অ্যাংলো-স্যাক্সন
From Wikipedia, the free encyclopedia
অ্যাংলো-স্যাক্সন জনগোষ্ঠী ছিল আদি মধ্যযুগে ইংল্যান্ডে বসবাসকারী একটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠীর উৎস খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের উত্তর সাগর-উপকূলবর্তী অঞ্চলের দ্বীপ থেকে ব্রিটেনে অনুপ্রবেশকারী জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। যদিও অ্যাংলো-স্যাক্সনদের জাতিগঠনের ঘটনাটি ব্রিটেনের মধ্যেই ঘটেছিল এবং পরিচিতিটিও নিছক প্রত্যক্ষভাবে বাইরে থেকে আনা হয়নি। অ্যাংলো-স্যাক্সন পরিচয়ের বিকাশ ঘটতে শুরু করে বিভিন্ন জার্মানিক উপজাতির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন শুরু হলে। এই সম্পর্ক স্থাপন তাদের নিজেদের মধ্যে যেমন ঘটেছিল, তেমনই ঘটেছিল তাদের সঙ্গে স্থানীয় ব্রিটিশ গোষ্ঠীর মধ্যে। অনেক স্থানীয় অধিবাসীই কালক্রমে অ্যাংলো-স্যাক্সনদের সংস্কৃতি ও ভাষা গ্রহণ করে তাদের সঙ্গে মিশে যায়। অ্যাংলো-স্যাক্সনরাই ইংল্যান্ডের ধারণা এবং রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। আধুনিক ইংরেজি ভাষার মোটামুটি ২৬ শতাংশেরও কম শব্দ তাদের ভাষা থেকে উৎসারিত হলেও এই শব্দগুলি রয়েছে প্রতিদিনের ব্যবহার্য শব্দাবলির একটি বৃহত্তর অংশ জুড়ে।[1]
ঐতিহাসিকভাবে অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগ বলতে বোঝায় ব্রিটেনে ৪৫০ থেকে ১০৬৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময় অর্থাৎ তাদের প্রথম জনবসতি স্থাপনের সময় থেকে নর্ম্যান বিজয় পর্যন্ত।[2] এই যুগের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল এক ইংরেজ জাতিরাষ্ট্র গঠন, শায়ার ও হান্ড্রেডের আঞ্চলিক সরকার সহ যে জাতিরাষ্ট্রের অনেক বৈশিষ্ট্যই আজও বিদ্যমান রয়েছে। এই যুগেই খ্রিস্টধর্ম প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল এবং ভাষা ও সাহিত্যের এক প্রকার পরিপূর্ণতা লাভ ঘটেছিল। সনদ ও আইনও প্রচলিত হয়েছিল এই যুগে।[3] অ্যাংলো-স্যাক্সন শব্দটি অন্ততপক্ষে মধ্য-পঞ্চম শতাব্দী থেকে মধ্য-দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণপূর্ব স্কটল্যান্ডে অ্যাংলো-স্যাক্সনদের মুখের ও লেখার ভাষার নাম হিসেবেই জনপ্রিয়। গবেষকেরা সাধারণত এই ভাষাটিকে প্রাচীন ইংরেজি নামে অভিহিত করেন।[4]
অ্যাংলো-স্যাক্সনদের ইতিহাস হল একটি সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ইতিহাস। এই ইতিহাসে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের জনগোষ্ঠীর পারস্পরিক আদানপ্রদান, সেই জনগোষ্ঠীর খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ এবং বিভিন্ন রাজ্যের স্থাপনা। ড্যানিশ ভাইকিংদের ব্যাপক সামরিক অভিযান এবং পূর্ব ইংল্যান্ডের সামরিক দখলদারির ভয়ে এই পরিচয় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল; তা প্রাধান্য বজায় রেখেছিল নর্ম্যান বিজয় পর্যন্ত।[5] অ্যাংলো-স্যাক্সন বস্তুগত সংস্কৃতি এখনও স্থাপত্য, পোষাক-পরিচ্ছদ, অলংকৃত গ্রন্থ, ধাতু ও অন্যান্য শিল্পের মধ্যে লক্ষিত হয়। এই সব সাংস্কৃতিক চিহ্নের প্রতীকী প্রকৃতির পিছনে উপজাতীয় ও শাসকশ্রেণির বন্ধনের বলিষ্ঠ উপাদানের অস্তিত্ব রয়েছে। অভিজাতবর্গ নিজেদের রাজা ঘোষণা করে বারাহ্-গুলি গড়ে তোলে এবং নিজেদের ভূমিকা ও শাসিত প্রজাবর্গকে বাইবেলীয় শব্দ দ্বারা চিহ্নিত করে। হেলেনা হেমরোর মতে, সর্বোপরি "স্থানীয় ও সম্প্রসারিত আত্মীয় গোষ্ঠীগুলি থেকে যায়… [যা] সমগ্র অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগ ধরে উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ একক ছিল।"[6] এই প্রভাব একবিংশ শতাব্দী অবধি বজায় রয়েছে। ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে বর্তমানে ব্রিটিশ জনসংখ্যার জিনগত গঠনের মধ্যে আদি অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগের উপজাতীয় রাজনৈতিক এককগুলির বিভাগ বিদ্যমান।[7]
লাতিন ভাষায় ও মহাদেশীয় ইউরোপে অ্যাংলো-স্যাক্সন শব্দটি অষ্টম শতাব্দী থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে ব্রিটেনের জার্মানিক জাতিগোষ্ঠীগুলিকে মহাদেশীয় জার্মানিক জাতিগোষ্ঠীর (উত্তর জার্মানির ওল্ড স্যাক্সনি ও অ্যাংলিয়া) থেকে পৃথক করার জন্য।[8][lower-alpha 1] Catherine Hills summarised the views of many modern scholars in her observation that attitudes towards Anglo-Saxons, and hence the interpretation of their culture and history, have been "more contingent on contemporary political and religious theology as on any kind of evidence."[9]