Loading AI tools
মিশরীয় চিকিৎসক, ইসলামি ধর্মতত্ত্ববিদ এবং আল-কায়েদার নেতা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আয়মান মুহাম্মাদ রবি' আল-জাওয়াহিরি (আরবি: أيمن محمد ربيع الظواهري ʾAyman Muḥammad Rabīʿ aẓ-Ẓawāhirī; জন্ম, ১৯শে জুন, ১৯৫১-৩১ জুলাই ২০২২)[3] ছিলেন আল কায়েদার প্রধান নেতা এবং বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের একজন বর্তমান[4] অথবা সাবেক সদস্য এবং সিনিয়র কর্মকর্তা; যেসব সংগঠন উত্তর আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা, এবং মধ্যপ্রাচ্যে পরিচালিত হচ্ছে এবং এসব অবস্থানে সামরিক হামলা চালাচ্ছে। ২০১২ সালে তিনি মুসলমানদের আহ্বান করেন, যাতে তারা মুসলিম দেশসমূহে পাশ্চাত্যের পর্যটকদেরকে অপহরণ করেন।[5]
আয়মান আল-জাওয়াহিরি أيمن محمد ربيع الظواهري | |
---|---|
আল কায়েদার ২য় সর্বোচ্চ আমির | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ১৬ই জুন, ২০১১[1] | |
পূর্বসূরী | ওসামা বিন লাদেন |
আল কায়েদার সহকারী আমির | |
কাজের মেয়াদ ১৯৮৮ – ২০১১ | |
পূর্বসূরী | পদ তৈরি করেছেন |
উত্তরসূরী | আবু খায়র আল-মাসরি |
আল কায়েদার সহপ্রতিষ্ঠাতা (আব্দুল্লাহ আযযাম এবং ওসামা বিন লাদেনের সাথে) | |
কাজের মেয়াদ ১৯৮৮ – ১৯৮৯ | |
পূর্বসূরী | পদ তৈরি করেছেন |
উত্তরসূরী | পদ বিলুপ্ত |
মাকতাবুল খিদামাতের সহপ্রতিষ্ঠাতা | |
কাজের মেয়াদ ১৯৮৪ – ১৯৮৮ | |
পূর্বসূরী | পদ তৈরি করেছেন |
উত্তরসূরী | পদ বিলুপ্ত |
মিসর ইসলামি জিহাদের আমির | |
কাজের মেয়াদ ১৯৯১ – ১৯৯৮ | |
পূর্বসূরী | মুহাম্মাদ আব্দুস সালাম ফারাজ |
উত্তরসূরী | আল কায়েদার সাথে সমন্বিত |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | আয়মান মুহাম্মাদ রবি' আল-জাওয়াহিরি ১৯ জুন ১৯৫১ মাদি, কায়রো, মিসর |
মৃত্যু | জুলাই ৩১, ২০২২ ৭১) | (বয়স
জাতীয়তা | মিসরীয় |
দাম্পত্য সঙ্গী | আযযা আহমাদ (বি. ১৯৭৮–২০০১, মৃত্যু), উমাইমা হাসান |
সন্তান | সবগুলো দেখুন (৭)
|
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | সার্জন |
সামরিক কর্মজীবন | |
আনুগত্য | ইসলামি জিহাদ, মিসর (১৯৮০–১৯৯৮)[2] আল কায়েদা (১৯৮৮–বর্তমান) |
কার্যকাল | ১৯৮০–বর্তমান |
পদমর্যাদা | আল কায়েদার সর্বোচ্চ আমির |
যুদ্ধ/সংগ্রাম | আফগানিস্তান যুদ্ধ উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তান যুদ্ধ |
১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর থেকে আমেরিকা প্রশাসন জাওয়াহিরির ব্যাপারে তথ্য দেয়া অথবা তাকে ধরার ব্যাপারে সামরিক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবার বিনিময়ে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে আসছে।[6] আল কায়েদার সদস্য হিসেবে আল কায়েদা অনুমোদন কমিটি দ্বারা তার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বলবৎ আছে।[7]
আয়মান মুহাম্মাদ রবী আল-জাওয়াহিরি আরবি ভাষায় [ˈʔæjmæn mʊˈħæmːæd rɑˈbiːʕ azˤːɑˈwæːhɪriː] অথবা [aðˤːɑˈwæːhɪriː] উচ্চারিত হয়। জাওয়াহিরি সাধারণতঃ জাওয়াহরি উচ্চারিত হয় (তার স্থানীয় মিসরীয় আরবির উচ্চারণ অনুসারে)।
আল-জাওয়াহিরি নিম্নোক্ত নামগুলোও ব্যবহার করেন:[8] আবু মুহাম্মাদ (أبو محمّد), আবু ফাতিমা (أبو فاطمة), মুহাম্মাদ ইবরাহীম (محمّد إبراهيم), আবু আব্দুল্লাহ (أبو عبدالله), আবুল মু'ইয (أبو المعز), দুকতুর (বাংলায়: ডাক্তার), শিক্ষক, নূর (نور), উস্তায (أستاذ), আবু মুহাম্মাদ নুরুদ্দীন (أبو محمّد نورالدين), আব্দুল মুয়ায / আব্দুল মু'ইয (عبدالمعز)।
