Loading AI tools
উদ্ভিদের প্রজাতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হলুদ বা হলদি (বৈজ্ঞানিক নাম: Curcuma longa) হলো হলুদ গাছের শিকড় থেকে প্রাপ্ত এক প্রকারের মসলা।[2] ভারত, বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রান্নায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি আদা পরিবারের (Zingiberaceae) অন্তর্গত একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ।[3]
হলুদ | |
---|---|
হলুদের ফুল | |
হলুদ এবং হলুদ গুঁড়া | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | উদ্ভিদ |
শ্রেণীবিহীন: | সপুষ্পক উদ্ভিদ |
শ্রেণীবিহীন: | Monocots |
শ্রেণীবিহীন: | Commelinids |
বর্গ: | Zingiberales |
পরিবার: | Zingiberaceae |
গণ: | Curcuma |
প্রজাতি: | C. longa |
দ্বিপদী নাম | |
Curcuma longa L.[1] | |
প্রতিশব্দ | |
Curcurma domestica Valeton |
হলুদ গাছের আদি উৎস দক্ষিণ এশিয়া। এটি ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে জন্মে থাকে। হলুদ গাছের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাতের দরকার হয়। বছরে সাধারণত একবার হলুদ গাছের শিকড় তোলা হয়। পরের বছর পুরানো শিকড় থেকে নতুন গাছ গজায়।
হলুদ গাছের শিকড়কে কয়েক ঘণ্টা সিদ্ধ করা হয়, তার পর গরম চুলায় বা রোদে শুকানো হয়। এরপর এই শিকড়কে চূর্ণ করে গাঢ় হলুদ বর্ণের গুঁড়া পাওয়া যায়।[4] এই হলুদ গুঁড়া দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশের খাদ্য প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়। তবে ঐতিহ্যগতভাবে এই শিকড় ভালোভাবে ধৌতকরণের পর শিল- নোঁড়ায় জল সহযোগে বেটে নিয়ে হলুদের পেষ্ট তৈরি করা হয় যা সরাসরি রান্নায় ব্যবহার করা হয়।
হলুদ নামের সঠিক উৎস আজও অজানা। তবে সংস্কৃতে হলুদকে হরিদ্রা,[5] তামি, পিটভালুকা, হলদি নামেও ডাকা হয়। হলুদ হাজার হাজার বছর ধরেই এশিয়া মহাদেশে রান্না শিল্পে ব্যবহার হয়ে আসছে। ভারতীয় আয়ুর্বেদে এই হলুদের ব্যবহার বহুযুগ আগে থেকেই প্রয়োগ হয়ে আসছে। তাছাড়া অন্য দিকে হলুদ একটি ঔষধি গাছ হিসেবে সুপরিচিত।
হলুদ একটি লতাপাতা সংক্রান্ত বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা ৬০ -৯০ সেমি উঁচু এবং এটা পাতা বড় আয়তাকার হয়ে থাকে। এবং উদ্ভিদটি এক মিটার লম্বা হয়। এটার গাছ বেড়ে উঠার জন্য ২০-৩০ ডিগ্রী তাপমাত্রা এবং প্রচুর পরিমানে বৃষ্টিপাত দরকার।
হলুদ ফুলের রং হলুদ ও সাদা হয় এবং ৩০ -৪০ সেমি লম্বা এবং ৮ -১২ সেমি চওড়া। পুষ্পবিন্যাস এর দৈর্ঘ্যে ১০ -১৫ সেমি।
হলুদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান curcuminoids নামক যৌগের একটি গ্রুপ আছে, যা curcumin বা diferuloylmethane, demethoxycurcumin এবং bisdemethoxycurcumin অন্তর্ভুক্ত। গবেষণাতে দেখা যায় হলুদের গুঁড়াতে curcumin গড়ে ৩.১৪ % আকারে থাকে(১); অথচ ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির হলুদে curcumin এর পরিমাণ বড় তারতম্য আছে। উপরন্তু, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্বায়ী তেল turmerone, atlantone, এবং zingiberene অন্তর্ভুক্ত। কিছু সাধারণ উপাদানসমূহ চিনি, প্রোটিন, এবং রেসিন থাকে।(২)
হলুদের প্রাকৃতিক পেস্ট তৈরি
ভালো মানের হলুদের গুঁড়ো- ১/৪ কাপ গোলমরিচ গুঁড়ো- আধা চা চামচ বিশুদ্ধ পানি- আধা কাপ একটি পাত্রে সব উপকরন একসাথে মিশিয়ে মধ্যম আঁচে চুলায় দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে হবে যতক্ষণ না একটি ঘন পেস্ট তৈরি হয়। ৭ মিনিটের মত রাখতে হবে। যদি এর মাঝে খুব বেশি শুকিয়ে যায় তাহলে সামান্য একটু যোগ করুন। তারপর সেটি চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে একটি এয়ার টাইট পাত্রে নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। এই পেস্টটি ২ সপ্তাহের মত রাখা যাবে। বিভিন্ন ধরনের ব্যাথার জন্য আধা চা চামচ প্রতিদিন এই পেস্টটি খেলে উপকার পাবেন। আর খুব বেশি ব্যাথা যাদের থাকে তারা প্রতিদিন ২ বার করে আধা থেকে ১ চামচ করে এই পেস্ট খেলে ৩/৪ দিনের মাঝেই বেশ ভালো একটি ফলাফল পাবেন।
দ্বিতীয় ধাপ
গোল্ডেন মিল্ক বা হলদে দুধ তৈরি
কাঠ বাদামের দুধ- ১ কাপ (এর পরিবর্তে নারকেলের দুধ, সয়ামিল্ক,গরুর দুধ বা যেকোনো দুধ দিতে পারেন) রান্নার নারকেল তেল- ১ চা চামচ (এর পরিবর্তে কাঠ বাদামের বা তিলের তেল ব্যবহার করতে পারেন) তৈরি করা হলুদের পেস্ট- ১/৪ চা চামচ বা একটু বেশি মধু- স্বাদ অনুযায়ী মধু ছাড়া সব উপকরন একসাথে মিশিয়ে একটি পাত্রে নিয়ে মধ্যম আঁচে চুলায় দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে হবে এবং ভালো ভাবে গরম হলে নামিয়ে কিছুটা ঠাণ্ডা হতে দিন। কুসুম গরম অবস্থায় মধু মিশিয়ে পান করুন।
গোল্ডেন মিল্ক পানের নিয়ম গোল্ডেন মিল্ক খেতে হবে খালি পেটে। সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে খাওয়ার সময়। এভাবে নিয়মিত ৪০ দিন করে বছরে দুইবার খেলে শরীর থাকবে রোগমুক্ত এবং ত্বক সুন্দর ও উজ্জ্বল হবে।
১। কাঁচা হলুদ একটি প্রাকৃতিক এন্টিসেপ্টিক। তাই কাঁটা এবং পোড়া জায়গায় হলুদ বাটা লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যায় ও তাড়াতাড়ি ব্যথা এবং দাগের উপশম ঘটে।
২। হলুদ যখন ফুলকপির সাথে মিলিত হয় তখন এটা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং বিদ্যমান প্রস্টেট ক্যান্সারের বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়।
৩। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধকারী ও অন্ত্রের ক্যান্সার নিরাময়কারী।
৪। মেলানোমা প্রতিরোধ এবং আত্মহত্যা করতে মেলানোমা কোষ বিদ্যমান হতে পারে.
