ছে উত্তর আফ্রিকার একটি প্রধান খাবার, যা সুজির ছোট ছোট সিদ্ধ বল দিয়ে তৈরী করা হয়। সাধারণত তরকারীর উপরে এটা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সমগ্র উত্তর আফ্রিকার রন্ধশৈলীতে কুসকুস উল্লেখযোগ্য আসন দখল করে আছে, মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মৌরিতানিয়া ও লিবিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের একটা ক্ষুদ্র অংশ এবং সিসিলির তরাপানিতে কুসকুস খুবই জনপ্রিয়।
উৎপত্তিস্থল | উত্তর আফ্রিকা [1] |
---|---|
অঞ্চল বা রাজ্য | উত্তর আফ্রিকা |
প্রধান উপকরণ | সুজি |
প্রকৃত নামটি খুব সম্ভবত আরবি শব্দ কাসাকাসা বা বারবার শব্দ কেসকেস থেকে এসেছে যা দ্বারা খাবারটি রান্না করার পাত্রটিকে বোঝায়।[2]
অঞ্চলভেদে কুসকুসের একাধিক নাম এবং উচ্চারণ প্রচলিত আছে। আধুনিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একে ˈkʊskʊs/ বা /ˈkuːskuːs/ নামে উচ্চারণ করা হয় এবং যুক্তরাজ্যে শেষের উচ্চারণ ব্যবহৃত হয়। এটা আরবিতে কুসকুসি (كسكسي), মরক্কোয় হিসাবে সেকসু বা কেস্কসু, আলজেরিয়ায় সেকসু বা তাআম (طعام এর আক্ষরিক অর্থ "খাদ্য"), তিউনিসিয়া ও লিবিয়ায় কোস্কি বা কুসেসকসি, মিশরে কুসকুসি (كسكسي), তুয়ারেগে কেসকেস নামে পরিচিত।[3]
কুস্কুসের উৎপত্তি সম্পর্কে সুনিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় না। লুসি বোলেন্সের মতে বার্বার জাতি খ্রিস্টপূর্ব ২৩৮ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১৪৯ সালের মধ্যে কুসকুস খেত। কারণ সমাধিতে প্রাপ্ত কুসকুস প্রস্তুতির পাত্রগুলি বার্বার রাজা ম্যাসিনিসার সময়কে নির্দেশ করে।[4] চার্লস পেরির মতে কুস্কুসের উৎপত্তিকাল যিরিদ রাজবংশের শেষ এবং মুওয়াহহিদিন রাজবংশের শুরুর মধ্যকার সময়ে, খ্রিস্টীয় একাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যে। আলজেরিয়ার তিয়ারেত অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রথম মৃৎপাত্রটি নবম শতকে ব্যবহৃত পাত্রের অনুরূপ এবং এর সংগে কুসকুস রান্নার প্রাথমিক পাত্রের সাদৃশ্য আছে।[5]
কুসকুস সম্পর্কিত প্রথম লিখিত তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায় ১৩ শতকে লিখিত রান্নাবিষয়ক গ্রন্থ <কিতাব আল তাবিখ ফি আল মাঘরিব ওয়াল আন্দালুস (মাগরিব এবং আন্দালুসিয়ার রান্নার বই) এ। বইটিতে কুসকুস রান্নার একটি প্রণালী বর্ণিত আছে যা পৃথিবী জুড়ে পরিচিত। বর্তমানকালে কুসকুস উত্তর আফ্রিকার জাতীয় খাবার হিসেবে পরিগণিত হয়। গ্রানাডার নাসরিদ রাজত্বকালে কুসকুস পরিচিত ছিলো এবং সিরিয়ার একজন ইতিহাসবিদ আলেপ্পো থেকে কুসকুস সম্পর্কিত চারটি তথ্যসূত্রের উল্লেখ করেছেন। প্রথম দিককার এই তথ্যসূত্র থেকে জানা যায় কুসকুস খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিলো। ত্রিপোলিতানিয়া থেকে পশ্চিম পর্যন্ত কুসকুস সাধারণ খাবার হিসেবে