Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
একুশ দফা ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগ শাসনের অবসানের উদ্দেশ্য আওয়ামী মুসলীম লীগ, কৃষক-শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম এবং গণতন্ত্রী দলের সমন্বয়ে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট নামে একটি নির্বাচনী মোর্চা গঠিত হয়। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন কৃষক-শ্রমিক পার্টির সভাপতি এ. কে. ফজলুল হক, আওয়ামী মুসলীম লীগের সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং নেতা হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী। যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে ২১টি প্রতিশ্রুতি সহকারে যে নির্বাচনী কর্মসূচী ঘোষণা করা হয় তা একুশ দফা কর্মসূচী নামে পরিচিত।[1][2]
দফা | বিবরণ |
---|---|
১ | বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হবে। |
২ | বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি ও সমস্ত খাজনা আদায়কারী স্বত্ব উচ্ছেদ ও রহিত করে উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ এবং খাজনা হ্রাস ও সার্টিফিকেট মারফত খাজনা আদায় রহিত করা হবে। |
৩ | পাট ব্যবসা জাতীয়করণ এবং তা পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রত্যক্ষ পরিচালনায় আনা এবং মুসলিম লীগ শাসনামলের পাট কেলেঙ্কারির তদন্ত ও অপরাধীর শাস্তি বিধান করা। |
৪ | কৃষিতে সমবায় প্রথা প্রবর্তন এবং সরকারি সাহায্যে কুটির শিল্পের উন্নয়ন। |
৫ | পূর্ববঙ্গকে লবণ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। |
৬ | কারিগর শ্রেণি গরিব মোহাজেরদের কর্মসংস্থানের আশু ব্যবস্থা। |
৭ | খাল খনন ও সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে বন্যা ও দূর্ভিক্ষ রোধ। |
৮ | পূর্ববঙ্গে কৃষি ও শিল্প খাতের আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশকে স্বাবলম্বী করা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) মূলনীতি মাফিক শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। |
৯ | দেশের সর্বত্র অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তন এবং শিক্ষকদের ন্যায্য বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা। |
১০ | শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার, মাতৃভাষায় শিক্ষাদান, সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের ভেদাভেদ বিলোপ করে সকল বিদ্যালয়কে সরকারি সাহায্যপুষ্ট প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। |
১১ | ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রভৃতি প্রতিক্রিয়াশীল আইন বাতিল এবং উচ্চশিক্ষা সহজলভ্য করা। |
১২ | শাসনব্যয় হ্রাস, যুক্তফ্রন্টের কোনো মন্ত্রীর এক হাজার টাকার বেশি বেতন গ্রহণ না করা। |
১৩ | দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ-রিশ্ওয়াত বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। |
১৪ | জননিরাপত্তা আইন, অর্ডিন্যান্স ও অনুরূপ কালাকানুন বাতিল, বিনাবিচারে আটক বন্দির মুক্তি, রাষ্ট্রদ্রোহিতায় অভিযুক্তদের প্রকাশ্য আদালতে বিচার এবং সংবাদপত্র ও সভাসমিতি করার অবাধ অধিকার নিশ্চিত করা। |
১৫ | বিচারবিভাগকে শাসনবিভাগ থেকে পৃথক করা। |
১৬ | বর্ধমান হাউসের পরিবর্তে কম বিলাসের বাড়িতে যুক্তফ্রন্টের প্রধান মন্ত্রীর অবস্থান করা এবং বর্ধমান হাউসকে প্রথমে ছাত্রাবাস ও পরে বাংলা ভাষার গবেষণাগারে পরিণত করা। |
১৭ | রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহিদদের স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ ঘটনাস্থলে শহিদ মিনার নির্মাণ করা এবং শহিদদের পরিবারবর্গকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া। |
১৮ | একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস এবং সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা। |
১৯ | লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গের পূর্ণ স্বায়ত্তসাশন এবং দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মূদ্রা ব্যতীত সকল বিষয় পূর্ববঙ্গ সরকারের অধীনে আনয়ন, দেশরক্ষা ক্ষেত্রে স্থলবাহিনীর হেডকোয়ার্টার পশ্চিম পাকিস্তানে এবং নৌবাহিনীর হেডকোয়ার্টার পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপন এবং পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্রনির্মাণ কারখানা স্থাপন ও আনসার বাহিনীকে সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত করা। |
২০ | কোনো অজুহাতে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা কর্তৃক আইন পরিষদের আয়ু না বাড়ানো এবং আয়ু শেষ হওয়ার ছয়মাস পূর্বে মন্ত্রিসভার পদত্যাগপূর্বক নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। |
২১ | যুক্তফ্রন্টের আমলে সৃষ্ট শূন্য আসন তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং পরপর তিনটি উপনির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী পরাজিত হলে মন্ত্রিসভার পদত্যাগ করা। |
একুশ দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে ১৯৫৪ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট পূর্ববাংলা আইন পরিষদের মোট ২৩৭টি মুসলিম অসনের মধ্যে ২২৮টি আসন জয় লাভ করে।[1]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.