৫। শিশুদের লিউকেমিয়া ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
৬। হলুদের প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য বাত এবং ফোলানো বাত এর জন্য একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা।
৭। হলুদ কেমো ড্রাগ এর প্রভাব এবং তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করে।
৮। গবেষণা দেখা গেছে, হলুদ অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার উপশমে চমৎকার কাজ করে।
৯। টিউমার হওয়া বন্ধ ও নতুন রক্ত উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
১০। হলুদের গাঠ পিষে, ঘিয়ে ভেজে চিনি মিশিয়ে কিছু দিন খেলে (নিয়মিত) ডায়াবেটিস সারে। প্রমেহও সারে।
১১। এটি চর্বি বিপাকে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
১২। দীর্ঘ বিষণ্নতা জন্য একটি চিকিৎসা হিসাবে চীনা দেশে হলুদেরর ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
১৩। যেকোনো চর্ম রোগের জন্য হলুদ অনেক উপকারী। কাঁচা হলুদের সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে শরীরে মাখলে একজিমা, অ্যালার্জি, র্যা শ, চুলকানি ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১৪। হলুদ মানসিক অবসাদ রোধ করতে ব্যবহৃত অ্যান্টি ডিপ্রেস্যান্টের কাজও করে । এ ছাড়া, এই উপাদানে রয়েছে অ্যাস্পিরিনের গুণ। এর প্রয়োগে ভ্যাস্কুলার থ্রম্বোসিস আক্রান্ত রোগীর রক্তের ঘনত্বের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
১৫। সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ দেয় হলুদ। কাশি কমাতে হলে হলুদের রস খেয়ে নিন কয়েক চামচ, কিংবা এক টুকরো হলুদের সাথে মধু মাখিয়ে তা মুখের মাঝে রেখে আস্তে আস্তে চুষতে পারেন। সেটা করতে না পারলে এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে হলুদের গুঁড়ো, সামান্য মাখন এবং গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন। কয়েকবার সেবনেই নিরাময় হবে। কাশি ও গলা ব্যথা উভয়েই দূর হবে।
১৬। হলুদের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, লোহা প্রভৃতি নানা পদার্থ রয়েছে। তাই হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যেমন বাচ্চাদের লিউকমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় নিয়মিত কাঁচা হলুদের রস সেবন। প্রতিদিন দুধ বা পানির সাথে হলুদের গুঁড়ো বা রস মিশিয়ে খাওয়া অভ্যাস করলে অনেকটাই সুস্থ থাকা সম্ভব।
১৭। হলুদ গায়ের ত্বক ফর্সা ও লাবণ্যময় করে তোলে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খেলে, ধীরে ধীরে ত্বকের রঙ ফর্সা হয়।
১৮। হলুদের অন্য এক উপাদান ‘পলিফেনল’ চোখের অসুখ ‘ক্রনিক অ্যান্টিরিয়ার ইউভেইটিস’ সারাতে কর্টিকোস্টেরয়ডের কাজ করে। উল্লেখ্য, এই রোগের প্রকোপে চোখে প্রচণ্ড জ্বালা ও প্রদাহ দেখা যায়।
১৯। মুখে জ্বালা-পোড়া করলে গরম পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে কুলকুচি করুন।
২০। শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গেলে পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
২১। সূর্যের তাপে গা জ্বলে গেলে হলুদের পাউডারের মধ্যে বাদামের চূর্ণ এবং দই মিশিয়ে লাগান।
২২। আয়ুর্বেদিক মতে, হলুদ রক্ত শুদ্ধ করে।
