Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইয়াপেস সাম্রাজ্য ছিল মাইক্রোনেশিয়ার উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পশ্চিম ক্যারোলিন দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত একটি প্রাচীন সামুদ্রিক সাম্রাজ্য।[1] ইয়াপ আনুমানিক ৯৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দ হয়ে ওঠে যখন প্রধান রাজ্য গাগিলের (বর্তমান গ্যাগিল পৌরসভা) গ্যাচেপার গ্রামটি একটি বিস্তৃত সামুদ্রিক বাণিজ্য নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করে এবং পূর্বে অবস্থিত তার প্রতিবেশী দ্বীপগুলিতে আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে।[2] অন্যান্য সামুদ্রিক সাম্রাজ্যের তুলনায় যদিও ছোট এবং অনানুষ্ঠানিক, তথাপি সাম্রাজ্যটি তার সর্বোচ্চ শিখরে ১,৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি জুড়ে, প্রধান দ্বীপ ইয়াপ থেকে আধুনিক সময়ের চুক রাজ্যের কিছু অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল।[3] সাম্রাজ্যটি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত টোঙ্গান সাম্রাজ্যের সাথে সহাবস্থান করেছিল।
সাম্রাজ্যটি উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের ১,৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি জুড়ে বিস্তৃত ছিল, অনেকগুলো দ্বীপপুঞ্জ এবং নিচু প্রবালপ্রাচীর এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। অঞ্চলটি নীচে প্রদর্শিত শাসক দ্বীপ এবং অধীনস্থ দ্বীপ নিয়ে গঠিত হয়েছিলো।[4] ইয়াপেস সাম্রাজ্য আধুনিক যুগের ইয়াপ রাজ্যের প্রধান দ্বীপ ইয়াপ থেকে চুক রাজ্যের পশ্চিম অংশের কিছু প্রবালপ্রাচীর পর্যন্ত বিস্তৃত দ্বীপ নিয়ে গঠিত হয়েছিল।
দ্বীপ গোষ্ঠী | দ্বীপ/প্রবালের নাম |
---|---|
প্রধান দ্বীপ | ইয়াপ দ্বীপ |
গঠনমূলক দ্বীপ/প্রবালপ্রাচীর (আধুনিক ইয়াপ রাজ্যে) | উলিথি |
ফাইস | |
সোরল | |
ওলেই | |
ইউরিপিক | |
ইফালিক | |
এলাতো | |
ল্যামোট্রেক | |
সাতওয়াল | |
গঠনমূলক দ্বীপ/প্রবালপ্রাচীর (আধুনিক চুক রাজ্যে) | পুলুওয়াত |
পুলুসুক | |
পুলাপ | |
নমোনুইতো |
সাম্রাজ্যটিতে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা হতো। প্রধান দ্বীপগুলিতে ইয়াপেসি ভাষায় কথা বলা হত, অন্যদিকে উলিথিয়ান, ওলিয়ান, সাতাওয়ালিস, এনগুলুওয়ান এবং পুলুওয়াত ভাষাতে অন্যান্য দ্বীপসমূহ ও প্রবালদ্বীপসমুহে কথা বলা হত।
ওলিয়ান লিপি, যা কখনও কখনও ক্যারোলিন দ্বীপপুঞ্জের লিপি নামেও পরিচিত, এই অঞ্চলে বিকশিত একমাত্র আদিবাসী লিখন পদ্ধতি ছিল। এটি ২০ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত ওলেইতে এই বর্ণমালা ব্যবহৃত হতো। কিছু অক্ষর লাতিন অক্ষরের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল, তবে অন্যান্য অক্ষরের উৎপত্তি জানা যায়নি। আনুমানিক ১,৬০০ ব্যক্তি এটি ব্যবহার করতো।[5]
মাইক্রোনেশীয় অঞ্চলে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক শক্তির আগমনের আগে ইয়াপ এবং এর সমস্ত উপাদান দ্বীপ ও প্রবালপ্রাচীরগুলি বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী, রীতিনীতি, অনুশীলন ও আচার-অনুষ্ঠানগুলির সাথে ঐতিহ্যগত সর্বপ্রাণবাদী ধর্ম পালন করত। ইয়াপেস পৌরাণিক কাহিনী চুকিক পুরাণের সাথে কিছু সাদৃশ্য বহন করে, যদিও বিকাশের দিকটি অজানা।[6]
