Loading AI tools
বৃক্ক থেকে নির্গত প্রস্রাব জমা থাকার অঙ্গ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মূত্রাশয় বা মূত্রথলি হলো মানুষ ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর একটি ফাঁপা অঙ্গ যা নিঃসরণের পূর্বে বৃক্ক হতে আগত মূত্র জমা করে রাখে। অমরাধর স্তন্যপায়ীদের (প্লাসেন্টাল ম্যামাল) ক্ষেত্রে মূত্র গবিনী হয়ে মূত্রাশয়ে প্রবেশ করে এবং মূত্রনালি দিয়ে বেরিয়ে যায়।[1][2] মানুষের ক্ষেত্রে মূত্রাশয় একটি প্রসারণক্ষম অঙ্গ যা শ্রোণিতলের উপর অবস্থান করে। মূত্রথলিতে সাধারণত ৩০০-৫০০ মি.লি. (১০-১৭ তরল আউন্স) মূত্র জমা হলে মূত্রত্যাগের তাড়না তৈরি হয় তবে এটি আরও বেশি মূত্র ধারণ করতে পারে।[3][4]
মূত্রাশয় | |
---|---|
বিস্তারিত | |
পূর্বভ্রূণ | রেচন-জনন গহ্বর |
তন্ত্র | মূত্র তন্ত্র |
ধমনী | ঊর্ধ্ব মূত্রস্থলী ধমনি (সুপিরিয়র ভেসিকাল আর্টারি) নিম্ন মূত্রস্থলী ধমনি (ইনফিরিয়র ভেসিকাল আর্টারি) নাভি ধমনি (আমবিলিকাল আর্টারি) যোনি ধমনি, অন্তঃ বহির্যৌনাঙ্গ ধমনি (ইন্টার্নাল পিউডেন্ডাল আর্টারি), ডিপ এক্সটার্নাল পিউডেন্ডাল আর্টারি |
শিরা | মূত্রস্থলী শিরা জালক (ভেসিকাল ভিনাস প্লেক্সাস) |
স্নায়ু | মূত্রস্থলী স্নায়ুজালক, জনন স্নায়ু (পিউডেন্ডাল নার্ভ) |
লসিকা | প্রাক্-মহাধমনি লসিকাগ্রন্থি |
শনাক্তকারী | |
লাতিন | vesica urinaria (ভেসিকা উরিনারিয়া) |
মে-এসএইচ | D001743 |
টিএ৯৮ | A08.3.01.001 |
টিএ২ | 3401 |
এফএমএ | FMA:15900 |
শারীরস্থান পরিভাষা |
মূত্রাশয়-এর লাতিন পরিভাষা হলো vesica urinaria (ভেসিকা উরিনারিয়া), এ-জন্য মূত্রাশয়সংক্রান্ত পরিভাষায় vesical বা vesico- উপসর্গের ব্যবহার লক্ষ করা যায় যেমন ভেসিকাল শিরা। আধুনিক লাতিন ভাষায় মূত্রাশয়ের পারিভাষিক শব্দ হলো cystis (কিস্তিস– যার উৎপত্তি গ্রিক kystis (কিস্তিস) থেকে), এজন্য মূত্রাশয়ের প্রদাহকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে cystitis (সিস্টাইটিস) বলে।
মূত্রাশয় একটি আধার। এর আকার, আকৃতি, অবস্থান ও সম্পর্ক এর আধেয় ও প্রতিবেশী আন্তরযন্ত্রের (ভিসেরা) অবস্থার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। মূত্রাশয় যখন খালি থাকে তখন এটি পুরোপুরি ক্ষুদ্রতর শ্রোণিতে (লেসার পেলভিস) অবস্থান করে, মূত্র জমা হয়ে প্রসারিত হলে এটি উপরে উদর গহ্বরে চলে যায় এবং নাভি বা তার উপরেও উঠতে পারে। একটি খালি মূত্রাশয় কিছুটা চতুস্তলীয় এবং পূর্ণ অবস্থায় ডিম্বাকৃতির, এর একটি ফান্ডাস (অধোদেশ), দেহ, গ্রীবা, শীর্ষ এবং চারটি তল যেমন, ঊর্ধ্ব তল, দুটি নিম্নপার্শ্ব তল ও পশ্চাদ্ তল রয়েছে।[5] মূত্রাশয় পেরিটোনিয়াম বা অন্ত্রাবরকের বাইরে অবস্থিত একটি অঙ্গ। এর নিম্নাংশের চারিদিকে তন্তুময় কলা (ফাইব্রাস টিসু) থাকে। এর প্রাচীর মসৃণ পেশি (ডেট্রুসর পেশি) দ্বারা গঠিত যা ট্র্যানজিশনাল এপিথেলিয়াম (পরিবর্তনমূলক আবরণী কলা) দ্বারা আবৃত থাকে ।[6]
