মৌলিক একক (পরিমাপ)

উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

মৌলিক একক হলো মৌলিক রাশিসমূহের জন্য গৃহীত প্রধান একক। যে সকল ভৌত রাশিকে পরিমাপের জন্য অপর কোনো রাশির উপর নির্ভর করতে হয় না, তাদেরকে মৌলিক রাশি বলা হয়। সিস্টেম ইন্টারন্যাশনাল ডে'ইউনিটস নামের পরিচিত মৌলিক এসআই একক ৭টি। যথাক্রমে: ওজনের একক কিলোগ্রাম, সময়ের একক সেকেন্ড, দৈর্ঘ্যের একক মিটার, আলোক ঔজ্জ্বল্যের একক ক্যান্ডেলা, তাপমাত্রার একক কেলভিন, বিদ্যুৎপ্রবাহের একক অ্যাম্পিয়ার এবং পদার্থের পরিমাণের একক মোল।

এককের গুণিতক হলো প্রদত্ত এককের একটি পূর্ণসংখ্যার গুণিতক; একইভাবে এককের উপগুণিতক হলো প্রদত্ত এককের একটি উপগুণিতক বা একক ভগ্নাংশ[]

যদিও একটি মৌলিক একক এমন একটি জিনিস যা স্পষ্টভাবে নির্ধারিত করা হয়েছে,[] একটি যৌগিক একক হলো যৌগিক রাশি-এর একক, যা বিভিন্ন এককের পরিমাণের সংমিশ্রণে গঠিত;[] বেশ কয়েকটি এস.আই. যৌগিক একক বিশেষভাবে নামকরণ করা হয়েছে। একটি সুসংগত যৌগিক একক কোনো রূপান্তর ফ্যাক্টরে জড়িত নয়।

পটভূমি

পরিমাপ এর ভাষায়, ভৌত রাশি হলো বিশ্বের পরিমাণযোগ্য দিক, যেমন সময়, দূরত্ব, বেগ , ভর, তাপমাত্রা, শক্তি, এবং ওজন, এবং একক ব্যবহার করা হয় এই পরিমাণযোগ্য দিকগুলোর মাত্রা বা গণনা বর্ণনা করতে। এই পরিমাণগুলোর মধ্যে অনেকগুলো বিভিন্ন ভৌত আইন দ্বারা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, এবং ফলস্বরূপ একটি রাশির এককগুলোকে সাধারণত অন্যান্য এককের ক্ষমতার ফল হিসেবে প্রকাশ করা যেতে পারে; উদাহরণস্বরূপ, ভরবেগ হলো ভরকে বেগ দ্বারা গুণ করার ফল, যেখানে বেগ হলো দূরত্বকে সময় দ্বারা ভাগ করার ফল। এই সম্পর্কগুলো মাত্রিক বিশ্লেষণে আলোচনা করা হয়েছে। মৌলিক এককের পরিপ্রেক্ষিতে যেগুলোকে এই পদ্ধতিতে প্রকাশ করা যেতে পারে তাদের বলা হয় যৌগিক একক

আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি

আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতিতে সাতটি মৌলিক একক রয়েছে: কিলোগ্রাম,মিটার,ক্যান্ডেলা,সেকেন্ড, অ্যাম্পিয়ার, কেলভিন এবং মোল। বেশ কিছু প্রাপ্ত একককে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, এবং অনেকগুলোর বিশেষ নাম এবং চিহ্নও আছে।

২০১৯ সালে সাতটি এস.আই. ভিত্তিক ইউনিটকে সাতটি সংজ্ঞায়িত ধ্রুবকের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করা হয়। তাই বর্তমানে এস.আই. ভিত্তিক ইউনিটের আর প্রয়োজন নেই তবে ঐতিহাসিক ও বাস্তবগত কিছু কারণে একে এখনো বহাল রাখা হয়েছে। [] আরও দেখুন এস.আই. এর ২০১৯ সংশোধন.