সাম্রাজ্যের একটি রাজস্ব (আনুগত্যস্বরূপ প্রদত্ত শ্রদ্বার্ঘ) ব্যবস্থা ছিল যা সাওয়ে নামে পরিচিত। সাউই পদ্ধতি অনুসারে সাম্রাজ্যটি নিয়মিত শ্রদ্বার্ঘ দাবি করতো যা পিটিগিল তামোল নামে পরিচিত ছিলো যা ওয়ানিয়ান গ্রামের প্রধান এবং গ্যাচাপারের প্রধান (যিনি গাগিলের সর্বোচ্চ প্রধানও) এর কাছে পেশ করতে হতো।[7] শ্রদ্বার্ঘসমূহ পূর্ব থেকে পশ্চিমে নামোনুইটো থেকে উলিথি হয়ে অবশেষে ইয়াপ পর্যন্ত পোছতো। শ্রদ্বার্ঘসমূহ বিভিন্ন ধরনের হতো যেমন লাভলাভা (বাগি'ই), চাটাই, শাঁস, নারকেলের দড়ি এবং নারকেল তেল। বিনিময়ে, গাগিলের প্রধানরা এবং লোকেরা উপহার প্রদান করতো ইয়ামস, কলা, মিষ্টি আলু, বাঁশ, লাল মাটির রন্জক, পাত্র এবং অন্যান্য উৎপাদিত জিনিস যা নিচু দ্বীপ এবং প্রবালদ্বীপ গুলোতে পাওয়া যেতো না।[8] গ্যাচাপার ও গাগিলের প্রধানদের কাছে এই নৈবেদ্যগুলি সওয়ের পৌরাণিক ইয়াপেস প্রতিষ্ঠাতা ইয়াঙ্গোলাপ থেকে এসেছে বলে মনে করা হতো।[9][10]
ইয়াপেসে আর্থ-রাজনৈতিক কাঠামো একটি ভূমি মেয়াদ ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল যা কোন ব্যক্তির সামাজিক পদমর্যাদা নির্ধারিত তার অধিকৃত জমির পরিমাণ দিয়ে একটি শ্রেণিবদ্ধ কাঠামোতে তার অবস্থান নির্ধারণ করতো।[11] সামাজিক শ্রেণিবিভাগ দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল যা দুটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হতো, জমি পার্সেল রেঙ্কিং এবং সম্পদের নিয়ন্ত্রণ।[12]
বিভাগ | পদমর্যাদা | শ্রেণীর নাম (ইয়াপেজ) | বাংলা অনুবাদ |
---|---|---|---|
উচ্চ শ্রেণী: তবুগুল ("বিশুদ্ধ") | ১ | বুলচে' বা উলুন | প্রধানগণ |
২ | মেথিবান বা তেথিবান | প্রভু এবং অভিজাত | |
৩ | ডাওরচিগ | সাধারণ মানুষ | |
নিম্ন শ্রেণী: তা'আয় ("অপবিত্র") | ৪ | মিলনগায় নি 'আরো | কামলা |
৫ | মিলগ্নায় | কামলা | |
৬ | ইয়াগুগ বা মিলনগায় নি কান | কামলা |
প্রতিটি গ্রামের সামরিক বিজয়ের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে তার পৌর সর্দারতার মধ্যে নিজস্ব শ্রেণি বিভাগ ছিলো এবং প্রতিটি গ্রামের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সামাজিক শ্রেণিবিভাগ ও ছিলো যা তার লোকেদের জন্য সেই গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ব ছিলো। সমস্ত নিম্ন শ্রেণী এবং নিম্ন-শ্রেণির গ্রামগুলি সেই গ্রামগুলির কর্তৃত্বের অধীনে ছিল যেগুলিকে উচ্চতর শ্রেণিতে স্থান দেওয়া হয়েছিল কারণ সেগুলির যথেষ্ট শক্তি এবং প্রভাব ছিল (লুঙ্গুন)৷[13] গ্রাম এবং পৌর প্রধান রাজ্যগুলি একে অপরের মধ্যে ক্রমাগত যুদ্ধে লিপ্ত ছিল যার ফলে সামরিক ফলাফলের উপর ভিত্তি করে গ্রাম এবং ব্যক্তিগত সামাজিক পদমর্যাদা প্রতিনয়ত ওঠানামা করতো।
ইয়াপেস সাম্রাজ্য ছিল একটি সুপ্রা-দ্বীপ রাজনৈতিক ব্যবস্থা যা বাণিজ্য ও আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক দ্বারা সংযুক্ত ছিল। সাওয়ের মতাদর্শ ওয়ানীয় ও গ্যাচাপার গ্রামগুলো পূর্বে দ্বীপ ও প্রবালদ্বীপগুলোর উপর আধিপত্য বজায় রেখেছিল যা এনগুলু থেকে উলিথি এবং ফাইস থেকে নামোনুইটো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো।[14] এই ব্যবস্থা ইয়াপের অধিনস্থ অধিরাজ্যের উপর তার আধিপত্য এবং প্রয়োজন দেখা দিলে বাইরের দ্বীপবাসীদের সহায়তা দেওয়ার দায়দ্বায়িত্বের সম্পর্ক এমন ভাবে নির্ধারণ করেছিল যে সম্পর্কটি সাথে "পিতামাতা এবং শিশু" সম্পর্ক সাদৃশ্যপূর্ণ।[15][16]