আয়মান আল-জাওয়াহিরি ১৯৫১ সালে মিসরের কায়রো নগরীর মাদি অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুহাম্মাদ রবি' আল-জাওয়াহিরি এবং মাতা উমায়মা আযযাম।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
আল-জাওয়াহিরির পরিবার সম্ভ্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হত,[9] যখন তারা মাদিতে বসবাস করেছিলেন। আল-জাওয়াহিরির পিতামাতা উভয়েই উন্নতিশীল পরিবার থেকে এসেছিলেন। আল-জাওয়াহিরির পিতা মুহাম্মাদ রবি' আল-জাওয়াহিরি ডাক্তার এবং স্কলারদের একটি বড় পরিবার থেকে এসেছিলেন। মুহাম্মাদ রবি' নিজেও কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্জন এবং ঔষধ বিশেষজ্ঞ ছিলেন।[9] আয়মান আল-জাওয়াহিরির মাতা, উমায়মা আযযাম একটি বিত্তশালী এবং সক্রিয় রাজনীতিজ্ঞ পরিবার থেকে এসেছিলেন। আল-জাওয়াহিরি বলেছিলেন, তার মাতার জন্য তার গভীর মমতা রয়েছে। তার ভ্রাতা, মাহফুয আযযাম তার জন্য কিশোর বয়স থেকে পথিকৃৎ ছিলেন।[10] এছাড়াও আয়মান আল-জাওয়াহিরির একজন কনিষ্ঠ ভ্রাতা মুহাম্মাদ আল-জাওয়াহিরি এবং হিবা মুহাম্মাদ আল-জাওয়াহিরি নামে একজন যমজ বোন রয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] আল-জাওয়াহিরির বোন হিবা মুহাম্মাদ আল-জাওয়াহিরি ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাতন্ত্রের ক্যান্সারবিদ্যায় প্রফেসর ছিলেন। তিনি তার ভ্রাতা আয়মান সম্পর্কে বলেন, "চুপচাপ এবং লাজুক স্বভাবের।"[11] আয়মান আল-জাওয়াহিরি তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা মুহাম্মাদ আল-জাওয়াহিরিকে ১৯৯৩ সালে বলকানে রিপাবলিক অব বসনিয়া এবং হার্জগোভিনিয়া সেনাবাহিনীর ৩য় সৈন্যদলের কমান্ডার আলিজা ইজেটবেগোভিটসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাত করতে প্রেরণ করেছিলেন। আয়মান আল-জাওয়াহিরি বসনিয়া সেনাবাহিনীতে ইসলামিকরণ কতোটুকু হয়েছে যাচাই এবং মুজাহিদদের জন্য তহবিলপ্রাপ্তির জন্য তাকে প্রেরণ করেছিলেন।[12][অনির্ভরযোগ্য উৎস?] মুহাম্মাদ যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এবং তাকে ইসলামি জিহাদের সামরিক কমান্ডার বলা হয়ে থাকে। মুহাম্মাদ বসনিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং আলবেনিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অর্গানাইজেশন (আইআইআরও) এর কেন্দ্রীয় ছত্রছায়ায় কাজ করতেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ২০০২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আত্মগোপন করার সময় মুহাম্মাদ গ্রেফতার হন। তাকে মিসরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] মুহাম্মাদ আল-জাওয়াহিরি কায়রোর তোরা কারাগারে একজন রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে ছিলেন। নিরাপত্তা কেন্দ্রের অভিযোগ, তিনি ইসলামি জিহাদের বিশেষ আক্রমণ কমিটির প্রধান ছিলেন; যা বিভিন্ন সন্ত্রাসী অভিযান পরিচালনা করে। যাই হোক, ২০১১ সালে মিসরে আরব বসন্তের পরে হওয়া বিদ্রোহের পর ২০১১ সালের মার্চের ১৭ তারিখ তিনি মিসরের অন্তর্বর্তী সরকার সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পরিষদের মাধ্যমে কারামুক্তি লাভ করেন। তার আইনজীবী আদালতকে বলেন, তার ভাই আয়মান আল-জাওয়াহিরির তথ্য জানার জন্য তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল।[13] কিন্তু ২০১১ সালের মার্চের ২০ তারিখেই তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন।[14] এরপর ১৭ আগস্ট ২০১৩তে মিসর সরকার মুহাম্মাদ আল-জাওয়াহিরিকে গিজায় তার ঘর থেকে গ্রেফতার করে।[15]
