কাবুল
আফগানিস্তানের রাজধানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আফগানিস্তানের রাজধানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কাবুল (পশতু: کابل, ফার্সি: کابل; /ˈkɑːbʊl,
কাবুল کابل | |
---|---|
পৌরসভা | |
স্থানাঙ্ক: ৩৪°৩১′৩১″ উত্তর ৬৯°১০′৪২″ পূর্ব | |
দেশ | আফগানিস্তান |
প্রদেশ | কাবুল |
No. of districts | ২২ |
Capital formation | ১৭৭৬ |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• মেয়র | মুহাম্মদ ইউনূস নওয়ানদিশ |
উচ্চতা | ১,৭৯১ মিটার (৫,৮৭৬ ফুট) |
জনসংখ্যা (2020) | |
• মোট | ৪২,২২,০০০ |
Kabul urban agglomeration | |
সময় অঞ্চল | Afghanistan Standard Time (ইউটিসি+৪:৩০) |
Postal code | ১০০X, ১০১X, ১০৫X, ১০৬X |
এলাকা কোড | (+93) 20 |
HDI (2017) | ০.৫৭৫ |
কাবুল একটি প্রাচীন লোকালয় হলেও ১৫০৪ সালে এসে এটি প্রথম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ঐ বছর ভারতীয় মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর শহরটিকে তাঁর রাজধানী বানান। ১৫২৬ সালে দিল্লীতে সাম্রাজ্যের রাজধানী স্থানান্তরিত করা হলেও কাবুল মুঘল সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল। ১৭৩৮ সালে পারস্যের শাসক নাদির শাহ শহরটি দখল করেন। ১৭৪৭ সালে আফগানিস্তানের প্রথম আমীর আহমদ শাহ কাবুলকে আফগানিস্তানের দুইটি রাজধানীর একটি বানান। অপর রাজধানীটি ছিল দক্ষিণের কান্দাহার শহর। ১৭৭৩ সালে আহমদ শাহের মৃত্যুর পর কাবুল দেশের একমাত্র রাজধানীতে পরিণত হয়। ঊনবিংশ শতকে খাইবার গিরিপথের নিয়ন্ত্রণের জন্য শহরটি ব্রিটিশ, পারসিক ও রুশদের দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এই শতকে ব্রিটিশ সেনারা দুইবার (১৮৩৯-১৮৪২ এবং ১৮৭৯-১৮৮০) কাবুল দখল করে। ১৯৪০ সালের পর শিল্পকেন্দ্র হিসেবে কাবুলের বিকাশ ঘটে।
১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত সেনারা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ১৯৯২ সালের শুরুতে মুজাহেদিনদের বিভিন্ন দল কাবুল দখলে নেয়। ১৯৯৬ সালে তালিবান নামের একটি চরমপন্থি ইসলামি আন্দোলন দুই বছর প্রচেষ্টার পর শহরটি দখল করে এবং আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে উত্তরের জোট বা যুক্তফ্রন্ট তালিবানদের হাত থেকে কাবুল পুনরুদ্ধার করে।
২০২১ সালের ১৫ ই আগস্ট পুনরায় কাবুল পুনরুদ্ধার করে তালেবান। পুরনো সরকারকে উৎখাত করে সেখানে তারা নতুন করে ইসলামিক আমিরাত তথা তালিবানি সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। কাবুল সহ পুরো আফগানিস্তানে তালেবান ইসলামী শাসনব্যবস্থা তথা "আফগানিস্তান ইসলামী আমিরাত" প্রতিষ্ঠা করেছে।
কাবুল দেশের পূর্ব অংশে, একটি সরু উপত্যকায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ১,৭৯১ মিটার (৫,৮৭৬ ফুট)। এটি কাবুল নদীর তীরে হিন্দুকুশ পর্বতমালার মধ্যে আবদ্ধ। পুরনো শহরের দক্ষিণে অবিলম্বে প্রাচীন শহরের দেয়াল এবং শের দরজা পাহাড় রয়েছে যার পিছনে শুহাদাই সালিহিনের কবরস্থান রয়েছে। আরও কিছুটা পূর্ব দিকে হল প্রাচীন বাল হিসার দুর্গ, যার পিছনে রয়েছে কোল-ই হাসমত খান হ্রদ।