মূত্রাশয়ের শীর্ষটি (সম্মুখ প্রান্ত) পিউবিক সিমফিসিস (বিটপাস্থি সন্ধি) ঊর্ধ্বপ্রান্তের দিকে থাকে। শীর্ষের বিপরীত দিকে থাকে ফান্ডাস (অধোদেশ), যা কিছুটা উত্তল পশ্চাৎ প্রাচীর দিয়ে গঠিত। শীর্ষ ও ফান্ডাসের মধ্যবর্তী অংশটিকে মূত্রাশয়ের দেহ বলা হয়। শীর্ষটি নাভির সাথে মিডিয়ান আমবিলিকাল লিগামেন্ট বা মধ্যবর্তী নাভি বন্ধনীর মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে যা বিলুপ্ত এমব্রিয়োনিক ইউরাকাসকে (ভ্রূণমূত্র প্রণালী) প্রতিনিধিত্ব করে। মহিলাদের ক্ষেত্রে, ফান্ডাস যোনির সম্মুখ প্রাচীরের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত; পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি মলাশয় বা রেক্টামের সাথে সম্পর্কিত। মূত্রাশয়ের গ্রীবা হলো এমন একটি জায়গা যেখানে ফান্ডাস ও নিম্নপার্শ্ব তল নিচের দিকে মিলিত হয়। এটি মূত্রাশয়ের সর্বনিম্ন ও সবচেয়ে স্থির অংশ। এটি পিউবিক সিমফিসিসের নিম্নাংশের ৩ থেকে ৪ সে.মি. নিচে অবস্থান করে। এখানে অভ্যন্তরীণ মূত্রনালি রন্ধ্র বা ইন্টার্নাল ইউরেথ্রাল অরিফিস বের হয়।[7] পুরুষের ক্ষেত্রে মূত্রাশয়ের গ্রীবা প্রোস্টেট গ্রন্থির আগে অবস্থিত। মূত্রাশয়ের তিনটি রন্ধ্র রয়েছে। দুটি ইউরেটার (গবিনী) ইউরেটেরিক অরিফিসের মাধ্যমে মূত্রাশয়ে প্রবেশ করে এবং মূত্রনালি প্রবেশ করে মূত্রাশয়ের ত্রিকোণ নামক অঞ্চলে। ইউরেটেরিক রন্ধ্রগুলোর সামনে মিউকোসাল ফ্ল্যাপ বা শ্লৈষ্মিক বেষ্টনী থাকে, ফলে মূত্রাশয় থেকে মূত্র ইউরেটার বা গবিনীতে পুনরায় প্রবেশ করতে পারে না (মূত্রস্থলী-গবিনী প্রত্যাবৃত্তি বা ভেসিকোইউরেটেরাল রিফ্লাক্স)।[8] দুটি ইউরেটেরিক অরিফিস বা গবিনী রন্ধ্রের মাঝখানের টিসু উঁচু হয়ে ইন্টারইউরেটেরিক ক্রেস্ট বা আন্তঃগবিনী শৃঙ্গ তৈরি করে।[7] এটি মূত্রাশয়ের ত্রিকোণের উপরের সীমানা নির্ধারণ করে। ত্রিকোণ অঞ্চলে মসৃণ পেশি থাকে যা মূত্রনালির উপরে মূত্রাশয়ের তল বা মেঝে গঠন করে।[9] এই অঞ্চলে মসৃণ টিসু থাকায় এখানে খুব সহজে মূত্রপ্রবাহ হয়। মূত্রাশয়ের প্রাচীর ডেট্রুসর পেশি দ্বারা গঠিত। এই পেশি তার দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এটি মূত্র নির্গমনের সময় দীর্ঘক্ষণ সংকুচিত হয়ে থাকতে পারে, আবার মূত্র দ্বারা পূর্ণ হওয়ার সময় শিথিল হতে পারে।[10] মূত্রাশয় প্রাচীর স্বাভাবিক অবস্থায় ৩–৫ মি.মি. পুরু।[11] প্রসারিত হওয়ার পর এর পুরুত্ব ৩ মি. মি. এর কম হয়ে যায়।
