পালঘাট গিরিপথ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পালঘাট গিরিবর্ত্ম বা পালঘাট গিরিপথ পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় অবস্থিত তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুর শহর ও কেরালার পালঘাট শহরের মধ্যবর্তী একটি নীচু গিরিপথ৷ গিরিপথটি সমুদ্রতল থেকে ১৪০ মিটার (৪৬০ ফুট) উচ্চতায় ও ২৪–৩০ কিলোমিটার (১৫–১৯ মাইল) বিস্তৃতির মধ্যে অবস্থিত৷ গিরিপথটি উত্তর দিকে নিকটস্থ নীলগিরি পর্বতমালা ও দক্ষিণে আন্নামালাই পর্বতের মাঝে অবস্থিত৷[১]
পালঘাট গিরিবর্ত্ম | |
---|---|
![]() তামিলনাড়ুর দিক থেকে পালঘাট গিরিবর্ত্মের দৃশ্য | |
উচ্চতা | ১৪০ মিটার (৪৬০ ফুট) |
অবস্থান | ভারত |
পর্বতশ্রেণী | পশ্চিমঘাট পর্বতমালা |
স্থানাঙ্ক | ১০.৭১৮৫৫০° উত্তর ৭৬.৮৮১৯৬৬° পূর্ব |
উৎস ও ইতিহাস
পালঘাট গিরিবর্ত্মের উৎসর একাধির প্রবর্তন মতবাদ রয়েছে৷ মতবাদগুলির মধ্যে একটি হলো, নদীর বলের বিপরীত প্রবাহের কারণে ভূমিধ্বসর ফলে এই গিরিপথ সৃষ্টির মতবাদ৷ পশ্চিমঘাট পর্বতমালার খাঁড়া ঢাল বরাবর ছোটো ছোটো ঝর্ণা অববাহিকা সৃষ্টি করে পালঘাট গিরিবর্ত্মের নিকট ভরতপুড়া নদীর সৃষ্টি হয়েছে৷ [২]
পালঘাট গিরিবর্ত্ম ঐতিহাসিকভাবে সর্বদাই পার্শ্ববর্তী তামিলনাড়ু থেকে কেরালার দিকে মানব অভিগমনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে৷ ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই গিরিপথ ব্যবহার করেই চের রাজবংশীয় কারূর শহরে অবস্থিত রাজারা পশ্চিম তামিলনাড়ুর কোঙ্গনাড়ুর সাথে সমগ্র কেরালায় নিজের আধিপত্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলো৷ খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যে মধ্য তামিলনাড়ু থেকে বেশ সংখ্যক তামিল ব্রাহ্মণ গোষ্ঠী এই পালঘাট গিরিপথ হয়ে কেরালায় আসেন৷[৩]
আবহাওয়ার ওপর প্রভাব
এই গিরিবর্ত্মটি দক্ষিণ ভারতের দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে আসা মৌসুমী বায়ুকে কেরালা থেকে পশ্চিম তামিলনাড়ু দিকে প্রবাহিত করতে সুবিধা করে, যা ওই অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতাকে নাতিশীতোষ্ণ করে এবং তামিলনাড়ুর সমতল ভূমি অপেক্ষা পশ্চিম দিকের উচ্চভূমি অঞ্চলকে অধিক বৃষ্টিবহুল করে তোলে। আবার বিপরীতক্রমে এটি তামিলনাড়ুর দিক থেকে আসা তুলনামূলক উষ্ণ বায়ুকে প্রবেশের পথ করে দেয় যা কেরালা রাজ্যের পশ্চিম দিকের তুলনায় পূর্ব দিকে অধিক উষ্ণতর করে তোলে। ফলস্বরূপ বঙ্গোপসাগর থেকে আসা বায়ু ও তার উষ্ণতার তারতম্যের কারণে এখানে গ্রীষ্মকালে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় সহ বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
পরিবহন ও বিপণন
উত্তর থেকে দক্ষিণে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা বরাবর এই গিরিবর্ত্মটি সবথেকে নিচু এবং সমুদ্রতলের কাছাকাছি। পার্শ্ববর্তী তামিলনাড়ুর পশ্চিমাংশ থেকে কেরালার পূর্বাংশকে বিছিন্নকারী এই পশ্চিমঘাট পর্বতমালার গিরিপথটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে। একটি কেরালা রাজ্যের পালঘাট জেলা এবং তামিলনাড়ু রাজ্যের কোয়েম্বাটুর জেলার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী একটি পথ, যা উভয় রাজ্যের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপণন পথসহ প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় উপদ্বীপের দক্ষিণতম পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্তে যোগাযোগের একটি অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে।
তামিলনাড়ুর সাথে কেরালার সংযোগ রক্ষাকারী ৫৪৪ নং জাতীয় সড়ক, কোয়েম্বাটুর–শোরানূর রেলপথ ও পালঘাট–পোল্লাচি রেলপথ এই গিরিপথের উপর দিয়ে প্রসারিত। উভয় রাজ্যের মধ্যে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন বার্তা প্রেরণের জন্য এই গিরিপথটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
বায়ুশক্তি
পালঘাট গিরিবর্ত্ম তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুর ও তিরুপুর জেলার পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত বায়ুকে ফানেলের মতো অপ্রশস্তভাবে বাহিত করায় তা বায়ুকল স্থাপনের মনোরম পরিবেশ গঠন করেছে৷[৪] এখানে গড় বার্ষিক বায়ুপ্রবাহের পরিমান ১৮-২২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা৷[৫] উদুমালাপেট্টাই ও মড়দুকুলাম অঞ্চলে রাজ্যের বৃহত্তর বায়ুকলগুলি অবস্থিত৷
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.