Loading AI tools
কাঠের তৈরি কৃষি উপকরণ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হাল বা লাঙল সর্বভারতীয় অঞ্চলের আদিম কৃষিযন্ত্র। এক ধরনের যন্ত্র যা সাধারণত কৃষি কাজে ব্যবহার করা হয়।[1] বীজ বপন অথবা চারা রোপনের জন্য, জমির মাটি তৈরি করবার ক্ষেত্রে হাল ব্যবহার করা হয়। কৃষি কাজের জন্য ব্যবহৃত এটি অন্যতম পুরাতন যন্ত্র। এটির প্রধান কাজ হলো মাটিকে ওলট-পালট করা এবং মাটির দলাকে ভেঙে দেয়া যাতে করে মাটির নিচের লেয়ারের পুষ্টিগুণ উপরে উঠে আসতে পারে এবং একই সাথে মাটির উপরের আগাছা ও ফসলের অবশিষ্টাংশ নিচে চাপা পরে জ়ৈব সারে পরিণত হতে পারে। এটি মাটিতে বায়ু চলাচলের পরিমাণ বাড়ায় এবং মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে। হাল আগে সাধারণত বলদ, ষাঁড়, মহিষ অথবা ঘোড়া দ্বারা টানা হতো। বর্তমানে আধুনিকতার সাথে সাথে হালের পরিবর্তন এসেছে। ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দ্বারা জমি চষবার ক্ষেত্রেও হাল একটি গূরত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে।[2] লাঙ্গল একটি তৎসম শব্দ [√লঙ্গ+অল(কলচ্)]।
লাঙ্গলের বিভিন্ন অংশ থাকে। লাঙল তৈরি করা হয় প্রধানত কাঠ দিয়ে। গ্রামের কাঠ মিস্ত্রিরা লাঙল তৈরি করে।[3] যে অংশ মাটি কর্ষণ করে তাকে বলা হয় ফলা। আর যে ভারী কাঠের দণ্ড দুটি বলদের কাঁধে স্থাপন করা হয় তাকে বলা হয় জোয়াল।
লাঙল দিয়ে হাল-চাষ করতে কমপক্ষে একজন লোক ও একজোড়া গরু অথবা মহিষ প্রয়োজন হয়। গরু-টানা লাঙলের দুটি অংশ থাকে। নিচের অংশটিকে সাধারণত হাল বা লাঙল বলা হয়। আর উপরে গরু বা মহিষের ঘাড়ে লাগানো অন্য অংশটিকে জোয়াল বলা হয়।
লাঙলের ফলা মাটিতে গেঁথে গিয়ে মাটিকে ওলট-পালট করে দেয়।[3] মাটির নিচের স্তরের পুষ্টিগুণ উপরে উঠে আসে এবং মাটির উপরের আগাছা ও ফসলের অবশিষ্টাংশ নিচে চাপা পড়ে জৈব সারে পরিণত হয়। এ ছাড়া, মাটিতে বায়ু চলাচলের পরিমাণ বাড়িয়ে এবং মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে লাঙল। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় গৃহস্থের সব জমিতে পাওয়ারটিলার বা ট্রাকটর নেয়া সম্ভব হয় না। সেসব জমিতে মান্দাতা আমলের লাঙল দিয়ে হালচাষ করা যায়। লাঙল-জোয়াল বলদের কাঁধে বসিয়ে হালচাষ পদ্ধতি পরিবেশ বান্ধব। কারণ গরুর গোবর থেকে নির্ভেজাল জৈব সার পাওয়া যায়। এই সার জমির উর্বরা শক্তি ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে। তাই এই পদ্ধতি কৃষকের জন্য লাভজনক ও পরিবেশ সহায়ক। বাড়িতে হালচাষের বলদ গরু ছিল ২-৩ জোড়া থাকত। চাষের জন্য দরকার হতো ১ জোড়া বলদ, কাঠ লোহার তৈরি লাঙল, জোয়াল, মই, লরি (বাঁশের তৈরি গরু তাড়ানোর লাঠি), গরুর মুখে টোনা ইত্যাদি। আগে গরু দিয়ে হাল চাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো।[4]
বাঙালির চিরচেনা ঐতিহ্য কাঠের লাঙল আধুনিক প্রযুক্তির আবির্ভাবে বিলুপ্তির পথে। একসময় লাঙল ছাড়া গ্রাম-বাংলায় চাষাবাদের কথা চিন্তাই করা যেত না। দেখা যেত খুব ভোর বেলায় প্রান্তিক কৃষক তার ঘাড়ে লাঙল জোয়াল আর মই রেখে এক হাতে গরু শাসনের পাচুনি লাঠি আর অন্য হাতে চাষাবাদের উপযুক্ত দুই বলদের দড়ি ধরে রেখেছে। চাষাবাদ শেষ করে কর্দমাক্ত শরীরে ক্ষেতের আইলে বউঠুনির নিয়ে আসা সকালের পান্তা আর কাঁচা মরিচ পিঁঁয়াজ দিয়ে ভাত খেয়ে নিয়েছেন কৃষক। বিশ্রাম শেষে আবারও কৃষকের ঠাই ঠাই শব্দ শোনা যেত। গ্রাম মানেই ছিল ক্ষেতে খামারে কৃষকের লাঙল ও মই দিয়ে চাষাবাদের দৃশ্য। এ দৃশ্য আর অহরহ দেখা যায় না।
বিশ শতকে ১৯৮০’র দশক থেকে কলের লাঙল সেই স্থান দখল করায় দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে কাঠের লাঙল। কলের লাঙলে কায়িক শ্রম লাগে না। বাড়িতে দুটি বলদ পালতেও হয় না। ফলে মাত্র দিন যুগের ব্যবধানে হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য চাষাবাদের কাঠের হাতল ও লোহার ফাল বিশিষ্ট লাঙলের ব্যবহার বিলুপ্তির পথে। আধুনিক যুগে চাষাবাদের যান্ত্রিক উপকরণ আবিষ্কারের প্রভাবে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে লাঙল জোয়াল, মই ও হালের বলদ।আধুনিক প্রযুক্তির যুগে কৃষিকাজে ঠাঁই নিয়েছে যান্ত্রিক লাঙল পাওয়ার টিলার। অতি অল্প সময়ে কৃষকের সমস্ত জমি চাষাবাদ সম্পন্ন করা যায় এই যন্ত্রের মাধ্যমে।[5]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.