পুরুষের ক্ষেত্রে, প্রোস্টেট গ্রন্থি মূত্রনালি রন্ধ্রের বাহিরের দিকে অবস্থান করে। প্রোস্টেটের মধ্য খণ্ড ইন্টার্নাল ইউরেথ্রাল অরিফিসের পেছনে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিতে একটি উঁচু ঢিবির মতো তৈরি করে যা মূত্রাশয়ের ইউভিউলা নামে পরিচিত। প্রোস্টেট গ্রন্থি বড়ো হয়ে গেলে ইউভিউলার আকার বৃদ্ধি পায়। মূত্রাশয়ের অবস্থান হলো পেরিটোনিয়াল গহ্বরের নিচে শ্রোণিতলের নিকটে এবং পিউবিক সিমফিসিসের পেছনে। পুরুষের ক্ষেত্রে এটি মলাশয়ের সামনে থাকে, রেক্টোভেসিকাল পাউচ বা মলাশয়-মূত্রস্থলী বটুয়া দ্বারা দুটি অঙ্গ পৃথক থাকে এবং লিভেটর এনাই পেশি ও প্রোস্টেট গ্রন্থির তন্তু একে আলম্বন প্রদান করে থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে, এটি জরায়ুর সামনে থাকে এবং ভেসিকোইউটেরাইন পাউচ (মূত্রস্থলী-জরায়ু বটুয়া) দ্বারা জরায়ু থেকে পৃথক থাকে। লিভেটর এনাই ও যোনির ঊর্ধ্বাংশ এটিকে আলম্বন প্রদান করে।[11]
মূত্রাশয় মূলত মূত্রস্থলী ধমনি (ভেসিকাল আর্টারি) দ্বারা রক্তের যোগান পেয়ে থাকে এবং মূত্রস্থলী শিরা বা ভেসিকাল ভেইনের মাধ্যমে নিষ্কাশন করে।[12] ঊর্ধ্ব মূত্রস্থলী ধমনি (সুপিরিয়র ভেসিকাল আর্টারি) মূত্রাশয়ের ঊর্ধাংশে রক্ত সরবরাহ করে এবং নিম্নাংশে সরবরাহ করে নিম্ন মূত্রস্থলী ধমনি (ইনফিরিয়র ভেসিকাল আর্টারি), এই উভয় ধমনিই অন্তঃবস্তি ধমনি বা ইন্টার্নাল ইলিয়াক আর্টারির সম্মুখ বিভাজন থেকে উদ্ভূত হয়। এছাড়া অবরোধী ধমনি (অবটিউরেটর আর্টারি) ও নিম্ন নিতম্ব ধমনি (ইনফিরিয়র গ্লুটিয়াল আর্টারি) থেকে পরিপুরক হিসেবে অল্প কিছু রক্ত যোগান পেয়ে থাকে।[12] মহিলাদের ক্ষেত্রে, জরায়ু (ইউটেরাইন আর্টারি) ও যোনি ধমনি (ভ্যাজাইনাল আর্টারি)র কিছু শাখা থেকে অতিরিক্ত রক্তের যোগান আসে।[12] মূত্রাশয় থেকে রক্ত নিষ্কাশনের কাজে নিয়োজিত শিরাগুলো এর নিম্নপার্শ্ব তলে একটি জটিল জালক গঠন করে এবং মূত্রাশয়ের পার্শ্বীয় লিগামেন্ট বরাবর চলে গিয়ে অন্তর্বস্তি শিরায় (ইন্টার্নাল ইলিয়াক ভেইন) শেষ হয়।[12]
মূত্রথলি থেকে নিষ্কাশিত লসিকা এর শ্লৈষ্মিক, পেশি ও সেরোসাল স্তরের মধ্য দিয়ে একটি বিস্তৃত জালিকাবিন্যাস তৈরি করে। অতঃপর এগুলো তিন প্রস্ত লসিকাবাহ গঠন করে: এক প্রস্ত ত্রিকোণের নিকটে যা মূত্রথলির তলদেশ থেকে; এক প্রস্ত মূত্রথলির উপরের অংশ থেকে এবং আরেক অংশ বাহ্যিক নিম্নতল থেকে লসিকা নিষ্কাশন করে। এগুলোর অধিকাংশ বহিঃস্থ শ্রোণি লসিকাগ্রন্থিতে (এক্সটার্নাল ইলিয়াক লিম্ফনোড) নিষ্কাশন করে।[12]
