Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ডিমাসা কাছাড়ি রাজ্য (উচ্চারণ: kəˈʧɑ:rɪ) অসমে অবস্থিত একটি জনজাতীয় রাজ্য ছিল। এর শাসকরা ছিল ডিমাসা জনগোষ্ঠীয় লোক। স্থানীয় জনজাতীয় নেতা শাসন করা কাছাড়ি এবং অন্য রাজ্যগুলি (কামতা, চুতীয়া) কামরূপ রাজ্যের পর মধ্যযুগীয় অসমে গড়ে উঠেছিল। কাছাড়ি রাজ্যের অংশবিশেষ ব্রিটিশদের আগমন পর্যন্ত টিকে ছিল। এই রাজ্যের নামে অসমের দুটি জেলা আছে: কাছাড় এবং উত্তর কাছাড় (ডিমা হাসাও জেলা)।
কাছাড়ি রাজ্যের শুরুর ইতিহাস স্পষ্ট নয়।[1] পরম্পরাগত তথ্য অনুসারে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য কাছাড়ি ডিমাসাদের প্রাচীন কালে কামরূপ রাজ্য ত্যাগ করতে হয়েছিল। বহু লোক ব্রহ্মপুত্র (ডিমাসায় দিলৌ) পার করতে না পেরে উত্তর পারে থেকে গেছিল এবং তারা পরে বড়ো বলে পরিচিত হয়েছিল। নদী পার করা লোকেরা ডিমাসা (অর্থ- নদীর পুত্র) বলে পরিচিত হ'ল। ব্রহ্মপুত্রের কাছাড়ি ঘাট এরই প্রমাণ বলে ভাবা হয়।[2] ডিমাসারা শদিয়ার দেবী কেচাই খাইটিকে পূজা করত।[3] কাছাড়িরা নিজেদেরকে মহাভারতের ভীম এবং ডিমাসার রাজকুমারী হিড়িম্বার পুত্র ঘটোৎকচের বংশধর বলে পরিচয় দেয়। পরে তারা মাইবঙে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে।
অসমের গোলাঘাট জেলার দৈয়াং নদীর পারে থাকা কাসমারী সম্ভবত ডিমাপুরের আগে কাছাড়ি রাজ্যের প্রথম রাজধানী ছিল।
হিড়িম্বা নাম থেকেই ডিমাপুর নামটি হয়েছে। এর প্রাচীন নাম হিড়িম্বাপুর। অপভ্রংশ হয়ে ডিম্বাপুর এবং শেষে ডিমাপুর নাম হয়ে যায়। অন্য এক বিশ্বাস মতে, ডিমাসা এবং পুর (নগর) থেকে ডিমাপুর নামটি এসেছে। আহোম বুরঞ্জীতে ডিমাপুরকে "সে-ডিমা" অর্থাৎ ডিমাসার নগর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৩শ শতকে ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ পারে দিখৌর থেকে কলং নদী পর্যন্ত বর্তমান ধানশিরী নদীর উপত্যকা এবং ডিমা হাসাও জেলা নিয়ে কাছাড়ি রাজ্য বিস্তার হয়েছিল।
আহোমরা চুতীয়া এবং কাছাড়ি রাজ্যের মধ্যে বরাহী এবং মটক লোক থাকা অঞ্চলে রাজ্য স্থাপন করেছিল। ১৪৯০ সালে প্রথমবারের জন্য আহোম-কাছাড়ির সংঘাত হয় এবং আহোমদের পরাজয় হয়। শান্তি স্থাপনের জন্য একজন আহোম রাজকুমারীকে কাছাড়ি রাজাকে দেওয়া হয় এবং কাছাড়িরা ধানশিরীর সেসব অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু আহোমরা শক্তিশালী