Loading AI tools
মাংস বা সবজির পুর দেওয়া আবৃত বদ্ধ উনুনে সেঁকা ময়দার সুখাদ্য উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পেস্টি (/ˈpɑːsti/ or /ˈpæsti/, টেমপ্লেট:Lang-kw)[১] এক প্রকার সেঁকা পেস্ট্রি, যেটি যুক্তরাজ্যের কর্ণওয়াল এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার।এটি প্রস্তুত করা হয় মসৃণ মচমচে পেস্ট্রির ভিতর কাঁচা পুর, বিশেষত মাংস ও শাকসবজি, দিয়ে।
অন্যান্য নাম | কর্ণিশ প্যাটি, পেস্ট্রি, ব্রিটিশ পিস্টি, অজি, ওজি, টেডি অজি, টিডি ওগিন, ওজি ওগিন এবং অন্যান্য |
---|---|
প্রকার | প্রধান |
উৎপত্তিস্থল | যুক্তরাজ্য |
অঞ্চল বা রাজ্য | প্রায়ই কর্নওয়াল-এর সাথে যুক্ত |
পরিবেশন | গরম বা ঠাণ্ডা |
প্রধান উপকরণ | পেস্টিসহ নানা জিনিস, সাধারণত গরুর মাংস এবং সবজি |
পেস্ট্রিটি মাঝ বরাবর এমনভাবে ভাঁজ করা হয় যাতে পুর অর্ধ বৃত্তাকার অবস্থায় থাকে এবং বাঁকা প্রান্তটি সেটিকে সেঁকার আগ পর্যন্ত আটকে রাখে।
২০১১ সাল থেকে ইউরোপে 'সংরক্ষিত ভৌগোলিক সূচক' মর্যাদাভোগী ঐতিহ্যবাহী কর্নিশ পেস্টিতে পুর হিসেবে গো মাংশ, ফালিফালি বা চাকচাক করে কাটা আলু, সুইডিশ শালগম (টারনিপ বা রুটাবাগা নামেও পরিচিত - কর্ণওয়ালে শালগম নামেই উল্লেখ করা হয়) ও পেঁয়াজ দেয়া হয়, স্বাদবর্ধনের জন্য যোগ করা হয় লবণ ও গোল মরিচ, এবং তারপর সেটি সেঁকা হয়। পেস্টির সাথে কর্ণওয়ালের সংশ্লিষ্টতাই সবচেয়ে বেশি।এটি এখানকার জাতীয় খাবার এবং কর্নিশ খাদ্য ব্যবসার ৬% এর দখলে। বিভিন্ন প্রকার পুর দিয়ে পেস্টি তৈরি হয়, এবং কিছু দোকান আছে যারা সর্ব প্রকার পেস্টি বিক্রিতে স্বনামধন্য।
ঐতিহাসিক বিভিন্ন সুত্রে ও গল্পে পেস্টির অনেক উল্লেখ থাকলেও এর উৎপত্তি স্থল নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না।কর্নিশ খনি শ্রমিকদের মাধ্যমে পেস্টি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়।ফলে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, উলস্টার এবং অন্য অনেক জায়গায় বিভিন্ন প্রকার পেস্টি দেখতে পাওয়া যায়।
আধুনিক পেস্টির সাথে কর্ণওয়ালের গভীর সংশ্লিষ্টতা থাকলেও, এর সঠিক উৎপত্তি স্থল পরিষ্কার নয়। ইংরেজি শব্দ 'পেস্টি'র উৎপত্তি হয়েছে মধ্যযুগে পিঠার জন্য ব্যবহৃত ফরাসি শব্দ থেকে যেটি মৃগমাংশ, স্যামন মাছ বা অন্য কোন মাংশ, অথবা শাকসবজি বা পনিরের পুর দিয়ে তৈরি হতো এবং কোন কিছু ছাড়াই সেঁকা হতো[২]। অনেক কাল থেকেই রান্নার বইগুলিতে পেস্টির নাম পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৩০০ সালের দিকে প্রাপ্ত প্রাচীনতম লা বিয়ান্ডিয়ারে (প্রাচীন ফরাসি শব্দ) বেশ কিছু পেস্টির রেসিপি রয়েছে।[৩] ১৩৯৩ সালের লা মেনাজীয়ার দ্য প্যারিসে মৃগমাংশ, বাছুরের মাংশ, গো মাংশ বা ভেড়ার মাংশ দিয়ে তৈরি পেস্টির রেসিপি রয়েছে।
