Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রাম রায় (মৃত্যু- জানুয়ারি ২৩, ১৫৬৫), যিনি "আলিয়া" (কন্নড় ভাষায়- জামাতা) এবং "মহামণ্ডলেশ্বর আলুডু" (তেলুগু)[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] নামেও পরিচিত। তিনি বিজয়নগর সাম্রাজ্যের একজন তেলুগু রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তিনি সম্রাট কৃষ্ণ দেব রায়ের জামাতা এবং অরভিদু সাম্রাজ্যের জনক ছিলেন।
পেম্মাসানি নায়কের পেম্মাসানি ইরা তিম্মানাইয়ুডুর সহায়তায় গৃহযুদ্ধের পর আলিয়া রাম রায় ক্ষমতায় আসেন।[1] রাজ প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ১৫৪২ থেকে ১৫৬৫ সাল পর্যন্ত সাম্রাজ্যের ডি ফ্যাক্টো শাসক ছিলেন, যদিও এই সময়ের মধ্যে আইনগতভাবে সম্রাট ছিলেন সদাশিব রায়, যিনি নিছক একজন পুতুল শাসক ছিলেন।
রাম রায় তালিকোটার যুদ্ধে নিহত হন, এরপর বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
রাম রায় একটি তেলুগু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম অববালাদেবী এবং তিনি ছিলেন নান্দিয়ালার এক প্রধানের কন্যা।[2] রাম রায়ের আরাবিদু পরিবার দক্ষিণ অন্ধ্রের বাসিন্দা ছিল।[3]
"আলিয়া" রাম রায় এবং তার ছোট ভাই তিরুমালা দেব রায় মহান বিজয়নগর সম্রাট কৃষ্ণ দেব রায়ের জামাতা ছিলেন। কন্নড় ভাষায় "আলিয়া" শব্দের অর্থ "জামাই"। কৃষ্ণদেব রায়ের শাসনামলে, তার আরেক ভাই ভেঙ্কটাদ্রির সাথে আরাবিদু ভ্রাতৃদ্বয় খ্যাতি লাভ করেন। রাম রায় ছিলেন একজন সফল সেনা প্রধান, সক্ষম প্রশাসক এবং কৌশলী কূটনীতিবিদ; যিনি কৃষ্ণদেব রায়ের শাসনামলে অনেক বিজয়ী অভিযান পরিচালনা করেন। তার বিখ্যাত শ্বশুরের মৃত্যুর পর, পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে রাম রায় রাষ্ট্রের কাজের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন। কৃষ্ণদেব রায় ১৫২৯ সালে তার ছোট ভাই অচিন্ত্য দেব রায় দ্বারা স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি ১৫৪২ সালে মারা যাওয়ার পর সিংহাসনে বসেন তার ভাগ্নে সদাশিব রায়। সদাশিব রায় ছিলেন একজন নাবালক। রাম রায় সদাশিব রায়ের রাজত্বের সময়ে নিজেকে রাজ প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করেন। সদাশিব রায় শাসন করতে আসার পর, রাম রায় তাকে কার্যত বন্দী রাখেন।
এই সময়ে তিনি সদাশিব রায়কে গৃহবন্দী করে শাসক হন। রাম রায় রাজ্যের অনেক বিশ্বস্ত দাসকে সরিয়ে দেন এবং তাঁর অনুগত অফিসারদের স্থলাভিষিক্ত হলেন। তিনি দুই মুসলিম কমান্ডারও নিযুক্ত করেন। এই গিলানি ভ্রাতৃত্ব আগে সুলতান আদিল শাহের সেনাবাহিনীতে কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এই ভুলের চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে তালিকোটার যুদ্ধে সাম্রাজ্যকে বিকিয়ে দেয়। রাম রায়ের তার নিজের রাজকীয় রক্তের অভাব ছিল এবং তার শাসনকে বৈধ করার জন্য তিনি মধ্যযুগীয় ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই সাম্রাজ্য, পশ্চিম চালুক্য সাম্রাজ্য এবং চোলা সাম্রাজ্যের সাথে জোড় সম্পর্ক উন্নয়ন করেন।[4]