আয়মান আল-জাওয়াহিরি অধিক অধ্যয়নকারী যুবক ছিলেন। আয়মান বিদ্যালয়ে প্রথম সারির ছাত্র ছিলেন, কবিতা ভালোবাসতেন এবং "হিংসাত্মক খেলাধুলাকে ঘৃণা করতেন" — যা তিনি "অমানবিক" বলে মনে করতেন। আল-জাওয়াহিরি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছিলেন এবং ১৯৭৪ সালে জায়্যিদ জিদ্দানসহ স্নাতক করেন। এরপর তিনবছর তিনি মিসরীয় সেনাবাহিনীতে সার্জন হিসেবে সেবা করেন। পরে তিনি তার পিতামাতার নিকটবর্তী মাদিতে একটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন।[16] ১৯৭৮ সালে তিনি সার্জারিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।[17] আয়মান আল-জাওয়াহিরির ইসলামি ধর্মতত্ত্ব এবং ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে ভিত্তিগত ধারণা ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তিনি আরবি, ইংরেজি[18][19] এবং ফরাসি ভাষায় কথা বলতে পারেন।
আল-জাওয়াহিরি যৌবনে কেবল একজন ভালো ছাত্র হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি ধর্ম এবং রাজনীতি উভয়ের মধ্যে তার মামা মাহফুয আযযাম এবং অধ্যাপক মোস্তফা কামাল ওয়াসফির প্রভাবে আসেন।[20]
সাইয়েদ কুতুব খেলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং মুসলমানদেরকে মুক্ত করতে আহ্বান করে বলেছিলেন, একজন সত্যিকারের মুসলমান তার নিজের জন্য মূল আদর্শ নবিজি তার সাহাবায়ে কেরামকে যেভাবে উন্নত করেছেন, সেটাকে পথিকৃৎ হিসাবে গণ্য করতে হবে।[21]
১৪ বছর বয়সে আল-জাওয়াহিরি মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগদান করেন। ঐ বছরই মিসর সরকার সাইয়েদ কুতুবকে চক্রান্ত করে ফাঁসি দেয়। এবং আল-জাওয়াহিরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চারজন ছাত্রের সাথে মিলে একটি গোপন দল তৈরি করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, সরকারকে উৎখাত এবং ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এটা ছিল আল-জাওয়াহিরির একদম কম বয়সে, যখন তিনি সাইয়েদ কুতুবের উদ্দেশ্যকে বাস্তবে রূপান্তর করতে একটি একটি মিশন আঞ্জাম দিচ্ছিলেন।[22] যাইহোক, সর্বশেষ তার দল মিসরীয় ইসলামি জিহাদের সাথে একীভূত হয়ে যায়।[16]
আয়মান আল-জাওয়াহিরি কমপক্ষে চারটি বিয়ে করেছিলেন। স্ত্রীদের মধ্যে আযযা আহমাদ নোয়ারি এবং উমায়মা হাসান সম্পর্কেই কমবেশি জানা যায়।
১৯৭৮ সালে আল-জাওয়াহিরি আযযা আহমাদের সাথে প্রথম বিয়ে করেন। আযযা তখন কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের ছাত্রী ছিলেন।[20] অপেরা স্কয়ারে একটি আন্তর্জাতিক মানের হোটেলে বিবাহানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। [20] অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবেশে, পুরুষ-মহিলাদের পৃথক পৃথক স্থান, এবং কোন গানবাজনা বা ফটোগ্রাফি কিংবা আলোকসজ্জা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়।[23] অনেক বছর পরে, টুইনটাওয়ারে আক্রমণের কারণে যখন অক্টোবর ২০০১-এ যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান আক্রমণ করে, তখন পর্যন্তও আযযা ধারণাও করতে পারেননি, তার স্বামী আল-জাওয়াহিরি শেষ দশকে একজন জিহাদি আমির হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।[24] ২০১২ সালে উমায়মা হাসান (আল-জাওয়াহিরির স্ত্রীদের একজন) আরব বসন্তে মুসলিম নারীদের অগ্রসর ভূমিকায় অভিনন্দন জানিয়ে ইন্টারনেটে বিবৃতি দেন।[25]