মূত্রাশয় সংবেদী ও চেষ্টীয় উভয় সরবরাহ সমবেদী (সিম্প্যাথেটিক) ও পরাসমবেদী স্নায়ুতন্ত্র (প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম) থেকে পেয়ে থাকে।[12] মূত্রাশয়ের সমবেদী তন্তু (সিম্প্যাথেটিক ফাইবার) সুষুম্নাকাণ্ডের T11–L2 বা L3 স্তর থেকে প্রাথমিকভাবে অধোজঠর স্নায়ুজালক বা হাইপোগ্যাস্ট্রিক প্লেক্সাসের মধ্য দিয়ে মূত্রস্থলী স্নায়ুজালক বা ভেসিকাল প্লেক্সাসে পৌঁছায়, অন্যদিকে, পরাসমবেদী তন্তু (প্যারাসিম্প্যাথেটিক ফাইবার) সুষুম্নাকাণ্ডের সেক্রাল (ত্রিকাস্থি) স্নায়ুমূল স্তর থেকে শ্রোণি আন্তরযন্ত্রীয় স্নায়ু (পেলভিক স্প্ল্যাংকনিক নার্ভ) ও নিম্ন অধোজঠর স্নায়ুজালকের (ইনফিরিয়র হাইপোগ্যাস্ট্রিক প্লেক্সাস) মাধ্যমে পৌঁছায়। পরাসমবেদী তন্তু মূত্রাশয় প্রাচীরের ডেট্রুসর পেশিতে সঞ্চালক হিসেবে কাজ করে এবং পেশির সংকোচন ঘটায়, অন্যদিকে পুরুষের অন্তঃরন্ধ্রনিয়ন্ত্রককে (ইন্টার্নাল স্ফিংক্টার) শিথিল করে, ফলে মূত্র মূত্রনালিতে প্রবাহিত হয়। সমবেদী স্নায়ু বীর্যপাতকে উদ্দীপিত করার পাশাপাশি যুগপৎভাবে অন্তঃ মূত্রনালীয় রন্ধ্রনিয়ন্ত্রকের (ইন্টার্নাল ইউরেথ্রাল স্ফিংক্টার) সংকোচন ঘটায়, যার ফলে বীর্য মূত্রথলিতে প্রবেশ করতে পারে না।[13] স্ফীতি বা প্রকোপনজনিত (যেমন, সংক্রমণ বা পাথর দ্বারা) সংবেদন প্রাথমিকভাবে পরাসমবেদী স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়।[12] এগুলো সেক্রাল স্নায়ুর মধ্য দিয়ে S2-4 সেক্রাল স্নায়ুমূলে পৌঁছায়।[14] এখান থেকে সংবেদন সুষুম্না কাণ্ডের পৃষ্ঠদেশীয় স্তম্ভের মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কে চলে যায়।[12]
অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে দেখলে মূত্রাশয়ের আবরণী কলা, তিন স্তরের পেশিতন্তু ও একটি বাহ্যিক অ্যাডভেন্টিশা (বাহ্যকঞ্চুক) দেখা যায়।[15] মূত্রাশয় প্রাচীরের অভ্যন্তরীন অংশকে ইউরোথেলিয়াম বলে যা ট্র্যানজিশনাল এপিথেলিয়াম বা পরিবর্তনমূলক আবরণী কলার একটি ধরন, এটি তিন থেকে ছয় স্তরবিশিষ্ট কোষ দিয়ে তৈরি; মূত্রথলি খালি না পূর্ণ তার উপর নির্ভর করে কোষগুলো ঘনাকার বা চ্যাপ্টা হতে পারে।[15] অধিকন্তু, এগুলোর উপরে উপরিতল গ্লাইকোক্যালিক্সসমৃদ্ধ একটি শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির স্তর থাকে যা এর নিচের কোষগুলোকে মূত্রের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।[16] এপিথেলিয়াম বা আবরণী কলা একটি পাতলা ভিত্তি ঝিল্লি ও একটি লামিনা প্রোপ্রিয়ার উপর অবস্থান করে।[15] এই শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির স্তরটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে।[17]