২৩। পেটের বায়ু ও পুরাতন ডায়রিয়াঃ পেটে বাতাস হলে ও পুরনো ডায়রিয়ায় হলুদের গুঁড়ো বা রস পানিসহ খেলে খুবই উপকার হয়।
২৪। পেটের পীড়াঃ পেটের সংক্রমণ দমনে হলুদ খুবই কার্যকর। মাখন বা দুধের সাথে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে উপকার মেলে।
২৫। কৃমিঃ কাঁচা হলুদের রস ১৫-২০ ফোঁটা (বয়সানুপাতে) সামান্য লবণ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হয়। কৃমি দমনে কার্যকর ওষুধ, তাই একে কৃমিঘ বা কৃমিনাশকারীও বলে।
২৬। লিভারের দোষঃ পাণ্ডু রোগে (জন্ডিস) গায়ের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে আসছে বুঝতে পারলে হলুদের রস ৫ থেকে ১০ ফোঁটা থেকে শুরু করে বয়সানুপাতে ১ চা চামচ পর্যন্ত একটু চিনি বা মধু মিশিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা বহু আগে থেকে চলে আসছে। আবার একটু হলুদ গুঁড়া তার দ্বিগুণ পরিমাণ দইয়ে মিশিয়ে খেলে পিলে ও যকৃতের দোষ এবং জন্ডিস সারে। মধুসহ হলুদ খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
২৭। তোতলামিঃ ছোটবেলায় যাদের কথা আটকে যায় বা স্বাভাবিকভাবে তাড়াতাড়ি কথা বলার অভ্যাস, সে ক্ষেত্রে হলুদকে গুঁড়ো করে (কাঁচা হলুদ শুকিয়ে গুঁড়ো করতে হবে) তা দুই-তিন গ্রাম পরিমাণে এক চা চামচ ঘিয়ে একটু ভেজে সেটাকে দুই-তিনবার চেটে চেটে খাওয়াতে হয়। এতে তোতলামি কমে যায়।
২৮। শ্লিপদ (ফাইলেরিয়া)ঃ এ অবস্থায় এক চা চামচ হলুদের রস অল্প গুড় ও এক চা চামচ গরুর পেশাব খাওয়াতে বিধান কবিরাজ চক্রপানি দত্তের। এটি আমবাতেও ব্যবহার করা হয়।
২৯। হামজ্বরঃ ক- এ জ্বরে কাঁচা হলুদ শুকিয়ে গুঁড়ো করে সাথে করলা পাতার রস ও অল্প মধু মিশিয়ে খাওয়ালে তা সারে। খ- হলুদের শিকড় রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে এক চা চামচ মধু ও করলা পাতার রস মিশিয়ে খেলে হাম সারে।
৩০। কোষ্ঠবদ্ধতা, হজমে দুর্বলতাঃ মধু মিশিয়ে হলুদের গুঁড়ো খেলে এসব রোগে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
৩১। পিপাসা বা তৃষ্ণাঃ পাঁচ-সাত গ্রাম কাঁচা হলুদ থেঁতলে নিয়ে দেড় কাপ আন্দাজ পানিতে ৫-১০ মিনিট সিদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে ওই পানি চিনিসহ অল্প অল্প করে পান করলে শ্লেষ্মাজনিত পিপাসা চলে যায়।
৩২। হাঁপানিঃ হলুদ গুঁড়ো, আখের গুড় ও খাঁটি সরিষার তেল এক সাথে মিশিয়ে চাটলে হাঁপানি একটু উপশম হয়। এ ছাড়া এক চা-চামচ হলুদের গুঁড়ো এক গ্লাস দুধে মিশিয়ে দিনে দুই-তিনবার খেলে ভালো উপকার মেলে। এটি খালি পেটে খাওয়া ভালো।
৩৩। নাকের ক্ষতঃ নাকের ভেতর ক্ষত হলে হলুদ গুঁড়ো মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।
৩৪। স্বরভঙ্গঃ কোনো সাধারণ কারণে স্বরভঙ্গ হলে দুই গ্রাম আন্দাজ হলুদের গুঁড়ো চিনির শরবতে মিশিয়ে একটু গরম করে খেলে চমৎকার উপকার হয়। গরম দুধে এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো দিয়ে রাতে খেলে স্বরভঙ্গ ও গলাবসা ঠিক হয়ে যায়।
৩৫। জোঁকে ধরাঃ জোঁকের মুখে হলুদ বাটা বা গুঁড়ো দিলে জোঁকও ছাড়ে, সেই সাথে রক্ত পড়াও বন্ধ হয়।
৩৬। ব্রণ দূর করতেঃ হলুদের মধ্যে এন্টিসেপ্টিক এবং এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান থাকে যেটি ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। এটি শুধু ব্রণই দূর করে না, তার সাথে ব্রণের দাগ এবং লোমকূপ থেকে তেল বের হওয়ার পরিমাণও কমিয়ে দেয়। কাঁচা হলুদ বাটা, চন্দন গুঁড়া, লেবুর রস মিশিয়ে একটি মাস্ক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তাছাড়া ব্রণের উপর কাঁচা হলুদ বাটা এবং পানি মিশিয়ে দিয়ে ১৫ মিনিটের জন্য রাখুন। ব্রণ তাড়াতাড়ি চলে যাবে।