১৩ শতকের একটি চুক্তিতে পেস্টির রেফারেন্স পাওয়া যায়, যে চুক্তির মাধ্যমে তৃতীয় হেনরি গ্রেট ইয়ারমাউথ শহরটি দান করেছিলেন।শহরটি থেকে প্রতি বছর নরউয়িচের শেরিফদের চব্বিশটি পেস্টিতে সেঁকা একশত হেরিং মাছ পাঠাতে হতো যেগুলি শেরিফরা পাঠাতো পূর্ব কার্লটনের জমিদারকে যিনি সেগুলি রাজাকে পাঠিয়ে দিতেন।প্রায় একই সময়ে, ১৩শতকের কাহিনীকার ম্যাথিউ প্যারিস সেইন্ট আলবানস অ্যাবে'র ভিক্ষুদের সম্পর্কে লিখেছেন,"প্রচলিত প্রথা অনুসারে তাদের প্রাণীর মাংশের পেস্টি খেয়ে জীবনধারণ করতে হতো।" [৪] ১৪৬৫ সালে ইংল্যান্ডের আচার্য ও ইয়র্কের আর্চবিশপ জর্জ নেভিলের অভিষেক ভোজে ৫৫০০ মৃগমাংশের পেস্টি পরিবেশন করা হয়েছিল।এমনকি রাজ বংশীয় ব্যক্তিরাও সেগুলি খেয়েছিলেন যেটি নিশ্চিত হওয়া যায় অষ্টম হেনরি র তৃতীয় স্ত্রী জেন সেমারে র (১৫০৮-১৫৩৭) কাছে এক রুটিওায়ালার লিখিত একটি চিঠি থেকে:"... আশা করি এই পেস্টিগুলি তোমার কাছে পূর্বের পেস্টিগুলির চেয়ে ভালো অবস্থায় পৌঁছেছে...।" [৫] মধ্য ১৭শতকে স্যামুয়েল পেপিসে র লেখা দিনপঞ্জিতে বেশ কয়েকবার তার পেস্টি খাওয়ার কথা উল্লেখ আছে, উদাহরণস্বরূপ "স্যার ডব্লিও পেন-এর সাথে খেলাম... দারুণ মৃগ মাংশের তৈরি পেস্টি, তীব্র ঘ্রাণ।",কিন্তু এই সময়ের পর থেকেই কর্ণওয়ালের বাইরে শব্দটির ব্যবহার কমে যায়।[৬]
১৭ ও ১৮শতকে এসে পেস্টির জনপ্রিয়তা ধনীদের বাইরেও কর্ণওয়ালের শ্রমজীবী মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে; টিন-খনি শ্রমিকেরা ও অন্যান্যরা বিশেষ আকার, সহজে বহনযোগ্য সম্পূর্ণ খাবার এবং ছুরি-চামচ ছাড়াই খাওয়া যায় বলে এটাকে গ্রহণ করে।[৭][৮][৯] খনিতে পেস্টির ঘন ও ভাঁজ করা পেস্ট্রি বেশ কয়েক ঘণ্টার জন্য গরম থাকে, এমনকি ঠাণ্ডা হয়ে গেলেও সহজেই বেলচার উপর রেখে তা মোমবাতি দিয়ে গরম করে নেয়া যায়।[১০]
