ভূ-পদার্থবিজ্ঞান
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভূ-পদার্থবিজ্ঞান (ইংরেজি: Geophysics) প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের একটি শাখা, যাতে পৃথিবী ও একে ঘিরে রাখা মহাকাশীয় পরিবেশের ভৌত প্রক্রিয়াসমূহ ও পৃথিবীর ভৌত বৈশিষ্ট্যগুলি অধ্যয়ন করা হয় এবং এগুলিকে পরিমাণবাচক পদ্ধতিসমূহের ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করা হয়।


কখনও কখনও ভূ-পদার্থবিজ্ঞান বলতে কেবলমাত্র কঠিন পৃথিবীর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি অধ্যয়নের ক্ষেত্রকে বোঝায়; এর মধ্যে পৃথিবীর আকৃতি, এর মহাকর্ষীয় ও চৌম্বক ক্ষেত্রসমূহ, এর অভ্যন্তরীণ গঠনকাঠামো ও সংযুক্তি, পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ গতিশীল প্রক্রিয়াসমূহ ও ভূপৃষ্ঠে ভূত্বকীয় পাত গঠন প্রক্রিয়াতে সেগুলির অভিব্যক্তি, ম্যাগমা উৎপাদন, আগ্নেয় কর্মকাণ্ড ও শিলা গঠন অন্তর্ভুক্ত।[৩] তবে আধুনিক ভূপদার্থবৈজ্ঞানিক সংস্থাগুলি ও বিশুদ্ধ তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীরা অপেক্ষাকৃত ব্যাপকতর একটি সংজ্ঞা ব্যবহার করেন যার মধ্যে পানি চক্র (বরফ ও তুষারসহ); মহাসমুদ্রগুলি ও বায়ুমণ্ডলের প্রবাহী গতিবিজ্ঞান, বায়ুমণ্ডলীয় তড়িৎ ও চুম্বকত্ব (আয়নমণ্ডল ও চৌম্বকমণ্ডল) ও সৌর-পৃথিবী পদার্থবিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া পৃথিবীর বাইরে চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহের সদৃশ সমস্যাগুলিও এই শাস্ত্রে অধ্যয়ন করা হতে পারে।[৩][৪][৫][৬][৭][৮]
১৯শ শতকে এসে ভূ-পদার্থবিজ্ঞানকে একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলেও প্রাচীনকাল থেকেই এ বিষয়ে গবেষণা বিদ্যমান। প্রা্চীনকালে চৌম্বক শক্তিবিশিষ্ট ধাতব আকরিক (Lodestone) থেকে আদি দিকনির্ণয় যন্ত্রগুলি (কম্পাস) নির্মাণ করা হয়। আধুনিক দিকনির্ণায়ক যন্ত্রগুলি নৌচালনায় দিকনির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৩২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভূকম্পমাপক যন্ত্রটি নির্মাণ করা হয়। আইজাক নিউটন তার বলবিদ্যার তত্ত্ব জোয়ার-ভাটা ও বিষুব সংক্রান্তির চলন (precession of the equinox) -এর উপর প্রয়োগ করেন। পৃথিবীর আকৃতি, ঘনত্ব, অভিকর্ষীয় ক্ষেত্র এবং পানিচক্রের উপাদানগুলি পরিমাপ করার জন্য যন্ত্রপাতি নির্মাণ করা হয়। ২০শ শতকে এসে কঠিন পৃথিবী ও মহাসমুদ্রে দূরবর্তী অভিযানের জন্য ভূ-পদার্থবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিসমূহ উদ্ভাবন করা হয়। ভূ-ত্বকীয় পাত গঠন প্রক্রিয়ার তত্ত্ব নির্মাণে ভূ-পদার্থবিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভূ-পদার্থবিজ্ঞানকে সমাজের বিভিন্ন চাহিদার কাজেও লাগানো হয়েছে, যেমন খনিজ সম্পদ আহরণ, প্রাকৃতিক বিপদ উপশম ও পরিবেশগত সুরক্ষা।[৪] অনুসন্ধানী ভূ-পদার্থবিজ্ঞান (exploration geophysics) শাস্ত্রে ভূ-পদার্থবৈজ্ঞানিক জরিপ থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত ব্যবহার করে সম্ভাব্য খনিজ তেল তথা পেট্রোলিয়ামের ভাণ্ডার ও খনিজ পদার্থের মজুদ বিশ্লেষণ করা হয়, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরের অবস্থান নির্ণয় করা হয়, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে বের করা হয়, হিমবাহ ও মাট্রিক পুরুত্ব নির্ণয় করা হয় এবং পরিবেশগত প্রতিবিধানের জন্য ব্যবহার্য স্থান যাচাই করা হয়।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.