এই স্তরগুলোকে ঘিরে রয়েছে তিন স্তরবিশিষ্ট পেশিতন্তু, অন্তঃস্থ স্তরের পেশিসমূহ অনুদৈর্ঘ্য বা লম্বালম্বিভাবে থাকে, মধ্যস্তরের পেশিগুলো বৃত্তাকার ও বহিঃস্থ স্তরের পেশিগুলো অনুদৈর্ঘ্যভাবে থাকে; এই তন্তুগুলো সম্মিলিতভাবে ডেট্রুসর পেশি গঠন করে, যা খালি চোখে দেখা যেতে পারে[15] মূত্রথলির বাইরের দিকটা অ্যাডভেন্টিশা (বাহ্যকঞ্চুক ব বহিরাস্তর) নামক একটি সেরাস ঝিল্লি (রক্তাম্বুক ঝিল্লি) দ্বারা সুরক্ষিত থাকে।[15][18]
বিকাশমান ভ্রূণের পশ্চাদ্ভাগে একটি অবসারণী (ক্লোয়েকা) অবস্থিত। এটি ৪র্থ থেকে ৭ম সপ্তাহ ধরে রেচন-জনন গহ্বর ও মলদ্বারের প্রারম্ভ হিসেবে বিভাজিত হয়, এই দুইয়ের মাঝখানে ইউরোরেক্টাল-সেপটাম(মূত্রনালি-মলাশয় ভেদক) নামে একটি দেয়াল তৈরি হয়।[19] ইউরোজেনিটাল সাইনাস বা রেচন-জনন গহ্বর তিনটি অংশে বিভাজিত হয়, উপরের বৃহত্তম অংশটি মূত্রথলি; মধ্য অংশ মূত্রনালি এবং নিচের অংশ ভ্রূণের জৈবিক লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়।[19]
মানষের মূত্রথলি রেচন-জনন গহ্বর থেকে উদ্ভূত হয়ে প্রাথমিকভাবে অ্যালানটয়েস বা অপরাপোষিকার সাথে চলমান থাকে। মূত্রথলির উপরের ও নিচের অংশ পৃথকভাবে বিকশিত হয় এবং বিকাশলাভের মধ্যবর্তী সময়ে সংযুক্ত হয়।[9] এই সময়ে গবিনীদ্বয় মেসোনেফ্রিক নালি (মধ্যবৃক্ক নালি) থেকে ত্রিকোণে স্থানান্তরিত হয়।[9] পুরুষের ক্ষেত্রে, মূত্রথলির ভিত্তি মলাশয় ও পিউবিক সিমফিসিসের মাঝখানে থাকে। এটি প্রোস্টেট গ্রন্থির উপরে থাকে এবং মলাশয় থেকে রেক্টো-ভেসিকাল পাউচ (মলাশয়-মূত্রস্থলী বটুয়া) দ্বারা পৃথক থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে, মূত্রথলি জরায়ুর নিচে ও যোনির সামনে অবস্থিত; ফলে এর সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা পুরুষের চেয়ে কম। এটি ভেসিকো-ইউটেরাইন পাউচ (মূত্রস্থলী-জরায়ু বটুয়া) দ্বারা জরায়ু থেকে পৃথক থাকে। অল্পবয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে খালি অবস্থাতেও উদরের ভেতর থাকে।[20]