পরিগণিত হতো। অন্যদিকে সাইরেনিকা থেকে পূর্ব পর্যন্ত মিশরীয় রান্নাই প্রধান রন্ধনপ্রণালী হিসেবে প্রচলিত ছিলো, উৎসব পার্বনে কুসকুস তৈরী হতো। বর্তমান সময়ে মিশর এবং মধ্যপ্রাচ্যে কুসকুস পরিচিত কিন্তু আলজেরিয়া, মরোক্কো এবং লিবিয়ায় কুসকুস প্রধানতম খাবার। পশ্চিম আফ্রিকাতেও কুসকুস পরিচিত এবং এটি মধ্য আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ছে। পূর্বীয় দেশসমূহে এটা জাতীয় খাবার। ১৬ শতকে সিরিয়া থেকে কুসকুস তুরস্কে পৌঁছায় এবং তুরেস্কের দক্ষিণ প্রদেশগুলোর অধিকাংশ এলাকায় কুসকুস খাওয়া হয়।
সিসিলির ত্রপানিতে কুসকুস ঐতিহ্যবাহী খাবার। ১৫৭০ সালে রোমের বার্তোলোমিও স্ক্যাপ্পি তার রান্নার বইয়ে সাক্কুসসু নামে একটি মুরীয় খাবারের বর্ণনা করেছেন।[6]
ফ্রান্সে কুস্কুসের প্রথম নিদর্শন হচ্ছে ব্রিট্টানিতে প্রাপ্ত ১২ জানুয়ারী ১৬৯৯ সালে লেখা একটি চিঠি। কিন্তু প্রভেন্সে আরো আগে থেকে কুসকুস প্রচলিত ছিল। পর্যটক জ্যঁ জ্যাকুয়েস বুচার্ড ১৬৩০ সালে তুওলনে কুসকুস খাওয়ার কথা লিখেছেন। কুসকুস মূলত তৈরী হয়েছিল বাজরা থেকে। বাজরা এক প্রকার ঘাসের দানা। উপাদান হিসেবে গম কখন বাজরার স্থান দখল করেছে সে বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেন। ধারণা করা হয় ২০ শতকের কোন সময়ে এই পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে। যদিও অনেক এলাকায় এখনো ঐতিহ্যবাহী ঘাসের ব্রিজ ব্যবহার করে। ধারণা করা হয় কুস্কুরের আবির্ভাব উত্তর আফ্রিকাতে। এই অংশে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের মধ্যে দশম শতকের রান্না ঘরের উপকরণ সামগ্রীর মধ্যে কুসকুস তৈরীর পাত্র পাওয়া গেছে।
ইবনে বতুতার ভ্রমণকাহিনীতে বর্ণনায় আছে "এটা থেকে কুসকুস এবং পরিজ তৈরি করা হয়"। এটাই খুব সম্ভবত পশ্চিম আফ্রিকায় কুসকুস সম্পর্কে প্রথম উদ্ধৃতি। ইবনে বতুতা (জন্ মরক্কো, ১৩০৪–১৩৬৮? খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন তার সময়ের বিখ্যাত পর্যটক এবং ভ্রমণবিষয়ক লেখক। তার জীবনব্যাপী রিহালাহ বা ভ্রমণ পূর্ব গোলার্ধের প্রতিটি মুসলিম এবং অনেক অমুসলিম সমাজের তথ্য রেখে গেছে। ভ্রমণ সম্পর্কে তার সকল লেখা আধুনিক ইতিহাসবিদদের কাছে মধ্যযুগীয় আফ্রিকাকে জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৯৪ সালে মার্কুস উইনার প্রকাশনীর প্রকাশিত সাইদ হামদান এবং নোয়েল কিং এর অনুবাদিত ইবনে বতুতা ইন ব্লাক আফ্রিকা বইয়ে এই উদ্ধৃতিটি আছে।
[মালি, ১৩৫১–১৩৫২ খ্রিষ্টাব্দ] যখন পর্যটক একটি গ্রামে এসে পৌঁছলেন তখন নিগ্রো এক নারী আনলি ও দুধ এবং মুরগী ও নাবাকের (লোটাস) ময়দা, চাল ও ফুনি (সরিষার মত শষ্য) নিয়ে এলো এবং এগুলো থেকে কুসকুস ও জাউ তৈরী করা হয়। তিনি তাদের কাছ থেকে পছন্দমত সামগ্রী কিনলেন। চাল কিনলেন না কারণ ভাত খাওয়া সাদা পুরুষদের জন্য ক্ষতিকর, ফুনি খাওয়া তাদের জন্য ভালো।[7]