হয়ে ওঠার সাথে সাথে কাছাড়িদেরকে পশ্চিমে ঠেলে দেয়। ১৫২৬ সালে ডিমাসা কাছাড়িরা আহোমদেরকে একটি যুদ্ধে পরাস্ত করলেও সেই বছরেই অন্য একটি যুদ্ধে হার মানে। ১৫৩১ সালে আহোমরা ডিমাপুর আক্রমণ করে কাছাড়ি রাজকুমার ডেটচুঙকে করতলগত রাজা করে এবং বছরে ২০টা হাতি এবং ১ লাখ টাকার কর আদায়ের চুক্তি করে। পাঁচবছর করতলগত হয়ে থাকার পরে ডেটচুঙ আহোমদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাতে ১৫৩৬ সালে আহোমরা পুনরায় ডিমাপুর আক্রমণ করে ডেটচুঙকে হত্যা করে। ডিমাসা কাছাড়িরা ডিমাপুর ত্যাগ করে দক্ষিণ দিকে মাইবঙে নতুন রাজধানী স্থাপন করে। ডিমাসা ভাষা মতে, "মাই" মানে "ধান" এবং "বং" মানে "বহুত"।
মাইবঙে ডিমাসা কাছাড়িদের ওপর ব্রাহ্মণদের প্রভাব পড়ে। ডেটচুঙের পুত্র নির্ভয় নারায়ণ বলে হিন্দু নাম নেন এবং তার ব্রাহ্মণ গুরুকে ধর্মাধি উপাধি দেন। হিড়িম্বার নাম থেকে রাজ্যটির নাম হেরম্ব এবং শাসকরা হেরম্বেশ্বর বলেও পরিচিত হয়।
মাইবঙের ব্রাহ্মণ কিংবদন্তি মতে, বনবাসের সময় পাণ্ডবরা কাছাড়ি রাজ্যে এসেছিল। ভীম এবং কুমারি হিড়িম্বার প্রেম হয়ে গন্ধর্ব বিবাহ হয়। তাদের ঘটোৎকচ নামক এক পুত্রের জন্ম হয় যে বহু বছর কাছাড়ি রাজ্য শাসন করেছিল। তার বংশ চতুর্থ শতক পর্যন্ত "ডিলাও" নদী (অর্থ ""দীর্ঘ নদী"") বা এখানকার ব্রহ্মপুত্রের পারের বৃহৎ অঞ্চল শাসন করেছিল। বিশ্বাস করা হয় যে, কাছাড়িরা মহাভারতের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল।
মাইবঙের রাজাকে শাসনক্ষেত্রে বরভাণ্ডারী এবং তার নিচের পাত্র এবং ভাণ্ডারী দ্বারা গঠিত মন্ত্রী পরিষদ সহায়তা করেছিল। মন্ত্রী এবং অন্য কর্মচারীরা ডিমাসা জনগোষ্ঠীয় লোক ছিল। ডিমাসা লোকদের প্রায় ৪০টা ফৈদ বা ছেংফং ছিল। প্রত্যেক ফৈদ রাজপরিষদ বা মেল নিয়ে একজন করে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল। রাজা নির্বাচন করার ক্ষমতা থাকা এই পরিষদ মেল মণ্ডপে ছেংফঙের মর্যাদা অনুসারে বসেছিল।
১৭শ শতকে ডিমাসা কাছাড়ির রাজ্য কাছাড়ের ভৈয়াম পর্যন্ত ব্যাপ্ত হয়। ভৈয়ামের লোক প্রত্যক্ষভাবে কাছাড়ি রাজার পারিষদে অংশ না নিলেও ধর্মাধি গুরু এবং ব্রাহ্মণদের অশেষ প্রভাব ছিল। ভৈয়ামের প্রাজাদেরকে তাদের খেল হিসাবে ভাগ করা হয়েছিল এবং রাজা উজীর নামের কর্মচারীর মাধ্যমে কর আদায় করতেন।