তার শাসনামলে, ডেকান সালতানাতরা ক্রমাগত অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে জড়িত ছিল এবং রাম রায়কে একাধিকবার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার জন্য অনুরোধ করে। এই সুযোগে রাম রায় কৃষ্ণ নদীর উত্তর পর্যন্ত রাজ্য বৃদ্ধি করেন এবং ডেকান সুলতানদের বিচ্ছিন্নতা ব্যবহার করে তার রাজ্য সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হয়। তিনি ত্রাভাঙ্কোর ও চন্দ্রগিরি প্রধানদের বিদ্রোহ দমন করেন। কিছু পণ্ডিত সুলতানদের কাজে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের জন্য রাম রায়ের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু ডঃ পি বি দেসাই এর মত, পণ্ডিতরা তার রাজনৈতিক বিষয়কে সমর্থন করেছেন। এটি নির্দেশ করে যে রাম রায় বিজয়নগর সাম্রাজ্যের মর্যাদা ও গুরুত্ব বৃদ্ধির জন্য যা করা সম্ভব, তিনি তাই-ই করেছেন। তিনি নিশ্চিত করেন যে কোনো একক সালতানাত যেন তার বিরুদ্ধে ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে না পারে। বস্তুত রাম রায় শুধুমাত্র একজন সুলতান বা অন্য সুলতানদের জেদে সুলতানি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছিলেন, ঠিক যেভাবে সুলতানরা আগের বছরগুলোতে রাম রায় এবং অচিন্ত্য রায়ের মধ্যে পার্লে হিসেবে কাজ করেছিলেন। যখন আহমেদনগরের নিজাম এবং গোলকোন্ডার কুতুবশাহ বিজয়পুরের বিরুদ্ধে রাম রায়ের সাহায্য চাইলেন, তখন রাম রায় তাঁর পুণ্যার্থীদের জন্য রাইচুর দোব সুরক্ষিত করলেন। পরবর্তীতে ১৫৪৯ সালে বিজয়পুরের আদিলশাহ ও বিদারের বারিদশাহ আহমেদনগরের নিজামশাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে রাম রায় আহমেদনগর শাসকের পক্ষে যুদ্ধ করেন এবং কল্যাণের দুর্গ সুরক্ষিত করেন। ১৫৫৭ সালে রাম রায় বিজয়পুরের আলী আদিলশাহ এবং বিদারের বারিদশাহের সাথে মিত্রতা করেন যখন বিজয়পুরের সুলতান আহমেদনগর আক্রমণ করেন। তিন রাজ্যের সম্মিলিত বাহিনী আহমেদনগরের নিজামশাহ এবং গোলকোন্ডার কুতুবশাহ -এর জোটকে পরাজিত করেন।
বিজয়নগর শাসক তার নিজের অবস্থান উন্নত করার জন্য ক্রমাগত পক্ষ পরিবর্তন করেন অবশেষে সুলতানদের একটি জোট গঠন করতে উৎসাহিত করে। সুলতানি পরিবারের মধ্যে আন্তঃবিবাহ মুসলিম শাসকদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ পার্থক্য সমাধানে সাহায্য করে। তালিকোটার যুদ্ধের ফলে উত্তর ডেকানে মুসলিম শক্তির একত্রীকরণ ঘটে।
আলিয়া রাম রায় বৈধ রাজবংশের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন যতক্ষণ না এটি অবশেষে যুদ্ধের দ্বারা শেষ হয়ে যায়। নিযুক্ত শাসক সদাশিব রায়কে কারাগারে বন্দী করা এবং তার স্থলাভিষিক্ত শাসন করা ছিল এর উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম। ১৫৬৫ সালে বিজয়নগর সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সেনাপতি আলিয়া রাম রায় তালিকোটার যুদ্ধে ডেকান সুলতানদের (অর্থাৎ হুসেন নিজাম শাহ, আলী আদিল শাহ ও ইব্রাহিম কুতুব শাহ) আক্রমণকারী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার নেতৃত্ব দেন।
