Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আবদুস সাত্তার ইধি (মেমনি, উর্দু: عبدالستار ایدھی; সিন্ধি: عبدالستار ايڌي; ১৯২৬[4][5] – ৮ জুলাই ২০১৬) ছিলেন পাকিস্তানের একজন জনহিতৈষী, সমাজসেবী ও মানবতাবাদি। তিনি ইধি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান ছিলেন। ছয় দশকব্যপী তিনি এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। তাকে দয়ার ফেরেশতা নামে ডাকা হত এবং পাকিস্তানের সবচেয়ে সম্মানিত ও কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তি বিবেচিত হতেন।[1][6] ২০১৩ সালে হাফিংটন পোস্ট তাকে "শ্রেষ্ঠ জীবিত মানবতাবাদি" বলে উল্লেখ করে।[7]
আবদুস সাত্তার ইধি | |
---|---|
জন্ম | আবদুস সাত্তার ইধি ১ জানুয়ারি ১৯২৮ |
মৃত্যু | ৮ জুলাই ২০১৬ ৮৮) | (বয়স
মৃত্যুর কারণ | কিডনি নিষ্ক্রিয়তা |
সমাধি | ইধি পল্লী, করাচি |
জাতীয়তা | পাকিস্তানি |
অন্যান্য নাম | দয়ার ফেরেশতা[1][2] |
পরিচিতির কারণ | সমাজসেবা সহজসরল জীবন মানবতাবাদি[3] |
দাম্পত্য সঙ্গী | বিলকিস ইধি |
সন্তান | ফয়সাল ইধি, কুতুব ইধি |
পিতা-মাতা |
|
পুরস্কার | রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার (১৯৮৬) লেনিন শান্তি পুরস্কার (১৯৮৮) নিশান-ই-ইমতিয়াজ (১৯৮৯) |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
আবদুস সাত্তার ইধি ১৯২৮ সালে ব্রিটিশ ভারতের গুজরাতের বান্টভায় জন্মগ্রহণ করেন।[4][5] ইধির ১১ বছর বয়সে তার মা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হন এবং ১৯ বছর বয়সে মারা যান। পরবর্তী জীবনে দুস্থদের সহায়তামূলক কাজের ক্ষেত্রে তার মায়ের অসুস্থতাকালীন সময়টি ভূমিকা রেখেছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ইধি সপরিবারে পাকিস্তানে চলে আসেন।[6][8] তিনি করাচিতে বসবাস শুরু করেন এবং একটি পাইকারি দোকানে কাজ নেন। কয়েকবছর পরে অন্যদের সহায়তায় তিনি একটি বিনামূল্যের ডিসপেনসারি চালু করেন।[8]
দরিদ্রদের সহায়তার জন্য ইধি তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। পাকিস্তানে তিনি সেবামূলক কর্মকাণ্ডের দৃশ্য বদলে দেন। তিনি ইধি ফাউন্ডেশন গঠন করেন। পাশাপাশি তিনি ৫,০০০ রুপি দিয়ে ইধি ট্রাস্ট নামে একটি কল্যাণমূলক ট্রাস্ট চালু করেন। পরে এর নাম বদলে বিলকিস ইধি ট্রাস্ট রাখা হয়।[9][10] অন্যান্যদের কাছ থেকে তিনি অনেক অর্থ সহায়তা পান। ফলে তার কাজের ব্যপ্তি বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে এটি পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ কল্যাণমূলক সংগঠন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত ইধি ফাউন্ডেশন ২০,০০০ এর বেশি পরিত্যক্ত শিশুকে উদ্ধার, ৫০,০০০ এর বেশি এতিমকে পুনর্বাসন ও ৪০,০০০ এর বেশি নার্সকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।[11] এছাড়াও এই সংগঠন শহর ও গ্রাম এলাকায় ৩৩০টি সেবামূলক কেন্দ্র চালিয়ে থাকে। এসব কেন্দ্র থেকে রান্নার স্থান, পুনর্বাসন স্থল, অসহায় নারী ও শিশুদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র এবং মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য ক্লিনিক পরিচালনা করা হয়।[12]
ইধি ফাউন্ডেশন বিশ্বের সর্ববৃহৎ এম্বুলেন্স সার্ভিস পরিচালনা করে। এছাড়াও তারা ২৪ ঘণ্টার জরুরি সেবা দিয়ে থাকে। ফাউন্ডেশন বিনামূল্যে নার্সিং হোম, এতিমখানা, ক্লিনিক, নারীদের আশ্রয়কেন্দ্র, মাদকাসক্ত ও মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য পুনর্বাসনকেন্দ্র চালায়।[13] আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ককেসাস অঞ্চল, পূর্ব ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে এটি ত্রাণমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। ২০০৫ সালে হারিকেন ক্যাটরিনার পর যুক্তরাষ্ট্রে সহায়তা প্রদান করা হয়। তার অসুস্থতাকালে তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যারা সংগঠনের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করেছে।[11] বিবিসির বর্ণনায় তাকে পাকিস্তানের সবচেয়ে সম্মানিত এবং অনেকের দৃষ্টিতে প্রায় সুফির সমতুল্য ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[6]