কোচ সেনাপতি চিলারায় ১৫৬২ সালে দুর্লভ নারায়ণের সময়ে কাছাড়ি রাজ্য আক্রমণ করে এবং কোচের করতলগত করে। বছরে করের পরিমাণ ছিল সত্তর হাজার মোহর এবং ষাটটা হাতী। থাকা কিছু কোচ সৈন্য দেহান নামে পরিচিত হয়ে কাছাড়ি রাজ্যে বিশেষ সুবিধা লাভ করে। অবশ্য চিলারায়ের মৃত্যুর পরে কোচ রাজ্যে সৃষ্টি হওয়া গৃহকোন্দলের সুযোগ নিয়ে কাছাড়িরা পুনরায় নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করে।
সপ্তদশ শতকের শুরুতে ডিমরুয়া অঞ্চলে জয়ন্তীয়া রাজ্যের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধে জয়ন্তীয়া রাজা ধনমাণিকের পরাজয় হয়েছিল। ধনমাণিকের মৃত্যুর পরে কাছাড়ি রাজা শত্রুদমন যশমাণিককে জয়ন্তীয়া রাজা করেন। তিনি কূটনীতির মাধ্যমে ১৬১৮ সালে আহোমদের সঙ্গে কাছাড়ির সংঘাতের সৃষ্টি করেন। কাছাড়িদের রোধ করে শক্তিশালী রাজা শত্রুদমননগাঁও জেলার ডিমরুয়া, উত্তর কাছাড়, ধানশিরী উপত্যকা, কাছাড়ের ভৈয়াম এবং পূর্ব সিলেটের কিছু অংশ শাসন করেছিলেন। সিলেট বিজয়ের পরে তিনি নিজের নামে মোহর তৈরি করান।
খাসপুরের অঞ্চল পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। ১৬শ শতকে চিলারায়ের অধিকার করা এই অঞ্চল চিলারায়ের এক ভাই কমলনারায়ণ শাসন করতেন। কোচ রাজ্যের শক্তি কমে আসার পরে খাসপুর স্বাধীন হয়ে যায়। ১৮ শ শতকের মধ্যভাগে শেষ কোচ শাসকের উত্তরাধিকারী অবিহনের মৃত্যু হাওয়ায় এই অঞ্চল যৌতুক হিসাবে কাছাড়ি রাজার অধীনে যায়। একত্রীকরণের পরে ডিমাসা কাছাড়ি রাজ্যের রাজধানী বর্তমান শিলচরের কাছে খাসপুরে স্থানান্তরিত করা হয়।
১৯শ শতকের শুরুতে আহোম রাজ্যর সঙ্গে ডিমাসা কাছাড়ি রাজ্যটির অধীনে যায়। শেষ রাজা গোবিন্দচন্দ্রকে ১৮২৬ সালের ইয়াণ্ডাবু সন্ধির পরে ব্রিটিশরা পুনরায় স্থাপন করে। কিন্তু তিনি পার্বত্য অঞ্চল শাসন করা তুলারাম সেনাপতিকে বশ করতে অসমর্থ হন। তুলারাম সেনাপতি দক্ষিণে মাহুর নদী এবং নাগা পাহাড়, পশ্চিমে দৈয়াং নদী, পূবে ধানশিরি নদী এবং উত্তরে যমুনা এবং দৈয়াং নদীর অঞ্চলে রাজত্ব করেছিলেন। ১৮৩০ সালের ২০ এপ্রিল মণিপুরের রাজকুমার গম্ভীর সিঙের প্ররোচনায় কয়েকজন মণিপুরী লোক গোবিন্দচন্দ্রকে হত্যা করে। ১৮৩২ সালে তুলারাম সেনাপতিকে পেন্সন দিয়ে ব্রিটশরা তার শাসিত অঞ্চল অধিগ্রহণ করে (উত্তর কাছাড় জেলা); এবং ১৮৩৩ সালে গোবিন্দচন্দ্রের অঞ্চল কাছাড় জেলা হিসাবে অধিগ্রহণ করা হয়।[4]
ডিমাপুরে
মাইবঙে
খাসপুরে
পার্বত্যতে
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.