প্রাপ্ত দলিলাদি থেকে ধারণা করা হয় বিশেষ পাত্রে কুসকুস রান্নার প্রণালী দশম শতকের আগেই উৎপত্তি লাভ করে পশ্চিম আফ্রিকায় যেখান মধ্যযুগে সুদানীয় রাজত্ব বিস্তার লাভ করে এবং বর্তমানের নাইজার, মালি, মৌরিতানিয়া, ঘানা এবং বুর্কিনা ফাসো অবস্থিত। এমনকি আজকের গিনির ইউকৌঙ্কৌন এবং সেনেগালে চালের কুসকুসের পাশাপাশি মাংস বা চিনাবাদামের সস দিয়ে জনার কুসকুস রান্না করা হয়।
দক্ষিণ আলজেরিয়ার মরুভুমিতে বসবাসকারী যাযাবর জাতি কেল আহাজ্ঞার মানুষেরা কুসকুস তৈরীতে বাজরা ব্যবহার করে। তারা খুব সম্ভবত পশ্চিম আফ্রিকার সুদান থেকে এটা শিখেছে যেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটা প্রচলিত ছিলো। ইবনে বতুতা ১৩৫২ সালে মালি আসেন। তার বর্ণনা থেকে জানা যায়, যখন পর্যটক গ্রামে এসে উপস্থিত হয় তখন নিগ্রোরা বাজরা, কাঁচা দুধ, মুরগী, পদ্ম বীজের গুড়ো, চাল, ফউনি(যা সরিষা দানার মত দেখতে) নিয়ে আসে এবং তারা কুসকুস তৈরী করে। ইবনে বতুতা ১৩৫০ সালে মালিতে চালের কুসকুসের কথাও উল্লেখ করেছেন। বাজরার কুসকুস কখনো গমের কুসকুসের মত এতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি কারণ বাজরার কুসকুস রান্না করতে অনেক সময় লাগে এবং খেতে খুব সুস্বাদু নয়।
অধ্যাপক ই. Levi-Provençal পশ্চিম আফ্রিকার প্রাক-আরবীয় সুত্রের উপর ভিত্তি করে তার স্মারক Histoire de l'Espagne Musulmane এ প্রস্তাব করেন যে কুসকুসের উদ্ভব হয়েছে আফ্রিকায়। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যেমন অধ্যাপক রবার্ট হল দশম শতকের ইবনে আল-ফাকিহ এর মুখতাসার কিতাব আল বুলদান এর উপর ভিত্তি করে এই প্রস্তাবকে সমর্থণ করেছেন। পশ্চিম আফ্রিকায় কুসকুস তৈরীতে জোয়ার, ফাউনি, কালো ফোনিয়ো (Digitaria iburua) এবং আঙুল বাজরা (Eleusine coracana), নাইজেরিয়ার একটি খাদ্যশস্য (ভারতেও চাষ হয়) ব্যবহৃত হয়। মধ্য নাইজেরিয়ার হাউসা এবন টোগোর ল্যাম্বাসে কালো ফোনিয়ো দিয়ে তৈরী এই কুসকুসকে জন্য বলা হয় উসু-উসু। শরঘুম (জোয়ার) কুসকুস তৈরীর জন্য জনপ্রিয় একটি শস্য এবং সরঘুমের সমার্থক মরোক্কোর বার্বার শব্দ হচ্ছে ইলান বা ইলনি, যা পশ্চিম আফ্রিকার ভাষায় সঙ্ঘাই।[8]
কিছু কিছু অঞ্চলে কুসকুস তৈরীতে ফারিনা অথবা অমসৃণ করে বাটা এমন বার্লি অথবা পার্ল মিলেট ব্যবহৃত হয়। ব্রাজিলে ঐতিহ্যবাহী কুসকুস তৈরীতে ভুট্টার ময়দা ব্যবহৃত হয়।[9]
সুজির ওপর পানি ছিটিয়ে হাতের সাহায্যে ছোট ছোট গুলি তৈরী করা হয়। গুলিগুলোকে আলাদা করে রাখতে সামান্য শুকনো আটা মাখিয়ে নেওয়া হয়। এরপর এগুলোকে ছেঁকে নেওয়া হয়। খুবই ছোট গুলি গুলি ছাঁকনির ছিদ্র দিয়ে আলাদা করে নেওয়া হয়। এগুলোকে আবার পানি ছিটিয়ে গুলিতে রূপান্তরিত করে আটা মাখিয়ে আলাদা করে রাখা হয়। সব সুজি দিয়ে কুসকুসের দানা বা গুলি তৈরী হওয়া না পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এটা খুবই