মজরুহ সুলতানপুরি নামে সুপরিচিত আসরার উল হাসান খান (১ অক্টোবর ১৯১৯ - ২৪ মে ২০০০) একজন ভারতীয় উর্দু কবি ও গীতিকার ছিলেন। তিনি অসংখ্য হিন্দি চলচ্চিত্রের গানের গীত রচনা করেছেন।[1] তিনি ১৯৫০-এর দশক থেকে ১৯৬০-এর দশকের শুরুর ভাগ পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রভাবশালী সঙ্গীতজ্ঞ এবং প্রগতিশীল লেখক আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন।[2][3] তাকে বিংশ শতাব্দীর সাহিত্যে অন্যতম সেরা আভঁ-গার্দ উর্দু কবি হিসেবে গণ্য করা হয়।[4] তিনি ১৯৬৫ সালে দোস্তী চলচ্চিত্রের "চাহুঙ্গা ম্যাঁয় তুঝে" গানের জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন, তিনিই প্রথম গীতিকার হিসেবে এই পুরস্কার অর্জন করেন।[5]

দ্রুত তথ্য মজরুহ সুলতানপুরি, প্রাথমিক তথ্য ...
মজরুহ সুলতানপুরি
প্রাথমিক তথ্য
জন্মনামআসরার উল হাসান খান
জন্ম(১৯১৯-১০-০১)১ অক্টোবর ১৯১৯
সুলতানপুর, আগ্রা ও অবধের যুক্তপ্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ, ভারত)
মৃত্যু২৪ মে ২০০০(2000-05-24) (বয়স ৮০)
মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত
পেশাকবি, গীতিকার
কার্যকাল১৯৪৬-২০০০
বন্ধ

দীর্ঘ ছয় দশকের কর্মজীবনে তিনি নওশাদ, মদন মোহন, রোশন, সলিল চৌধুরী, কল্যাণজী-আনন্দজী, লক্ষ্মীকান্ত-প্যায়ারেলাল, আর. ডি. বর্মণ-সহ বহু সঙ্গীত পরিচালকদের সাথে কাজ করেছেন। ১৯৮০-এর দশক ও ১৯৯০-এর দশকে তার বেশিরভাগ কাজ ছিল আনন্দ-মিলিন্দের সাথে, তাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হল কয়ামত সে কয়ামত তক (১৯৮৮), লাল দুপাট্টা মলমল কা (১৯৮৮), লাভ (১৯৯১) ও দহক (১৯৯৯)। এছাড়া তিনি জতিন-ললিতের সুরকৃত প্রথম চলচ্চিত্র ইয়ারা দিলদারা (১৯৯১) ও পরবর্তীকালে জো জিতা ওহি সিকান্দর (১৯৯২), কাভি হাঁ কাভি না (১৯৯৩) ও খামোশি: দ্য মিউজিক্যাল (১৯৯৬) চলচ্চিত্রের গীত লিখেন।

প্রারম্ভিক জীবন

মজরুহ সুলতানপুরি ১৯১৯ সালের ১লা অক্টোবর তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের আগ্রা ও অবধের যুক্তপ্রদেশের (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ, ভারত) সুলতানপুরে এক মুসলিম রাজপুত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম আসরার উল হাসান খান। তার পিতা সুলতানপুরে ১৯১৯/১৯২০ সালে পুলিশ বিভাগে চাকরি করতেন।[5][6] তার পিতা তার ইংরেজি শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ছিলেন না বরং তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেন, যার ফলে তিনি প্রথমে আরবিফার্সি ভাষায় দক্ষতা অর্জনসহ ধর্মীয় বিষয়াবলি সংবলিত সাত বছরের শিক্ষা পাঠ্যক্রম দারসে নিজামি পাস করেন এবং পরে আলিমের সনদ লাভ করেন। এরপর তিনি লখনউয়ের তাকমিল-উত-তিব কলেজে ইউনানি চিকিৎসার ডিগ্রি অর্জনের জন্য ভর্তি হন।[7]