এক পাশ ভাঁজ করা পেস্টি দেখে ধারণা করা হয়েছিল যে খনি শ্রমিকেরা সম্ভবত পেস্ট্রির পুরু ও মোটা প্রান্ত ধরে পেস্টি খেত। তবে এই ধারণা পরবর্তীতে বাতিল হয়ে যায়, এবং তারা ময়লা আঙ্গুল (সম্ভবত আর্সেনিকের চিহ্ন যুক্ত) দিয়ে খাবার বা মুখ স্পর্শ করতো না সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়।[১১] যাহোক, অনেক পুরানো ছবিতে কাগজ বা মসলিনের তৈরি ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো পেস্টি দেখা যায় এবং এক প্রান্ত থেকে শুরু করে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত খাওয়া পেস্টির ছবিও দেখা যায় [১২] ; ১৯২৯ সালে প্রকাশিত সবচেয়ে পুরাতন কর্নিশ রেসিপি বই-এর মতে, এটাই পেস্টি খাওয়ার "সত্যিকারা কর্নিশ উপায়।" [১৩] অন্য আরেকটি মত অনুসারে পেস্টির এক প্রান্ত একটি আদ্যক্ষর দিয়ে চিহ্নিত করা হতো এবং তারপর অন্য প্রান্ত থেকে খাওয়া হতো যাতে একবারে খাওয়া শেষ না হলে এর মালিক পরবর্তীকালে তার পেস্টিটি দাবী করতে পারে।[১৪]
পেস্টি হচ্ছে কর্ণওয়ালের জাতীয় খাদ্য [১৫][১৬][১৭] এবং কমপক্ষে ১৮৬০-এর দশকের প্রথম দিক থেকে কর্নিশ পেস্টি শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে:
কর্নিশ পেস্টি ছিল এক বিস্ময়কর খাবার কারণ এর ভিতরে থাকা সুন্দরভাবে রান্না করা মাংশ, আলু ও অন্যান্য উপকরণের জন্য সেটিকে ডিনার হিসেবেও চালিয়ে দেয়া যেত এবং সেটি সহজেই বহনযোগ্য ছিল।এটি আমাকে অতীতের শিক্ষাদানের দিনগুলিকে মনে করিয়ে দিয়েছিল যখন বডমিনে আমি পেস্টি জিতেছিলাম এবং তা রান্না করার জন্য বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম।একে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা যায় এবং কর্নিশ পেস্টির মত দেশের অন্য অংশেও পরিবেশন করা যায়।
এই প্রতিবেশী অঞ্চলের কর্মজীবীদের কাছে কর্নিশ পেস্টি খুবই জনপ্রিয়, এবং সম্প্রতি ডেভোনশায়ারের কিছু অঞ্চলেও এটি পরিচিতি পেয়েছে।মাংশের ছোট ছোট টুকরা ও আলুর পাতলা ফালি দিয়ে প্রস্তুত এই খাবারটিতে প্রচুর মরিচ রয়েছে এবং সেটি মাখানো ময়দার তাল দিয়ে জড়ানো।
— জেমস অর্চারড হ্যালিওয়েল, র্যাম্বেলস ইন ওয়েস্টার্ন কর্ণওয়াল বাই দ্য ফুটস্টেপস অব দ্য জায়ান্টস, ১৮৬১[১৯]
১৯শতকের শেষের দিকে রন্ধনবিদ্যার জাতীয় বিদ্যালয়গুলি কীভাবে নিজস্ব ঢংয়ের "কর্নিশ পেস্টি" প্রস্তুত করা যায় সেই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের তালিম দেয়া শুরু করে।সেগুলি ছিল আকারে ছোট এবং "ভদ্র মধ্যবিত্ত ভিক্টোরিয়ান্সদের জন্য আর্থিকভাবে লাভজনক, সুস্বাদু ও একটু একটু করে খাওয়া যায় এমন খাবার।"[২০][২১]
