কাইপার বেষ্টনী
From Wikipedia, the free encyclopedia
কাইপার বেষ্টনী (ইংরেজি ভাষায় : Kuiper belt / Edgeworth–Kuiper belt )[1] হলো সৌরজগৎের মূল গ্রহসমূহের বহিঃস্থ রিং আকৃতির ( circumstellar disc) অঞ্চল । অঞ্চলটি সূর্য থেকে ৩০ মহাজাগতিক একক (অর্থাৎ নেপচুন গ্রহের কক্ষপথ) থেকে ৫০ মহাজাগতিক একক দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত।[2] এটি গ্রহাণু বেষ্টনীর মত, কিন্তু আকারে অনেক বড়: এটি গ্রহাণু বেষ্টনীর চেয়ে প্রায় ২০ গুণ প্রশস্ত এবং ২০-২০০ গুণ বেশি ভরবিশিষ্ট।[3][4] গ্রহাণু বেষ্টনীর মতই কাইপার বেষ্টনীটি মূলত ক্ষুদ্রাকৃতির বস্তু বা সৌরজগৎের সৃষ্টির সময়কার অবশিষ্টাংশ নিয়ে গঠিত। গ্রহাণু বেষ্টনীর বস্মূতুগুলো সাধারণত শিলা ও ধাতুর সমন্বয়ে গঠিত হলেও কাইপার বেষ্টনীর বস্তুগুলি মূলত হিমায়িত উদ্বায়ী পদার্থ (যাদেরকে "বরফ" নামে অভিহিত করা হয়), যেমন মিথেন, অ্যামোনিয়া ও পানি নিয়ে গঠিত।কাইপার বেষ্টনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত তিনটি বামন গ্রহ (প্লুটো , হাউমেয়া ও মেকিমেকি) রয়েছে । ধারণা করা হয় যে, সৌরজগৎের কিছু উপগ্রহ ( যেমনঃ নেপচুন গ্রহের ট্রাইটন, শনি গ্রহের ফিবি ) এই অঞ্চল থেকেই উৎপত্তি লাভ করেছে। [5][6]
Sun Jupiter trojans Giant planets: J · S · U · N Centaurs |
Scattered disc Neptune trojans | Kuiper belt
Source: Minor Planet Center, and others
ডাচ-আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরার্ড কাইপারের নামানুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় 'কাইপার বেষ্টনী' । যদিও তিনি কাইপার বেষ্টনী সম্পর্কে ভবিষৎবাণী করেননি । ১৯৯২ সালে 1992 QB1 আবিষ্কৃত হয় । ১৯৩০ সালে প্লুটো আবিষ্কারের পর এটিই ছিল কাইপার বেল্টের প্রথম আবিষ্কৃত বস্তু । এর পরে প্রায় এক হাজারের মত "কাইপার বেষ্টনী বস্তু" আবিষ্কৃত হয়েছে এবং ধারণা করা হয় ১০০ কিলোমিটারের বেশি ব্যাসার্ধবিশিষ্ট এই ধরনের কাইপার বেষ্টনী বস্তুর সংখ্যা ১০০ হাজারেরও বেশি।[7] প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল যে কাইপার বেষ্টনী পর্যায়বৃত্ত ধূমকেতুগুলির (periodic comet) একটি প্রধান আধার; এই ধূমকেতুগুলির কক্ষপথ ২০০ বছর বা তার কম সময়ের জন্য টিকে থাকে। তবে ১৯৯০-এর দশকের মাঝমাঝি থেকে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে কাইপার বেষ্টনীটি একটি গতিশীলরত স্থায়ী অঞ্চল এবং ধূমকেতুগুলির মূল উৎস হল সূর্য থেকে আরও দূরে অবস্থিত বিক্ষিপ্ত চাকতি (scattered disc) নামক একটি অঞ্চল যেটি ৪.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে নেপচুনের বাহ্যিক গতির কারণে গঠিত হয়েছিল ।[8] বিক্ষিপ্ত চাকতির এর বস্তুগুলো যেমনঃ এরিস এর কক্ষপথ এত উৎকেন্দ্রিক যে এটি সূর্য থেকে ১০০ মহাজাগতিক এককের মত দূরত্বও অতিক্রম করে । [[./Kuiper belt#cite_note-PlutoSize-10 [nb 1]]][nb 1]
কাইপার বেল্টকে তত্ত্বীয়ভাবে প্রমাণিত 'উর্ট মেঘের' সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয় ; যেটি আরও হাজার গুণ দূরবর্তী এবং প্রায় গোলাকৃতির । কাইপার বেল্ট, বিক্ষিপ্ত চাকতি ও উর্ট মেঘের বস্তুগুলোকে একত্রে নেপচুনোত্তর বস্তু (Trans-Neptunian objects) বলা হয় ।[11]
প্লুটো কাইপার বেল্টের বৃহত্তম ও সবচেয়ে ভারী সদস্য এবং নেপচুনোত্তর বস্তুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ভরের দিক থেকে দ্বিতীয় ( প্রথম এরিস )। আদিতে প্লুটোকে একটি গ্রহ হিসেবে গণ্য করা হলেও ২০০৬ সালে এটিকে একটি বামন গ্রহ হিসেবে পুনঃশ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে । গঠনগত দিক থেকে প্লুটোর সাথে কাইপার বেষ্টনীর অন্যান্য অনেক বস্তুর সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় । এর কক্ষপথের পর্যায়কালের বৈশিষ্ট্য 'প্লুটিনোস' ( Plutinos ) নামক এক শ্রেণির কাইপার বেষ্টনী বস্তুদের(KBO: Kuiper belt object ) সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ । প্লুটো ছাড়াও নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে আরও চারটি বামন গ্রহের সন্ধান মিলেছে। এগুলিকে প্লুটোর সম্মানে "প্লুটয়েড" (অর্থাৎ "প্লুটো-সদৃশ") নামে ডাকা হয়।
উল্লেখ্য যে, ২৪ আগস্ট ২০০৬ সালে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে প্লুটোর গ্রহত্ব বাতিল করলে বামন গ্রহত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।