এই যুদ্ধ, যা বৃহৎ বিজয়নগর সেনাবাহিনীর জন্য একটি সহজ বিজয় মনে হচ্ছিল। কিন্তু এর পরিবর্তে এটি একটি বিপর্যয় হয়ে ওঠে যখন বিজয়নগর সেনাবাহিনীর দুই মুসলিম কমান্ডার (গিলানি ভাই) বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং পক্ষ পরিবর্তন করে এবং তীব্র যুদ্ধের সময় ঐক্যবদ্ধ সালতানাতের প্রতি তাদের আনুগত্য পরিবর্তন করে।[5] এর ফলে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়া আলিয়া রাম রায়কে আকস্মিকভাবে গ্রেফতার করা হয় এবং মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তার কাটা মাথা তালিকোটার যুদ্ধের বার্ষিকীতে আহমেদনগরে প্রদর্শিত হয়। এবং তার হত্যাকারীর বংশধররা তেল এবং লাল রঙে মাথাটিকে আবৃত করে।[6]
বিজয়নগর শহর আক্রমণকারীদের দ্বারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ধ্বংস করা হয় এবং বাসিন্দাদের হত্যা করা হয়। রাজকীয় পরিবারকে মূলত বিলুপ্ত করা হয়। বিজয়নগর, যা ছিল একসময় একটি বিখ্যাত ঐশ্বর্যের শহর, একটি বিশাল সাম্রাজ্যের আসন, তা একটি নির্জন ধ্বংসাবশেষ হয়ে ওঠে।[7] এটি এখন একটি পবিত্র অভ্যন্তরীণ শহরতলী, হাম্পি নামে পরিচিত।
এই বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে, রাম রায় যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হন এবং তার ভাই তিরুমালা দেব রায় যুদ্ধ থেকে বিজয়নগর পালিয়ে যান। তিনি পুতুল রাজা সদাশিব রায়ের সঙ্গে সাম্রাজ্যের সম্পদের প্রধান অংশ পেনুগোন্ডা বহন এবং সাম্রাজ্যে শৃঙ্খলা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তিনি তার রাজধানী চন্দ্রগিরিতে স্থানান্তরিত করেন। রাজপরিবারের অন্যান্য বিশিষ্ট সদস্যদের গণহত্যা, এবং রাম রায় দীর্ঘদিন ধরে আদালতে এবং অভিজাতদের মধ্যে যে মর্যাদা উপভোগ করেছেন, শীঘ্রই তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি রাজপরিবারের গোড়াপত্তন করে। এভাবেই সম্রাটদের "আরাবিদু" রাজবংশ জন্মগ্রহণ করে।
তবে সম্রাটের অবস্থান ছিল ফাঁকা, কারণ বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
যদিও পরবর্তী আরাবিদু রাজবংশের শাসকরা প্রকৃতপক্ষে পূর্ববর্তী সাম্রাজ্যের উপর ক্ষমতা দখল করেনি, তবুও তারা দেশে অপরিসীম মর্যাদা উপভোগ করে। এবং প্রায়ই তাদের প্রতি সাম্রাজ্যের মহান প্রাদেশিক শাসক থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এমনকি মহীশূর ও মাদুরাইয়ের রাজাদের মত প্রধান শাসকদের দ্বারাও তাদেরকে সম্মান ও তাদের সাথে অনুষ্ঠানিকভাবে ভালো আচরণ করা হয়। আজও, "অনেগুন্ডির রায়", যিনি "আরাবিদু" রাজবংশের অন্তর্গত, ভারতের রাজকুমার হিসেবে সম্মান উপভোগ করে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.