শ্রমসাধ্য কাজ। কুসকুস তৈরীর ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে একদল মহিলা একসাথে বসে কয়েকদিন ধরে বেশি করে কুসকুস দানা তৈরী করে রৌদ্রে শুকিয়ে কয়েক মাস ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করে। ঐতিহ্যগতভাবে শস্যের কঠিন অংশ থেকে কুসকুস তৈরী করা হয়। কঠিন এই অংশকে যাঁতায় পিষে গুড়ো তৈরী করা হয়। আধুনিক সময়ে কুসকুস উৎপাদন যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশের বাজারে কুসকুস কিনতে পাওয়া যায়।
পশ্চিম আফ্রিকার সাহেলিয় দেশে, যেমন মালি এবং সেনেগাল, বাজরা বেঁটে বা যাঁতায় ফেলে গুঁড়ো করে কুসকুসের জন্য প্রয়োজনীয় আকারে রূপান্তরিত করা হয়।[10]
সঠিকভাবে রান্না কুসকুস হালকা এবং ফুঁয়োফুঁয়ো হয়, আঠাযুক্ত বা বালিবালি হয় না। ঐতিহ্যগতভাবে উত্তর আফ্রিকার লোকেরা একটি খাদ্য স্টিমার ব্যবহার করে। বারবারেরা একে বলে তাসেকসুত, আরবিতে বলে কিস্কাস (كِسْكَاس) এবং ফরাসিতে বলে কুস্কুসসিয়ার। ধাতব নির্মিত পাত্রের নিচের অংশ অনেকটা তেল রাখার পাত্রের মত যেখানে মাংস এবং সবজির ঝোল রান্না হয়। উপরের অংশটি ধাতব নির্মিত যেখানে কুস্কুস সিদ্ধ করা হয়। বাষ্পের সাহায্যে ঝোলের স্বাদ কুস্কুসে চলে আসে। পাত্রের উপরের অংশে বাষ্প নির্গমনের জন্য ছিদ্র আছে। ছিদ্রটি খুব বড় হলে ভেজা কাপড় দিয়ে আটকে দেওয়া হয় যাতে বাষ্প একই রেখায় বের হতে পারে। প্রথম দিকে কুস্কুস তৈরীর জন্য মাটির পাত্র ব্যবহারের সামান্য প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে।
অধিকাংশ পশ্চিমা সুপারমার্কেটে বিক্রি হওয়া ইন্সট্যান্ট কুসকুস আগে থেকে সিদ্ধ করা এবং শুকনো থাকে। সাধারণ[[ত কুসকুসের সাথে এর পরিমানের দেড় গুণ পানি মিশিয়ে পাঁচ মিনিট বদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়। শুকনো পাস্তা এবং শুকনো শস্য যেমন চাল রান্নার চেয়ে এই প্রাক সিদ্ধ কুসকুস সাধারণ কুসকুস রাঁধতে কম সময় লাগে।
তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো এবং লিবিয়ায় সাধারণত মশলাযুক্ত বা হালকা ঝোলযুক্ত সবজি (গাজর, আলু ইত্যাদি) এবং মাংসের (সাধারণত মুরগির মাংস, ভেড়ার মাংস বা খাসির) সঙ্গে পরিবেশিত হয়।
আলজেরিয়া ও মরক্কোয় এটা অনেক সময় খাবারের শেষে অথবা শুধুই কুসকুস পরিবেশন করা হয় যা সেফফা নামে পরিচিত। কুসকুস ফুরফুরে এবং বিবর্ণ রঙ ধারণ না করা পর্যন্ত কয়েকবার সিদ্ধ করা হয়। এর পর এর মধ্যে কাজুবাদাম, দারুচিনি এবং চিনি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ঐতিহ্যগতভাবে এই ডেজার্ট কমলা ফুলের জলের সুগন্ধিযুক্ত দুধ দিয়ে অথবা এক বাটি ঘোলের সাথে রাতের খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয়।