আল-জাওয়াহিরি এবং তার স্ত্রী আযযার পাঁচ কন্যা এবং এক পুত্র জন্মগ্রহণ করে। ফাতিমা (জন্ম: ১৯৮১), উমায়মা (জন্ম: ১৯৮৩), নাবিলা (জন্ম: ১৯৮৬), খাদিজা ও মুহাম্মাদ (যমজ, জন্ম: ১৯৮৭), আয়িশা (জন্ম: ১৯৯৭)। আয়িশার ডাউন সিনড্রোম রোগ থাকার কথা জানা যায়। ২০০৪ সালে আবু যুবায়দাকে জল নিপীড়ন করলে তিনি জবানবন্দী দেন যে, আবু তুরাব আল-উরদুনি আয়মান আল-জাওয়াহিরির কোন এক কন্যাকে বিবাহ করেছেন।[26]
২০০৫ সালের প্রথমার্ধে আল-জাওয়াহিরির জীবিত তিন স্ত্রীর একজন "নাওওয়ার" নামীয় একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। [27]
টুইনটাওয়ারে আক্রমণের পর, ডিসেম্বর ২০০১-এর শেষদিকে আয়মান আল-জাওয়াহিরির প্রথম স্ত্রী আযযা এবং তার দুই সন্তান মুহাম্মাদ এবং আয়িশা আফগানিস্তানে আমেরিকান সৈন্যবাহিনীর বিমানহামলায় নিহত হন।[28][29]
আমেরিকান বোমা বিস্ফোরণের পর গারদেজে তালিবান নিয়ন্ত্রিত দালানের ধ্বংসাবশেষে মেহমানখানার ছাদের নিচে আটকে পড়েছিলেন।
তিনি "খনন করে তাকে বের করে আনতে" প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ, কোন পুরুষ তাকে দেখে ফেলতে পারে। এবং তিনি তার সেদিনের আঘাতেই মারা যান। তার সন্তান মুহাম্মাদও একই আক্রমণে নিহত হয়। ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত তার কন্যা আয়িশা বোমা হামলায় আঘাতপ্রাপ্ত না হলেও রাতের শৈত্যাধিক্যের কারণে মারা যায়। তখন আফগান উদ্ধারকর্মীরা তার মাতা আযযাকে বাঁচাতে ব্যস্ত ছিল।[30]
আয়মান আল-জাওয়াহিরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে সার্জন ছিলেন। ১৯৮৫ সালে আল-জাওয়াহিরি হজ্জ করতে সৌদি আরব গমন করেন। সেখানে তিনি একবছরের জন্য চিকিৎসাবিদ্যায় অনুশীলন করতে জেদ্দায় থেকে যান।[31] তিনি একজন যোগ্যতাসম্পন্ন সার্জন হওয়ায়, বিন লাদেনের আল কায়েদার সাথে নিজ সংগঠনকে একীভূত করতে তিনি বিন লাদেনের ব্যক্তিগত উপদেষ্টা এবং চিকিৎসক হন। তার বিন লাদেনের সাথে প্রথম সাক্ষাত হয় ১৯৯৮ সালে, জেদ্দায়।[32]
১৯৮১ সালে আয়মান আল-জাওয়াহিরি পাকিস্তানেও ভ্রমণ করেন। তিনি পাকিস্তানের পেশাওয়ারে একটি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আহত শরণার্থীদের চিকিৎসা করতেন। সেখানে তিনি আহমেদ খদরের বন্ধু হন এবং তারা দুজনে ইসলামী শাসন ও আফগান জনগণের প্রয়োজন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়াদী নিয়ে আলোচনা করেন।[33][34]
১৯৯৩ সালে আল-জাওয়াহিরি আমেরিকা ভ্রমণ করেন। সেখানে তিনি তার ছদ্মনাম আব্দুল মুঈয নামে ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন মসজিদে পরিচিত হন। এসবের প্রামাণ্য তথ্য হচ্ছে, সোভিয়েত ল্যান্ড মাইনে পক্ষাঘাতগ্রস্ত আফগান শিশুদের জন্য কুয়েতি রেড ক্রিসেন্টে তার মুদ্রা বৃদ্ধিকরণ—তিনি একাই ২০০০ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি করেন।[35]
১৯৮১ সালে আয়মান আল-জাওয়াহিরি প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে গুপ্তহত্যার অভিযোগে অন্যান্য অনেকের মতো গ্রেফতার হন।[36] প্রথমদিকে পরিকল্পনাটি নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল, যখন একজন গুরুত্বপূর্ণ উচ্চপদস্থ বন্দীর তথ্যের ভিত্তিতে আল-জিহাদের পরিকল্পনার ব্যাপারে মিসর সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল এবং এর ভিত্তিতে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট সাদাত আল-জিহাদের অগণিত সদস্যসহ ১৫০০ এর অধিক মানুষকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সামরিক নেতৃত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট খালিদ ইসলামবুলিকে লক্ষ্য করতে পারেননি। খালেদ ১৯৮১ সালের অক্টোবরে একটি সামরিক কুচকাওয়াজের সময় সাদাতকে হত্যা করতে সক্ষম হন।[37] জাওহিরির আইনজীবী মুনতাসির আল-যায়াত বলেন, জাওয়াহিরি জেলখানায় নির্যাতিত হয়েছিলেন।[38]