এর অবস্থানটিকে "পাহাড় দ্বারা ঘেরা বাটি" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।[1] কিছু পাহাড় হল (যাকে কোহ বলা হয়) এর মধ্যে রয়েছে: খায়ের খান-ই শামালি, খাজা রাওয়াশ, সখী বারান তে, চিহিল সুতুন, কুরুগ, খাজা রাজাক এবং শের দরজা। পশ্চিম কাবুলে শহুরে অঞ্চলের মধ্যে দুটি পাহাড় রয়েছে: আসামায়ি (এটি টেলিভিশন পাহাড় হিসাবেও পরিচিত) এবং আলী আবাদ। শহরের মধ্যে পাহাড়ের মধ্যে (যাকে তপা বলা হয়) বিবি মাহরো এবং মারজান অন্তর্ভুক্ত।
শহরটি আয়তন ১,০২৩ বর্গকিলোমিটার (৩৯৫ বর্গ মাইল)। এটি এ পর্যন্ত দেশের বৃহত্তম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর নিকটতম বিদেশি রাজধানী শহরগুলি হলো ইসলামাবাদ, দুশানবে, তাশখন্দ, নয়াদিল্লি এবং বিশকেক । কাবুল ইস্তাম্বুল (পশ্চিম এশিয়া) এবং হ্যানয়ের (পূর্ব এশিয়া) মোটামুটি সমান দূরত্বে অবস্থিত।
কাবুলের শীতকালীন বৃষ্টিপাত (প্রায় একচেটিয়াভাবে তুষার হিসাবে পতিত হয়) এবং বসন্তের মাসে শীতকালে বৃষ্টিপাতের সাথে শীতল আধা-শুষ্ক আবহাওয়া (কপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস বিএসকে) থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলের তুলনায় তাপমাত্রা শীতল, মূলত শহরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে। গ্রীষ্মে খুব কম আর্দ্রতা থাকে, যা উত্তাপ থেকে মুক্তি দেয়। শরৎকালে উষ্ণ দুপুর এবং তীব্র শীতল সন্ধ্যায় বৈশিষ্ট্যযুক্ত। শীতকালের জানুয়ারির দৈনিক গড় তাপমাত্রা −২.৩ °সে (২৭.৯ °ফা) থাকে। বসন্ত বছরের আর্দ্রতম সময়। রৌদ্রের পরিস্থিতি বছরব্যাপী আধিপত্য বিস্তার করে। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১২.১ °সে (৫৩.৮ °ফা), আফগানিস্তানের অন্যান্য বড় শহরগুলির তুলনায় অনেক কম।
কাবুল-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ১৮.৮ (৬৫.৮) |
১৮.৪ (৬৫.১) |
২৬.৭ (৮০.১) |
২৮.৭ (৮৩.৭) |
৩৩.৫ (৯২.৩) |
৩৬.৮ (৯৮.২) |
৩৭.৭ (৯৯.৯) |
৩৭.৩ (৯৯.১) |
৩৫.১ (৯৫.২) |
৩১.৬ (৮৮.৯) |
২৪.৪ (৭৫.৯) |
২০.৪ (৬৮.৭) |
৩৭.৭ (৯৯.৯) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ৪.৫ (৪০.১) |
৫.৫ (৪১.৯) |
১২.৫ (৫৪.৫) |
১৯.২ (৬৬.৬) |
২৪.৪ (৭৫.৯) |
৩০.২ (৮৬.৪) |
৩২.১ (৮৯.৮) |
৩২.০ (৮৯.৬) |
২৮.৫ (৮৩.৩) |
২২.৪ (৭২.৩) |
১৫.০ (৫৯.০) |
৮.৩ (৪৬.৯) |
১৯.৫ (৬৭.১) |
দৈনিক গড় °সে (°ফা) | −২.৩ (২৭.৯) |
−০.৭ (৩০.৭) |
৬.৩ (৪৩.৩) |
১২.৮ (৫৫.০) |
১৭.৩ (৬৩.১) |
২২.৮ (৭৩.০) |
২৫.০ (৭৭.০) |
২৪.১ (৭৫.৪) |
১৯.৭ (৬৭.৫) |
১৩.১ (৫৫.৬) |
৫.৯ (৪২.৬) |
০.৬ (৩৩.১) |
১২.১ (৫৩.৮) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | −৭.১ (১৯.২) |
−৫.৭ (২১.৭) |
০.৭ (৩৩.৩) |
৬.০ (৪২.৮) |
৮.৮ (৪৭.৮) |
১২.৪ (৫৪.৩) |
১৫.৩ (৫৯.৫) |
১৪.৩ (৫৭.৭) |
৯.৪ (৪৮.৯) |