তিউনিসিয়ায় এটা তৈরি করা হয়, বেশিরভাগ মসলা দিয়ে এটা বেশিরভাগ সময়ে মশলাযুক্ত হারিসসা সস দিয়ে তৈরী করা হয় এবং প্রায় সবকিছু যেমন ভেড়ার মাংস, মাছ, সী-ফুড, গরুর মাংস এবং কখনো কখনো দক্ষিণ অঞ্চলের উট ইত্যাদির সাথে পরিবেশন করা হয়। মাছ রান্না তিউনিসিয়ার একটি বিশিষ্টতা এবং অক্টোপাস, স্কুইড বা অন্যান্য সীফুড গরম, লাল, মসলাযুক্ত সস দিয়েও তৈরি করা যেতে পারে। তিউনিসিয়ার প্রতিটি অনুষ্ঠানে কুসকুস তৈরী করা হয়। কিছু কিছু অঞ্চলে (বেশিরভাগ সময় রমজান) মরুর মিষ্টি মাসফাউফ নামে পরিচিত।
এটা লিবিয়ায় মাংসের সংগে পরিবেশন করা হয়। অধিকাংশ সময়ে ভেড়ার মাংস কিন্তু কখনো উট এবং কালেভদ্রে গরুর মাংস ত্রিপোলি ও লিবিয়ার পশ্চিম অংশে ব্যবহৃত হয়। অফিসিয়াল অনুষ্ঠান বা বিবাহ অনুষ্ঠানে তৈরী করা হয় না। ডেজার্ট হিসেবে কুসকুস খাওয়া হয়, খেঁজুর, তিল, বিশুদ্ধ মধু এবং স্থানীয়ভাবে পরিচিত মাঘরুদ দিয়ে তৈরী করা হয়।
ইজরায়েলের সাধারণত উৎসব এবং ছুটির দিনে এটা পরিবেশন করা হয়। তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো এবং লিবিয়া থেকে মাগরেবি অভিবাসীদের হাত ধরে এটা ইজরায়েলে এসেছে।
মিশরে ডেজার্ট হিসেবেই কুসকুস বেশি খাওয়া হয়। মাখন, চিনি, দারুচিনি, কিশমিশ, বাদাম এবং উপরে ক্রিম দিয়ে এটা প্রস্তুত করা হয়।
ফ্রান্সেও কুসকুস খুব জনপ্রিয় যেখানে এটা এখন ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়। এটা স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি এবং গ্রীসেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক জরীপে এটা প্রিয় খাবার হিসেবে উঠে এসেছে। ২০০৬ সালের ১১ ও ১২ জানুয়ারী মাসে ম্যাগাজিন নোত্রে তেম্পস বিভিন্ন বয়সের, লিংগের, গৃহপেশায় নিয়োজিত ১০০০ মানুষের মধ্যে মুখোমুখি এক সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মাগরেবি রেস্টুরেন্টে কুসকুস পরিবেশিত হয়।
ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি এবং পর্তুগাল, শব্দ "কুসকুস" (স্প্যানিশ এবং ইতালিয় ভাষায় কুসকুস; পর্তুগিজ ভাষায় কুজকুজ) বলতে সাধারণত ঝোলওয়ালা কুসকুসকে বোঝায়। ফরাসি, স্প্যানিশ, ইতালীয়, এবং পর্তুগিজ মুদির দোকান ও সুপারমার্কেটে ইনস্ট্যান্ট কুসকুস এবং সবজির ক্যান ও মাংস একত্রে প্যাকেজ সেট হিসেবে বিক্রি করা হয়। তিউনিশিয় রন্ধনশৈলীর মত এটা হারিসসা সস দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
ভিয়ে প্রাতিকু গৌরমান্দ সাময়িকীর জন্য ২০১১ সালে টিএনএস পরিচালিত এ সমীক্ষায় ফরাসি মানুষ তৃতীয় প্রিয় খাবার হিসেবে কুসকুসকে নির্বাচিত করে এবং ফ্রান্সের পূর্ব অংশে প্রথম হয়।[11][12]
উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যে কুসকুস সাধারণ বা সুগন্ধিযুক্ত প্যাকেটে পাওয়া যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটা বড় মুদি দোকানগুলোর জাতিগত বা স্বাস্থ্য-খাদ্য বিভাগে পাওয়া যায়।