৩৭। বলিরেখা দূর করতেঃ হলুদ ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। ২/৩ চিমটি হলুদ গুঁড়া, চালের গুঁড়া, টমেটো রস, কাঁচা দুধের সাথে মিশিয়ে মুখে মাস্ক হিসাবে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের ফাইন লাইন্স এবং ঝুলে পড়া ত্বক কে স্বাভাবিক করতে, ত্বক কে ফর্সা করতে অত্যন্ত কার্যকরী।
৩৮। চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতেঃ ২/৩ চিমটি হলুদ গুঁড়ার সাথে মাখন মিশিয়ে চোখের নিচে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন। এটি চোখের নিচে বলিরেখা সহ কালো দাগও দূর করবে।
৩৯। বয়স ধরে রাখাঃ ১ দিন পর পর বেসন, কাঁচা হলুদ বাটা, টক দই মিশিয়ে মুখ সহ সারা শরীরে লাগিয়ে রাখুন শুকানো না পর্যন্ত। শুকিয়ে গেলে ঘড়ির কাটার উলটো দিকে স্ক্রাব করে মাসাজ করুন। এটি ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করার সাথে সাথে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে ।
৪০। স্ট্রেচ মার্ক দূর করতেঃ ত্বকের মোটা হয়ে যাওয়ার ফাটা দাগ, প্রেগ্নেন্সির স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে বেসন, কাঁচা হলুদ মিশিয়ে ঐ নিদিষ্টও জায়গায় লাগালে ধীরে ধীরে দাগ কমতে শুরু করে।
৪১। ত্বকের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতেঃ প্রতিদিন ময়দা এবং কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে স্ক্রাব করলে, ত্বকের অবাঞ্ছিত লোম ধীরে ধীরে কমে আসবে।
৪২। পায়ের গোড়ালির ফাটা দাগ দূর করতেঃগোসলের যাওয়ার আগে কাঁচা হলুদের সাথে, নারিকেল তেল অথবা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখলে পায়ের ফাটা দাগ কমবে, পায়ের ত্বক সুন্দর এবং নরম থাকবে।
প্রমেহ :
ক. প্রমেহে প্রস্রাবের জ্বালার সাথে পুঁজের মতো লালা ঝরলে কাঁচা হলুদের রস এক চা-চামচ নিয়ে একটু মধু বা চিনিসহ খেলে রোগের উপশম হয়। খ. হলুদ পিষে আমলকীর সাথে খেলেও প্রমেহ উপশম হয়।
ডায়াবেটিস : হলুদের গাঠ পিষে, ঘিয়ে ভেজে চিনি মিশিয়ে কিছু দিন খেলে (নিয়মিত) ডায়াবেটিস সারে। প্রমেহও সারে।
পাথুরি : হলুদ ও পুরানো গুড় মিশিয়ে খেলে পাথুরিতে উপকার হয়।
মূর্ছা : হলুদ ও পুরনো গুড় মিশিয়ে খাওয়ালে মূর্ছা রোগ সারে।
রক্তশূন্যতা : হলুদ লোহাসমৃদ্ধ বলে এটির কাঁচা রস এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে প্রতি দিন খেলে রক্তশূন্যতা চলে যায়।
রোদে পুড়ে বা অন্য কোনও কারণে ত্বকের রঙ কালো হয়ে গেলে হলুদ ভীষণ চমৎকার কাজে দিবে। সামান্য পরিমাণ শসার রস নিন, তাতে অল্প একটু হলুদ বাটা বা গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন ও মুখে লাগান। ১৫/২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিন ব্যবহারেই উপকার পাবেন। মুখে হলুদের দাগ দূর করা নিয়ে চিন্তিত হলে ব্যবহার করুন দুধ। তুলা দুধে ভিজিয়ে পরিষ্কার ত্বকের উপর বুলিয়ে আনুন। হলুদ দাগ উঠে যাবে।
