Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অরনিকো (নেপালি: अरनिको; চীনা: 阿尼哥) (১২৪৫-১১ মার্চ, ১৩০৬) একজন নেপালি স্থপতি, ভাস্কর তথা চিত্রশিল্পী ছিলেন, যিনি নেপালের মল্ল রাজা জয়ভীম দেবের নির্দেশে তিব্বত ও ইউয়ান সাম্রাজ্য বৌদ্ধ স্তূপ নির্মাণের জন্য যাত্রা করে চীনা শিল্পকে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের শিল্পের দ্বারা প্রভাবিত করেন।
অরনিকোর জীবন সম্বন্ধে কোন নেপালি উৎস থেকে তথ্য পাওয়া যায় না। অরনিকো ১২৪৫ খ্রিষ্টাব্দে নেপালের কাঠমান্ডু উপত্যকায় জন্মগ্রহণ করেন।[1] ঐতিহাসিক বাবুরাম আচার্য্য তাকে স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের জন্য বিখ্যাত পাটন অঞ্চলের একজন নেওয়ার জনজাতির ব্যক্তি বলে করেছেন।[2] চীনা উৎসগুলি থেকে জানা যায় যে, তার পিতামহের নাম ছিল মি-তি-র্হা (=? মিত্র) এবং পিতামহীর নাম ছিল কুন-দি-লা-চি-মেই (=? কুণ্ডলক্ষ্মী)। এই উৎসগুলি থেকে জানা যায় যে, তার পিতার নাম ছিল লা-কে-ন =? লক্ষ্মণ) ও মাতার নাম ছিল শু-মা-কে-তাই।[2] প্রাচীন চীনা পুঁথিগুলিতে অরনিকো বা অর্নিকো বা অনিকো নামটি পাওয়া যায়। বাবুরাম আচার্যের মতে এই নামগুলি "অনেক" শব্দের চীনা অপভ্রংশ।[2] শৈশব থেকেই অরনিকোর শিল্পের প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি হয় এবং বাল্যকালে মেধাবী এই ছাত্র চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের প্রতি ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।[3]
১২৬০ খ্রিষ্টাব্দে ইউয়ান সাম্রাজ্যের মঙ্গোল সম্রাট কুবলাই খান তার নবনিযুক্ত জাতীয় ধর্মশিক্ষক তথা তিব্বতের প্রশাসনিক ও ধর্মীয় বিভাগের প্রধান 'গ্রো-ম্গোন-ছোস-র্গ্যাল-'ফাগ্স-পা (তিব্বতি: འགྲོ་མགོན་ཆོས་རྒྱལ་འཕགས་པ་, ওয়াইলি: 'gro mgon chos rgyal 'phags pa) নামক সা-স্ক্যা ধর্মসম্প্রদায়ের সপ্তম প্রধানকে একটি স্বর্ণখচিত স্তূপ নির্মাণের নির্দেশ দেন। এই স্তূপটি কুন-দ্গা'-র্গ্যাল-ম্ত্শান-দ্পাল-ব্জাং-পো (তিব্বতি: ཀུན་དགའ་རྒྱལ་མཚན་དཔལ་བཟང་པོ།, ওয়াইলি: kun-dga’ rgyal-mtshan dpal bzang-po) নামক বিখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত ও সা-স্ক্যা ধর্মসম্প্রদায়ের ষষ্ঠ প্রধানের সম্মানার্থে ও স্মৃতিতে নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।[4] এই কাজের জন্য 'গ্রো-ম্গোন-ছোস-র্গ্যাল-'ফাগ্স-পা নেপাল থেকে শিল্পীদের তিব্বত পাঠানোর অণুরোধ করলে নেপালের মল্ল রাজা জয়ভীম দেবের নির্দেশে কিশোর অরনিকোর নেতৃত্বে আশিজন শিল্পী লাসা যাত্রা করেন।[3] ১২৬১ খ্রিষ্টাব্দে তারা লাসা পৌছলে 'গ্রো-ম্গোন-ছোস-র্গ্যাল-'ফাগ্স-পা অরনিকোর তত্ত্বাবধানে সা-স্ক্যা বৌদ্ধবিহারের মূল ভবনের মধ্যে এই স্তূপ নির্মাণের দায়িত্ব প্রদান করেন ও পরবর্তী আনুমানিক দুই বছর ধরে এই কাজ সম্পন্ন হয়।