ল্যাটিন আমেরিকায় কিছু রেসিপি প্রচলিত আছে যেখানে শস্য গুড়ো সফেদা এবং অন্যান্য উপাদানের সাথে মাখিয়ে সিদ্ধ করা হয়। অন্যান্য উপাদানের মধ্যে থাকে কুস্কুজ (পর্তুগিজ উচ্চারণ: [kusˈkus]
পর্তুগিজ উচ্চারণ: [kusˈkus]) অন্যান্য উপাদানের মধ্যে থাকে কুস্কুজ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ব্রাজিল এবং এর সংলগ্ন অঞ্চলসমূহে খুবই জনপ্রিয়। এটা চিনি ও দুধ, বিভিন্ন মাংস, পনির ও ডিম এবং অন্যান্য উপাদানের সাথে পরিবেশন করা হয়।
ফিলিস্তিনে মাফতৌল কে একটি বিশেষ ধরনের কুসকুসকে হিসাবে বিবেচনা করা হয় কিন্তু ভিন্ন উপাদানে ভিন্ন আকারে প্রস্তুত করা হয়। এটা উত্তর আফ্রিকার কুসকুস থেকে আকারে বড় কিন্তু একইভাবে সিদ্ধ করা হয় এবং গারবাঞ্জো বিচির দিয়ে রান্না করা হাড় ছাড়ানো মুরগীর মাংসের ঝোল দিয়ে বিভিন্ন উৎসব পার্বণে পরিবেশন করা হয়। মাফতৌল আরবি শব্দ যার আদিমূল ''ফা-তা-লা'' অর্থ পেঁচানো বা পাঁকানো। সাদা ময়দা থেকে হাতে ঘোরানো যন্ত্রের সাহায্যে মাফতৌল প্রস্তুত করা হয়।[13] ফিলিস্তিনী রন্ধনশৈলীতে মাফতৌল একটি বিশেষ খাবার যা সকল রাঁধুনী তৈরী করতে পারে না। প্রতিবছর বীর যেইতে মাফতৌল উৎসব হয় যেখানে মাফতৌল তৈরীর প্রতিযোগিতা থাকে।
ইসরায়েলে মাফতৌলের মতই অনুরূপ একটি খাবার প্টিটিম (একই রকম দেখতে হলেও স্বাদ আলাদা) প্রস্তুত করা হয় যার অনেক প্রকারভেদ রয়েছে এবং দেখতে ছোট ত্রিভুজাকৃতির, চাল (অনেকসময় বেন গুরিয় চাল নামে পরিচিত) এবং অন্যান্য ধরনের মত। প্টিটিমের সব থেকে জনপ্রিয় ধরনটি কুসকুসের মত দেখতে এবং আমেরিকানরা একে ''ইজরায়েলি কুসকুস'' নামে ডাকে। ইজরায়েলের বাইরে ওসেম কোম্পানী এই নামে খাবারটি বিক্রি করে। প্টিটিম মোগরাবিয়া এক জিনিস না হলেও দুটো একই ভাবে ব্যবহার করা যায়। মোগরাবিয়া হচ্ছে আবরণ যুক্ত কুসকুস। আমেরিকায় অনেকসময় ইজরায়েলি কুসকুসকে ভুল করে মাফতৌল বলা হয়ে থাকে।
পরিমাণ 1 cup (173 g) | |||
প্রতি পাত্রে Information is per cooked couscous as determined by Nutrient Data Laboratory, ARS, USDA.[14] | |||
পরিমাণ | |||
ক্যালরি 176 | চর্বিতে ক্যালরি 2 | ||
% প্রতিদিনের পরিমাণ * | |||
সর্বমোট চর্বি 0.25 g | 0% | ||
সম্পৃক্ত চর্বি 0.05 g | 0% | ||
ট্রান্স ফ্যাট 0 g | |||
কোলেস্টেরল 0 mg | 0% | ||
সোডিয়াম 8 mg | 0% | ||
পটাশিয়াম 91 mg | 3% | ||
সর্বমোট শর্করা 36 g | 12% | ||
ডায়াটেরি ফাইবার 2 g | 1% | ||
চিনি 0 g | |||
প্রোটিন 6 g | |||
ভিটামিন এ | 0% | ভিটামিন সি | 0% |
ক্যালসিয়াম | 1% | লৌহ | 2% |
*২০০০ ক্যালরি খাবারের উপর ভিত্তি করে প্রতিদিনের অনুপাত হিসেব করা হয়েছে। আপনার ক্যালরি প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে এটা উচ্চতর বা নিম্নতর হতে পারে। |
প্রতি ১০০ গ্রাম কুসকুসে ৩.৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এছাড়া কুসকুসে ১ শতাংশ চর্বি/ক্যালরি আছে।[15]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.