সাধারণ কাঁটাছেঁড়ায় হলুদ এন্টিসেপ্টিকের কাজ করে। খুব হাল্কা উষ্ণ পানি দিয়ে হলুদের পেস্ট তৈরি করে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিন। দ্রুত সেরে উঠবে। যারা হাড়ের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য হলুদ মহৌষধ। আধা গ্লাস দুধ নিন, তাতে আধ ইঞ্চি পরিমাণ হলুদ দিয়ে চুলায় জ্বাল দিন। দুধের রঙ হলুদ হয়ে গেলেই নামিয়ে নিন ও উষ্ণ অবস্থান পান করুন। প্রতিদিন রাতে এই পানীয় পান করলে হাড় হবে শক্তিশালী ও মজবুত, অষ্টিওপরসিস এর মতন রোগের সম্ভাবনা থাকবে না। এছাড়া এছাড়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এই পানীয় উপকারী। অন্যদিকে মেনপজের পরে মহিলাদের হাড়ের ভঙ্গুরতা নিরাময় করতেও অত্যন্ত কার্যকর।
কৃমি সমস্যায় ভুগছেন, প্রতিদিন সকালে কাঁচা হলুদের রস ২০ ফোঁটা নিয়ে তার মধ্যে ১ চিমটি লবণ মিশিয়ে সেবন করুন। চাইলে সামান্য পানি মিশিয়ে নিতে পারেন। নিয়মিত সেবনে অচিরেই পরিত্রাণ মিলবে। সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ দেয় হলুদ। কাশি কমাতে হলে হলুদের রস খেয়ে নিন কয়েক চামচ, কিংবা এক টুকরো হলুদের সাথে মধু মাখিয়ে তা মুখের মাঝে রেখে আস্তে আস্তে চুষতে পারেন। সেটা করতে না পারলে এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে হলুদের গুঁড়ো, সামান্য মাখন এবং গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন। কয়েকবার সেবনেই নিরাময় হবে। কাশি ও গলা ব্যথা উভয়েই দূর হবে।
শরীরে ব্যথা হলে বা ব্যথা পেলে দুধের মধ্যে হলুদ মিশিয়ে পান করুন। দীর্ঘ মেয়াদী বা সাময়িক, দুই প্রকার ব্যথাতেই আরাম পাবেন। এছাড়া কোথাও কেটে-ছড়ে গেলেও এই পানীয় পানে কাজ দেয়। দ্রুত ক্ষত নিরাময় হয়ে যায়।
দেহে রক্তের ঘাটতি বা রক্ত শুন্যতা দেখা দিলে হলুদ বাটা খেলে উপকার মিলবে, কেননা এটি রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে চা চামচের এক চামচ কাঁচা হলুদের রস ও সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিয়মিত সেবন করুন, রক্তশূন্যতা অচিরেই দূর হবে।
হাড়ের জোড়ায় ব্যথা হলে হলুদরে পেস্টের প্রলেপ নিয়মিত দিলেও উপকার পাওয়া যায়। শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গেলে পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে প্রলেপ দিলে আরাম মিলবে। মুখের মাঝে কোনও কারণে কেটে ছড়ে গেলে কিংবা অন্য কোনও কারণে জ্বালা পোড়া হলে গরম পানির মাঝে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে কুলি করুন। সেরে যাবে।
হলুদ ডায়রিয়া নিরাময়ের ক্ষেত্রেও কার্যকরী। ডায়রিয়া হলে এক চামচ পরিমাণ কাঁচা হলুদের রস পানির সাথে মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। জীবাণু ধ্বংস হয়ে ডায়রিয়া নিরাময় হবে। এছাড়াও যারা অন্ত্রের নানান রকম রোগে ভুগছেন তারা প্রতিদিন টাটকা হলুদ বেটে রস পানিতে মিশিয়ে খাবেন। এটি অন্ত্রের রোগের মহৌষধ।
হলুদের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, লোহা প্রভৃতি নানা পদার্থ রয়েছে। তাই হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যেমন বাচ্চাদের লিউকমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় নিয়মিত কাঁচা হলুদের রস সেবন। প্রতিদিন দুধ বা পানির সাথে হলুদের গুঁড়ো বা রস মিশিয়ে খাওয়া অভ্যাস করলে অনেকটাই সুস্থ থাকা সম্ভব।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.