বৃক্ক থেকে রেচিত মূত্র ইউরেটার বা গবিনীর মধ্য দিয়ে মূত্রথলিতে প্রবাহিত হয় এবং সেখানে অস্থায়ীভাবে জমা হয়।[14] মূত্র নির্গমনের সময় ডেট্রুসর পেশির সংকোচন হয় এবং বহিঃস্থ রন্ধ্রনিয়ন্ত্রক (এক্সটার্নাল ইউরেথ্রাল স্ফিংক্টার) ও পেরিনিয়াম (অপানদেশ) পেশি শিথিল হয়, যার ফলে মূত্রনালির ভিতর দিয়ে মূত্র অতিক্রম করে এবং মূত্ররন্ধ্র দিয়ে দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়।[14] মূত্র নির্গমনের এই প্রক্রিয়ায় ডেট্রুসর পেশির সমন্বিত পরিবর্তন, সুষুম্নাকাণ্ডভিত্তিক একটি প্রতিবর্তী ক্রিয়া (রিফ্লেক্স) ও মস্তিষ্ক কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে।[14][12] মূত্রাশয়ে ৩০০-৪০০ মি.লি. মূত্র জমা হলে মূত্রাশয় পেশিতে অবস্থিত প্রসারণ রিসেপ্টর (স্ট্রেচ রিসেপ্টর) সক্রিয় হয় তখন মূত্রত্যাগ করার ইচ্ছা জাগ্রত হয়[14] সঞ্চিত মূত্রের পরিমাণ বাড়তে থাকলে প্রাচীরের ভাঁজগুলো (রুগি) সমতল হয়ে যায়, প্রসারণের সাথে সাথে প্রাচীরটি পাতলা হতে থাকে যার ফলে মূত্রথলির অভ্যন্তরীণ চাপের তেমন বৃদ্ধি ছাড়াই বেশি পরিমাণে মূত্র সঞ্চয় করে রাখতে পারে।[21] মূত্রত্যাগ নিয়ন্ত্রিত হয় ব্রেইনস্টেমের পন্টাইন মূত্রত্যাগ কেন্দ্র দ্বারা।[22]
মূত্রথলি প্রসারিত হলে এর সংকোচনের জন্য মূত্রথলির প্রসারণ রিসেপ্টর বা স্ট্রেচ রিসেপ্টরগুলো ডেট্রুসর পেশির মাসক্যারিনিক রিসেপ্টরগুলোকে উদ্দীপিত করার জন্য পরাসমবেদী স্নায়ুতন্ত্রকে সংকেত প্রদান করে।[23] ফলে মূত্রাশয় মূত্রনালির মাধ্যমে দেহের বাইরে মূত্র বের করে দেয়। প্রধান যে রিসেপ্টর সক্রিয় হয় তা হলো এম৩ রিসেপ্টর; যদিও এম২ রিসেপ্টরও জড়িত থাকে এবং সংখ্যায় এম৩ রিসেপ্টরের চেয়ে বেশি, তথাপি এরা অতটা সাড়া প্রদান করে না।[24] ডেট্রুসর পেশি β3 অ্যাড্রেনার্জিক রিসেপ্টরের মাধ্যমে শিথিল হয়।[10][25][26]
মূত্রাশয়ের গড় ধারকতা প্রায় ২২০ মি.লি., মূত্রের পরিমাণ ১০০-১৫০ মি.লি হলে প্রথম পূর্ণ হওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি হয় এবং ১৫০ থেকে ২৫০ মি.লি. হলে প্রথম মূত্রত্যাগের ইচ্ছা জাগ্রত হয়। অসংগত অস্বস্তি ব্যতিরেকে মূত্রাশয়ের প্রসারণ ঘটাকে শারীরবৃত্তীয় ধারকতা বলা হয় যা বয়স ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়াবলির উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়, স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি ২৫০-৪৫০ মি.লি. হয়, অন্যদিকে নবজাতকের ক্ষেত্রে এটি ২০-৫০ মি.লি. হয়।[27] মূত্রের পরিমাণ ৪৫০ মি.লি. -এর উপরে গেলে ব্যথা অনুভূত হয়, আর প্রায় ৮০০ মি.লি. জমা হলে মূত্র ধরে রাখা সম্ভব হয় না।[27] শারীরস্থানিক ধারকতা বলতে এমন পরিমাণ মূত্র বুঝায় যার বেশি জমলে মূত্রাশয় ফেটে যেতে পারে, এটি প্রায় ১ লিটার।[27]