আল-যায়াত তার বই "Al-Zawahiri as I Knew Him" (বাংলা: আল-জাওয়াহিরি: আমি তাকে যেমন জানি) বইয়ে আল-জাওয়াহিরি মিসরীয় পুলিশ দ্বারা নির্যাতিত হবার কথা উল্লেখ করেছেন। যখন তাকে ১৯৮১ সালে সাদাতহত্যার সাথে সংযুক্ত হবার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তখন আল-জাওয়াহিরি আল-জিহাদের মাদি শাখার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ইসসাম আল-কামারির গোপন অবস্থান প্রকাশ করে দেন, যা ইসসামকে বন্দিত্ব, এমনকি ফাঁসি পর্যন্ত নিয়ে যায়।[39]
১৯৯৩ সালে আল-জাওয়াহিরি এবং মিসরীয় ইসলামি জিহাদ (ইআইজে) মিসরীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হাসান আল-আলফি; যিনি মিসরে ইসলামপন্থীদের হত্যাকাণ্ড প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তার উপর আত্মঘাতী বোমা হামলা পরিচালনার জন্য ইরানের সাথে যোগাযোগ করেন। এটি ব্যর্থ হয়। তদ্রূপ এর তিনমাস পর হওয়া মিসরীয় প্রধানমন্ত্রী আতেফ সিদকিকে গুপ্তহত্যার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। এই বোমা হামলায় ২১ মিসরীয় আহত হয় এবং সায়মা আব্দুল হালিম নাম্নী এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়। তারা এটা আল জামায়াতুল ইসলামিয়্যাহ নামক দুই বছরে দুইশতের উপর জনসাধারণকে হত্যা করা আরেকটি ইসলামি দলকে অনুসরণ করে করেছে। সায়মা আব্দুল হালিমের দাফনকার্য জনসম্মুখে প্রদর্শন করা হয়। তার কফিন নিয়ে কায়রোর রাস্তায় ভিড় হয়ে যায়। এবং জনগণ চিৎকার করে বলতে থাকে, "সন্ত্রাসবাদীরা প্রভুর শত্রু"।[40] পুলিশ ২৮০ থেকেও অধিক আল-জিহাদের সদস্যদের গ্রেফতার করে এবং ছয়জনকে ফাঁসি দেয়।
নব্বইয়ের দশকে আল-জিহাদের মিসরীয় সরকারবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য ১৯৯৯ সালে আলবেনিয়া ফেরত আইনের অধীনে আল-জাওয়াহিরি এবং তার ছোট ভাই মুহাম্মাদ আল-জাওয়াহিরিকে আদালত মৃত্যুদণ্ড দেয়।
১৯৯৫ সালে পাকিস্তানের ইসলামাবাদস্থ মিসরীয় দূতাবাসে হামলা ছিল আল-জাওয়াহিরির নেতৃত্বে মিসরীয় ইসলামি জিহাদের প্রথম সফল আক্রমণ। কিন্তু বিন লাদেন এই আক্রমণ পছন্দ করেননি। এই বোমা হামলা পাকস্তানকে "আফগানিস্তানের প্রতিচ্ছবি বানাবার সর্বোত্তম পথ" ছিল।[41]
২০০৭ সালের জুলাইয়ে আল-জাওয়াহিরি লাল মসজিদ অবরোধ করতে দিকনির্দেশনা দেন। যেই অভিযানের নাম ছিল- "নীরব অভিযান।" এটাই প্রথমবার ছিল, যাতে আল-জাওয়াহিরি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ রাখেন। এবং ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নির্দেশনা প্রদান করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং বিশেষ সামরিক দল ইসলামাবাদস্থ লাল মসজিদের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়। তারা সেখানে আল-জাওয়াহিরি প্রেরিত নির্দেশনামূলক চিঠি পায়। যা লাল মসজিদ এবং জামেয়া হাফসা মহিলা মাদ্রাসার পরিচালনাকারী আব্দুর রশিদ গাজি এবং আব্দুল আযিয গাজির নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। এই সংঘাতে ১০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল।[42]
২০০৭ সালের ২৭শে ডিসেম্বরে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে হত্যার সাথে আল-জাওয়াহিরি জড়িত ছিলেন।[43]
১৯৯৪ সালে আহমদ সালামা মাবরুক এবং মুহাম্মাদ শারাফের সন্তানদের আল-জাওয়াহিরির নেতৃত্বে মিসরীয় ইসলামি জিহাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। তখন এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে সুদান ত্যাগ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।[44][45]
