Loading AI tools
ইতিহাসের বিভিন্ন দিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ককেশাসের ইতিহাস বলতে মূলত জর্জিয়া,আজারবাইজান, আর্মেনিয়া এবং আংশিকভাবে ইরান ও রাশিয়ার ইতিহাসকে বোঝায়। এটি দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ ও উত্তর-পশ্চিম এশিয়ার সম্মিলিত ইতিহাস। এ অঞ্চলটি সুপ্রাচীন ইতিহাসের দ্বারা সমৃদ্ধ এবং ঐতিহাসিকভাবে বহুল আলোচিত। ককেশাসের ইতিহাস প্রভাবশালী জাতি ও তাদের সংস্কৃতির দ্বারা আবর্তিত হয়েছে।
আফ্রিকা মহাদেশের বাহিরে ককেশাস অঞ্চলেই (নির্দিষ্ট করে জর্জিয়া) পাওয়া যায় সুপ্রাচীন মানব কঙ্কাল।[1] ককেশাসের উত্তরাঞ্চল শক ও রুশজাতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে এবং দক্ষিণাঞ্চলে মূলত পারস্য,আনাতোলিয়া ও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আসিরিয়ার বিভিন্ন সাম্রাজ্য আর পরাশক্তি আধিপত্য করেছে। মধ্যযুগে এ অঞ্চলে উত্তোলিত হয়েছে ইসলামের বিজয় পতাকা। এরপর আরম্ভ হয় সোভিয়েত আধিপত্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি রণভূমিতে পরিণত হয়। নাৎসি জার্মান বাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত এ অঞ্চলে আক্রমণ করে। তারা ভলগা নদীর তীরবর্তী অঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে বাকুর তৈলোৎপাদনকারী অঞ্চলে আক্রমণ করে। শীঘ্রই তারা স্ট্যালিনগ্রাডের যুদ্ধে পরাজিত হয় এবং ষষ্ঠ জার্মান বাহিনীর পরাজয় ঘটে।[2]
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে কয়েকটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। আজারবাইজান,জর্জিয়া ও আর্মেনিয়া ছাড়াও কয়েকটি অর্ধস্বীকৃত রাষ্ট্র আর্তসাখ,আবখাজিয়া ও দক্ষিণ ওসেশিয়া আবির্ভূত হয়।
আফ্রিকা মহাদেশের বাহিরে ককেশাস অঞ্চলে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে জর্জিয়াতে সবচেয়ে প্রাচীন মানব কঙ্কাল পাওয়া যায়।[3] ককেশাস অঞ্চলেই সম্ভবত দ্রাক্ষাচাষ আরম্ভ হয়। জর্জিয়া অঞ্চলে ৮০০০ বছর পূর্বের দ্রাক্ষাফল চাষের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।[4]
উরাতীয় লিপিগুলো থেকে এ অঞ্চলের কিছু প্রাচীন ইতিহাস জানা যায়।[5] ব্রোঞ্জযুগে এ অঞ্চলে অনেকগুলো সভ্যতা ও সংস্কৃতির উৎপত্তি হয়।
•মায়কোপ সভ্যতা
•লেয়লা-তেপে
•কুরা-আরাক্সেস
•ক্রিয়ালেতি
•কুরাগান
•খোজালি-গাদাবেয়
•কোবান
•নাইরি
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রাজ্য হলো:
•শুব্রিয়া রাজ্য
•দিয়াউয়েহি রাজ্য
•উরারতু রাজ্য
খ্রিষ্টপূর্বযুগে আর্মেনীয় উচ্চভূমিতে গড়ে ওঠে শুব্রিয়া রাজ্য। আদাদ নিরারি (দ্বিতীয়) একজন দুর্দান্ত আসিরীয় সম্রাট ছিলেন[6] এবং শুব্রিয়ারাজ শাত্তুয়ারা মিত্তানিকে পরাজিত করে শুব্রিয়াকে করদ রাজ্যে পরিণত করেন।[7] দিয়াউয়েহি রাজ্য ছিল এ অঞ্চলে বসবাসরত কয়েকটি জাতির একতাবদ্ধ রাজ্য যাতে প্রাচীন আর্মেনীয়,হুরীয়[8] ও প্রাচীন কার্তভেলীয়দের একতা গড়ে উঠেছিল।
ককেশাসে আধিপত্যকারী সাম্রাজ্যের মধ্যে পারস্যের হাখমানেশী সাম্রাজ্য,পার্থিয়ান সাম্রাজ্য,সাসানি সাম্রাজ্য অন্যতম। অঞ্চলটি ইউরোপের অন্যতম পরাশক্তি রোমান সাম্রাজ্যের দ্বারাও শাসিত হয়েছে। এ অঞ্চলের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আর্মেনীয় প্রাচীন রাজ্য হলো:
•ওরোন্তিদ
•আর্তশেসীয়
•আর্শাকুনি
ককেশীয় আলবেনিয়া, ককেশীয় আইবেরিয়া ,লাজিকা-এগ্রিসি রাজ্যগুলো প্রাচীন যুগে গড়ে ওঠে এখানে।
ককেশাস অঞ্চল মধ্যযুগে আরব খিলাফতগুলো যেমন: খোলাফায়ে রাশেদিন,উমাইয়া খিলাফত ও আব্বাসি খিলাফত দ্বারা শাসিত হয়। আরব শক্তিগুলোর পর আজারবাইজানে আরব বংশোদ্ভূত স্বাধীন স্থানীয় শাসক শিরওয়ানশাহদের উদ্ভব হয়। এটি ৮৩১-১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয়। এ সময় সুদৃশ্য বিভিন্ন স্থাপত্যকলার নিদর্শন পরিলক্ষিত হয়। যেমন:শিরওয়ানশাহদের প্রাসাদ। প্রাসাদটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্গত।[9] ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মোঙ্গল আক্রমণে ককেশাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হয়। এই অঞ্চল মোঙ্গল সাম্রাজ্যের ইলখানাত নামক খানাতের অন্তর্ভুক্ত হয়। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ও সেলজুকদের মধ্যে ককেশাস অঞ্চলটি বিভক্ত হয়ে যায় মধ্যযুগে। জর্জিয়ার রানি তামার এ অঞ্চলটিতে (মূলত জর্জিয়া ও দক্ষিণাঞ্চলীয় আর্মেনিয়া) স্বর্ণযুগের সূচনা করেন। মধ্যযুগের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জর্জীয় রাজ্য হলো:
•আবখাজিয়া রাজ্য
•তাও-ক্লারজেতি রাজ্য
•কাখেতি-হেরেতি রাজ্য
•ইমেরেতি রাজ্য
•সাম্ত্সখে-সাতাবাগো রাজ্য
•কাখেতি রাজ্য
•কার্তলি রাজ্য
ষোড়শ শতাব্দীতে ককেশাস অটোম্যান ও সাফাবি সাম্রাজ্যের রণভূমিতে পরিণত হয়। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দ-১৫৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই দুই শক্তির মধ্যে ককেশাস অঞ্চলের বিভিন্ন বিভক্তির সৃষ্টি হয়। ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে আমাসিয়া শান্তিচুক্তির মাধ্যমে এ অঞ্চলে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসে।[10] এতে জর্জিয়ার ইমেরেতি রাজ্য অটোম্যানদের করদ রাজ্যে পরিণত হয়। ককেশাস অঞ্চলের পশ্চিমাংশে অটোম্যান আধিপত্য নিশ্চিত হয়। সাফাবি সাম্রাজ্য সুরামি উচ্চভূমি ও কার্তলি-কাখেতি রাজ্যে আধিপত্য বিস্তারে সমর্থ হয়। অর্থাৎ পূর্বাংশে সাফাবি আধিপত্য নিশ্চিত হয়। তবুও পরবর্তীতে অটোম্যান সুলতান চতুর্থ মুরাদকে সাফাবিদের কাছে হারানো ভূমি পুনরুদ্ধার করতে হয়েছিল।[11]
এরপর রুশ সাম্রাজ্যের আবির্ভাবের পর উত্তর ককেশীয় অঞ্চলসমূহ রুশদের অধীনস্থ হয়। রুশ-পারসিক যুদ্ধে (১৭২২-১৭২৩) পারস্য ককেশাসের অনেক অঞ্চল হারিয়ে ফেলে।[12] পারস্য এগুলো কিছু বছর পর উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে জর্জিয়ার রাজা এরেকলে রুশ সাম্রাজ্যের সাথে জর্জিয়েবস্কিস চুক্তি করে। যদিও রাজা এরেকলে পারসিকদের সামন্ত রাজা রূপে পরিচিত ছিলেন তবুও তিনি স্বতন্ত্রভাবে শাসন করতে সক্ষম হন।
১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে শাকি খানাত নামক শক্তিশালী খানাত প্রতিষ্ঠিত হয় ককেশাসে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.