কর্ণওয়ালের প্রায় ৫০টি পেস্টি প্রস্তুতকারীদের ব্যবসা সংস্থা, কর্নিশ পেস্টি অ্যাসোসিয়েশানে র ৯ বছরের প্রচার-প্রচারনার পর ২০১১ সালের ২০ জুলাই ইউরোপিয়ান কমিশন "কর্নিশ পেস্টি" নামটিকে সংরক্ষিত ভৌগোলিক সূচক (পিজিআই) হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।[২২] পিজিআই স্বীকৃতি অনুসারে, কর্নিশ পেস্টির আকৃতি হবে 'ডি'র মত, এবং সেটি একদিকে কুঞ্চিত থাকবে, উপরে নয়।" এর উপাদান হবে গরুর মাংশ, সুইডিশ শালগম (কর্ণওয়ালে টারনিপ নামে পরিচিত),[২৩] আলু ও পেঁয়াজ, সাথে থাকবে লবণ ও গোল মরিচের হালকা স্বাদকারক, ও দেখতে হবে গাঁট্টাগোট্টা।রান্নার সময় এবং ঠাণ্ডা হওয়ার পর পেস্ট্রির আকৃতি একই থাকবে এবং দেখতে সোনালি হবে।পিজিআই স্বীকৃতি অনুসারে, কর্নিশ পেস্টি অবশ্যই কর্ণওয়ালেই প্রস্তুত হবে।কিন্তু সেটি কর্ণওয়ালেই সেঁকতে হবে বা উপাদানসমূহ ঐ দেশ থেকেই আসতে হবে তা নয় যদিও কর্নিশ পেস্টি অ্যাসোসিয়েশান (সিপিএ) বলেছিল পেস্টি উৎপাদন ও স্থানীয় উপাদান সরবরাহকারীদের মাঝে শক্তিশালী সংযোগ আছে।পেস্টি মোড়কজাত করার সময় প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি মেনে চলতে হবে যার মাঝে রয়েছে যথার্থতা প্রমাণসূচক সিল যেটি সিপিএ নজরদারি করে।
কর্ণওয়ালের বাইরের উৎপাদনকারীরা পিজিআই স্বীকৃতি নিয়ে অভিযোগ করেছিল, একজনের মন্তব্য ছিল "[ইইউ আমলারা] নরকে যাও",[২৪] এবং আরেকজন বলেছিল,"কিছু বড় পেস্টি কোম্পানির জন্য সংরক্ষনবাদ এই প্রকৃত মৌলিক দ্রব্যটির অনুকরণে গাদায় গাদায় দ্রব্য তৈরি করবে।" [২৫] আসডা ও মরিসন্সে র মত বড় বড় ইউকে সুপারমার্কেট বলেছিল যে তারা এই পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে,[২৬] এবং দেশেব্যাপী দোকান থাকা বেকারি প্রতিষ্ঠান গ্রেগস ও[২৫] একই কথা বলেছিল যদিও ৩ বছরের পরিবর্তনকালীন সময়ের জন্য যে ৭টি কোম্পানিকে "কর্নিশ পেস্টি" নাম ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছিল গ্রেগস ছিল তার অন্যতম।
সিপিএ'র সদস্যরা ২০০৮ সালে প্রায় ৮৭ মিলিয়ন পেস্টি তৈরি করেছিল যার বিক্রয়মূল্য প্রায় ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড (কর্ণওয়ালের খাদ্য অর্থনীতির প্রায় ৬ ভাগ)।[২৭] সিপিএ'র সদস্যরা ২০১১ সালে ১৮০০-এর বেশি স্থায়ী কর্মী নিয়োগ দিয়েছিল এবং এই ব্যবসা থেকে প্রায় ১৩০০০ অন্যান্য চাকরি উপকৃত হয়েছিল।[২৮] দক্ষিণ-পশ্চিম ভ্রমণ বোর্ডের জরিপে দেখা যায় মানুষের কর্ণওয়ালে ভ্রমণে আসার প্রধান ৩টি কারণের একটি হচ্ছে খাবার এনং কর্ণওয়ালের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে কর্নিশ পেস্টি।[১১]
