উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অয়নাংশ(সংস্কৃত অয়নাংশঃ অয়ন “চলন” + অংশ “উপাদান”) বা অয়নভগ্ন (সং-ভগ্ন “অংশ”) ভারতীয় জ্যোতিঃশাস্ত্রে একটি সংস্কৃত শব্দ যা অয়ন চলনের[১] পরিমাপের জন্য ব্যবহার করা হয়।
জ্যোতিঃশাস্ত্রে এটি ক্রান্তীয় (সায়ন) এবং নাক্ষত্রিক (নিরায়ন) রাশিচক্রের দ্রাঘিমাংশের পরিবর্তন। জ্যোতির্বিদ্যাতেও এটি এক ক্রান্তীয় বছর (৩৬৫.২৪২২ পৃথিবীর ঘূর্ণন) এবং এক নাক্ষত্রিক বছরের (৩৬৫.২৫৬৩ বার ঘূর্ণন) এর পার্থক্য যা অক্ষের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে প্রয়োজনীয় সময়ের সমান।
উপরিউক্ত সজ্ঞাটি সেলেব্রুক, বারগেস প্রভৃতির মতে অয়নাংশের আধুনিক সজ্ঞা। প্রাচীন সজ্ঞানুযায়ী অয়নাংশকে শুধু বিষুবনের গতিই বলা হয় নি প্রাচীন লোকেরা ক্রান্তীয় ও নাক্ষত্রিক বছরেরও পার্থক্য নির্ণয় করে দেখিয়েছেন যে এই গতি অবলোকনযোগ্য। সূর্যসিদ্ধান্তে [২] অয়নাংশকে দেখান হয়েছে নাক্ষত্রিক ধীর ঘূর্নন (নক্ষত্রচক্র বা ভচক্র) হিসেবে যা + বা – ২৭ ডিগ্রীর মধ্যে যার বার্ষিক গতি ৫৪ মিনিট (আধুনিক মতানুযায়ী ৫০.৩ মিনিট)। বার্গেস নক্ষত্রচক্রের ঘূর্ণনের ধারণাটি বুঝতে পারেন নি এবং একে লেখাগত ত্রুতি বলে উল্লেখ করেন। সেলেব্রুকের মত পূর্বসুরীদের ন্যায় তিনি নিজের ধারণার উপর ভিত্তি করে তিনি এই মতামত দেন যে অয়ন চলনই অয়নাংশ। তারা ধরে নিয়েছিল যে ভারতীয়রা গতি সম্পর্কে কোন কিছু জানত না এভাবে তারা নাক্ষত্রিক ভুল গতিকে আবিষ্কার করল। কিন্তু ভাস্কর-২য় তার সিদ্ধান্ত শিরোমণিতে অয়নাংশ নির্ণয়ের সমীকরণ দেন এবং বলেন যে তার সমীকরণ হলো সুর্যসিদ্ধান্তের হারানো সমীকরণ এবং মুঞ্জালার সমীকরণ।
বর্তমানে অয়নাংশ বলতে নাক্ষত্রিক অয়নবৃত্ত, ক্রান্তীয় অয়নবৃত্ত এর চেয়ে কতটা কম। এন সি লাহিরির মতে বর্তমানে অয়নাংশ ২৪ ডিগ্রীর কাছাকাছি, ২০০০ এ ২৩.৮৫ ডিগ্রী।এই মান ক্রান্তীয় এবং নাক্ষত্রিক রাশিচক্রের সাথে মিলে যায় ২৯৩ খ্রীষ্টাব্দ বা এর কাছাকাছি সময়ে যা ৩য় খ্রীষ্টাব্দে টলেমী ঐতিয্যগতভাবে পাশ্চাত্য জ্যোতিষে যুক্ত করেছিলেন।
যখন থেকে বাসন্তিক ক্রান্তিপাত পশ্চিম দিকে প্রতি বছর ৫০.২৯ ডিগ্রী(এই হার বৃদ্ধি পাচ্ছে) স্থির নক্ষত্রের সাপেক্ষে স্থির নাক্ষত্রিক দ্রাঘীমাংসের সংজ্ঞা দেয়া হয়।