৩.৯ (৩৯.০) |
−১.২ (২৯.৮) |
−৪.৭ (২৩.৫) |
৪.৩ (৩৯.৭) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | −২৫.৫ (−১৩.৯) |
−২৪.৮ (−১২.৬) |
−১২.৬ (৯.৩) |
−২.১ (২৮.২) |
০.৪ (৩২.৭) |
৩.১ (৩৭.৬) |
৭.৫ (৪৫.৫) |
৬.০ (৪২.৮) |
১.০ (৩৩.৮) |
−৩.০ (২৬.৬) |
−৯.৪ (১৫.১) |
−১৮.৯ (−২.০) |
−২৫.৫ (−১৩.৯) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ৩৪.৩ (১.৩৫) |
৬০.১ (২.৩৭) |
৬৭.৯ (২.৬৭) |
৭১.৯ (২.৮৩) |
২৩.৪ (০.৯২) |
১.০ (০.০৪) |
৬.২ (০.২৪) |
১.৬ (০.০৬) |
১.৭ (০.০৭) |
৩.৭ (০.১৫) |
১৮.৬ (০.৭৩) |
২১.৬ (০.৮৫) |
৩১২.০ (১২.২৮) |
বৃষ্টিবহুল দিনগুলির গড় | ২ | ৩ | ১০ | ১১ | ৮ | ১ | ২ | ১ | ১ | ২ | ৪ | ৩ | ৪৮ |
তুষারময় দিনগুলির গড় | ৭ | ৬ | ৩ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ৪ | ২০ |
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) | ৬৮ | ৭০ | ৬৫ | ৬১ | ৪৮ | ৩৬ | ৩৭ | ৩৮ | ৩৯ | ৪২ | ৫২ | ৬৩ | ৫২ |
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় | ১৭৭.২ | ১৭৮.৬ | ২০৪.৫ | ২৩২.৫ | ৩১০.৩ | ৩৫৩.৪ | ৩৫৬.৮ | ৩৩৯.৭ | ৩০৩.৯ | ২৮২.৬ | ২৫৩.২ | ১৮২.৪ | ৩,১৭৫.১ |
উৎস: NOAA[2] |
২০১৯ সালে হিসাব অনুযায়ী কাবুলের জনসংখ্যা অনুমান করা হয়েছিল ৪.১১৪ মিলিয়ন। আরও একটি ২০১৫ সালের অনুমানে জনসংখ্যা ৩,৬৭৮,০৩৪ ছিল বলে ধারণ করা হয়। যুদ্ধের কারণে শহরের জনসংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেছে।
শহরের জনসংখ্যার প্রায় ৭৪% সুন্নি ইসলামকে অনুসরণ করে এবং ২৫% শিয়া (মূলত হাজারারা) ইসলামকে অনুসরণ করে। অবশিষ্ট ১% অনুসারী শিখ এবং হিন্দুধর্ম ধর্মালম্বী হিসেবে পরিচিত, সেইসাথে খ্রিস্টান বাসিন্দা (ফার্স্ট লেডি রুলা গণি) এবং ইহুদি বাসিন্দাও (জ্যাবলন সিমিনটোব) রয়েছে। অন্যান্য খ্রিস্টানরাও রয়েছে তবে তারা অ-আফগান এবং স্থায়ী বাসিন্দাদের চেয়ে বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মী। কাবুলে ছোট ভারতীয় এবং তুর্কি সম্প্রদায়ও রয়েছে (বেশিরভাগ ব্যবসায়-মালিক এবং বিনিয়োগকারী), এবং ১৯৮০ এর দশকে একটি বিশাল রুশ সম্প্রদায় ছিল।
শহরের পূর্ব প্রান্তে পুল-ই-চরখি দেশের সবচেয়ে বড় কারাগার। এটি নির্যাতন ও মৃত্যুদণ্ডের জন্য কুখ্যাত। আফগানিস্তানের ন্যাশনাল আর্মির ২০১তম বাহিনী পুল-ই-চরখির কাছাকাছি অবস্থিত।
১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষা বিদ্যাপীঠ। ১৯৯২ সালের যুদ্ধে এটি বন্ধ হয়ে যায়।
আফগানিস্তান জাতীয় জাদুঘর যা কাবুলের মিউজিয়াম নামে পরিচিত, আফগানিস্তানের কাবুল শহরের কেন্দ্রের ৯ কিমি দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি দ্বিতল ভবন জাদুঘর ।
আফগানিস্তানে কাবুলের শহরতলী থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবস্থিত। এটি দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সর্বাধিক সামরিক ঘাঁটির অন্যতম হিসাবে স্বীকৃত ।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.