অক্সফোর্ডশায়ারে র ডব্লিউএমসি রিটেইল পার্টনারস-এর প্রধান নির্বাহী কর্নিশ ব্যবসায়ী মাইকেল বল সেইন্ট অস্টেলে র কর্নিশ মার্কেট ওয়ার্ল্ড-এর নিকট একটি কর্নিশ পেস্টি জাদুঘর স্থাপন করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি জাদুঘরের জন্য পেস্টি তৈরির শিল্পসম্মত ও পুরাতন স্মৃতিস্মারক সংগ্রহের আশা করছেন।[২৯]
সংরক্ষণ আইনে বর্ণিত কর্নিশ পেস্টি তৈরির রেসিপি হচ্ছে চাকচাক বা কুচিকুচি করে কাটা গরুর মাংশ, আলু, পেঁয়াজ ও শালগমের অমসৃণ টুকরা এবং সাথে "হালকা গোল মরিচের" স্বাদবর্ধক। [১১] গরুর মাংশের কাটার ধরন সাধারণত স্কার্ট স্টেকে র মত।[৩০] সুইডিশ শালগমকে কর্ণওয়ালে মাঝে মাঝে টারনিপ বলা হয়, কিন্তু এই রেসিপির জন্য আসল সুইডিশ শালগমই প্রয়োজন, টারনিপ নয়।[২৩] স্বাদের ভিন্নতার জন্য পেস্টির উপাদানগুলিতে সাধারণত লবণ ও গোল মরিচের স্বাদবর্ধক ব্যবহৃত হয়। ঐতিহ্যবাহী কর্নিশ পেস্টিতে গাজরে র ব্যবহার প্রায় অগ্রণযোগ্য যদিও এটি নিয়মিতই দেখা যায়।[৩০]
ব্যবহৃত পেস্ট্রির ধরন নিয়ে তেমন কিছু বলা নেই যতক্ষণ সেটার রঙ সোনালি থাকে এবং রান্নার সময় বা ঠাণ্ডা করার সময় ভেঙ্গে না যায়,[১১] যদিও আধুনিক পেস্টিতে প্রায় সব সময়ই শর্টক্রাস্ট পেস্ট্রি ব্যবহার করা হয়।[৩১] ভালো পেস্টির পেস্ট্রি সেটাই যেটি খনিতে ঢোকার সুড়ঙ্গপথে পড়ে গেলেও ভেঙ্গে যায় না এমন একটি হাস্যকর বিশ্বাস প্রচলিত আছে।[৩২] প্রকৃত পক্ষে ব্যবহৃত বার্লির আটার জন্যই পেস্ট্রি শক্ত ও ঘন হয়।[৩৩]
অফিসিয়ালি সংরক্ষিত কর্নিশ পেস্টির জন্য উপকরণগুলি নির্ধারিত থাকলেও পুরনো কর্নিশ রান্নার বই থেকে জানা যায় সহজলভ্য সব উপকরণ দিয়েই সাধারণত পেস্টি তৈরি হতো।[৩৪] সবচেয়ে পুরাতন পেস্টির রেসিপিতে মৃগ মাংশের উল্লেখ পাওয়া যায়, গরুর মাংসের নয়।[৩৫] আকৃতির জন্যই "পেস্টি" সবসময় একটি শ্রেণিগত নাম হিসেবেই ছিল যার ভিতরে বিভিন্ন প্রকার পুর থাকতো যেমন স্টিলটন,নিরামিষ, এমনকি মুরগীর মাংসের টিক্কা।[৩৪] কর্ণওয়াল ও ডেভন জুড়ে দোকানে শুকুরের মাংসের ও আপেলের পেস্টি সহজেই পাওয়া যেত যার উপকরণ ছিল আপেল স্বাদের সস, যেটি একসাথে সারা পেস্টিতে মেশানো থাকতো, এমনকি মিস্টি মেস্টিও ছিল যার উপকরন ছিল আপেল ও ডুমুর বা চকলেট ও কলা, যেগুলি কর্ণওয়ালের কিছু এলাকায় খুব কমন ছিল।[৯]