১৯৯৮ সালে আয়মান আল-জাওয়াহিরি মার্কিন দূতাবাসে হামলাতে অংশগ্রহণের জন্য আমেরিকার কালো তালিকাভুক্ত হন।[46] ধারাবাহিক আক্রমণের একটি ১৯৯৮ সালের ৭ আগস্ট ঘটেছিল। যাতে পূর্ব আফ্রিকার উল্লেখযোগ্য শহর দারুস সালাম, তানজানিয়া এবং নাইরোবি, কেনিয়ার আমেরিকান দূতাবাসে ট্রাক বোমার বিস্ফোরণে তাৎক্ষণিক ১০০ জন লোক নিহত হয়।[3] এই আক্রমণগুলোর কারণে আন্তর্জাতিক মনোযোগ বিন লাদেন এবং আল-জাওয়াহিরির দিকে নিপতিত হয়।
২০০০ সালের মার্কিন কোল জাহাজে বোমা হামলার পরবর্তী অবস্থা দলটির সদস্যদেরকে বিভিন্ন স্থানে ছত্রভঙ্গ হতে বাধ্য করে। মুহাম্মাদ আতিফ কান্দাহারে চলে যান, আল-জাওয়াহিরি এবং বিন লাদেন কান্দাহারে গমন করেন। পরে আতিফ আমেরিকান আক্রমণের ব্যাপারে নিশ্চিত হবার পরে কাবুলে তাদের সাথে একত্রিত হন।[47]
২০০১ সালের ১০ই অক্টোবরে আল-জাওয়াহিরিকে আমেরিকার ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-এর মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীদের প্রাথমিক তালিকায় যুক্ত করা হয়। এই তালিকাটি জর্জ ডব্লিউ বুশ জনসম্মুখে প্রকাশ করেন। নভেম্বরের শুরুর দিকে তালিবান সরকার তাকে আফগানের কেন্দ্রীয় নাগরিকত্ব প্রদান করেন। অনুরূপভাবে, বিন লাদেন, মুহাম্মাদ আতিফ, সাইফ আল-আদেল এবং শায়খ আসেম আব্দুর রহমানকেও নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।[48]
আয়মান আল-জাওয়াহিরি ছিলেন মিসরীয় ইসলামি জিহাদের দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ "আমির"। তিনি আব্বুদ আল যুমারের পরবর্তী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। আব্বুদ আল-যুমারকে মিসর সরকার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। আয়মান আল-জাওয়াহিরি অবশেষে মিসরীয় ইসলামি জিহাদের সাংগঠনিক নেতৃত্বের পর্যায়ে পৌঁছেন। জাওয়াহিরির ইচ্ছা ছিল, সামরিক নিয়োগ কর্মকর্তা এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রক হবার। তিনি "তৎকালীন বিদ্যমান নেতৃত্ব উৎখাতের জন্য" মোক্ষম সময়ের অপেক্ষা করছিলেন।[49] আল-জিহাদের প্রধান সেনাকর্মকর্তা ছিলেন আব্বুদ আল-যুমার, তিনি মিসরীয় সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল ছিলেন। আব্বুদ আল-যুমার পরিকল্পনা করেছিলেন, ‘‘মিসরের সকল নেতৃবৃন্দকে হত্যা করবেন এবং সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর ও নিরাপত্তা বিভাগ দখলে নিবেন। এছাড়া টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, বেতারকেন্দ্র, টেলিভিশন কেন্দ্রগুলো দখলে আনবেন, এসব কেন্দ্র থেকে ইসলামি বিপ্লবের সংবাদ সম্প্রচার করবেন।’’ তিনি প্রত্যাশিত ছিলেন, ‘‘দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের বিরুদ্ধে একটি জনপ্রিয় উত্থান ঘটাবেন।’’[49]
পেশাওয়ারে আল-জাওয়াহিরি ওসামা বিন লাদেনের সাথে সাক্ষাত করেন। বিন লাদেন তখন মুজাহিদদের একটি ঘাঁটি পরিচালনা করছিলেন। এই ঘাঁটি ফিলিস্তিনি শাইখ আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আল-জাওয়াহিরির মৌলবাদি অবস্থান তাকে এবং তার দলকে শাইখ আযযামকে বিন লাদেনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি থেকে লাভবান হবার জন্য মুখোমুখি প্রতিযোগিতায় দাড় করিয়ে দেয়।[50] জাওয়াহিরি দুইটি জাল পাসপোর্ট তৈরি করেন। একটি সুইজারল্যান্ডীয় আমিন উসমান নামে অপরটি ডাচ পাসপোর্ট মুহাম্মাদ হিফনাওয়ি নামে।[51]