প্রাকৃতিক একক

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ভৌত রাশির মৌলিক মাত্রার সেটই হচ্ছে ন্যূনতম এককের একটি সেট এবং এককের সেই সেট দিয়েই ভৌত রাশিকে প্রকাশ করা হয়। ভৌত রাশির ঐতিহ্যগত মৌলিক মাত্রাগুলো হলো ভর, দৈর্ঘ্য, সময়, চার্জ এবং তাপমাত্রা। তবে নীতিগতভাবে অন্যান্য মৌলিক পরিমাণগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন চার্জের পরিবর্তে বৈদ্যুতিক কারেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা দৈর্ঘ্যের পরিবর্তে গতি ব্যবহার করা যেতে পারে। কিছু পদার্থবিজ্ঞানী তাপমাত্রাকে ভৌত পরিমাণযোগ্য মৌলিক মাত্রা হিসেবে স্বীকৃতি দেন না। কারণ এটি কেবলমাত্র প্রতি কণার প্রতি স্বাধীনতার মাত্রাকে প্রকাশ করে। সুতরাং একে শক্তি (বা ভর, ​​দৈর্ঘ্য এবং সময়) হিসেবেও প্রকাশ করা যেতে পারে। এছাড়াও কিছু পদার্থবিজ্ঞানী বৈদ্যুতিক চার্জকে ভৌত রাশির একটি পৃথক মৌলিক মাত্রা হিসেবে স্বীকৃতি দেন। যদিও এটি ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক সিজিএস পদ্ধতির মতো ভর, দৈর্ঘ্য এবং সময়ের একক পদ্ধতি দিয়ে প্রকাশ করা যায়। এমন পদার্থবিদও আছেন যাঁরা বেমানান মৌলিক পরিমাণের অস্তিত্ব নিয়েই সন্দেহ পোষণ করেন।[]

ভৌত রাশির মধ্যে অন্যান্য সম্পর্ক রয়েছে যা মৌলিক ধ্রুবকের মাধ্যমে প্রকাশ করা যেতে পারে। কিছুটা হলেও এটি একটি স্বেচ্ছা সিদ্ধান্ত হয়ে পড়ে যে মাত্রাসহ একটি রাশি হিসেবে মৌলিক ধ্রুবক বজায় রাখতে হবে নাকি কেবল এটি ঐক্য বা একটি স্থির হিসেবে সংজ্ঞায়িত মাত্রাবিহীন সংখ্যা রূপে বিবেচ্য থাকবে এবং এক দিয়ে সুস্পষ্ট মৌলিক ধ্রুবকের সংখ্যা হ্রাস করা হবে। অন্টোলজিকাল বিষয়ে এই দ্বন্দ্ব দেখাই যায় যে সত্যিই এই মৌলিক ধ্রুবকগুলোর অস্তিত্ব মাত্রাযুক্ত নাকি মাত্রাবিহীন রাশি মাত্র।

উদাহরণস্বরূপ সময় এবং দূরত্ব আলোর গতির দ্বারা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। এখানে c (সি) একটি মৌলিক ধ্রুবক। সময় বা একক দূরত্বকে দূর করার জন্য এই সম্পর্কটি ব্যবহার করা সম্ভব। প্ল্যাঙ্ক ধ্রুবক-এর ক্ষেত্রটিও একইরকমভবে বিবেচ্য হবে। সেখানে h (এইচ) শক্তি (ভর, দৈর্ঘ্য এবং সময় মাত্রার নিরিখে) থেকে কম্পাঙ্কের (সময়ের সাথে পরিমাপযোগ্য মাত্রার সাথে) সাথে সম্পর্কিত। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে এ জাতীয় প্রাকৃতিক একক ব্যবহার করার প্রচলন রয়েছে যেখানে c = ১ এবং ħ = ১। একই ধরনের ব্যবহারিক প্রয়োগ ভ্যাকুয়াম পারমিটিভিটি এর ক্ষেত্রে করা যেতে পারে ε

  • হয় মিটার না হয় সেকেন্ড নির্মূল করা যায় c এর মান একত্রে (অথবা অন্য যে কোনও স্থির মাত্রাবিহীন সংখ্যা) স্থাপন করে।
  • কিলোগ্রাম নির্মূল করা যায় ħ এর মান হিসেবে মাত্রাবিহীন সংখ্যা স্থাপন করে।
  • অ্যাম্পিয়ার নির্মূল করা যায় ε এর মান হিসেবে ভ্যাকুয়াম পারমিটিভিটি স্থাপন করে (বিকল্পভাবে কুলম্ব ধ্রুবক ke = ১/(৪πε0)) অথবা প্রাথমিক চার্জ e এর মান হিসেবে মাত্রাবিহীন সংখ্যা স্থাপন করে।
  • মৌলিক একক মোল নির্মূল করা যায় অ্যাভোগাড্রো ধ্রুবক NA এর মান হিসেবে ১স্থাপন করে। এটি প্রাকৃতিক কারণ এটি প্রযুক্তিগত স্কেলিং ধ্রুবক।

বিশেষত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান এর জন্য একটি বহুল ব্যবহৃত পছন্দ প্ল্যাঙ্ক একক সিস্টেমের ব্যবহার। সেখানে এই সেট দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয় ħ = c = G = kB = ke = ১

প্রাকৃতিক একক ব্যবহার করে প্রতিটি ভৌত পরিমাণকে মাত্রাবিহীন সংখ্যা হিসেবে প্রকাশ করা যায়। এই ব্যাপারটি ন্যূনতম মৌলিক ভৌত রাশির অস্তিত্বকে বিতর্কের মুখে ঠেলে দেয়। [][][]

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.