অ্যাংগ্লিসে'র পারিয়ান পাহাড়ে র তামার খনিগুলিতে ১৯শতকে খনি শ্রমিকেরা আংশিক নোনতা, আংশিক মিষ্টি পেস্টি (বেডফোরডশায়ার ক্ল্যাঙ্গারের মত) খেত। যে কারিগর এই গবেষণাটি করে রেসিপি আবিষ্কার করেছেন তিনি বলেছেন কাজের খোঁজে ঐ এলাকায় ভ্রমণরত কর্নিশ খনি শ্রমিকেরা সম্ভবত রেসিপিটি অ্যাংগ্লিসে নিয়ে গেছেন।[৩৬] আজকাল কর্ণওয়ালে বাণিজ্যিকভাবে আর কোন 'টু-কোর্স 'পেস্টি তৈরি হয় না, এগুলি সাধারণত অপেশাদার রন্ধনবিদদের কাজ।[৩১] তবে ব্রিটিশ সুপারমার্কেট চেন মরিসন্সে এগুলি বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায় (যার নাম 'টিন খনি শ্রমিকদের পেস্টি') [৩৭]।অন্যান্য প্রচলিত পুরের মাঝে রয়েছে স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য মাংশের বিভিন্ন প্রকার, যেমন শুকুরের মাংশ, লবণ দেয়া শুকনো শুকুরের মাংশ, ডিম, খরগোশের মাংশ, মুরগীর মাংশ, ম্যাকারেল মাছ, এবং মিষ্টি পুরের মাঝে আছে খেজুর, আপেল, জ্যাম ও মিষ্টি ভাত - যা প্রায়ই উদ্ধৃত রসিকতাটি মনে করিয়ে দেয় "শয়তান স্বয়ং কর্ণওয়াল উল্লঙ্ঘন করতে ভয় পেয়েছিল কারণ সেটা পেস্টিতে শেষ হবে।"[৩৮]
পেস্টি 'টাইডি অজ্ঞি' নামেও পরিচিত যখন মাংশের ফালির পরিবর্তে অতিরিক্ত একটি আলু দেয়া হয়, 'টাইডি' শব্দের অর্থ আলু এবং 'অজ্ঞি' শব্দের অর্থ পেস্টি।এই পেস্টি অভাবের সময় এবং উচ্চদামের জন্য মাংস কেনা সম্ভব না হলে খাওয়া হতো।[৩৯] আরেকটি প্রচলিত মাংশহীন রেসিপি হচ্ছে 'হারবি পাই' যার উপকরণ পার্সলে,টাটকা বুনো গুল্ম ও পেঁয়াজ জাতীয় গাছ, বড় পাতাওয়ালা রসুন/পেঁয়াজ এবং এক চামচ জমাট ক্রিম।[৩৮]
পিজিআই আইন আনুসারে কর্নিশ পেস্টি অবশ্যই 'ডি' আকৃতির হবে, বাঁকানো অংশের দিকে একত্রে কুঁচকানো থাকবে (একদিন-কুচকানো),[২৬] কর্ণওয়ালে কুঁচকানোর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, কেউ কেউ এক দিকে কুঁচকানোর পক্ষে আবার অন্যরা উপরের দিকে কুঁচকানোই বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করে।[৯]
কোন কোন সূত্রানুযায়ী কর্নিশ ও ডেভোন পেস্টির মাঝে ফারাক হচ্ছে, ডেভোন পেস্টির উপরিভাগ কুঁচকানো এবং সেটির আকৃতি ডিম্বাকার কিন্তু কর্নিশ পেস্টি অর্ধবৃত্তাকার এবং বাঁকানো দিকটার প্রান্ত কুঁচকানো।[৩১] যাহোক, উপরিভাগ কুঁচকানো পেস্টি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কর্ণওয়ালে তৈরি হচ্ছে,[৪০] যদিও এই পদ্ধতির সমর্থক কর্নিশ বেকাররা এখন বুঝতে পারছে যে তাদের পেস্টিগুলি আইনত 'কর্নিশ' বলা যায় না।[৪১]
১৯ শতকে অভিবাসী কর্নিশ খনি শ্রমিকেরা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ( কথ্য ভাষায় কাজিন জ্যাক্স ও কাজিন জেনিস নামে পরিচিত) সারা পৃথিবীতে পেস্টির বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে।কর্ণওয়ালে খনি থেকে টিন আহরণ কমে যাওয়ার সাথে সাথে খনি শ্রমিকেরা তাদের দক্ষতা ও ঐতিহ্য নিয়ে সারা পৃথিবীর নতুন খনি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অনেক অঞ্চলে পেস্টি পাওয়া যেতে শুরু করে, যেমন :