ব্রিটিশ সাংবাদিক জেসন বার্ক লিখেন, "আল-জাওয়াহিরি আফগান যুদ্ধ চলাকালীন নিজস্ব অভিযান চালান। মধ্যপ্রাচ্য থেকে স্বেচ্ছাসেবক আনয়ন করেন এবং প্রশিক্ষণ দেন। আফগানে তার দল পর্যন্ত পৌঁছতে সিআইএকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঢালতে হয়েছিলো।"[52]
সাবেক এফবিআই এজেন্ট আলি সউফান তার বই The Black Banners (অর্থ: কালো পতাকা) -এ উল্লেখ করেন, "আয়মান আল-জাওয়াহিরি আযযামকে হত্যার জন্য সন্দেহভাজন হিসেবে ১৯৮৯ সালে অভিযুক্ত হয়েছিলেন।[53][54]
১৯৯৮ সালে আল-জাওয়াহিরি আনুষ্ঠানিকভাবে মিসরীয় ইসলামি জিহাদকে আল কায়েদার সাথে একীভূত করে নেন। একজন সাবেক আল কায়েদা সদস্যের বক্তব্য অনুযায়ী, "তিনি আল কায়েদার গোড়াপত্তনের সময় থেকেই সংগঠনটির জন্য কাজ করতেন। এবং তিনি আল কায়েদার শুরা কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ সদস্য ছিলেন। তাকে ওসামা বিন লাদেন প্রায়ই "লেফটেন্যান্ট" হিসেবে পরিচয় দিতেন। এমনকি, ওসামা বিন লাদেনের নির্বাচিত জীবনী লেখকও তাকে আল কায়েদার "মূল মাথা" হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[56]
১৯৯৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারিতে আল-জাওয়াহিরি ওসামা বিন লাদেনের সাথে মিলে ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ফ্রন্ট এগেইনস্ট জিওজ এন্ড ক্রুসেডারসের অধীনে একটি ফতোয়া প্রকাশ করেন। ওসামা বিন লাদেন নন, বরং আল-জাওয়াহিরিই ছিলেন ফতোয়াটির মূল লেখক।[57]
বিন লাদেন এবং আল-জাওয়াহিরি ১৯৯৮ সালের ২৪শে জুনে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন। সম্মেলন শুরু হবার এক সপ্তাহ পূর্বে আল-জাওয়াহিরির অস্ত্রসজ্জিত সহকর্মীদের একটি দল জীপগাড়িতে হেরাতের অভিমুখে বের হন। তাদের পৃষ্ঠপোষকের (আল-জাওয়াহিরি) নির্দেশ অনুসরণ করে কোহ-ই-দোশাখ শহরে তারা অপরিচিত স্ল্যাভিক চেহারার অপরিচিত তিনজন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করেন। ঐ তিনজন রাশিয়া থেকে ইরান হয়ে এসেছিল। কান্দাহার পৌঁছার পর তারা পৃথক হয়ে যায়। তাদের একজন সরাসরি আল-জাওয়াহিরির সাহচর্য গ্রহণ করে। তবে, সে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেনি। পাশ্চাত্যের সামরিক বিভাগ তার ছবি তুলতে সক্ষম হয়। কিন্তু সে পরবর্তী ছয় বছর আত্মগোপন করে থাকে। এক্সিস গ্লোবের মত অনুসারে, ২০০৪ সালে আমেরিকা এবং কাতার যখন কাতারে জেলিমখান যন্দরবিয়েভ হত্যার অভিযোগে রুশ দূতাবাসের তদন্ত করছিলো। কম্পিউটার সফটওয়্যার তখন প্রমাণ করে, আল কায়েদার সম্মেলনের সময় আল-জাওয়াহিরির সাথে সাক্ষাতকারীর মত অবিকল ব্যক্তি দোহায় রুশ দূতাবাসে গিয়েছিলো।[58]
২০০৯ সালের ৩০শে এপ্রিল, মার্কিন সরকার বিবৃত করে, আল-জাওয়াহিরি আল কায়েদার আক্রমণ এবং সেনাবিভাগের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।[59] এবং ওসামা বিন লাদেন তখন থেকে শুধুমাত্র দলটির ভাবাদর্শগত নেতা হিসেবে বিবেচিত হন।[59] যাইহোক, ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর একজন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা যিনি বিন লাদেনকে হামলার পরিকল্পনায় প্রগাঢ়ভাবে জড়িত ছিলেন, তিনি উদ্ধৃত করেন: ‘‘অ্যাবোটাবাদের এই গৃহটি (যেখানে বিন লাদেন নিহত হন) আল কায়েদা প্রধানের শাসন এবং নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র হিসেবে সক্রিয় ছিল। তিনি আল কায়েদার অভিযানের ব্যাপারে যুদ্ধকৌশলগত সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনাগ্রহণে সক্রিয় ছিলেন।’’[60]