সাম্রাজ্যের ধর্মশিক্ষক হওয়ার কারণে 'গ্রো-ম্গোন-ছোস-র্গ্যাল-'ফাগ্স-পা সা-স্ক্যা ধর্মসম্প্রদায়ের শিক্ষা মঙ্গোলদের মধ্যে প্রচারের জন্য যাত্রা করার প্রয়োজন হলে তিনি শিল্পী অরনিকোকে তার সঙ্গে ইউয়ান রাজদরবারে যাওয়ার অণুরোধ করেন। তিনি তাকে শিষ্যত্ব প্রদান করে বৌদ্ধ ভিক্ষুতে পরিণত করেন।[4]
১২৬২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে অরনিকো শাংদু পৌঁছন ও কুবলাই খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।[n 1] এরপর তিনি তার নির্দেশে সুং রাজবংশের উপহার হিসেবে প্রদত্ত একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি দুই বছর ধরে নিখুঁত ভাবে মেরামত করেন।[3] এই সময় তিনি ইউয়ান সাম্রাজ্যে বেশ কিছু অট্টালিকা ও প্রাসাদ নির্মাণ করেন, যার মধ্যে বেইজিং শহরে অবস্থিত মিয়াওয়িং মন্দিরের শ্বেত স্তূপ নির্মাণ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ৫০.৯ মিটার উচ্চ এই স্তূপ নির্মাণ করতে দশ বছর সময় লাগে। এই স্তূপের চূড়োয় ছত্রাকৃতি বিশিষ্ট একটি ব্রোঞ্জের শীর্ষদেশ রয়েছে, যার চারদিক থেকে ৩৬টি ব্রোঞ্জের ঘণ্টা ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে।[5] তার জীবনকালে অরনিকো তিনটি স্তূপ, নয়টি বৌদ্ধ মন্দির, দুইটি কনফুশিয় মন্দির, একটি দাওবাদী মন্দির, অসংখ্য চিত্র ও মূর্তি নির্মাণ করেন।[3] তিনি রাজপরিবারের সসস্যদের প্রতিকৃতিও অঙ্কন করেন। তাইপেইয়ের জাতীয় সংগ্রহালয়ে সংরক্ষিত কুবলাই খান ও তার পত্নীর প্রতিকৃতিটি অরনিকো দ্বারা অঙ্কিত বলে মনে করা হয়।[4]
ইউয়ান সাম্রাজ্যে অরনিকো বহু সম্মান লাভ করেন। ১২৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তাকে শিল্পী সম্প্রদায়ের প্রধান বানানো হয় এবং তিনি চীনা শিল্পীদের সা-স্ক্যা ধর্মসম্প্রদায়ের পদ্ধতিতে তাদের প্রশিক্ষণ দেন। সম্রাটের প্রিয়পাত্র এই শিল্পীকে তা-শা-থু উপাধিতে ভূষিত করা হয় এবং একজন মন্ত্রী সমমর্যাদা দেওয়া হয়। তিনিই ছিলেন সেই সামান্য কয়েকজন বিদেশীদের অন্যতম যার জীবনী চীনা সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক পুঁথিগুলি থেকে পাওয়া যায়। চেং জুফু দ্বারা ১৩১৬ খ্রিষ্টাব্দে রচিত লিয়াংগুয়ো মিনহুই গোং শেন্দাও বেই গ্রন্থ এবং মিং শাসনকালে রচিত ইউয়ানশি গ্রন্থে তার জীবনী সম্বন্ধে ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়
চীনে অরনিকো তার ভিক্ষুজীবন ত্যাগ করে পুনরায় বিবাহ করেন। তার নেপালি পত্নী ছাড়াও দুইজন মঙ্গোল পত্নী ও সাতজন চীনা পত্নী ছিল। তার মোট ছয়জন পুত্র ও আটজন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ১৩০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই মার্চ ঘুমন্ত অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। সাতদিন পরে নেপালি ঐতিহ্যে তার শবদেহ দাহ করা হয় এবং তার অস্থিভস্ম গাংজিইউয়ানের স্তূপে সমাধিস্থ করা হয়।[3]
নেপাল সরকার অরনিকোর সম্মানার্থে ডাকটিকিট প্রকাশ করেন।[6] নেপালের কাঠমান্ডু হতে কোডারি পর্যন্ত বিস্তৃত অরনিকো রাজমার্গ তার নামে নামাঙ্কিত।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.