ক্রিত্তেয়েন দে ট্রয়িস এর লেখা ১২ শতকের আরথুরিয়ান রোমান্স 'ইরেক অ্যান্ড ইনাইড-এর পর থেকে অনেক সাহিত্যকর্মে পেস্টির উল্লেখ রয়েছে। 'ইরেক অ্যান্ড ইনাইড-এর চরিত্রদের পেস্টি খেতে দেখা যায় যারা মূলত আজকের কর্ণওয়াল থেকে আসা।পেস্টির উল্লেখ আরও রয়েছে ১৩ শতকের শেষ দিকে লেখা আরেকটি রোমান্স 'হ্যাভেলক দ্য ডেন'-এ ; ১৪ শতকের রবিনহুডে র গল্পে; চসারে র দ্য ক্যান্টারবারি টেলস-এ এবং উইলিয়াম শেক্সপীয়ারের তিনটি নাটকে।[৫০][৫১][৫২]
কর্ণওয়ালকে প্রতিনিধিত্ব করতে বা কর্ণওয়ালের ছবি তুলে ধরতে অনেক উপন্যাসে পেস্টির উপস্থিতি রাখা হয়েছে।নেইল গেম্যান লিখিত 'আমেরিকান গডস'এর কেন্দ্রীয় চরিত্র শ্যাডো কল্পিত শহর লেকসাইডের ম্যাবেল রেস্টুরেন্টে পেস্টির খোঁজ পায়।কর্নিশরা আমেরিকাতে খাবারটি জনপ্রিয় করেছে বলে উল্লেখ আছে, গল্পের বাঁকি অংশে দেখানো হয়েছে কীভাবে দেবতারা আমেরিকায় এসেছে।লিলিয়ান জ্যাকসন ব্রাউন লিখিত 'দ্য ক্যাট হু...' সিরিজেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়।উত্তর কাউন্টির সাংস্কৃতিক অংশ হিসেবে পেস্টির কথা বলা হয়েছে, জিম কইলেরান খনি এলাকার ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত কল্পিত মুজ কাউন্টির জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট দ্য ন্যাস্টি পেস্টি'তে প্রায়ই পেস্টি খায়।ব্রেইন জ্যাকের বিখ্যাত 'রেড ওয়াল' সিরিজের উপন্যাসেও পেস্টির কথা রয়েছে; রেডওয়ে অ্যাবের ইঁদুর ও খরগোশের প্রধান প্রিয় খাদ্য পেস্টি।উইন্সটন গ্রাহাম রচিত কর্ণওয়ালের ঐতিহাসিক উপন্যাস 'পোলডার্ক' সিরিজ এবংএর উপর ভিত্তি করে বিবিসি টেলিভিশন সিরিজেও পেস্টির দেখা মেলে।
ডেভন ও কর্ণওয়ালের টিনের খনিতে পেস্টির সাথে দ্বারাঘাতকারীদের" সাথে পেস্টির যোগসূত্র পাওয়া যায়; প্রেতাত্মারা দ্বারাঘাতের শব্দের মত শব্দ করতো যা হয় প্রচুর পরিমাণ আকরিকের মজুদ স্থল নির্দেশ করতো [৫৩] বা আসন্ন কোন টানেল ভেঙ্গে পড়ার সতর্ক বার্তা নির্দেশ করতো। দ্বারাঘাতকারীদের" শুভ ইচ্ছাকে উৎসাহিত করার জন্য খনি শ্রমিকেরা তাদের খাওয়ার জন্য খনির মধ্যে পেস্টির অংশ রেখে দিতো। নাবিক ও জেলেরাও একইভাবে একটি অংশ ফেলে দিত যাতে মৃত নাবিকদের আত্মা শান্ত হয় যদিও জেলেরা জাহাজের ডেকে পেস্টি নিয়ে যাওয়াকে দুর্ভাগ্য মনে করতো।