বিন লাদেনের মৃত্যুর পর সাবেক মার্কিন (সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলাবিষয়ক) জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সহকারী জুয়ান জ্যারাটে বলেন, "পরিষ্কারভাবে অনুমান করা যায়, আল কায়েদার নেতৃত্ব আল-জাওয়াহিরিই দিবেন।"[61] তবে, একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কেন্দ্রীয় মুখপাত্র বলেছিলেন, যদিও আল-জাওয়াহিরির ব্যাপারে ধারণা করা যায় যে, তিনিই পরবর্তী আল কায়েদা প্রধান হবেন। কিন্তু তার নেতৃত্ব বৈশ্বিক আল কায়েদার বহু অনুসারী কর্তৃক গৃহীত হয়নি, বিশেষতঃ উপসাগরীয় এলাকায়। জ্যারাটে আরো বলেন, বিন লাদেন থেকে আল-জাওয়াহিরি অধিক বিতর্কিত এবং কম দক্ষতাসম্পন্ন ছিলেন।[62] আল কায়েদা আরব উপদ্বীপ শাখার নেতৃস্থানীয় সদস্য রাশেদ মুহাম্মাদ ইসমাইল (ওরফে "আবুল ফিদা") বিবৃত করেন যে, আমির হবার জন্য আল-জাওয়াহিরি সবচেয়ে যোগ্য।[63]
পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর প্রতিবেদন করেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, আয়মান আল-জাওয়াহিরি আল কায়েদার আরম্ভকালে অভিযান বিষয়ক প্রধান ছিলেন। এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, "তিনিই এমন ব্যক্তি যিনি এগারো সেপ্টেম্বরে যা ঘটেছিল সে ব্যাপারে চিন্তা করতে পারেন।"[56] আক্রমণের কয়েকদিনের মধ্যেই জাওয়াহিরির নাম বিন লাদেনের প্রধান সহকারী সেনাধ্যক্ষ হিসেবে তালিকায় যুক্ত করা হয়। তালিকার প্রতিবেদনে তাকে বিন লাদেনের চেয়ে দুর্বল একজন শত্রু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[64]
২ মে ২০১১-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], তিনি ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর তিনি আল কায়েদার আনুষ্ঠানিকভাবে নেতা হন।[61] এটা আল কায়েদার কেন্দ্রীয় কমান্ড থেকে প্রকাশিত একটি সংবাদপত্র থেকে ২০১১ সালের জুনের ১৬ তারিখে নিশ্চিত করা হয়।[4] আল-জাওয়াহিরিকে আল কায়েদার সর্বপ্রধান হিসেবে একই তারিখে তাদের বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে ঘোষণা দেয়।[29] একই দিনে আল কায়েদা তাদের ইসরায়েলের ব্যাপারে নিজের অবস্থান পুনরায় স্পষ্ট করে যে, "এটি অবৈধ রাষ্ট্র, এবং ফিলিস্তিনের ব্যাপারে কোনো আপস করা হবে না।"[65]
এই বিলম্বিত ঘোষণার ফলে কিছু গবেষক আল কায়েদার আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ব্যাপারে গবেষণা করেন। একজন যশস্বী সাংবাদিক সিএনএনকে বলেন, "এই বিলম্ব তার জন্য কোনো আভ্যন্তরীণ সুখবরের ধারণা দেয় না।"[66] মার্কিন প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা পার্ষদ রবার্ট গেইটস এবং জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান মাইক মুল্যেন উভয়েই জানান, এই বিলম্ব আল কায়েদার আভ্যন্তরিক কোনো বিবাদের ইঙ্গিত দেয়না।[67] এবং মুল্যেন আল জাওয়াহিরির প্রতি মৃত্যুর হুমকির পুনরাবৃত্তি করেন।[68] তৎকালীন মার্কিন সরকার ওবামা প্রশাসন এবং রবার্ট গেইটসের মত অনুসারে, আল-জাওয়াহিরির নেতৃত্ব পাওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ছিল। কারণ গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা গেছে, তার যুদ্ধ অভিজ্ঞতা এবং বিন লাদেনের মত প্রতিভার অভাব রয়েছে।[67][69][70]
আল-জাওয়াহিরি অস্ত্র লেনদেনের অভিযোগে অপরাধী প্রমাণিত হন এবং তাকে তিন বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডাজ্ঞার পর থেকে ১৯৮৪ সালে তিন বছর পূর্ণ হয়।[71]
৩১ জুলাই ২০২২ -এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পরিকল্পিত ড্রোন হামলায় কাবুলে মৃত্যুবরণ করেন।[72]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.