এক্সওয়াই লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থা
উন্নত প্রাণীর লিঙ্গ-নির্ধারণ পদ্ধতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
এক্স ওয়াই লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোম হচ্ছে লিঙ্গ নির্ধারণের একপ্রকার ব্যবস্থা যা পাওয়া যায় মানুষে অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীতে, কিছু পতঙ্গ যেমন: (ড্রসোফিলায়), এবং কিছু উদ্ভিদ যেমন (Ginkgo) তে। এই ব্যবস্থায় জীবে এক লিঙ্গ দেখা যায়। একে গণোজোমও বলে। নারীদের একই রকম দুইটা সেক্স ক্রোমোজোম (XX) থাকে, যাকে বলা হয় হোমোগ্যামেটিক সেক্স। পুরুষে ভিন্ন রকম দুইটা সেক্স ক্রোমোজোম (XY) থাকে, যাকে বলা হয় হেটারোগ্যামেটিক সেক্স।


এই পদ্ধতিটা জেডডব্লিউ লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। এই পদ্ধতি খুজে পাওয়া যায় পাখিতে, কিছু পতঙ্গে এবং অনেক সরীসৃপে। যেখানে হেটারোগ্যামেটিকই হবে নারী।
কিছু সরীসৃপে তাপমাত্রাই লিঙ্গ নির্ধারণ করে। একে লিঙ্গ নির্ধারণে তাপমাত্রার-নির্ভরতা বলে।
কার্যপদ্ধতি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
সকল জীবে বিদ্যমান ক্রোমোজোমের জীনসমূহ ডিএনএ এর কোডন দিয়ে তৈরী। মানুষে, অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীতে এবং কিছু প্রজাতিতে যৌন প্রজনন করার জন্য দুইটা ক্রোমোজোম থাকে। যার একটি এক্স ক্রোমোজোম এবং অপরটি ওয়াই ক্রোমোজোম [কে?]। এই পদ্ধতিতে একটি এক্স ক্রোমোজোম এবং একটি ওয়াই ক্রোমোজোম মিলিতভাবে ভ্রনের লিঙ্গ নির্ধারণে ভূমিকা পালন করে। এই সকল প্রজাতিতে ওয়াই ক্রোমোজোমে কিছু জিন থাকে যা ভ্রুণে পৌরুষত্ব্য সৃষ্টি করে। তাই যদি ভ্রুণে একটি এক্স এবং একটি ওয়াই ক্রোমোজোম থাকে তবে সন্তানে পুরুষ চরিত্রের এবং যদি ভ্রুণে দুইটিই এক্স ক্রোমোজোম থাকে তবে ভ্রুণ নারী হিসেবে বড় হবে।
মানুষ
মানব শুক্রাণু এর অর্ধেক এক্স ক্রোমোজোম এবং বাকি অর্ধেক ওয়াই ক্রোমোজোম বহন করে।[১] (এসআরওয়াই) নামক একটি জিন ওয়াই ক্রোমোজমে থাকে। এটাই জাইগোটকে পুরুষ হওয়ার দিকে ধাবিত করে। এই প্রক্রিয়াটা শুরু হয় নিষেক এর পরপরই। এটা এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভর করেই মানুষে লিঙ্গের ভিন্নতা তৈরী হয়।[২] স্ত্রীদেহে কোশের মধ্যে দুটি এক্স ক্রোমোজোম বর্তমান, যাদের মধ্যে একটিতে এক্স-নিষ্ক্রিয়করণ ঘটে। ফলে একটি এক্স ক্রোমোজোম নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।এই নিষ্ক্রিয় এক্স ক্রোমোজোম বার বডি নামে পরিচিত।
অন্যান্য প্রজাতির মত মানুষের ক্রোমোজমে কিছু ব্যতিক্রম খুজে পাওয়া যায়, যা ফেনোটাইপিক সেক্সের অনুপাতের হিসাবের সাথে মিলে না। উদাহরনস্বরুপ: এক্স এক্স পুরুষ সিনড্রোম অথবা এক্স-ওয়াই নারী। এছাড়াও অস্বাভাবিক সেক্স ক্রোমোজম (অ্যানিউপ্লয়ডি) ও প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। যেমন: টার্নার সিনড্রোম যেখানে এক সেটই এক্স ক্রোমোজোম থাকে (XO)। দেখা যায় ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম যেখানে দুইটা এক্স ক্রোমোজোম, তার পাশাপাশি আরেক সেট ওয়াই ক্রোমোজম থাকে (XXY)। এছাড়াও এক্সওয়াইওয়াই লক্ষণ এবং এক্সএক্সওয়াইওয়াই লক্ষণ ও দেখা যায়[২] ত্রি-এক্স সিনড্রোম (তিনটি এক্স ক্রোমোজোম), ৪৮, XXXX, এবং ৪৯, XXXXX প্রকৃতিতে বিরল হলেও দেখা যায়।