তিনি ও তার স্ত্রী বিলকিস ইধি ১৯৮৬ সালে রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার পান। এছাড়া তিনি লেনিন শান্তি পুরস্কার ও বালজান পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০০৬ সালে করাচির ইন্সটিটউট অব বিজনেজ এডমিনিস্ট্রেশন তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে বেডফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করে।[14] ১৯৮৯ সালে পাকিস্তান সরকার তাকে নিশান-ই-ইমতিয়াজ খেতাব দেয়।[15] ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের পাঠকদের ভোটে তিনি ২০১৩ এর পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন।[16] ২০১৬ সালে ইধির জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ৩০,০০০ এর বেশি স্বাক্ষর সংবলিত মালালা ইউসুফজাইয়ের বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাইয়ের আবেদনসহ নোবেল শান্তি পুরস্কারের আবেদন করেছিলেন।[17]
১৯৮০ এর দশকে লেবাননে প্রবেশের সময় ইসরায়েলি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ২০০৬ সালে কানাডার টরেন্টোয় তাকে ১৬ ঘণ্টার জন্য আটক করা হয়। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অফিসাররা নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে ৮ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা তার পাসপোর্ট এবং অন্যান্য কাগজপত্র জব্দ করে। ইতিপূর্বে আটক হওয়ার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, "যে ব্যাখ্যার কথা আমি ভাবতে পারি তা হল আমার দাড়ি এবং পোশাক।"[18]
আবদুস সাত্তার ইধি ১৯৬৫ সালে ইধি ডিসপেনসারির নার্স বিলকিস ইধিকে বিয়ে করেছে।[19] এই দম্পতির দুই পুত্র ও দুই কন্যা রয়েছে।[1] তিনি তার সহজসরল জীবনযাপনের জন্যও পরিচিত। তার শুধু দুইটি কাপড় ছিল। সংগঠন থেকে তিনি কোনো বেতন নিতেন না এবং অফিসের পাশে একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন।[6][20][21]
২০১৩ সালের ২৫ জুন আবদুস সাত্তার ইধির কিডনি অকেজো হয়ে পড়ে।[22] ২০১৬ সালের ৮ জুলাই কিডনির নিষ্ক্রিয়তার জন্য তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর অঙ্গ দানের ইচ্ছা থাকলেও তার অসুস্থতার কারণে শুধু কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা সম্ভব ছিল।[23] করাচির ইধি পল্লীতে তাকে দাফন করা হয়।[24]
তার মৃত্যুর পর পাকিস্তানের অনেক উচ্চপদস্থ ব্যক্তি শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেন "আমরা মানবতার একজন প্রকৃত সেবককে হারিয়েছে"।[6] সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ তাকে একজন "প্রকৃত মানবতাবাদি" বলে উল্লেখ করেন।[1]
তার মৃত্যুর পরেরদিন জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়। তাকে গার্ড অব অনার ও ১৯টি গান স্যালুট প্রদান করা হয়। পাকিস্তানিদের মধ্যে ইতিপূর্বে শুধু মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ ও জিয়াউল হক এরূপ সম্মান লাভ করেছিলেন। করাচির জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তার জানাজায় রাষ্ট্রপতি, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানসহ অনেক রাষ্ট্রীয় উচ্চপদস্থ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।[25][26]
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।[27]
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবদুস সাত্তার ইধির স্মারক মুদ্রা বের করার সিদ্ধান্ত নেয়।[34][35]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.