মূত্রাশয়ে সংক্রমণ বা প্রদাহ হলে তাকে সিস্টাইটিস বা মূত্রাশয় প্রদাহ বলা হয়।[28] পুরুষের তুলনায় মহিলাদের মূত্রনালি অপেক্ষাকৃত ছোটো হওয়ায় সিস্টাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে শিশুবেলায় এবং বৃদ্ধ বয়সে প্রোস্টেট গ্রন্থি বড়ো হয়ে গিয়ে প্রস্রাব আটকা পড়লে সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। সিস্টাইটিস হলে তলপেটে ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়া, প্রস্রাব আটকিয়ে রাখতে না পারা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়।[28] সংক্রমণের প্রধান কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া, তন্মধ্যে ই কোলাই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।[28] সিস্টাইটিস চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়।[28] ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস (অঙ্গগহ্বরীয় মূত্রাশয়প্রদাহ) বলতে এমন রোগ বুঝায় যেখানে ব্যাকটেরিয়া ছাড়া ভিন্ন কোনো কারণে মূত্রথলির সংক্রমণ হয়।[29][30]
ঘনঘন প্রস্রাব হতে পারে অত্যধিক মূত্র উৎপাদন, মূত্রথলির ধারকত্ব কম হওয়া, প্রকোপন, অসম্পূর্ণভাবে খালি হওয়া প্রভৃতি কারণে। প্রস্টেট বৃদ্ধি পেয়েছে এমন পুরুষ বেশি ঘনঘন প্রস্রাব করে। একজন ব্যক্তি দিনে ৮ বারের বেশি প্রস্রাব করলে তাকে অতিসক্রিয় মূত্রাশয় বলে।[31] অতিসক্রিয় মূত্রাশয় রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রস্রাব ধরে রাখতে পারে না। যদিও প্রস্রাব করার সংখ্যা ও পরিমাণ একটি দৈনিক ছন্দ (সার্কেডিয়ান রিদম) মেনে চলে,[32] তবে, অতিসক্রিয় মূত্রাশয় এটিকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। মূত্রগতিবিদ্যা পরীক্ষা (ইউরোডাইনামিক্স) উপসর্গসমূহের ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করতে পারে। অবসক্রিয় মূত্রাশয় এমন একটি অবস্থা যেখানে মূত্রত্যাগ করতে সমস্যা হয়, এটি স্নায়বিক মূত্রাশয় রোগের প্রধান উপসর্গ। মূত্রাশয়ে পাথর থাকলে রাত্রে ঘনঘন প্রস্রাব হতে পারে।
মূত্রাশয় বা এর সাথে সম্পর্কিত আরও কিছু রোগ:
মূত্রাশয়ের সমস্যাগুলো শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে, মূত্রপ্রবাহের পথ পরিবর্তন বা একটি কৃত্রিম মূত্রাশয় দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। মূত্রাশয়ের আয়তন মূত্রাশয় বৃদ্ধিকরণ (ব্লাডার অগমেন্টেশন) প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি করা যেতে পারে। মূত্রথলির গ্রীবা অবরুদ্ধ হলে নিশ্চিতভাবেই শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন। মূত্রাশয় আয়তন পরিমাপ করার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফি (শব্দোত্তর চিত্রণ) ব্যবহার করা হয়।[34][35]