অন্যান্য প্রাণী
বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীতে লিঙ্গ নির্ধারণ হয় ওয়াই ক্রোমোজোমের উপস্থিতির মাধ্যমে। ওয়াই ক্রোমোজোমের অনুপস্থিতেই নারী হয়।[৩]
এসআরওয়াই হচ্ছে লিঙ্গ নির্ধারক জীন যা থেরিয়ার (তৃণভোজী স্তন্যপায়ী জীব) ওয়াই ক্রোমোজোমে উপস্থিত থাকে।[৪] পুরুষ হতে প্রয়োজন এরকম সকল জীনই ওয়াই ক্রোমোজোমে থাকে না। অন্যান্য প্রজাতিতে (যেমন:Drosophila র প্রজাতি) use the presence of two X chromosomes to determine femaleness. One X chromosome gives putative maleness.ওয়াই ক্রোমোজমের উপস্থিতি প্রয়োজন হয় স্বাভাবিক পুরুষ হিসেবে বড় হওয়ার জন্য
অন্যান্য সিস্টেমসমূহ
পাখি এবং বিভিন্ন পতঙ্গে লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে জেডডব্লিউ লিঙ্গ-নির্ধারণ ব্যবস্থা নামক ব্যবস্থা দেখা যায়।যেখানে স্ত্রীরা হেটারোগ্যামেটিক (ভিন্ন গ্যামেট) (ZW), এবং পুরুষরা হোমোগ্যামেটিক (একইরকম গ্যামেট) (ZZ) হয়।
Hymenoptera গোত্রের অনেক পতঙ্গেই একটি ব্যবস্থা আছে হ্যাপ্লয়েড-ডিপ্লয়েড লিঙ্গ নির্ধারক ব্যবস্থা যেখানে পুরুষ হচ্ছে হ্যাপ্লয়েড (এক প্রস্থী ক্রোমোজোম) এবং নারী হচ্ছে ডিপ্লয়েড (যেখানে ক্রোমোজোম দুই জোড়া)
কিছু কিছু পতঙ্গে এক্স-০ লিঙ্গ নির্ধারণ ব্যবস্থা দেখা যায়। যেখানে নারীতে এক্সএক্স ক্রোমোজোম জোড়া থাকলেও পুরুষে শুধু একটাই এক্স ক্রোমোজম থাকে। আরেকটা এক্স ক্রোমোজোমের অভাবকে বুঝানোর জন্যই এক্স শুণ্য বলা হয়।
প্রভাব
তাৎপর্য
বিজ্ঞানীরা ভিন্ন লিঙ্গের এই ব্যবস্থা যেমন ফ্রুট মাছির উপর গবেষণা করছেন। এবং বুঝার চেষ্টা করছেন কীভাবে ভিন্ন লিঙ্গ ব্যবস্থার জিন প্রভাব বিস্তার করে প্রজনন, পরিপক্কতা[৫] এবং রোগসমূহের উপর।
মাতৃবৎ
মানুষ এবং অন্যান্য প্রজাতিতে শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করে দেয় পিতার ক্রোমোজোম। এক্স-ওয়াই ক্রোমোজোম ব্যবস্থায় নারীর ডিম্বাণুতে এক্স ক্রোমোজোম থাকে পুরূষের স্পার্ম এ হয় এক্স ক্রোমোজম অথবা ওয়াই ক্রোমোজোম থাকে। যার প্রভাবে নারী শিশুতে (এক্স-এক্স) অথবা ছেলে শিশুতে (এক্স-ওয়াই) ক্রোমোজোম থাকবে।
পুরুষ পিতার হরমোনের মাত্রা শুক্রাণুর লিঙ্গের অনুপাতে প্রভাব ফেলে।[৬] মায়ের হরমোনও শুক্রাণুকে নিষিক্ত হবার জন্য প্রভাবিত করে।
অন্যান্য স্তন্যপায়ীর মত মানুষের ডিম্বকোষের বাইরে স্বচ্ছ, ঘন, আবরণ থাকে, যাকে জোনা পেলুসিডা বলে। যাকে ভেদ করে অবশ্যই স্পার্মকে ডিম্বাণু নিষিক্ত করতে হবে। প্রথম দেখায় মনে হয় fertilization দুর্ভেদ্য।সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণা এটাই নির্দেশ করে যে, পেলুসিডা জৈব দ্বাররক্ষক হিসেবে ভূমিকা পালন করে,এবং রাসায়নিকভাবে অতিরিক্ত শুক্রাণু প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে।[৭]
সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে দেখা যায় মানুষের ডিম্বাণু এমন কিছু রাসায়নিক রস নিঃসরণ করে যার ফলে শুক্রাণু আকৃষ্ট হয়, এবং তাদের সাতারের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ডিম্বাণুর দিকে যায়। তবে সব শুক্রাণু প্রভাবিত হয় না।[৮]
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
লিঙ্গ নির্ধারণ নিয়ে প্রাচীন ধারণা
প্রাচীনকালে মানুষ ভাবত গর্ভাধানের সময় পুরুষ যত বেশি শুক্রাণু নারীর দেহে প্রবেশ করাতে পারবে,তার ভিত্তিতেই নবজাতকের লিঙ্গ নির্ধারিত হবে। এরিস্টটল দাবী করেন লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষ হচ্ছে পথপ্রদর্শক,[৯] যদি সে প্রজননের সময় নিজেকে সম্পুর্ণভাবে প্রকাশ করতে না পারে, তাহলে fetus নারী হিসেবেই বড় হবে।
২০ শতকের জিনবিদ্যা
Nettie Stevens এবং Edmund Beecher Wilson আলাদা আলাদা ভাবে গবেষণা করে ১৯০৫ সালে এক্স-ওয়াই লিঙ্গ নির্ধারণক্রোমোজোম ব্যবস্থা আবিষ্কার করেন। (বি:দ্র: ফ্যাক্টটা হল পুরুষে থাকে এক্স ওয়াই সেক্স ক্রোমোজোম, নারীতে থাকে এক্স-এক্স সেক্স ক্রোমোজোম)। তাই এই দুই বিজ্ঞানিকেই তাদের কাজের জন্য স্বীকৃতি দেওয়া হয়।[১০][১১][১২]
এটার অস্তিত্ব নিয়ে প্রথম সুত্র পাওয়া যায় আলফ্রেড জোস্ট নামক বিজ্ঞানীর একটি গবেষণা থেকে। এখান থেকেই বুঝা যায় স্তন্যপায়ী প্রাণীর শুক্রাশয় কিছুটা পরিবর্তিত হয়।[১৩] তিনি মাতৃ ইদুরের গর্ভেই ভ্রূণের প্রজনন ক্ষমতা রহিত করার পর দেখেন ইদুরটি স্ত্রীলিঙ্গ হিসেবেই বড় হচ্ছে। এছাড়াও তিনি দেখেন মাতা ইদুরের গর্ভে থাকা অবস্থায় যদি টেস্টোস্টেরণ হরমোন নি:সৃত না হয়, তবেও ইদুরটি নারী হিসেবে বড় হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১৯৫৯ সালে C. E. Ford এবং তার টীম, সচকিত হয়ে উঠেন জোস্টের আবিষ্কারের পর[১৪],তারা বুঝতে পারেন ফিটাস পুরুষ হিসাবে বড় হবার জন্য ওয়াই ক্রোমোজোম জরুরী। তারা যখন Turner's syndrome এ আক্রান্ত রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেন,(এ ধরনের রোগী বেড়ে উঠে একজন নারী হিসেবে কিন্তু তাদের ২৩ নং ক্রোমোজোম XX নয় বরং X0 অর্থাৎ এদের একসেট এক্স ক্রোমোজোম থাকলেও আরেক সেট এক্স ক্রোমোজোম থাকার কথা থাকলেও সেটা থাকে না, যাকে (hemizygous বলা হয়) একইসাথে জ্যাকব এবং স্ট্রং একজন পেশেন্টের কেস বর্ণনা করেন যার Klinefelter syndrome (XXY) ছিল। (এটা পুরুষদের হয় যাদের এক্স-ওয়াই ক্রোমোজোমের পাশাপাশি আরেক সেট এক্স ক্রোমোজোম থাকে) [১৫] এ থেকে বুঝা যায় ওয়াই ক্রোমোজমের প্রভাবেই পুরুষত্যের সৃষ্টি হয়।[১৬]
সকল পর্যবেক্ষণ থেকে একটাই ঐকমত্যে আসা যায় যে একটা প্রভাবশালী জিন শুক্রাশয়ের উন্নয়নে (TDF) ভূমিকা রাখে, যা অবশ্যই মানুষের ওয়াই ক্রোমোজোমেই বিদ্যমান।[১৬] এই টিডিএফ কে অন্বেষণের জন্য বিজ্ঞানীদের একটা দল গঠিত হয়।[১৭] ১৯৯০ সালে তারা ওয়াই ক্রোমোজমের এমন একটা এলাকা খুজে বের করেন,যা সন্তান ছেলে হবে কিনা তা নির্ধারণ করে। এর নাম রাখা হয় SRY (sex-determining region of the Y chromosome).[১৬]
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.