Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ওড়ছা রাজ্য (উড়ছা, ওরছা, ওন্দছা এবং টিকামগড় নামেও পরিচিত)[1] ছিলো ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অবস্থিত একটি দেশীয় রাজ্য, যা বর্তমানে ভারতের অন্তর্গত৷ ব্রিটিশ আগমনের পূর্বে এটি বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলের একটি রাজ্য ছিল।
ওড়ছা রাজ্য ओरछा | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
ব্রিটিশ ভারত দেশীয় রাজ্য | |||||||
১৫৩১–১৯৫০ | |||||||
ইম্পেরিয়াল গেজেটিয়ার অব ইন্ডিয়া থেকে প্রাপ্ত ওড়ছা রাজ্যের মানচিত্র | |||||||
রাজধানী | ওড়ছা, টিকামগড় | ||||||
আয়তন | |||||||
• ১৯০৮ | ৫,৪০০ বর্গকিলোমিটার (২,১০০ বর্গমাইল) | ||||||
জনসংখ্যা | |||||||
• ১৯০৮ | ৩,২১,৩৬৪ | ||||||
ইতিহাস | |||||||
• প্রতিষ্ঠিত | ১৫৩১ | ||||||
১৯৫০ | |||||||
| |||||||
বর্তমানে যার অংশ | ভারত |
সম্রাট আকবর এর শাসনকালে ওড়ছার মহারানী চতুর্ভুজ মন্দির নির্মাণ করান।[2] ১৫৫৪ থেকে ১৫৯১ খ্রিস্টাব্দ অবধির সময়কালের মধ্যে রাজপরিবারের এই মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন হয়।[3] ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কোম্পানি শাসনের সময় কালে এটি মধ্য ভারত এজেন্সির অন্তর্গত বুন্দেলখণ্ড এজেন্সির অংশীভূত হয়। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতার পর এই দেশীয় রাজ্যটি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে রুদ্রপ্রতাপ সিংহ ওর্ছা রাজ্যটির প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই রাজ্যের প্রথম রাজা হন। গড়কুণ্ডারের নিকট তার একটি দুর্গ ছিল তিনি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে খেয়াল করে নিজের রাজ্য প্রতিষ্ঠার দিকে মনোনিবেশ করেন। তিনি বেতোয়া নদী বরাবর ওড়ছাতে পৌঁছান এবং সেখানেই তার রাজধানী স্থাপন করেন। রাজধানীর প্রতিষ্ঠার পরেই তিনি মারা যান।[4]
রুদ্র প্রতাপ সিংহ মারা গেলে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ভারতী চাঁদ রাজ সিংহাসনে আরোহন করেন। ১৫৫৪ খ্রিস্টাব্দে অপুত্রক (নিঃসন্তান)ভাবে তিনি মারা গেলে তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা মধুকর শাহ রাজ সিংহাসনে বসেন।[4] রাজা ভারতী চাঁদ এবং রাজা মধুকর উভয়কে রাজ্য শাসন কালে বহুবার আফগান শাসক ইসলাম শাহ সুরি (১৫৪৩-১৫৫৩) এবং মুঘল সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৫) আক্রমণ প্রতিহত করতে হয়েছে। এই সমস্ত ঘটনাই রাজকবি কেশবদাসের লেখনীতে এবং ১৫৭৭ থেকে ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আকবরের সম্মুখে রাজা মধুকরের ভূমি ছেড়ে দেওয়ার কথা আকবরনামাতে উল্লেখ রয়েছে। ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে তার এবং তার রাজ্যের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়লে তিনি আকবরের সামন্ত রাজ্যে পরিণত হতে বাধ্য হন এবং আজীবন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার প্রতিজ্ঞা করেন, তবে অপর একজন ঐতিহাসিক আবদুল কাদের বদাউনির লেখা অনুসারে তিনি ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে মুঘল শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।[5]
মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে তার সামন্ত বীরসিংহ দেও এই রাজ্যের শাসক ঘোষিত হয়। [6] ১৬২৬ কিংবা ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে তার রাজত্বের সমাপ্তি ঘটে।[7] রাজার মৃত্যুর পূর্ব সময় ওর্ছা রাজ্য রাজনৈতিক এবং স্থাপত্যবিষয়ক সুকৌশলে শিখরে পর্যবসিত হয়। ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত জাহাঙ্গীর মহল এবং সাবন ভাদোঁ মহল তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। [6]
খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে রাজা জুঝার সিংহ মুঘল সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও পরাজিত হন। ১৬৪১ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট শাহ জাহান পূর্বতন রাজার ভাইকে রাজ সিংহাসনে বসান। এই রাজ্যটি ছিল একমাত্র বুন্দেল রাজ্য যা অষ্টাদশ শতাব্দী মারাঠা সাম্রাজ্য বিস্তারে মারাঠাদের অংশীভূত হয়নি।[7]
১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে ওর্ছার ৫২ মাইল (৮৪ কিমি) কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে অবস্থিত টিকামগড়ের তেহরিতে রাজ্যে নতুন রাজধানী স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে এই শহরটিতে রয়েছে টিকামগড় দুর্গ। [1]
১৮৪৮ থেকে ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দ অবধি ছিল রাজা হামির সিং এর রাজত্বকাল, ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি মহারাজা উপাধি পান। তাহার রাজত্বকালে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ওর্ছা এবং দাতিয়ার রাজা নিজেদের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ঝাঁসির ওপর একত্রিত আক্রমণ করে ওই বাড়ির অঞ্চল নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করার পরিকল্পনা করেন। যদিও উভয়ের সৈনবল ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাঈয়ের সৈন্য বাহিনীর নিকট ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে পরাজয় স্বীকার করে। ওই সময়ে তিনি ঝাঁসিকে ব্রিটিশদের অধীনে রাখতে চেয়েছিলেন, তার কারণ সেখানে ব্রিটিশদের পর্যাপ্ত সৈন্যবল ছিল না। [8] মহারাজা প্রতাপ সিংহ ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে ওর্ছা রাজ্যের রাজ সিংহাসনে বসেন। তিনি আজীবন রাজ্যের উন্নতি রাজ্যের পূর্ত এবং শেষ বিষয়ক বিভিন্ন কাজের জন্য উল্লেখযোগ্য হয়ে রয়েছেন।
১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে রাজ্যের সীমানা ছিল ২৪° ২৬′ থেকে ২৫° ৪০′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭৮° ২৬′ থেকে ৭৯° ২১′ পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যে। বুন্দেলখণ্ড এজেন্সির এই রাজ্যটি ২,০৮০ বর্গমাইল (৫,৪০০ বর্গকিলোমিটার) অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল।[1] ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এর জনসংখ্যা ছিল ৩,২১,৬৩৪ জন।[9] রাজ্যটি ছিল বুন্দেলখন্ড অঞ্চলের সবচেয়ে পুরনো[7] এবং সর্বাধিক তোপযুক্ত সেলামী তথা ১৫ তোপ সেলামী এবং ওই অঞ্চলের সর্বপ্রথম মহারাজা উপাধি প্রাপ্ত দেশীয় রাজ্য।
রাজা প্রতাপ সিংহের উত্তরসূরি রাজা বীরসিংহ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের পয়লা জানুয়ারি তারিখে ভারতীয় অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য সম্মতি স্বাক্ষর করেন। সেই সময়ের দেশীয় রাজ্যটিকে স্বাধীন ভারতের বিন্ধ্যপ্রদেশ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রদেশের অংশীভূত হয়।
কোম্পানি শাসন জারি হওয়ার পূর্বে এই রাজ্যের শাসকগণ রাজা উপাধিতে ভূষিত হতেন।
ব্রিটিশ শাসনকালে প্রাথমিকভাবে কোম্পানির শাসন এবং পরে ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্গত হয় এই রাজ্যটি। ১৮৬৫ এর শাসকগণ মহারাজা উপাধিতে ভূষিত হন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.