সাধারণত মূত্রাশয়ের আবরণী কলা বা ইউরোথেলিয়ামে সবচেয়ে বেশি ক্যান্সার বা কর্কটরোগ হয়। মূত্রাশয়ের ক্যান্সার বা কর্কটরোগ ৪০ বছর বয়সের পরে বেশি হয় এবং মহিলাদের চেয়ে পুরুষের ক্ষেত্রে বেশি হয়;[36] অন্যান্য ঝুঁকি উপাদানের মধ্যে রয়েছে ধূমপান এবং অ্যারোমাটিক অ্যামাইন ও অ্যালডিহাইড রঞ্জকের সংস্পর্শে আসা।[36] কর্কটরোগের উল্লেখযোগ্য উপসর্গগুলো হলো প্রস্রাবের সাথে রক্ত নির্গত হওয়া; প্রথমদিকে অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক থাকে।[36] মূত্রাশয়ের ক্যান্সার হয় মূলত এর আবরণী কলার ক্যান্সারের জন্য (ট্র্যানজিশনাল কোষ কার্সিনোমা), তবে যদি পাথর বা সিস্টোসোমায়াসিসের জন্য দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের ফলে মূত্রনালির আবরণী কলার পরিবর্তন ঘটে থাকে তাহলে আঁইশাকার কোষ কার্সিনোমা হতে পারে।[36] রোগ নির্ণয়ের জন্য মূত্রের নমুনা সংগ্রহ করে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে ম্যালিগন্যান্ট বা সংহারক কোষ আছে কি না তা তদন্ত করে দেখা হয়, এই পদ্ধতি কোষবিদ্যা (সাইটোলজি) নামে পরিচিত। এ-ছাড়া সিটি ইউরোগ্রাম (মূত্রবাহচিত্র) বা আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষাও করা হয়।[36] যদি উদ্বেগজনক কোনো ক্ষত দৃষ্টিগোচর হয়, তবে ক্ষতটি দেখা ও বায়োপসি (জৈব কলাচ্ছেদন) নেওয়ার জন্য একটি নমনীয় ক্যামেরা মূত্রাশয়ে প্রবেশ করানো যেতে পারে যা সিস্টোস্কপি (বস্তিবীক্ষণ) নামে পরিচিত। ক্যান্সার দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছে কি না তা দেখার জন্য দেহের অন্য অংশের সিটি স্ক্যান করা হয়।[36]
মূত্রাশয় পরীক্ষার জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে। রোগের ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষার উপর নির্ভর করে কোন পরীক্ষাটি করা হবে তা নির্ধারণ করা হয়। মূত্রাশয়ের আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান পরীক্ষার মাধ্যমে মূত্রাশয়ের অভ্যন্তরের অবস্থা জানা সম্ভব।
মূত্রথলির অভ্যন্তরীণ চেহারা সরাসরি দেখা ও প্রয়োজনে বায়োপসি (জৈব কলাচ্ছেদন)নেওয়ার জন্য সিস্টোস্কোপ (বস্তিবীক্ষণী)নামক একটি নমনীয় ক্যামেরা প্রবেশ করানো হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.