১৮৬১ সালে বর্ণিত একটি কর্নিশ প্রবাদ পেস্টিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার উপকরণের উপর গুরুত্ব দিতে গিয়ে বলেছে পেস্টির পুরের উপকরণ হয়ে শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে শয়তান কর্ণওয়ালে আসে না।[৫৪] ১৯৪০-এর দশকে প্রচলিত পশ্চিম কাউন্টি র বিদ্যালয়ের ছাত্রদের খেলার মাঠের পেস্টি সংক্রান্ত ছড়া এরকম :
ম্যাথিউ, মার্ক, লুক ও জন ৫ ফুট লম্বা একটি পেস্টি খেল
এক বার দুই বার কামড় দিয়েই সেটি ইঁদুরে ভরা তারা বুঝলো
১৯৫৯ সালে ইংরেজ গায়ক ও গীতিকার সিরিল টনে "দ্য অজ্ঞি ম্যান" নামক এক স্মৃতিবিধুর গান রচনা করে।গানটিতে এমন একজন পেস্টি বিক্রেতার কথা বলা হয়েছে যাকে সব সময় গভীর রাতে নাবিকেরা ফিরে আসার সময় প্লাইমাউথের ডেভনপোর্ট নেভাল ডকইয়ার্ড-এর গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে পেস্টি বিক্রি করতে দেখা যেত, যেটা ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর হটডগ বিক্রেতায় পরিবর্তিত হয়েছে।
"অজ্ঞি" শব্দটির আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় শ্লোগান "অজ্ঞি অজ্ঞি অজ্ঞি, ঐ ঐ ঐ" কর্নিশ কথ্যভাষা "হজ্ঞান" থেকে এসেছে বলে মনে করা হয় যেটি আবার পেস্টির কর্নিশ শব্দ "হগেন" থেকে উৎপত্তি হয়েছে।পেস্টি যখন খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতো, তখন খনির অবিবাহিত তরুণী শ্রমিক "অজ্ঞি, অজ্ঞি, অজ্ঞি" বলে খনিকুপ বন্ধ করে দিত এবং খনি শ্রমিকেরা "ঐ, ঐ, ঐ" বলে প্রত্যুত্তর দিতো।[৫৫]
কর্ণওয়ালের জাতীয় খাবার হওয়ার দরুন দেশটিতে বেশ কিছু বিশালাকৃতির পেস্টি তৈরি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নৌকা বাইচ সপ্তাহে [৫৬] পলরুয়ান থেকে ফওয়ে'র রাস্তা দিয়ে একটি বিশাল পেস্টি নিয়ে যাওয়া হয়। একইভাবে, সেইন্ট পিরান্স দিবসে কর্নিশ জলদস্যু রাগবি দলের মাঠের চারপাশ দিয়ে একটি বিশাল পেস্টি চক্কর দেয়, পরে সেটিকে গোলপোস্টের উপর দিয়ে পাঠানো হয়।[৫৭]
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কর্নিশ পেস্টি তৈরি হয়েছিল ২০১০ সালের আগস্টে যার আয়তন ছিল ৪.৬ মিটার (১৫ফুট) এবং ওজন ছিল ৮৬০ কেজি (১৯০০ পাউন্ড)। ১৬৫ কেজি (৩৬৪ পাউন্ড) গরুর মাংশ, ১৮০ পাউন্ড (৮২ কেজি) সুইডিশ শালগম, ১০০ পাউন্ড (৪৫কেজি) আলু ও ৭৫ পাউন্ড (৩৪কেজি) পেঁয়াজ ব্যবহার করে "প্রোপার কর্নিশ" বেকারি এটি তৈরি করেছিল। এর পিছনে খরচ হয়েছিল ৭০০০ পাউন্ড। আর সেটিতে ১.৭৫ মিলিয়ন ক্যালরি ছিল।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.