অপর পক্ষে যখন কোন নক্ষত্র এর কোন “স্থান পরিবর্তন না হয়”(প্রকৃত গতি) তখন নক্ষত্রগুলোর দ্রাঘীমাংস ঐ ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন হয় না। ঐতিহ্যগতভাবে বৈদিক জ্যোতিষে(জ্যোতিষা) নাক্ষত্রিক দ্রাঘীমাংস ব্যবহার করা হয়। যখন জ্যোতিষ বিদ্যালয়ের চর্চাকারীগণ আধুনিক জ্যোতিষিক হিসেব ব্যবহার করে কোন নক্ষত্রের দ্রাঘীমাংস নির্ণয় করেন তখন তারা আপেক্ষিক অবস্থানের সাপেক্ষে যে দ্রাঘীমাংস নির্ণয় করেন তাই অয়নাংশ। বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রের কিছু বিদ্যালয়ে আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যাকে অগ্রাহ্য করে এবং এখনও তারা তাদের প্রাচীন পুথি বিশেষ করে সূর্যসিদ্ধান্তের[৩] মতানুযায়ী তাদের গণনা করে থাকে।যেখানে অয়নাংশ বৃদ্ধি পায় ০ থেকে +২৭ ডিগ্রী পর্যন্ত প্রতি ১৮০০ বছরে আবার পুনরায় হ্রাস পায় ০ থেকে -২৭ডিগ্রী পর্যন্ত। এভাবে স্পন্দিত হয় +/-২৭ ডিগ্রী যা আধুনিক জ্যোতিষবিদ্যার চক্রাকারের বিপরীত যা আধুনিক জ্যোতিষবিদ্যা সমর্থন করে। মুঞ্জালা চক্রাকার ধারণাকে সমর্থন করেন কিন্তু এটি আল্মানাক নিয়ম তৈরীকারকদের সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়। পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে(৪র্থ শতাব্দীতে) সূর্যসিদ্ধান্তের ন্যায় একটি পদ্ধতিই প্রচলিত ছিল(যদিও ত্রিপিদিয়ান বলে অংশগত পার্থক্য হয় +/-৮ডিগ্রী। সূর্যসিদ্ধান্তের হিসেবে ৯০ডিগ্রীর সাথে ০.৩ গুণ অণুমিত হয়। তত্ত্বে পুনরায় ২৭ডিগ্রীর সাথে ০.৩ গুণ করা হয় ৮ডিগ্রী পাওয়ার জন্য।) এই স্পন্দন ধরনের অয়নাংশ ত্রিপিদিয়ান বলে পরিচিত যা ভারত, আরব ও ইউরোপিয়ান জ্যোতিষবিদদের নিকট কোপার্নিকাসের আমল পর্যন্ত বিখ্যাত ছিল। আধুনিক বিজ্ঞান এই পদ্ধতি সমর্থন করে না। ৪৯০খ্রীষ্টাব্দকে শুন্য বছর ধরে এই অয়নাংশ পদ্ধতি প্রচলিত ছিল সূর্যসিদ্ধান্ত,আর্যভট্র প্রভৃতির পদ্ধতিতে। তাই বর্তমান প্রচলিত অয়নাংশের মান +২২.৬৪ডিগ্রী যা আধুনিক মান +২৪ডিগ্রী হতে কম। ২২৯৯খ্রীষ্টাব্দ এর পর হতে সর্বোচ্চ অয়নাংশ +২৭ডিগ্রী হতে কমছে অপর দিকে আধুনিক অয়নাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সূর্যদয় ও লগ্ন এর হিসেবে সঠিক অয়নাংশ প্রয়োজন যেখানে ভারতের ধর্মীয় বিষয় আল্মানাক ও রাশিফল এর উপর নির্ভর করে। অয়নাংশ ক্রান্তীয় ও নাক্ষত্রিক রাশিচক্রের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে। অয়নাংশ মহাবিষুবের এর অয়নচলন এর মধ্য দিয়ে প্রায় ৫০মিনিট হারে বৃদ্ধি পায় যা বর্তমানে ২৪ডিগ্রী। পাশ্চাত্য জ্যোতিষবিদ ব্রেডলি ও ফাগান ১৯৫০সালে ২৪ডিগ্রী নির্ণয় করেন যদিও ভারতে অয়নাংশের বিভিন্ন মান প্রচলিত আছে। সাধারণ ঐকমত্য্যে দেখা যায় যে মেষ রাশির প্রথম অবস্থান পরিবর্তিত হয় মেষ রাশি এর অনির্দিষ্ট প্রাচীন সীমানার কারণে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.