তিনি যখন হাকিম পদবী লাভের জন্য পরিশ্রম করছিলেন তখন তিনি সুলতানপুরে এক মুশায়রায় তার গজল পেশ করেন। গজলটি শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করলে মজরুহ চিকিৎসা বাদ দিয়ে কবিতা লিখার সিদ্ধান্ত নেন। অচিরেই তিনি মুশায়রায় নিয়মিত হন এবং তৎকালীন উর্দু মুশায়রায় শীর্ষ নাম জিগর মুরাদাবাদির শিষ্য হন।[5][7]

কর্মজীবন

১৯৪৫ সালে মজরুহ বোম্বের সাবু সিদ্দিক ইনস্টিটিউটে এক মুশায়রায় অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তার গজল ও কবিতা শ্রোতাদের প্রশংসা লাভ করে, তন্মধ্যে একজন শ্রোতা ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক আবদুল রশিদ করদার[6] তিনি জিগর মোরাদাবাদির সাথে যোগাযোগ করেন, যার মাধ্যমে তিনি মজরুহের সাথে সাক্ষাৎ করেন। মজরুহ শুরুতে চলচ্চিত্রের জন্য গান লিখতে অস্বীকৃতি জানান, কিন্তু জিগর তাকে বুঝান যে চলচ্চিত্রে কাজ করলে তিনি ভালো পারিশ্রমিক পাবেন, যা দিয়ে তিনি তার পরিবারের ভরণপোষণ করতে পারবেন। করদার তাকে সঙ্গীত পরিচালক নওশাদের কাছে নিয়ে যান। নওশাদ তাকে একটি সুর শোনান এবং এই সুরে কিছু লিখতে বলেন। মজরুহ "জব উসনে গেসু বিখরায়ে", "বাদল আয়ে ঝুম কে" এই গানগুলো লিখেন। নওশাদ তার লেখা পছন্দ করেন এবং তাকে শাহজাহান (১৯৪৬) চলচ্চিত্রের গীতিকার হিসেবে চুক্তি স্বাক্ষর করান।[8][9]

মৃত্যু

সুলতানপুরি দীর্ঘদিন ফুসফুসের জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০০০ সালের ২৪শে ৮০ বছর বয়সে মুম্বইয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[9]

পুরস্কার ও মনোনয়ন

আরও তথ্য বছর, বিভাগ ...
বছর বিভাগ মনোনীত কর্ম ফলাফল সূত্র.
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
১৯৯৪ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার বিজয়ী [10]
ফিল্মফেয়ার পুরস্কার
১৯৬০ শ্রেষ্ঠ গীতিকার "জলতে হ্যায় জিসকে লিয়ে" - সুজাতা মনোনীত [11]
১৯৬৬ "চাহুঙ্গা ম্যাঁয় তুঝে" - দোস্তী বিজয়ী [12]
১৯৭৭ "এক দিন বিক জায়েগা" - ধরম করম মনোনীত [13]
১৯৭৮ "ক্যায়া হুয়া তেরা ওয়াদা" - হম কিসিসে কম নহিঁ মনোনীত [14]
১৯৮৯ "পাপা কহতে হ্যায়" - কয়ামত সে কয়ামত তক মনোনীত [15]
১৯৯৩ "ও সিকান্দর হি দোস্ত" - জো জিতা ওহি সিকান্দর মনোনীত [16]
১৯৯৬ "রাজা কো রানি সে প্যায়ার" - অকেলে হম অকেলে তুম মনোনীত [17]
১৯৯৭ "আজ ম্যাঁয় উপর" - খামোশি: দ্য মিউজিক্যাল মনোনীত
স্টার স্ক্রিন পুরস্কার
১৯৯৭ শ্রেষ্ঠ গীতিকার "আজ ম্যাঁয় উপর" - খামোশি: দ্য মিউজিক্যাল বিজয়ী [18]
বন্ধ

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.