যদিও গাগিল এবং বাইরের দ্বীপগুলির সাথে এই অনন্য সম্পর্ক শোষণমূলক বলে মনে হতে পারে, লেসা ও লিংজেনফেল্টারের মতো গবেষকরা মনে করেন যে সম্পর্কটি বেশিরভাগই পারস্পরিক ছিল এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ইয়াপেসের চেয়ে ক্যারোলিনীয়দের জন্য বেশি উপকারি ছিল। কেউ কেউ এমনও পরামর্শ দিয়েছেন যে তথাকথিত সাম্রাজ্যটি জাদুবিদ্যা ও অর্থনীতি ব্যবহার করে বিজয় ও "হুমকি"-এর মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল।[17]
এছাড়াও মৌখিক বিবরণ রয়েছে যা ইঙ্গিত করে যে ইফালিক সুপ্রা-দ্বীপের রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু করেছিল দখলদারীর মাধ্যমে। যাইহোক, খুব কমই প্রত্নতাত্ত্বিক বা ভাষাগত প্রমাণ রয়েছে যা জোরপূর্বক সামরিক দখলদারীর লক্ষণ নির্দেশ করে।[18]
পূর্ব থেকে বাইরের দ্বীপগুলি মূলত ইয়াপেসে নিম্ন বর্ণের সদস্য হিসাবে বিবেচিত হত। যেমন, এমনকি প্রধান দ্বীপের ইয়াপেস কামলাদের মতোই পূর্বের প্রধানদেরও একই সামাজিক শ্রেণিমর্যাদা ছিল। তাই আশা করা এই বহিরাগত দ্বীপবাসীরা তাদের ইয়াপেস অধিপতিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে এবং কোনো ইয়াপেসিকে বিয়ে করার অনুমতি তাদের ছিলো না।[19]
বৃহত্তর সাউই রাজস্ব ব্যবস্থার পাশাপাশি ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত ল্যামোট্রেক, সাতাওয়াল এবং এলাটোর মধ্যে বাণিজ্য ও শ্রদ্ধার্ঘ আদানপ্রদানের জন্য ছোট ও আরও স্থানীয় ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। এই সম্পর্কটি পরিচিত ছিল কে' ("ফিশ হুক") সিস্টেম ব্যবস্থা। ল্যামোট্রেককে প্রভাবশালী দ্বীপ হিসাবে বিবেচনা করা হত যা বাকি দ্বীপ দুটিকে নিয়ন্ত্রণ করত। যেমন, সাতাওয়াল এবং এলাটোকে সম্মানের চিহ্ন হিসাবে ল্যামোট্রেকের কাছে অর্ধ-বার্ষিক শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করতে হতো।[20]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের ট্রাস্ট অঞ্চলের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ইয়াপেসিদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা ও যোগাযোগের অভাবের কারণে ইয়াপেসি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করা প্রতিকূল বলে মনে করে।[21]
আরও একাধিক কারণের কারণে সাম্রাজ্যটি ভেঙে পড়তে বাধ্য হয়েছিল। এরকম একটি কারণ ছিল খ্রিস্টধর্মের বিস্তার, বিশেষ করে ক্যাথলিক ধর্ম ও আধুনিক শিক্ষা। এগুলি ইয়াপ যা স্প্যানিশ ও জার্মান উপনিবেশের সময়কালে বেশিরভাগই পৌত্তলিক ছিল এবং সাম্রাজ্যের অন্যান্য বেশিরভাগই ক্যাথলিক দ্বীপগুলির মধ্যে একটি কীলক হিসাবে কাজ করেছিল। দ্বীপপুঞ্জের জাপানি সাম্রাজ্যিক প্রশাসন ও মার্কিন প্রশাসনও স্কুল তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করেছিল যা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো আরও প্রতিকূলতার মুখে ঠেলে দিয়ে সমানকারী হিসাবে কাজ করে।[22]
আধুনিক পশ্চিমী ও জাপানি পরিবহন ব্যবস্থাও সাম্রাজ্যটিকে ভেঙে দিতে সাহায্য করে। জাপানিরা স্থানীয় নৌকার মাধ্যমে আন্তঃদ্বীপ পরিবহনের ঐতিহ্যবাহী পদ্বতিগুলোকে নিরুৎসাহিত করে। এর মানে হল যে ঐতিহাসিকভাবে বৃহৎ নৌকাবহরগুলো যেগুলো ইয়াপের জন্য শ্রদ্ধার্ঘ বহন করার জন্য উলিথিতে একত্রিত হতো তারা আর তা করতে পারেনি, যার ফলে ঐতিহ্যগত নৌচালন পদ্ধতির শিল্প ও ব্যবহার হ্রাস পেয়েছিলো। ঐতিহ্যবাহী নৌকাগুলোকে আরও আধুনিক নৌযান দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।[23]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.