Loading AI tools
ধণেশ পাখির প্রজাতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
লালঘাড় ধনেশ (Aceros nipalensis); ১৮২৯ সালে ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ ব্রায়ান হাউটন হজসন এই প্রজাতিটির দ্বিপদী বিজ্ঞানসম্মত নামকরণ করেন। ১৮৪৪ সালে ব্রিটিশ প্রাণীবিদ জন এডওয়ার্ড গ্রে এই প্রজাতিটিকে Aceros গোত্রের অন্তর্ভুক্ত করেন। এই প্রজাতিটি Bucerotiformes বর্গের অন্তর্গত ‘বুসারোটিডি’ (Bucerotidae) পরিবারের একটি বিরল পাখি।[2] তবে অত্যন্ত বিরল হয়ে গেলেও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলার নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে সময় বিশেষে এদের এখনো দেখা যাচ্ছে। সিকিম, আসাম এবং অরুণাচল প্রদেশেও এদের দেখা যায়।
প্রাকৃতিক বাসস্থান ও বৈশ্বিক বিস্তৃতিঃ এদের প্রাকৃতিক বাসস্থান ধ্বংস হওয়ার কারণে এবং চোরা শিকারিদের উপদ্রবে নেপালে এরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ এবং উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলার লাটপাঞ্চারে একটি সীমাবদ্ধ পরিসরে এরা কোনরকমে টিকে আছে। মহানন্দা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য, বক্সা টাইগার রিজার্ভ, মানস জাতীয় উদ্যান, ঈগলনেস্ট বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য, সেসা অর্কিড অভয়ারণ্য, কামলাং বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য, নামদাফা জাতীয় উদ্যান এবং পাক্কে টাইগার রিজার্ভ প্রভৃতি জায়গায় এদের উপস্থিতির প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। ভারত বাদেও চীন, ভুটান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনামে এদের দেখা গেছে। প্রধানত ১৫০ থেকে ২২০০ মিটার উচ্চতার মধ্যে নাতিশীতোষ্ণ চওড়া পাতার বন এবং মিশ্র উদ্ভিদে পরিপূর্ণ আর্দ্র পাহাড়ি বনাঞ্চলে এদের বসবাস। তবে শুষ্ক বনভূমিতেও এরা ঘোরাফেরা করে। এরা সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় বা দলবদ্ধ ভাবে বিচরণ করে, তবে কখনো কখনো একাকীও চোখে পরে। চোখ লাল এবং পা স্লেট কালো।
বিবরণঃ এদের গড় দৈর্ঘ্য ৯০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের উপরের ঠোঁটে লম্বা লম্বা সমান্তরাল দাগ দেখা যায়। এই দাগ দেখে এদের বয়স সম্পর্কে অনুমান করা যায় অর্থাৎ যদি ৫ টি দাগ থাকে তবে ৫ বছর বয়স্ক বলে মনে করা হয়। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, বুক ও দেহতল গেরুয়া লাল, কিন্তু স্ত্রী পাখির ক্ষেত্রে কালো। উভয়ের চোখের চারদিকে ও ঠোঁটের গোঁড়ায় নীল ছাপ রয়েছে এবং উভয়েরই গলায় কমলা বর্ণের গোলাকার থলি রয়েছে যেখানে তারা খাবার জমা করে রাখতে পারে। এদের ডানা কালো এবং লেজের অর্ধেকটা কালো ও অগ্রভাগ সাদা।
খাদ্যাভ্যাস, আচরণ এবং প্রজননঃ এরা সর্বভুক অর্থাৎ ফলাহারী এবং মাংসাহারীও। বট-পাকুড়ের ফল, বড় আকৃতির পোকামাকড়, পাখির ছানা ইত্যাদি এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে এরা প্রজনন করে। প্রজননের শেষে বাসা বাঁধে গাছের কোটরে। প্রজনন পর্ব থেকে শুরু করে সন্তান প্রতিপালনের সময় অবধি পুরুষ ও স্ত্রী পাখির মধ্যে গভীর সখ্যতা তৈরি হয়। ‘গ্যাক গ্যাক গ্যাক’ সূরে আওয়াজ করে নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় করে। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে স্ত্রী পাখিকে বসিয়ে নিজের মল ও কাদামাটি জমা করে কোটরের মুখ বন্ধ করে দেয়। শুধুমাত্র খাবার মুখে তুলে দেবার জন্য একটুখানি ছিদ্র রেখে দেয়। পুরুষ পাখি কাদামাটি কোটরের মুখে সেঁটে দেয় আর স্ত্রী পাখি কোটরের ভেতরে বসে থেকে ঠোঁট দিয়ে হালকা হালকা ঠক ঠক করে আঘাত করে কাদামাটির প্রলেপ শক্ত করে দেয়। ডিম পাড়া, ডিমে তা দেওয়া এবং ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব স্ত্রী পাখি বন্দী অবস্থাতেই পালন করে। পুরুষ পাখি এই সময় সারাদিন খেটে খাবার জোগানোর কাজ করে। স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে একেবারে মরিয়া হয়ে ওঠে। গলার থলিতে খাবার জমা করে এনে স্ত্রীকে দেবার আগে উগড়ে উগড়ে নিজে দেখে নেয় কোন খাবারটি স্ত্রীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সেই হিসাব মত কোটরের কাছে এসে গাছের কাণ্ড আঁকড়ে ধরে ভেতরে বসে থাকা স্ত্রীর মুখে তুলে দেয়। খাবার পছন্দ না হলে স্ত্রী ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এক্ষেত্রে খাবার জোগাড় করার পুরো পরিশ্রমটাই ব্যর্থ হয় এবং পুরুষকে স্ত্রীর রোষের শিকার হতে হয়। সে কারণেই পুরুষ পাখি খাবার বাছাইয়ের কাজ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করে। স্ত্রী পাখি কোটরের ভেতর ১ থেকে ২ টি ডিম পাড়ে এবং প্রায় ৩ মাসের মত সময় বন্দীদশায় কাটায়। শাবকেরা খানিকটা বড় হলে স্ত্রী পাখি কাদামাটির শক্ত প্রলেপ ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে। একবার জুটি বেঁধে ফেললে সেই দম্পতি আজীবন একসাথে কাটিয়ে দেয়। এদের মধ্যে বহুগামিতা নেই। পুরুষ-স্ত্রী যুগলের কারো একজনের মৃত্যু হলে অপরজন নতুন করে আর জুটি বাঁধে না।
সংরক্ষণ স্থিতিঃ শোনা যায় যে কিছু লোক সংস্কৃতিগত কারণে এদের শিকার করে পালক এবং ঠোঁট সংগ্রহ করে এবং এই প্রথা এদের সংখ্যা কমে যাবার এক অন্যতম কারণ। বন জঙ্গল ধ্বংস হওয়ার পরিণামেও এরা বিশ্বব্যাপী হুমকির সম্মুখীন। সারা পৃথিবীতে এদের জনসংখ্যা ১০,০০০ এরও কম, তাই International Union for Conservation of Nature and Natural Resources (IUCN) এই প্রজাতিটিকে সংকটাপন্ন (Vulnerable) বলে ঘোষণা করেছে।[3]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.